বাদশার দরবারে আবু আমের - পুত্রের কবর যিয়ারত

কোন মন্তব্য নেই
বাদশার দরবারে আবু আমের
রাজ দরবারের লোকটি দ্রুত এসে বলল,
“বাদশাহ আপনাকে স্মরণ করেছেন।
তবে শুনুন পুত্রের মৃত্যু সংবাদে বাদশাহ
অত্যন্ত মর্মাহত ও দুঃখিত অবস্থায়
আছেন। তাই অল্প কথায়
সংক্ষিপ্তভাবে কাজ সেরে নিবেন, দশ
কথার স্থলে পাঁচটির দ্বারা কাজ
সেরে নিবেন।” এই বলে আমাকে বাদশার
দরবারে সে হাজির করে।
আমি গিয়ে দেখি যে, অত্যন্ত মর্মাহত
ও কাতর অবস্থায় বাদশাহ
একাকী বসে আছেন। তিনি আমাকে তার
খুব নিকটে বসিয়ে প্রশ্ন করেন
এবং আমি সেই প্রশ্নের উত্তর দান
করি।
বাদশাহ হরুন ঃ তুমি আমার এই
ছেলে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত আছ
কি?
আবু আমের ঃ হ্যাঁ বাদশাহ! আমি তার
সম্পর্কে অবগত আছি।
বাদশাহ ঃ সে কি কাজ করত?
আবু আমের ঃ সে দিন মজুরীর কাজ
করত।
বাদশাহ ঃ তুমি কি কখনো তার
দ্বারা কাজ নিয়েছ?
আবু আমের ঃ হ্যাঁ, আমিও তার
দ্বারা কাজ নিয়েছি।
বাদশাহ ঃ সে তো রাসূলের আত্মীয়
এবং তাঁর চাচা হযরত আব্বাসের
বংশধর।
সুতরাং তুমি তাকে দিয়ে কি করে
মজদুরীর কাজ নিলে?
আবু আমের ঃ হে আমীরুল মুমিনীন!
সর্বপ্রথম আমি আল্লাহর
দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করছি,
অতঃপর আপনার নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আসলে আমি তখন তার
বিষয়ে জানতে পারি নাই। আমি কেবল
তার মৃত্যুর সময় অবগত হই যে,
সে আপনার পুত্র।
বাদশাহ ঃ তুমি কি স্বয়ং তার দাফন-
কাফন করেছ?
আবু আমের ঃ জী হ্যাঁ,
আমি স্বয়ং কাফন-দাফনের কাজ
সমাধা করেছি।
এই কথা শুনে বাদশাহ আমার হাত
টেনে নিয়ে স্বীয় বক্ষে ধারণ
করতঃ কবিতা পাঠ করেন। যে কবিতার
সারমর্ম হচ্ছে এই-
হে মুসাফির! তোমার বিচ্ছেদ-বেদনায়
আমার হৃদয় জ্বলে-পুড়ে ছাই
হয়ে যাচ্ছে। তোমার জন্য আমি অধীর
এবং অশ্রুসিক্ত। হে মুসাফির! তোমার
বাসস্থান (কবর) এখন কত দূরে?
তবে হ্যা, তোমার জন্য দুঃখ-
বেদনা আমার অন্তরের অতি নিকটে।
সত্যিই মৃত্যু মানুষের স্বাদ
এবং সমস্ত প্রশান্তিকে মিটিয়ে দেয়।
আহ! ঐ মুসাফিরের মুখমণ্ডল যেন
চাঁদের টুকরা, যা রূপার থালার ন্যায়
কোমল শরীরে বিদ্যমান। কিন্তু
অবশেষে চাঁদের ঐ টুকরা (মুখমণ্ডল)
এবং রূপার থালা (শরীর) কবরে সমাহিত
হলো।” বাস্তবিকই মৃত্যু
কাউকে পরোয়া করে না, তার
ছোবলে সকলকে আক্রান্ত হতে হয়।
পুত্রের কবর যিয়ারত
অতঃপর বাদশাহ হারুন
আমাকে নিয়ে প্রিয় পুত্রের কবর
যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বসরায় গমন
করেন এবং কবরের
পার্শ্বে দাড়িয়ে নিম্নোক্ত কবিতা পাঠ
করেনঃ
অল্প বয়সে মৃত্যু
তোমাকে কোলে তুলে নিয়েছে।
হে মুসাফির! আমি জানি তুমি আর
কোনদিন ফিরে আসবে না। হে আমার
কলিজার টুকরা, নয়নমণি! অন্তরের
প্রশান্তি! কেবল তুমিই ছিলে আমার
আশার আলো, দীর্ঘ রাতে এবং অদীর্ঘ
রাতেও। যুবক বয়সে তুমি মৃত্যুর
যে শুরা পান করেছ তা তোমার বৃদ্ধ
পিতা বৃদ্ধ বয়সে পান করবে। মৃত্যুর
শুরা সবাইকে অবশ্যই পান করতে হবে।
চাই সে মরুভূমিতে বসবাসকারী হোক
অথবা রাজপ্রাসাদে বসবাসকারী হোক।
বস্তুতঃ সমস্ত প্রশংসা ঐ
আল্লাহপাকের জন্য, যার সিদ্ধান্তই
চূড়ান্ত। তাঁর সিদ্ধান্তের কোন
বিকল্প নেই।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
Next Post আবু আমেরের স্বপ্ন - স্বপ্নের হাকীকত

কোন মন্তব্য নেই :