তিন. যুবক ইবনে হারুন
ফকীর শাহযাদামুসলিম খলীফাদের মাঝে খলীফা হারুনের
নাম প্রায় সবারই জানা। আলেম-
উলামাদের
প্রতি তিনি মোটামুটি শ্রদ্ধাশীল
ছিলেন। হযরত ইমাম আবু
ইউসুফকে তিনিই চীফ জাস্টিস নিয়োগ
করেছিলেন। হযরত ইমাম মালিকের
সাথেও তিনি মাঝে মাঝে মুলাকাত
করতেন এবং তার নসীহত গ্রহণ
করতেন। খলীফা হারুনের এক পুত্র ছিল
অত্যন্ত আল্লাহ ভীরু। মাত্র ষোল
বৎসর বয়সেই এই যুবক
আল্লাহওয়ালা বুযুর্গানে দ্বীনের
সাথে সময় কাটাতো। ফলে অল্প বয়সেই
সে আল্লাহর মারিফাত এবং বেলায়েত
লাভে ধন্য হয়। আল্লাহর প্রতি দৃঢ়
ঈমান, রাসূলের প্রতি শ্রদ্ধা-ভক্তি ও
ভালোবাসা তাকে অতি উচ্চ
মকামে সমাসীন করেছিল।
পিতা হারুন ছিলেন প্রভাবশালী বাদশাহ।
রাজ প্রাসাদ এবং একচ্ছত্র রাষ্ট্রীয়
ক্ষমতার অধিকারী। ভোগ-বিলাস
এবং সুখ-শান্তির কোন অভাব ছিল
না তার। তদুপরি পিতার পর বাদশাহ
হওয়ার বিষয়টিও ছিল সুনিশ্চিত।
কিন্তু এসব কিছুর দিকে ইবনে হারুনের
আগ্রহ ছিল না, বস্তুর প্রতি আকর্ষণ
ছিল না মোটেই। অত্যন্ত সরল-
সোজা এবং সাধারণ লোকের মত ছিল
তার চলাফেরা। যুব রাজের মত নয়,
বরং ফকীর-মিসকীনদের মত
হয়ে থাকতো সে। ছেড়া-ফাটা কম
মূল্যের লুঙ্গি পরে মাথায় কাপড়
পেঁচানো অবস্থায় এই যুবক প্রায়ই
কবরস্থান যিয়ারতে যেত। সে কবর
যিয়ারতে গিয়ে অশ্র“সিক্ত ও
ভরাক্রান্ত হয়ে পড়তো। অনেক সময়
কবরবাসীদেরকে সম্বোধন
করে বলতোঃ হে কবরস্থ লোকজন!
আপনারা আমাদের
পূর্বে পৃথিবীতে ছিলেন এবং অনেক
সহায়-সম্পদ এবং বাড়ী-ঘরের মালিক
ছিলেন। অনেকে রাজা-বাদশাহ ও
মন্ত্রী-মিনিষ্টার ছিলেন। কিন্তু এসব
বস্তু আপনাদেরকে মৃত্যুর ছোবল
থেকে রক্ষা করতে পারে নাই।
আপনারা এখন
নির্জনে একাকী কবরে বসবাস করছেন।
মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন
কারো সাথে আপনাদের কোন সম্পর্কই
আজ নেই। আহ! যদি জানতে পারতাম
আপনাদের কি অবস্থা?
কিভাবে আপনারা জীবন-যাপন
করছেন? যদি জানতে পারতাম,
আপনারা কবরে কি কি প্রশ্নের
সম্মুখীন হয়েছেন! অতঃপর ইবনে হারুন
এই কবিতা পাঠ করতঃ “জানাযার
নামায প্রতিদিন আমাকে ভীত-
সন্ত্রস্ত করে তোলে। যারা মৃত
ব্যক্তিদের জন্য কাঁদে, তাদের
কান্না আমাদে অধীর চিত্ত
করে তোলে।” এরূপ কবিতা পাঠ
করতে করতে সে অস্থির
হয়ে কবরস্থানে পড়ে থাকতো।
মন্ত্রীবর্গের পরামর্শ
যুবক ইবনে হারুন একদিন পিতা বাদশাহ
হারুনের রাজকীয় সভাকক্ষে হাজির
হলে তার জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থা, মাথায়
পেঁচানো কাপড়, পড়নে ছেড়া-
ফাটা লুুঙ্গি পরিদর্শন করে মন্ত্রী ও
সভাসদবর্গ পরস্পর
বলাবলি করতে থাকে যে, এই পাগল
ছেলেটির কারণে অন্যান্য রাজা-
বাদশাহদের সম্মুখে খলীফা হরুনের
ইজ্জত-সম্মান ও প্রভাব-
প্রতিপত্তি ক্ষুন্ন হতে চলেছে।
সুতরাং এ ব্যাপারে ত্বড়িৎ কোন
উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ
করা অত্যাবশ্যকীয়। এই
ব্যাপারে কোন বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণের
জন্য তারা বাদশাহ হারুনকে পর্যন্ত
পরামর্শ দিল।
বাদশাহ হারুনের নসীহত
বাদশাহ হারুন মন্ত্রীবর্গের
পরামর্শে স্বীয় পুত্রকে বললো,
‘হে পুত্র! তুমি মন্ত্রীবর্গের
কথাবার্তা শুনেছো।
তুমি কি আমাকে এভাবেই অপদস্থ
করতে থাকবে? তোমার অবস্থার
কি কোন পরিবর্তন করবে না?
হে আমার প্রাণপ্রিয় সন্তান! আমার
কি কোন জিনিসের অভাব আছে,
যে কারণে তুমি এরূপ জীর্ণ-শীর্ণ,
মলিন বেশ ধারণ করে ফকির-মিসকীনের
মত হয়ে চলেছ? তুমি আর
আমাকে লজ্জা না দিয়ে সঠিক-সুন্দর
অবয়বে যুবরাজ হিসেবে চলাফেরা করার
প্রতি মনোযোগী হও। তোমার উজ্জ্বল
ভবিষ্যত তুমি নষ্ট করো না।’
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
Next ইবনে হারুনের কারামত - বিদায়ের করুণ চিত্র
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন