যুবকের অছীয়ত - বাদশাহ হারুনের পথযাত্রা - পুত্রের মৃত্যু সংবাদ
যুবকের অছীয়তআমাকে অছীয়ত করে সে বলে,
ক)হে আমার বন্ধু! দুনিয়ার
আকর্ষণে ধোকাগ্রস্ত হয়ো না।
মানুষের জীবন যেমন খতম হয়ে যায়,
তেমনি অর্থ-সম্পদও খতম হয়ে যায়।
তুমি যখন কোন মৃত
ব্যক্তিকে নিয়ে কবরস্থানে যাও তখন
তুমি এই চিন্তাও কর যে, একদিন
তোমাকেও
এভাবে কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হবে।
খ)হে আবু আমের! আমার মৃত্যু
সন্নিকটে, আমার আত্মা বের
হয়ে যাওয়ার পর তুমি আমাকে গোসল
দিয়ে আমার পুরোনো কাপড়েই
আমাকে কাফর পরাবে। আমি বললাম,
হে আমার প্রিয় বন্ধু!
আমি যদি তোমাকে নতুন কাপড়
দিয়ে কাফর পরাই তাহলে দোষের
কি আছে?
যুবকটি জবাব দিল, নতুন কাপড় পরার
অধিক উপযুক্ত হচ্ছে জীবিত মানুষ।
হযরত আবু বকর সিদ্দীকও এরূপই
জবাব দিয়েছিলেন। কাফন তো নতুন
পুরাতন সবই সমান। কেননা দু’একদিন
পরই তা ছিড়ে-ফেটে বিনষ্ট হয়ে যাবে।
সাথে থাকবে কেবল তার আমলসমূহ।
গ)যে আমার কবর খনন
করবে তাকে আমার
লোটা এবং লুঙ্গি হাদিয়া দিয়ে দিও।
ঘ)আর এই আংটি এবং কুরআন শরীফ
খানা তোমার নিকট আমানত রাখলাম।
তুমি এই আমানতগুলো বাদশাহ হারুনের
কাছে পৌঁছিয়ে দিও।
ঙ)মনে রাখবে, অন্য কারো কাছে দিও
না, বাদশাহর হাতে দিয়ে তাকে বলবে যে,
“এক প্রবাসী এই আমানত আপনার
নিকট পৌঁছানোর অছীয়ত
করে মৃত্যুবরণ করেছে এবং আপনার
উদ্দেশ্যে বলে গিয়েছে, এমন যেন না হয়
যে, উদাসীন এবং ধোকাগ্রস্তাবস্থায়
আপনার মৃত্যু এসে যায়।”
যুবকের মৃত্যু
আমাকে এরূপ অছীয়ত
করে যুবকটি মৃত্যুবরণ করে। তার
মৃত্যুতে আমি অত্যন্ত মর্মাহত ও
দুঃখিত হই এবং বুঝতে পারি যে,
যুবকটি বাদশাহ হারুনেরই পুত্র। মৃত্যুর
পর অছীয়ত মুতাবেক তার কাফন-
দাফন সমাধা করি। লুঙ্গি ও লোটা কবর
খননকারীকে দিয়ে দেই। আর পবিত্র
কুরআন ও আংটি নিয়ে বাদশাহ হারুনের
সাথে সাক্ষাতের
উদ্দেশ্যে বাগদাদে রওয়ানা হই।
বাদশাহ হারুনের পথযাত্রা
আমি যখন রাজপ্রাসাদের
কাছাকাছি পৌঁছি তখন দেখতে পাই যে,
বাদশাহ হারুনের পথযাত্রা শুরু
হয়েছে এবং অসংখ্য
অশ্বারোহী দলে দলে এগিয়ে আসছে।
প্রতি দলে রয়েছে এক হাজার
করে অশ্বারোহী। এ
অবস্থা দেখে আমি উুঁচু
একটি স্থানে দাড়িয়ে বাদশাহ হারুনের
সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য
অপেক্ষা করতে থাকি। এভাবে দু’শ
নম্বর সারিতে দাড়িয়ে বাদশাহকে একটি
অবস্থানে উপবিষ্ট দেখে আল্লাহর
রাসূলের আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে একটু
কথা বলার জন্য বাদশাহর নিকট
আবেদন জানাই। আমার আবেদনের
ধ্বনি শুনে বাদশাহ আমার
দিকে তাকালে আমি দ্রুত তার
দিকে অগ্রসর হই এবং নিকটে পৌঁছি।
পুত্রের মৃত্যু সংবাদ
বাদশার নিকট পৌঁছে আমি বলি,
“প্রবাসী এক যুবক পবিত্র কুরআন
এবং এই আংটি আমার কাছে আমানত
রেখে আপনার কাছে পৌঁছানোর অছীয়ত
করতঃ মৃত্যুবরণ করেছে। তাই আমি এই
আমানত আপনার নিকট পৌঁছানোর
জন্য বসরা থেকে বাগদাদে হাজির
হয়েছি। যুবকটি এখন আর
পৃথিবীতে নেই। সে মৃত্যুবরণ
করেছে এবং বসরার যমীনেই
তাকে দাফন করা হয়েছে।
বাদশার মনে প্রতিক্রিয়া
বাদশাহ হারুন পবিত্র কুরআন ও
আংটি দেখে বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হন
এবং অশ্র“সিক্ত নয়নে শীর নীচু
করে নীরবতা অবলম্বন করেন।
অতঃপর ভরাক্রান্ত
মনে একজনকে বললেন, “এই
লোকটিকে তোমার সাথে রাখ।
আমি পথযাত্রা শেষে ফিরে এসে যখন
ডাকি তখন আমার
কাছে তাকে পৌঁছাবে।” এরপর বাদশাহ
হারুন পথযাত্রা সমাপ্ত
করে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করতঃ স্বীয়
কামরার পর্দা টেনে লোকটিকে বলল,
“বসরার লোকটির বক্তব্য যদিও
আমার অন্তরের দুঃখ-বেদনা বৃদ্ধির
কারণ হবে তবুও তাকে আমার
কাছে নিয়ে এসো।”
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
Next Post বাদশার দরবারে আবু আমের - পুত্রের কবর যিয়ারত
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন