আইনের প্রতি শ্রদ্ধা - কাবা শরীফের বরকত

কোন মন্তব্য নেই
আইনের প্রতি শ্রদ্ধা
ইবনে খাওয়াছ মরু
নগরীতে পৌঁছে সাধারণ পোষাক
খুলে নিজ হাতে ধুয়ে পরিষ্কার করত
হজ্বের উদ্দেশ্যে এহরামের কাপড়
পরেন এবং এহরামের নিয়ত করেন। এ
সময় খৃষ্টান
যুবকটিকে কাছে ডেকে এনে স্নেহের
সুরে বেলনঃ হে যুবক! তোমার নাম কি?
যুবক বলেঃ আমার নাম ‘আব্দুল মসীহ।’
ইবনে খাওয়াছ তখন যুবককে কোমল
স্বরে বলেনঃ হে আব্দুল মসীহ! ঐ দেখ
সামনে হরম শরীফের সীমানা। আল্লাহ
পাক মুশরিকদেরকে এই
সীমানা অতিক্রম করতে নিষেধ
করেছেন ঃ
ﺍﻧﻤﺎ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻮﻥ ﻧﺠﺲ ﻓﻼ
ﻳﻘﺮﺑﻮﺍ ﺍﻟﻤﺴﺠﺪ ﺍﻟﺤﺮﺍﻡ
অর্থ ঃ ‘মুশরিকরা অপবিত্র।
সুতরাং তারা মসজিদে হারামের
ধারে কাছেও যাবে না।’
তুমি নফসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছ
এবং স্বীয় অবস্থা সম্পর্কে অবগত
আছ। তোমার জন্য হরম শরীফ
অতিক্রম করার অনুমতি নেই। তাই
আমি আর তোমাকে সাথে থাকার
অনুমতি দিতে পারছি না। তুমি আল্লাহ
পাকের বিধান লংঘন করো না।
যদি তুমি সীমা অতিক্রম কর
তাহলে তোমাকে দায়ী হতে হবে।
আরাফার ময়দানে যুবক
ইবনে খাওয়াছের নছীহত শ্রবণ
করে যুবকটি আল্লাহর বিধানের
প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে হরমের
সীমা অতিক্রম করা থেকে বিরত থাকে।
কিন্তু তার অন্তর আর বিরত
থাকে নি। অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন ও
উৎকর্ষ সাধনের চেতনায় উদ্বুদ্ধ
হয়ে সে স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয়।
আল্লাহর মারিফাত লাভে ও তার
নৈকট্য লাভে ধন্য হওয়ার প্রেরণায়
সে ব্যাকুল হয়ে পড়ে। তার মনে জাগেÑ
আমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন আমি তার
গোলামীর
স্বীকৃতি না দিয়ে জীবনে যা ক্ষতি
করেছি তা অপূরণীয় ক্ষতি। বুদ্ধিমান
সেই যে অনুতপ্ত হয় ও
জীবনে সংশোধনী আনে। তাই আমার
ভুলের অবসান করতেই হবে। হামীদ
বলেন, “আমরা খৃষ্টান
যুবকটিকে পথে রেখে চলে যাই। এরপর
আমরা যখন যিলহজ্জের ৯
তারিখে আরাফার ময়দানে মুনাজাত রত,
তখন আমাদের
খুঁজতে খুঁজতে যুবকটি তাড়াহুড়া করে
আমাদের কাছে এসে পৌঁছে যায়।
আকৃতি-প্রকৃতি পরিবর্তনের কারণ
রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“তোমরা কেঁদে কেঁদে আল্লাহর নিকট
মুনাজাত করবে,
যদি কান্না না আসে তাহলে
ক্রন্দনকারীদের আকৃতি ধারণ
করে ক্রন্দন করবে।” তাতে লাভ
হবে কি? সে লাভের প্রতি ইঙ্গিত
করে ইরশাদ হয়েছেÑ ﻫﻢ ﺍﻟﺠﻠﺴﺎﺀ
ﻻﻳﺸﻘﻲ ﺟﻠﻴﺴﻬﻢ ‘আল্লাহপাক তাঁর
প্রিয় বান্দাদের সান্নিধ্য
লাভকারীদেরকে বঞ্চিত করেন না।’
আতরের দোকানে বসলে অবশ্যই
সুগন্ধে মোহিত হওয়া যায়। বুযুর্গদের
পোষাক পরিধান করলে মানুষ
তাকে বুযুর্গ
মনে করে এবং তাকে বুযুর্গের সম্মান
প্রদর্শন করে থাকে। আল্লাহ পাক
তার বিধানের বাহ্যিক
আকৃতি ধারণকারীদেরকেও বঞ্চিত
করেন না। বরং বাহ্যিক এই আকৃতির
সুবাদে বাতেনী প্রকৃতির পরিবর্তনও
করে দেন। এজন্যই ইসলামে বাহ্যিক
আকৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। বাহ্যিক
আকৃতির কারণে বাতেনী প্রকৃতির
পরিবর্তনের যথেষ্ট উদাহরণ
ইতিহাসের পাতায় বিদ্যমান।
এহরামের বরকত
তারই একটি উদাহরণ খৃষ্টান এই যুবক।
এই যুবক আরাফার
ময়দানে ইবনে খাওয়াছের
দরবারে লুটিয়ে পড়ে। ইবনে খাওয়াছ
তাকে জিজ্ঞাসা করেন, “হে আব্দুল
মসীহ! কী ব্যাপার? তোমার কী হয়েছে?
তুমি যে এহরাম পরিধান করে আছো?”
যুবকটি উত্তর দিল, “আমাকে আর
আব্দুল মসীহ বলবেন না, আমি আব্দুল
মসীহ (মসীহের গোলাম) নই, বরং মসীহ
যার গোলাম আমি তারই গোলাম।”
ইবনে খাওয়াছ অত্যন্ত আনন্দিত
হয়ে তার বৃত্তান্ত
জানতে চাইলে যুবকটি বলল,
“আপনারা চলে আসার পর
আমি সেখানে বসে থাকি।
ইতোমধ্যে হাজীদের
একটি কাফেলা সেখানে আসে।
আমি এহরাম
পরে মুসলমানী আকৃতি ধারণ
করে তাদের
সাথে মক্কা নগরীতে প্রবেশ করি।
কাবা শরীফের বরকত
পৃথিবীর প্রথম ঘর আল্লাহর ঘর
কাবা শরীফ। এই ঘরের সাথে জড়িত
আছে বহু ঘটনা, বহু ইতিহাস। এর
বরকতে ধন্য হয়েছে বিশ্ববাসী।
মানুষের প্রাণকেন্দ্র, আল্লাহর
তাজাল্লীর কেন্দ্র বিন্দু এই
কাবা শরীফ হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ
স্থান। যারা তাতে প্রবেশ করে,
কাবা শরীফ তাদের জন্য নিরাপত্তার
পথ সুগম করে। কেবল দেহের
নিরাপত্তাই নয়, আত্মার নিরাপত্তার
পথও সুগম করে। কেবল ইহকাল নয়,
পরকালের নিরাপত্তার জন্যও বিহিত
ব্যবস্থা করে। হাজীগণ কাবা শরীফের
প্রতি নিজেদের দৃষ্টি নিবন্ধ করেন,
আর কাবা শরীফের অধিপতি মহান
রাব্বুল আলামীন হাজীদের
অন্তরে স্বীয় রহমতের দৃষ্টি আরোপ
করেন। হাজীগণ এহরামের কাপড়
দ্বারা তাদের দেহকে সুসজ্জিত করেন
আর আল্লাহ পাক স্বীয় মারিফাতের
দ্বারা তাদের অন্তরকে শক্তিশালী ও
সজীব করেন। এই বরকত থেকে কেউ
বঞ্চিত হয় নি। তার কি লাভ হয়েছিল,
তা সে নিজেই ইবনে খাওয়াছের
কাছে বর্ণনা করে বলে,
“আমি মুসলমানদের
আকৃতি ধরে কাবা শরীফের
সামনে দাঁড়াই। কাবা শরীফের উপর
আমার দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে ইসলাম
ব্যতীত সমস্ত মত, পথ ও ধর্ম-
কর্মের অসারতা আমার
অন্তরে সুস্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে। তাই
বিলম্ব না করে আমি গোসল
করতঃ আল্লাহর প্রতি ঈমান
আনি এবং হজ্জ্বের নিয়তে পুণরায়
এহরাম পরিধান করি। আজ সকাল
থেকে আপনাদের তালাশ করে করে এখন
আপনাদের সাক্ষাত লাভে ধন্য হলাম।”
হামীদ বলেন, “তার অবশিষ্ট জীবন
বুযুর্গদের
সান্নিধ্যে কাটে এবং আল্লাহর
মারিফাতের সাধনা-মুজাহাদার
মধ্যে দিয়ে সে মৃত্যুবরণ করে।


শেয়ার করে আপনার বন্ধুদেরকে জানান ।এটা আপনার আমার সকলের দ্বায়িত্ব ।প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ রুবেল উদ্দিন

Next post যুবকদের প্রতি আবেদন

কোন মন্তব্য নেই :