পিতার সম্মুখে যায়েদ - যুবক যায়েদের বক্তব্য

কোন মন্তব্য নেই
পিতার সম্মুখে যায়েদ
যুবক যায়েদ বহুদিন পর তার পিতার
সম্মুখে উপস্থিত। পিতার
চেহারা অশ্র“সিক্ত। যায়েদ জটিল
পরীক্ষার সম্মুখীন।
কেননা একদিকে তার পিতা;
হারানো সন্তানকে বুকে নিয়ে বহুদিনের
বেদনাদগ্ধ অন্তরকে প্রশান্ত করার
জন্য অপেক্ষমান। অপরদিকে তার
মনিব; তার সাথে রক্ত ও বংশের
সম্পর্ক অবশ্য নেই, কিন্তু যুবক
যায়েদের অশ্র“সিক্ত দৃষ্টি এবারও
তারই প্রতি নিবদ্ধ, যাকে সে আল্লাহর
রাসূল বলে বিশ্বাস করেছে। যুবক
যায়েদের চাহনী এবং নীরব
দৃষ্টি একান্তভাবে রাসূলের প্রতি তার
শ্রদ্ধা-ভক্তি ও গভীর আনুগত্যের
প্রমাণ পেশ করে। সে নতশীর
হয়ে দরবারে দাড়িয়ে থাকে। যায়েদের এ
অবস্থান রাসূলের সম্মুখে অস্পষ্ট ছিল
না। কিন্তু তবুও তিনি বললেনঃ হযরত
রাসূলঃ যায়েদ! তুমি তাদেরকে চেনো?
যুবক যায়েদঃ হ্যা, ইয়া রাসুলাল্লাহ!
আমি তাদেরকে অত্যন্ত ভালোভাবেই
চিনি। একজন আমার পিতা, অপরজন
আমার চাচা।
এতটুকু বলেই যায়েদ নীরব হয়ে যায়।
অতিরিক্ত কিছু না বলে চুপ থাকে।
নতশীর হয়ে দাড়িয়ে থাকে। তার
দৃষ্টি বিশ্ব রাসূলের মুবারক কদমের
উপর নিবদ্ধ। যুবক যায়েদ তখন
ঈমানের পিঞ্জিরায় আবদ্ধ,
রূহানী জগতে নিমগ্ন। রক্ত-বংশ,
পিতা ও আত্মীয়-স্বজনের
বন্ধনকে প্রাধান্য দেয়ার সুযোগ তার
কোথায়? তাই
পিতা হারিসা এবং চাচা কাআব ব্যাকুল
হয়ে উপস্থিত হলেও যুবক যায়েদ তাদের
দিকে আকৃষ্ট হতে পারছে না।
পিতা হারিসা স্বীয় পুত্রের এ
অবস্থা অবলোকন করে হতভম্ব। তার
চাচা কাআবও অবাক এবং হতাশ
হয়ে পড়ে। তার দু’জনেই রাসূলের বাণীর
অপেক্ষা করতে থাকে।
হযরত রাসূলঃ হে যায়েদ!
আমি কে তা তুমি জান। তোমার
প্রতি আমার কিরূপ আচরণ তাও
তোমার খুব ভালো করেই জানা আছে।
এখন তোমার জন্য দুটি পথ,
ইচ্ছা হলে পিতার সাথে তুমি তোমার
বাড়ীতে আত্মীয়-স্বজনদের নিকট
ফিরে যেতে পার, আর ইচ্ছা হলে আমার
সাথেও থাকতে পার।
রাসূলের এই বাণী শুনেও যায়েদ কিছুক্ষণ
নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকে। তার শেষ
কথা শোনার জন্য
অধীরচিত্তে পিতা প্রতীক্ষা করছে।
যায়েদের চাচা কাআব তাদের দাবীর
প্রতি সমর্থন দিতে কাতর
সুরে ভাতিজাকে আবেদন জানাচ্ছে।
বিশ্ব রাসূল ধীরেÑসুস্থে সবকিছুই
অবলোকন করছেন। আর যুবক যায়েদ
এক পবিত্র অনুভূতির সমুদ্রে হাবুডুবু
খাচ্ছিল। খানিক বাদে যুবক যায়েদ তার
শীর উঁচু করে। মুখে তার মৃদু হাসি।
অশ্র“সিক্ত তার দু’ চোখ। তার
চেহারায় প্রকাশ পাচ্ছিল ব্যাকুলতার
ছাপ। কিন্তু যুবক যায়েদ ঈমান
এবং আত্মীয়তার এই মনস্তাত্তিক
যুদ্ধে বিজয় লাভ করে। সে প্রকম্পিত
হৃদয়ে যে সিদ্ধান্ত
ঘোষণা করে তা কেবল যায়েদের পক্ষেই
সম্ভব হয়েছিল।
যুবক যায়েদের বক্তব্য
হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার
মুকাবিলায় অন্য কাউকে প্রাধান্য
দিতে পারি না। আমার মাতা-
পিতা এবং আত্মীয়-স্বজনের তুলনায়
আপনি আমার কাছে অধিক কাম্য। তাই
আমি আপনার সান্নিধ্য থাকার
সিদ্ধান্ত নিলাম।
যুবক যায়েদের উত্তর শুনে রাসূলে পাক
মৃদু হাসেন। আর হারিসা ও কাআব
যায়েদের সিদ্ধান্ত শুনে অবাক ও
কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে পড়ে। যায়েদ
এমন উত্তর দিবে তারা ভাবতেও
পারে নি। একি ব্যাপার? এ কোন
পবিত্র মমতার বন্ধন, যার মুকাবিলায়
মাতা-পিতার রক্তের টানও তুচ্ছ
হয়ে গেল?
হারিসা বললঃ হে যায়েদ! তোমার
মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটেছে নাকি,
তুমি কি করে মাতা-পিতার চেয়েও
বর্তমান দাসত্বের জীবনকে প্রাধান্য
দিচ্ছ? মাতা-পিতার
পরিবর্তে অন্যকে কিরূপে বরণ
করেছে? তোমার হল কি?
পিতার কথা শুনে প্রথমবার সে তার
মাথা উঁচু
করে পিতাকে সঠিকভাবে দর্শন করে।
যায়েদের দৃষ্টিতে তখন এক আজন নূর
পরিদৃষ্ট হয়। তার অন্তরদৃষ্টি প্রবল
হয়ে ওঠে। তার ঈমানী শক্তির
সম্মুখে বস্তু ও জড় সম্পর্ক ম্লান
হয়ে পড়ে। মনে হচ্ছে, যায়েদের দেহে যেন
হারিসার রক্ত নয়, ঈমানের নূর
প্রবিষ্ট। যায়েদ পিতাকে সম্বোধন
করে বলেঃ
হ্যা, আমি যে সিদ্ধান্ত
নিয়েছি তা সুস্থ মস্তিষ্কেই নিয়েছি।
আমি বিশ্ব রাসূলের মধ্যে যা কিছু
অবলোকন করেছি,
তা কারো মধ্যে প্রত্যক্ষ করি নাই।
আপনারা আমাকে ভুলে যান। আমি এখন
আর অন্য কারো নই। আমার জীবন
কেবলমাত্র আল্লাহ ও তার রাসূলের
জন্য উৎসর্গীকৃত।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next যায়েদ নবীর পুত্র - যায়েদের প্রতি স্নেহ-মমতা

কোন মন্তব্য নেই :