রাসূলের দরবারে হারিসা - রাসূলে পাক ও হারিসার সংলাপ ও বৈঠক

1 টি মন্তব্য
রাসূলের দরবারে হারিসা
হারিসার জীবনে এই সংবাদটি ছিল তার
জীবনে এক নতুন স্পন্দন। সে তার
হারানো মানিক ফিরে পেয়েছে, আনন্দে-
খুশীতে তার অন্তর উদ্ভাসিত
হয়ে উঠেছে। তাই কাল বিলম্ব
না করে আপন ভাই
কাআবকে সাথে নিয়ে সে মক্কার
পথে ছুটে আসে। যে কোন কিছুর
বিনিময়ে পুত্রকে পেতে হবে তাই বিরাট
অংকের অর্থ-কড়িও সাথে নিয়েছে।
হারিসা মক্কায় পৌঁছে অনুসন্ধান
করে রাসূলের দরবারে হাজির
হয়ে বলে “হে আব্দুল্লাহর পুত্র!
হে হাশিম ও আব্দুল মুত্তালিবের
বংশধর! হে স্বীয় গোত্রের স্বনামধন্য
প্রধান! আপনি পবিত্র হরম শরীফের
অধিবাসী এবং পড়শী! আপনি দুর্বল ও
বিপন্নদের প্রতি সহনশীল!
অনাহারীকে আহার দিয়ে থাকেন।
বিপদগ্রস্তদের প্রতি আপনার
অনুকম্পা সর্বজন স্বীকৃত!
আমরা আপনার দরবারে বিশেষ আশা-
ভরসা নিয়ে হাজির হয়েছি। আপনার
মহান দরবারে আমাদের আশা পূরণ
হবে বলে মনে করি।
রাসূলে পাক ও হারিসার সংলাপ ও বৈঠক
হযরত রাসূলঃ আমার কাছে তোমাদের
কি দাবী তা ব্যক্ত কর।
হারিসাঃ আমার পুত্র আপনার গোলাম,
তার মুক্তি কামনা করছি এবং এর
জন্য যে কোন পরিমাণ মুক্তিপণ
দিতে সম্মত আছি।
হযরত রাসূলে আকরামঃ কে তোমার
পূত্র?
হারিসাঃ আপনার গোলাম যায়েদ!
যায়েদ কে! সে বিশ্বনবীর গোলাম! যার
গোলামীর বরকতে যায়েদ
পৌত্তলিকতার
গোলামী থেকে মুক্তি লাভ
করে একত্ববাদের শীতল ছায়ায় আশ্রয়
গ্রহণ করেছে, যাকে বিশ্বনবী তার
স্নেহ-মমতার দ্বারা ক্রয়
করে কাছে রেখেছেন, যার ভালোবাসায়
যায়েদের অন্তর উদ্ভাসিত, যার
পরশে যায়েদ নতুন বিশ্বাস ও জীবন
লাভ করেছে, তার থেকেই যায়েদের
মুক্তি কামনা করে আরজি পেশ
করেছে যায়েদের পিতা হারিসা। পুত্রের
মুক্তিতে বিরাট পরিমাণে মুক্তিপণ
দানের জন্যও সে তার প্রস্তুতি ব্যক্ত
করেছে। আরজির উত্তর
কামনা করে হারিসা অধীর
চিত্তে অপেক্ষা করছে আর
মনে মনে ভাবছে, একজন অপরিচিত
লোকের আবেদনে স্বীয় গোলামকে মুক্ত
করে দেয়ার ব্যাপারটা অতি সহজসাধ্য
ব্যাপার নয়। উপরন্তু যুবক যায়েদ
এখন মুসলমান! সে সর্বপ্রথম ঈমান
গ্রহণকারীদের অন্যতম। তাকে একজন
কাফেরের হাতে ন্যস্ত করার পরিণাম
এখন কি হতে পারে? এটা নিশ্চিত
আশংকা ও দুঃশ্চিন্তা বিষয়। কিন্তু
ইনিতো মহান রাসূল! অন্যের
দুঃখে দুঃখী হওয়া তার স্বাভাব। আগত
ব্যথিত পিতার দুঃখ-
বেদনা তাকে অবশ্যই ভারাক্রান্ত
করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি অতি মহান
পরোপকারী। তাই অত্যন্ত স্নেহ ও
দয়ার সুরে হযরত রাসূলে আকরাম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বললেন, তোমাদের আরও কোন
দাবী আছে যা আমি পূরণ করতে পারি?
রাসূলের এই
মমতা ভরা বাণী থেকে স্পষ্ট
প্রতীয়মান হয় যে, আবেদনকারীদের
উক্ত আবেদনের চেয়ে আরো অধিক
কোন দাবী থাকলেও রাসূলে আকরাম
তা পূরণে প্রস্তুত ছিলেন।
হারিসাঃ না, হে মহাত্মন! আমাদের আর
কোন দাবী নেই, এটাই হবে আমাদের
প্রতি চির স্মরণীয় বিরাট ইহসান।
হারিসার এই আবেদন শুনে বিশ্বরাসূল
অল্প সময় নীরবতা অবলম্বন করেন।
কারণ হযরত রাসূলে আকরাম
যায়েদকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। যুবক
যায়েদও রাসূলকে শ্রদ্ধা করে ও
ভালোবাসে। অপর দিকে হারিসা যায়েদের
পিতা। সন্তানের প্রতি পিতার
আকর্ষণ অবর্ণনীয়, বিচ্ছেদ-
বেদনা অসহনীয়। এটাই
হয়তো নীরবে রাসূলের ভাবনা ও
চিন্তার বিষয়। তবে বিশ্ব রাসূল আর
দেরী না করে পিতার
অধিকারকে প্রাধান্য দিয়ে প্রসন্ন
হৃদয়ে বললেনঃ যায়েদকে অধিকার
দেওয়া হোক! সে যদি তোমাদের
সাথে চলে যেতে সম্মত হয়
তাহলে আমার পক্ষ থেকে সে মুক্ত। এর
জন্য মুক্তিপণেরও প্রয়োজন নেই।
আর যদি সে যেতে অসম্মত হয়,
তাহলে আমি তার সম্মতির বাইরে নই।
রাসূলের এই বাণী হারিসাকে অবাক
করে তুলে। কেননা যায়েদ এখন যুবক,
অবুঝ কোন বালক নয়। আট বছর
বয়সে সে হারিয়ে গেছে। মাতা-পিতার
মায়া-মমতার ছায়ায় আজ স্বাধীন
জীবন যাপনের সুযোগ লাভের
বিষয়টিতে যায়েদ কি অসম্মত
হতে পারে? মোটেই না।
হারিসা ভেবে দেখল, একজন মনিবের
পক্ষ থেকে আমরা এর চেয়ে অধিক আর
কি আশা করতে পারি! সত্যি মহামানব
মুহাম্মদ অত্যন্ত ন্যায় বিচার
করেছেন, আমি তাতে পরিপূর্ণ সম্মত।
হারিসাঃ আপনার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত
ন্যায়সঙ্গত। আমরাও তাতে সম্মত।
অতঃপর যুবক
যায়েদকে দরবারে আনা হল।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next পিতার সম্মুখে যায়েদ - যুবক যায়েদের বক্তব্য

1 টি মন্তব্য :

নামহীন বলেছেন...

চমৎকার উদ্যোগ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।