ওসিকে কলগার্ল সরবরাহ করতেন এসআই
ওয়েছ খছরু ও মিনহাজ উদ্দিন, সিলেট
থেকে: সিলেটের গোয়াইনঘাট
থেকে সাতকানিয়া বদলি হওয়া এসআই
নাজমুল ওসি মোকসেদুল
মোমিনকে কলগার্ল সরবরাহ করতেন।
পর্যটন এলাকার একাধিক হোটেল ও
রেস্ট হাউজগুলোই নিয়ন্ত্রণ করতেন
নাজমুল। তিনি প্রায় রাতেই ডিউটির
নামে জাফলংয়ে পড়ে থাকতেন। আর
এখানে আসা নারীদের
নিয়ে তিনি হোটেলগুলোয়
মনোরঞ্জনে মেতে উঠতেন।
পাশাপাশি তাকে খুশি রাখতে এখান
থেকে তিনি কলগার্ল সরবরাহ করতেন
ওসির বাংলোয়। গোয়াইনঘাট থানায়
অন্য পুলিশ সদস্যরা এ
বিষয়টি জানলেও ভয়ে মুখ খুলেননি।
ওসি মোমিন ও এসআই
নাজমুলকে থানা থেকে প্রত্যাহারের পর
তাদের কুর্কীতি এখন রটছে খোদ
পুলিশেরই মুখে মুখে। জানা গেছে,
জাফলংয়ের স্থানীয় যুবলীগের
একটি অংশের সঙ্গে ছিল এসআই
নাজমুলে দহরম-মহরম। তাদের
শেল্টারে মামার বাজারে হোটেলের
ম্যানেজারকে ম্যানেজ করে নাজমুল
প্রতিরাতে মেতে উঠতেন আমোদ-
প্রমোদে। সহযোগীদের নিয়ে নাজমুল
প্রতিরাতে পর্যটন হোটেলের ৩৪ ও
৩৫নং রুমে জুয়া মদ আর নিশি কন্যার
সঙ্গে মেতে উঠতেন
বলে স্থানীয়রা জানান। শুধু
নিজে কিংবা বন্ধুবান্ধবই নয় খোদ
ওসি মোমিনকেও তিনি সঙ্গে রাখতেন
তার আনন্দ আয়োজনে। তবে এসব
হোটেলে নয়, গভীর রাতে নিজের
আমোদ-ফুর্তি শেষ হলে নিজ
মোটরসাইকেলে পর্যটন
এলাকা জাফলং থেকে কলগার্ল
নিয়ে থানার সম্মুখ পর্যন্ত
নিয়ে আসতেন নাজমুল।
স্যারকে খুশি রাখতেই
থানা অভ্যন্তরের ওসির কোয়ার্টার
পর্যন্ত কলগার্ল ও মাদক সরবরাহ
করতেন তিনি। আর এ
কাজে তিনি থানার সোর্স
কয়েকজনকে ব্যবহার করতেন।
ওসি মোমেনের সঙ্গে ঘুষ, নারী আর
মাদক বিষয়ে ফ্রি-স্টাইল
চলাফেরা করার কারণে এসআই
নাজমুলকে ভয় পেতেন থানার অন্য
কর্মকর্তারা। বদলি আর হয়রানির
ভয়ে তাদের অপকর্ম নীরবে সহ্য
করতেন তারা। অনেকে এসব অপকর্ম
অসহ্য হওয়াতে যোগদানের কয়েকদিনের
ভেতরেই বদলিও হয়েছেন।
ওসি মোমেনের গোয়াইনঘাটে পাঁচ মাসের
কর্মকালে অন্তত ১২ জন অফিসারই
অনিচ্ছাকৃত বদলি হয়েছেন। তাদের
মধ্যে একজন ছিলেন এসআই এনাম।
চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে থানায়
যোগদানের পর তিনি গোয়াইনঘাটের
সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পর্যটন
এলাকা জাফলংকে মাদকমুক্ত
করে ছাড়বো। অনেকটা সফলও
হয়েছিলেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। মাত্র
কয়েকদিনে মাদক জোন সোনাটিলা,
বল্লাঘাট, মামার বাজার,
মোহাম্মদপুরসহ আশপাশে অভিযান
চালিয়ে একাধিক মাদক
বিক্রেতাকে মাদকসহ আটক
করে জেলে পাঠিয়েছিলেন তিনি।
অভিযান অব্যাহত রাখায় মাদক
এলাকার সম্রাটদের কাছে এসআই এনাম
ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। এসব
কর্মতৎপরতার
কারণে এলাকাবাসী তাকে সাধুবাধ
জানিয়ে সহযোগিতাও করতেন। এ
অবস্থায় বদলি হওয়ার
আগে জাফলংয়ের পাথরখেকো চক্রের
বিরুদ্ধে পরিচালিত অন্য
একটি অভিযানকে কেন্দ্র
করে ওসি মোমেনের সঙ্গে মনোমালিন্য
দেখা দিলে অনেকটা অভিমানে সমপ্রতি বদলি হয়ে যান
এসআই এনাম। এ ব্যাপারে চট্টগ্রামের
বন্দর থানায় কর্মরত এস আই এনামের
সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ
হলে তিনি জানান, ওসি মোখসেদুল
মোমিনের যন্ত্রণার
কারণে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও
আমি ওখান থেকে চলে আসতে বাধ্য
হয়েছি। তার অধীনে কাজ
করে শান্তি পাওয়া যায় না। তার
অধীনে যারা চাকরি করবেন তাদের সব
সময় বিপদে পড়ার আশঙ্কা আছে।
গোয়াইনঘাটে ওসি মোমেন যোগদানের
পর প্রতিরাতে মোটা অংকের
উৎকোচের বিনিময়ে গরু চুরি, ডাকাতি,
ছিনতাই, ফেন্সিডিলসহ মাদক, জোয়া,
মালজোড়া গান, চোরচালান,
চোরাকারাবারিদের নিকট
থেকে মোটা অংকের
টাকা খেয়ে করিডোর ফাঁকি দিয়ে ভারত
থেকে গরু আমদানিতে সহায়তা করা,
থানা সম্মুখসহ উপজেলার
প্রতিটি বাজারে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধঘোষিত
ভারতীয় তীরখেলা পরিচালনাসহ
সর্বব্যাপী নানা অপরাধ সংগঠিত
হতো। বড় অংকের টাকার
বিনিময়ে ওসি মোমেন এলাকার সচেতন
মহলে বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা নিতেন।
তার অপতৎপরতা থেকে বাদ
যাননি সাংবাদিকরাও। গোয়াইনঘাট
প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ
সম্পাদকের বিরুদ্ধে জিডি নিয়েছেন
ওসি মোমিন। তার যোগদানের পর
গোয়াইনঘাট থানায় সৃষ্ট ক্যাশিয়ার
পদেও তিনি কয়েক দফা রদবদল করেন।
ওসি মোমেনের একান্ত পছন্দসই
হওয়াতে দুর্নীতিবাজ এসআই নাজমুল
ছিলেন এসব যাবতীয় অপকর্মের
মূলহোতা। ওসির
শেল্টারে চালিয়ে যাওয়া এসআই
নাজমুলের এসব অপকর্ম এক সময়
নজরে আসে পুলিশের ঊর্ধ্বতন
কর্তৃপক্ষের। গত কয়েক দিন
আগে সিএমপি’র সাতকানিয়া থানায়
বদলি করা হয় দুর্নীতিবাজ এসআই
নাজমুলকে। বদলির পরও ওখান
থেকে থানার সোর্সদের
মাধ্যমে তিনি টেলিফোনে ওসি মোমেনের
জন্য কলগার্ল ও মাদক যোগাড়
করে দিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার একাধিক অফিসার
নাম না প্রকাশের শর্তে এ
প্রতিনিধিকে বলেন, গোয়াইনঘাটের
যাবতীয় অপরাধ তৎপরতার সমর্থক
ছিলেন ওসি ও এসআই। এসআই
নাজমুলের বদলির পরও নারী ও মাদকের
প্রতি বিন্দুমাত্র লোভ
কমেনি ওসি মোমেনের।
থানা অভ্যন্তরের কোয়ার্টারে প্রায়
প্রতিরাতে মাদকাসক্ত হয়ে কলগার্ল
নিয়ে আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠতেন
ওসি মোমেন। গোয়াইনঘাট থানা পুলিশের
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক
কর্মকর্তা জানান, গত রোববার
রাতে আমোদ-
প্রমোদকালে স্ত্রী হাতে যে কর্লগার্লসহ
ওসি মোমিন আটক হয়েছেন ওই
কলগার্লকেও এসআই নাজমুল
চট্রগ্রাম থেকে পাঠিয়েছেন। এ
ব্যাপারে চট্রগ্রামের
সাতকানিয়া থানায় কর্মরত এসআই
নাজমুলের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের
চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন