চার. প্রাসাদ নির্মাণে উদ্যত যুবক
আদর্শ যুবকজাফর ইবনে সুলাইমান ও মালিক
ইবনে দীনার
বসরা সফরকালে নির্মাণাধীন
একটি বিরাট প্রাসাদ দেখতে পান।
তারা দেখেন, প্রাসাদ নির্মাণের
তত্ত্বাবধান করছিল এক সুন্দর,
সুশ্রী যুবক। জফর বললেন, এমন
সুস্বাস্থ্যের
অধিকারী যুবকটিকে দুনিয়ার মরিচিকার
পেছনে নিমগ্ন দেখে আমার মনে আগ্রহ
সৃষ্টি হলো যে, আমি তার জন্য
আল্লাহর নিকট দোয়া করব, যাতে তার
মন প্রলুব্ধকর
দুনিয়া থেকে ফিরে আখেরাতের
দিকে ধাবিত হয় এবং জান্নাতের
চিরস্থায়ী সুখ-শান্তি লাভে সে ধন্য
হয়। এরূপ চিন্তা-
ভাবনা করে উভয়ে যুবকের
কাছে গিয়ে সালাম দেন। যুবক সালামের
উত্তর দেয় এবং মালিম
ইবনে দীনারকে চিনতে পেরে অত্যান্ত
সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে স্বাগত
জানায়। তখন তাদের মাঝে কিছু
কথপোকথন হয় ঃ
মালিক ইবনে দিনার ঃ হে যুবক! এই
প্রাসাদ নির্মাণের জন্য
তুমি কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছ?
যুবক ঃ এক লক্ষ দেরহাম।
ইবনে দীনার ঃ যদি বরাদ্দকৃত অর্থ
তুমি আমাকে দিয়ে দাও তাহলে আমি এর
পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে এর
তুলনায় অধিক উত্তম প্রাসাদের
প্রতিশ্র“তি দিচ্ছি। সে প্রাসাদ
হবে মণিমুক্তা খচিত, স্বর্ণ-রূপা ও
মূল্যবান পাথরে আচ্ছাদিত।
সে প্রাসাদের মাটি হবে জাফরান ও
মেশকে আম্বরের সুগন্ধিযুক্ত।
রকমারী বিলাস সামগ্রীতে পরিপূর্ণ সেই
প্রাসাদে তুমি চিরস্থায়ীভাবে বসবাস
করবে। যুবক জানতো যে, মালিক
ইবনে দীনার যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস
এবং সমকালীন বুযুর্গদের
মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন
আল্লাহর ওলী। তাই তার
প্রস্তাবটিকে সে অত্যন্ত গুরুত্বের
দৃষ্টিতে দেখে এবং সুযোগ গ্রহণের
প্রতি উৎসাহী হয়। সে বলে,
আমাকে একটু চিন্তা-ভাবনা করার
সুযোগ দিন। আগামীকাল
সকালে আপনি দয়া করে তশরীফ
আনলে আমার চূড়ান্ত মতামত আপনার
খেদমতে পেশ করব।
মালিক ইবনে দীনার সেদিন চলে যান।
রাতব্যপী তিনি ঐ যুবকের
বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন এবং শেষ
রাত্রে তাহাজ্জুদের নামায আদায়
করে অত্যন্ত কাকুতি-মিনতির
সাথে যুবকের হেদায়েতের জন্য আল্লাহ
পাকের দরবারে মুনাজাত করেন। পরদিন
সকালে আবার উভয় ব্যক্তি যুবকের
বাড়ীতে যান। যুবকও তাদের জন্যই
অপেক্ষা করছিল। তাই
তাদেরকে দেখে সে অত্যন্ত আনন্দিত
হয় এবং সাদর আমন্ত্রণ জানায়।
ইবনে দীনার ঃ হে যুবক! গতকাল
আমি তোমাকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম
সে সম্পর্কে আজ তোমার মতামত
জানতে চাই।
যুবক ঃ গতকাল
আপনি আমাকে যে প্রতিশ্র“তির
কথা বলেছিলেন, তাকি আপনি পূরণ
করবেন?
ইবনে দীনার ঃ অবশ্যই!
যুবক- এই কথা শোনার সাথে সাথে এক
লক্ষ দেরহাম মালিক
ইবনে দীনারকে দিয়ে দেয়
এবং প্রতিশ্র“ত
বিষয়ে তাকে একটি ওয়াদাপত্র
লিখে দেয়ার আবেদন জানায়। মালিক
ইবনে দীনার এইভাবে একটি ওয়াদা পত্র
লিখে দেন যে, “বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহীম। আমি মালিক ইবনে দীনার এই
যুবকের সাথে ওয়াদাবদ্ধ যে, তার
নির্মাণাধীন প্রাসাদের তুলনায়
সে উন্নত মানের প্রসাদ প্রাপ্ত হবে,
যে প্রাসাদের বৈশিষ্ট্য ও
গুণাবলী হবে নিম্নাক্ত ধরণের।”
এরপর প্রাসাদের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ
করে একটি লিপি যুবককে প্রদান
করতঃ এক লক্ষ দেরহাম নিয়ে মালিক
ইবেন দীনার চলে যান। জাফর বলেন যে,
ইবনে দীনার গোটা এক লক্ষ দেরহাম ঐ
দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ফকীর-
মিসকীনদের মধ্যে বিতরণ করে দেন।
একটি দেরহামও অবশিষ্ট থাকেনি।
একটি দেরহাম নিজের কাজেও
তিনি ব্যয় করেননি।
যুবকের সৌভাগ্য
এই ঘটনার চল্লিশ দিন অতিবাহিত
হওয়ার পূর্বেই ফজরের নামায আদায়
করার পর মালিক ইবেন দীনার
মসজিদের মেহরাবের উপর
যুবককে দেয়া ঐ
প্রতিশ্রুতি লিপিটি দেখতে পান, যার
অপর পৃষ্ঠায় লেখা ছিল- হে মালিক
ইবেন দীনার! যুবকের সাথে কৃত
প্রতিশ্রুতি থেকে তুমি মুক্ত। যুবকের
সাথে তুমি যে ধরণের প্রাসাদের
প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়েছিলে,
আমি তার চেয়েও অধিক উত্তম
প্রসাদে তাকে জান্নাতে রেখেছি।
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
Next Post যুবকের কাফনে লিপি - ওলামাদের কর্তব্য
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন