মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১ →পাতা ৪←

কোন মন্তব্য নেই
হুদহুদ পাখি সুলায়মান (আঃ)-কে রাণী বিলকীসের জাতির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিল,
وَجَدتُّهَا وَقَوْمَهَا يَسْجُدُوْنَ لِلشَّمْسِ مِنْ دُوْنِ اللهِ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ أَعْمَالَهُمْ فَصَدَّهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ فَهُمْ لاَ يَهْتَدُوْنَ-
‘আমি তাকে ও তার সম্প্রদায়কে দেখলাম তারা আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যকে সিজদা করছে। শয়তান তাদের দৃষ্টিতে তাদের কার্যাবলী সুশোভিত করে দিয়েছে। অতঃপর তাদেরকে সৎপথ থেকে নিবৃত্ত করেছে। অতঃপর তারাসৎ পথ পায় না’ (নামল ২৭/২৪)
সূরা আনকাবূতের ৩৮ নং আয়াতেও এ বিষয়ে আলোচনা এসেছে।
৭. কৃত ওয়াদা বা অঙ্গীকার ভঙ্গ করা: শয়তান মানুষের সাথে ওয়াদা করে যে, সে খারাপ কাজ করলে মানুষদেরকে সাহায্য করবে; পরে সে ওয়াদা ভঙ্গ করে।আল্লাহ বলেন,
يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيْهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُوْراً-
‘সে তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়। শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সব প্রতারণা বৈ কিছু নয়’ (নিসা ৪/১২০)
এছাড়া যাকাত দিলে ফকীর হয়ে যাবে এ ধরনের ধোঁকা শয়তান মানুষকে দিয়ে থাকে। আল্লাহ বলেন,
الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاء وَاللهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلاً وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيْمٌ-
‘শয়তান তোমাদেরকে অভাব-অনটনের ওয়াদা (ভীতি প্রদর্শন) করে এবং অশ্লীলতার আদেশ দেয়। পক্ষান্তরে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও বেশী অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞ’ (বাক্বারাহ ২/২৬৮)
ক্বিয়ামতের দিন যারা শয়তানের ওয়াদা অনুযায়ী চলেছে তারা যখন দেখবে যে তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে নাতখন তারা শয়তানকে দোষারোপ করবে। এর জবাবে শয়তান বলবে,
وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الأَمْرُ إِنَّ اللهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ-
‘যখন সব কিছুর মীমাংসা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবে,আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্রুতি, আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করিনি’ (ইবরাহীম ১৪/২২)
৮. প্রতারণা করা: শয়তান মানুষকে যে ওয়াদা দেয় সে ওয়াদা আসলে ওয়াদা নয় বরং প্রতারণা মাত্র। আদমকে সিজদা না করার ঘটনায় আল্লাহ শয়তানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُوْرًا-
‘প্রতারণা ছাড়া শয়তান কোন ওয়াদা দেয় না’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৬৪)
অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
‘এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য শত্রু করেছি শয়তান, মানব ও জিনকে। তারাপ্রতারণা করার জন্য একে অপরকে কারূকার্যখচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়। যদি আপনার পালনকর্তা চাইতেন, তবে তারা এ কাজ করত না’ (আন‘আম ৬/১১২)
৯. খারাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়া : আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لاَ تَتَّبِعُوْا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ وَمَنْ يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ-
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা। যে কেউ শয়তানের পদাংক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তাননির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে’ (নূর ২৪/২১)
১০. মুসলমানদেরকে বিভক্ত করা: হাদীছে কুদসীতে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
আল্লাহ বলেন, وَإِنِّيْ خَلَقْتُ عِبَادِيْ حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمْ الشَّيَاطِيْنُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِينِهِمْ وَحَرَّمَتْ عَلَيْهِمْ مَا أَحْلَلْتُ لَهُمْ-
‘বান্দাদেরকে আমি আমার প্রতি একাগ্রচিত্ত (তাওহীদমুখী) করে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তান তাদেরকে বিভ্রান্ত করে দিয়েছে। ফলে আমি তাদের জন্য যা হালাল করেছিলাম তা হারাম করে দিয়েছে’ । [১৭]
ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,

শয়তানের চক্রান্তের মধ্যে অন্যতম চক্রান্ত হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে একই ঢং-এর একই পোষাক পরিধান, নির্দিষ্ট চাল-চলন অবলম্বন, নির্দিষ্ট পীর-মুরশিদ গ্রহণ, নবাবিষ্কৃত তরীকা ও নির্দিষ্ট একটি মাযহাব গ্রহণের আদেশ দেয়া এবং ঐ গুলিকে আঁকড়ে ধরা এমনভাবেতাদের উপর আবশ্যিক করে দেয়, যেমন তারা ফরয কার্যাবলী আকঁড়ে ধরে থাকে। যে ব্যক্তি তাদের ঐ সব কাজ করে না তাকে তারা দোষারোপ করে এবং নিন্দা করে। নির্দিষ্ট মাযহাব সমূহের অধিকাংশ মুক্বাল্লিদ ও ভ্রান্ত আক্বীদাবলম্বী ছূফীদের বিভিন্ন তরীকার মুরীদরা এ ধরনের আচরণ করে থাকে। যেমন-নকশাবন্দিয়াহ, ক্বাদরিয়াহ, সহরওয়ারদিয়াহ, শাযলিয়াহ তাজানিয়াহ প্রভৃতি দলের অনুসারীরা। তারা শরী‘আত ও হাকীকত নামেরবিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।ফলে তারা যাবতীয় বিদ‘আতী রসম-রেওয়াজে নিমজ্জিত হয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকা ও এদের তরীকার মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান রয়েছে। [১৮]
১১. মুমিনদের সাথে তর্কের জন্য শয়তান তার অনুসারীদের পরামর্শ দেয় : আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الشَّيَاطِيْنَ لَيُوْحُوْنَ إِلَى أَوْلِيَآئِهِمْ لِيُجَادِلُوْكُمْ وَإِنْأَطَعْتُمُوْهُمْ إِنَّكُمْ لَمُشْرِكُوْنَ-
‘নিশ্চয়ই শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের অনুগত্য কর, তোমরাও মুশরিক হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৬/১২১)
১২. অপচয় ও অপব্যয় করা: অপচয় ও অপব্যয় শয়তানের কাজ। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُواْ إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُوْراً-
‘নিশ্চয়ই অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৭)
১৩. ধোঁকা দেওয়া: আল্লাহ শয়তানের কাজ সম্পর্কে বলেন,
وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنْسَانِ خَذُوْلاً-
‘শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোঁকা দেয়’ (ফুরক্বান ২৫/২৯)
১৪. ভাল কাজে বাধা ও মন্দ কাজে উৎসাহ দান: আল্লাহ মুমিনদেরকে সতর্ক করে বলেন,
وَلاَ يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ-‏

আরো পড়ুন......→মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১←→পাতা ৫←

কোন মন্তব্য নেই :