সাত. যুবকটি খৃষ্টান ছিল

কোন মন্তব্য নেই
বুযুর্গদের সরল জীবন
আজকাল হজ্জ্বের সফরে যাওয়ার
পূর্বে থাকে কত ধরণের প্রস্তুতি, কত
কিছুর ব্যবস্থাপনা। কিন্তু বুযুর্গদের
জীবন ছিল অত্যন্ত সরল, সাদামাটা।
মুরীদ-শাগরিদগণ পর্যন্ত তাদের
হজ্বের সফরের খবর জানতে পারত না।
তার একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, ইবরাহীম
ইবনে খাওয়াছের ঘটনা।
তিনি যুগশ্রেষ্ঠ ওলী ছিলেন। কোথাও
সফরের ইচ্ছা করলে কোন
আলোচনা ছাড়াই, কোন প্রস্তুতি ছাড়াই
রওয়ানা হয়ে যেতেন। এভাবেই একদিন
মসজিদ থেকে বের
হয়ে একটি লোটা সঙ্গে নিয়ে তিনি হজ্জ্ব
করতে রওয়ানা হয়ে যান।
মুরীদের সহচর্য
আজকাল সাধারণ মুসলমানদের
কথা তো দূরের কথা, আলেম-ওলামাদের
মধ্যেও নফসের ইসলাহ
এবং আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধি লাভের
প্রয়াস খুব কম দেখা যায়। এ প্রয়াস
যাদের আছে, তাদের মধ্যে ইখলাস ও
উদ্যম কম পরিলক্ষিত হয়। মুরীদ
কামনা করে পীর সাহেব তাকে খুব
খাতির-তোয়াজ করুক, আদর-যতœ
করুক। কিন্তু মুরীদের থেকে এরূপ
কামনা বাঞ্ছনীয় নয়। কারণ মধু
যেখানে যেভাবে থাকে ভ্রমরকে সেখান
থেকে সেভাবেই আহরণ করতে হয়।
ইবনে খাওয়াছের মুরীদ হামিদ আসওয়াদ
ছিলেন সেই মানের মুরীদ। তিনি স্বীয়
শায়খের সহচর্যের জন্য ব্যাকুল
হয়ে থাকতেন। তাই স্বীয় পীর
ইবনে খাওয়াছকে সফরের
উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতে দেখে তিনি
নিজেও বিনা প্রস্তুতিতে,
বিনা তৈরীতে পিছে পিছে রওয়ানা হয়ে
যান এবং কাদিসিয়া নগরীতে পৌঁছেন।
পীর-মুরীদের কথাবার্তা
কাদিসিয়া পৌঁছে ইবনে খাওয়াছ
জিজ্ঞাসা করেন, “হামিদ! কোথায়
যাওয়ার ইচ্ছ করেছ?” হমিদ বললেন,
“আমি তো আপনার সফর সাথী হওয়ার
ইচ্ছা করেছি।” ইবনে খাওয়াছ বললেন,
“আমি মক্কাশরীফ যাওয়ার
ইচ্ছা করেছি।” হামিদ বললেন, “আমার
ইচ্ছাও তাই।” এবার দুজনই
মক্কা শরীফের উদ্দেশ্যে পথ অতিক্রম
করা শুরু করেন।
অপরিচিত যুবক
তিন দিনের পথ অতিক্রম করার পর
একজন অপরিচিত যুবকও তাদের
সাথী হয়ে যান।
তারা মনে মনে ধারণা করেন যে, হয়ত
এই যুবকটিও মক্কা শরীফে যাওয়ার
ইচ্ছা পোষণ করেছে। যুবকটি তাদের
সাথে একদিন-এক রাত সফর করে।
কিন্তু এ সময়ের মধ্যে তাদের
সাথে নামাযে শরীক হয়
না এবং একাকী নিজেও নামায আদায়
করে না। বিষয়টি হামিদের দৃষ্টিগোচর
হয় এবং তিনি আশ্চার্যান্বিত বোধ
করেন।
যুবক বে-নামাযী
অনেক পীর সাহেব এমন রয়েছেন যাদের
অসংখ্য মুরীদ ও ভক্ত আছে। কিন্তু
সেই পীর-মুরীদের কারও
মাঝে শরীয়তের অনুশীলন নেই।
তারা অন্যদেরকে কি হেদায়েত দিবে?
পীর নিজেই বে-নামাযী,
সুতরাং মুরীদকে নামাযের
কথা সে বলবে কি করে? কিন্তু হামীদের
পীর যেমন নিজে ছিলেণ নামাযের পাবন্দ
তেমনি হামীদও ছিলেন নামাযের
প্রতি অত্যন্ত পাবন্দ। তাই
সাথী যুবকের প্রতি তার
দৃষ্টি আকর্ষিত হয় এবং পীরের
কাছে যুবকটির নামায না পড়ার
বিষয়টি তিনি জানান।
যুবকের পরিচয়
হামীদের কথা শুনে ইবনে খাওয়াছ
যুবকটিকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“হে যুবক! তুমি নামায পড় না কেন?”
যুবক বললো, ‘নামাযের দায়িত্ব আমার
উপর নেই।’ ইবনে খাওয়াছ বললেন,
‘কেন? তুমি কি মুসলমান নও?’ যুবক
বলল, আমি মুসলমান নই,
বরং খ্রিষ্টান। খৃষ্টানদের
ধর্মে নামায নেই বিধায়
যুবকটি নামাযে শরীক হয় নি। তার
অন্তরে স্বীয় ধর্মের গুরুত্ব অত্যন্ত
বেশী ছিল। তাই সফরের অন্য
সাথীরা নামায পড়াকালে লজ্জার
খাতিরেও সে নামাযে শরীক হয়ে স্বীয়
ধর্মের বিরোধিতা করে নি। কিন্তু
মুসলিম বে-নামাযী যুবকদের
কাছে কি স্বীয় ধর্মের এতটুকু গুরুত্ব
আছে? বিধর্মীদের অনুষ্ঠান তো পরের
কথা, ইসলামী অনুষ্ঠানে নামাযের
জামাত অনুষ্ঠিত হয় আর সেই
জামাতে শরীক হতেও বহু যুবক
লজ্জাবোধ করে। বে-
নামাযী মুসলিমরা বিধর্মীদের
কাছে স্বীয় ধর্ম ও
অবস্থানকে এভাবে ক্ষুন্ন করে, কিন্তু
সতর্ক হয় না।
যুবকটি খ্রিষ্টান তরীকায়
প্রভূতে বিশ্বাসী এবং আধ্যাত্মবোধের
প্রভূতে বিশ্বাসী এবং আধ্যাত্মবোধের
অধিকারী। সে ইবনে খাওয়াছকে অবহিত
করে যে, আমি তাওয়াক্কুলের মধ্য
দিয়ে জীবন যাপন করে থাকি আর
সেটা করে থাকি আত্মপরিশুদ্ধির
কামনায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভেতর
দিয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে বনে-
জঙ্গলে ঘুরাফিরা করি। আমার
অবস্থা এই যে, আমি কারও কাছে হাত
পাতি না, আমার মাবুদকেই আমার জন্য
যথেষ্ট মনে করি।
যুবকের প্রতি অনুকম্পা
নাপাকী ঘৃণার বস্তু,
সুতরাং নাপাকীকে ঘৃণা করা স্বভাবগত
ব্যাপার। কিন্তু এই
নাপাকী কাপড়ে লাগলে কাপড়
ফেলে দেয়া যায় না, বরং পরিষ্কার
করে নিতে হয়, পরিষ্কার করার
ব্যবস্থা নিতে হয়। তদ্রুপ মানুষ
আল্লাহর পরম সুন্দর সৃষ্টি। তাই
মানুষকে ঘৃণা করা যায় না; হ্যা,
মানুষের মধ্যে বিদ্যমান কুফর, শিরক,
নেফাক ও পাপাচারিতা অবশ্যই ঘৃণার
বস্তু। এর প্রতি ঘৃণা পোষণ
করা কেবল স্বভাবগত চাহিদাই নয়,
বরং ঈমানের অঙ্গও বটে। তাই মানুষের
মধ্যে এসব কিছু পরিদৃষ্ট হলে তার
পরিশোধনে সচেষ্ট হওয়া মুমিনের
ঈমানী দায়িত্ব। এজন্য
প্রয়োজনে দূরদর্শিতা, সুকৌশল
এবং দয়া-মায়া, অনুকম্পার।
বস্তুতঃ দয়া-মায়া, স্নেহ-
মমতা মানুষকে আকৃষ্ট করে। বুযুর্গ-
মাশায়েখদের এ স্বভাব বহু
গোনাহগারদের জন্য হয়ে থাকে মুক্তির
উপায়। বুযুর্গদের সোহবত, কল্যাণ
দৃষ্টি এবং তাওয়াজ্জুহের
বরকতে অনেকের জীবন সফল
হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হতে পারে।
আল্লাহর ইচ্ছা কার জানা আছে?
তবে সময়ে সময়ে তা অনুমান করা যায়,
যেমন হয়েছিল এই খৃষ্টান যুবকের
বেলায়। ইবনে খাওয়াছ যুবকের বক্তব্য
শুনে উত্তেজিত হয়ে উঠেননি, তিক্ত
কথাও বলেননি, যুবককে ভর্ৎসনাও
করেন নি। বরং হামীদকে ডেকে বললেন,
“আমি যুবকের বক্তব্য শুনেছি।
তাকে তার অবস্থায় আমাদের
সাথে থাকতে দাও, তাকে কোন কিছু
বলো না, তার সাথে তর্ক-বিতর্কও
করো না। দেখ কি হয়?”
ইবনে খাওয়াছের এই কোমলতা ও স্নেহ
মাখা আচরণ খৃষ্টান যুবকের জন্য
যুগশ্রেষ্ঠ ওলীর সান্নিধ্যে আরো কিছু
সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়। সুযোগ
করে দেয় ইসলাম ও মুসলমানদের
সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভের।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next post আইনের প্রতি শ্রদ্ধা - কাবা শরীফের বরকত

কোন মন্তব্য নেই :