মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১ →পাতা ৩←
‘হে বনী আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের ইবাদত করো না, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু এবং আমার ইবাদত কর। এটাই সরল পথ। শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে।তবুও কি তোমরা বুঝ না?’ (ইয়াসীন ৩৬/৬০-৬২)শয়তান মানুষকে সব সময় জাহান্নামে নিতে চায়। তাই আমাদের উচিৎ শয়তান সম্পর্কে সচেতন থাকা ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর অনুসরণ করা।
শয়তানের কাজসমূহ :
শয়তানের কাজ হ’ল মানুষকে খারাপ ও মন্দ কাজের প্রতি আহবান করা। পৃথিবীতে যত মন্দকাজ আছে সবগুলিই শয়তানেরকাজ। নিম্নে কুরআন ও হাদীছের আলোকে শয়তানের কতিপয় কাজ উল্লেখ করা হ’ল।-
১. মানুষকে বিপথগামী করা : আদম (আঃ)-কে সিজদা না করার কারণে যখন শয়তানকে দুনিয়াতেনামিয়ে দেয়া হ’ল তখন সে মানুষকে বিপথগামী করার দৃপ্ত শপথ করে। কুরআনের ভাষায়,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِيْنَ-
‘সে (শয়তান) বলল, আপনার ইয্যতের কসম! আমি অবশ্যই তাদের সবাইকে বিপথগামী করেদেব’ (ছোয়াদ ৩৮/৮২)
বিপথগামী করার মাধ্যমে শয়তান মানুষদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়।আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوّاً إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيْرِ-
‘শয়তান তোমাদের শত্রু। সুতরাং তাকে শত্রু হিসাবে গ্রহণ কর। সে তো তার দলবলকেআহবান করে শুধু এজন্য যে, তারা যেন জাহান্নামী হয়’ (ফাতির ৩৫/৬)
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন,
আমাদের জন্য রাসূল (ছাঃ) একটা দাগ টানলেন, অতঃপর বললেন, ‘এটা আল্লাহ তা‘আলার সোজা ও সঠিক রাস্তা। অতঃপর তার ডানে ও বামে আরো কিছু দাগ টানলেন। তারপর বললেন, এগুলি অন্য রাস্তা, যাদের প্রত্যেকটার শুরুতে শয়তান বসে মানুষদেরকে তারদিকে ডাকছে। তারপর কুরআন থেকে পড়লেন ‘অবশ্যই এর অনুসরণ করবে এবং অন্যান্য রাস্তাসমূহকে অনুসরণ কর না, তাহ’লে এ রাস্তাসমূহ তোমাদেরকে তাঁর রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। আল্লাহ তা‘আলা এভাবেই তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, যাতে তোমরা মুত্তাক্বী হ’তে পার’। [১৪]
২. চক্রান্ত করা: শয়তান সব সময় মানুষের বিরুদ্ধে চক্রান্তকরে থাকে। তার চক্রান্ত দুর্বল উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,
فَقَاتِلُوْا أَوْلِيَاءَالشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيْفًا-
‘সুতরাং তোমরা জিহাদ করতে থাক শয়তানের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে। নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল’ (নিসা ৪/৭৬)
৩. মানুষের মাঝে শত্রুতা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করা ও ইবাদত থেকে বিরত রাখা: আল্লাহ বলেন,
إِنَّمَا يُرِيْدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُوْقِعَ بَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةَ وَالْبَغْضَاءَ فِي الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَيَصُدَّكُمْ عَنْ ذِكْرِ اللهِ وَعَنِ الصَّلاَةِ فَهَلْ أَنْتُم مُّنْتَهُوْنَ-
‘শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের পরস্পরের মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিতেএবং আল্লাহর স্মরণ ও ছালাত থেকে তোমাদের বিরত রাখতে। অতএব তোমরা নিবৃত্ত হবে কি?’ (মায়েদা ৫/৯১)
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি ‘আরব উপদ্বীপের মুসলমানদের কাছ থেকে শয়তান আনুগত্য পাওয়ার ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ, মনোমালিন্য ও পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়নি’। [১৫]
৪. আল্লাহর বান্দাদের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি করা: আল্লাহ বলেন,
وَقُل لِّعِبَادِيْ يَقُوْلُواْ الَّتِيْ هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلإِنْسَانِ عَدُوّاً مُّبِيْناً-
‘আমার বান্দাদেরকে বলে দিন, তারা যেন যা উত্তম এমন কথাই বলে। শয়তান তাদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধায়। নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্রু’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৫৩)
জাবির (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন
‘শয়তান তার সিংহাসনকে পানির উপর স্থাপন করে। তারপর মানব সমাজে তার বাহিনীসমূহ প্রেরণ করে। তার দৃষ্টিতে ফেৎনা সৃষ্টিকরায় যে যত বড়, মর্যাদায়সে তত বেশী নৈকট্যের অধিকারী। তাদের কেউ একজন আসে আর বলে যে, আমি অমুকের পেছনে লেগেই থাকি। অবশেষে তাকে এমন অবস্থায় রেখে এসেছি যে, সে এমন এমন জঘন্য কথা বলে বেড়াচ্ছে। একথা শুনে ইবলীস বলে, না, আল্লাহর শপথ! তুমি কিছুই করনি। আবার আরেকজন এসে বলে,আমি অমুক ও তার স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়েই তবেছেড়েছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, একথা শুনে শয়তান তাকে কাছে টেনে নেয় এবং বলে, কত উত্তম কাজই না তুমি করেছো!’ [১৬]
৫. প্ররোচিত করা: শয়তান মানুষকে খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। সে সর্বপ্রথম প্ররোচনা দিয়েছিল আদম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রী হাওয়া (আঃ)-কে। আল্লাহ বলেন,
فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِن سَوْءَاتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـذِهِ الشَّجَرَةِ إِلاَّ أَنْ تَكُوْنَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُوْنَا مِنَ الْخَالِدِيْنَ-
‘অতঃপর শয়তান উভয়কে প্ররোচিত করল, যাতে তাদের অঙ্গ, যা তাদের কাছে গোপন ছিল, তাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়। সে বলল, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদেরকে এ বৃক্ষ থেকে নিষেধ করেননি; তবে তা এ কারণে যে, তোমরা নাআবার ফেরেশতা হয়ে যাও কিংবা হয়ে যাও চিরকাল বসবাসকারী’ (আ‘রাফ ৭/২০)
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
فَوَسْوَسَ إِلَيْهِ الشَّيْطَانُ قَالَ يَا آدَمُ هَلْ أَدُلُّكَ عَلَى شَجَرَةِ الْخُلْدِ وَمُلْكٍ لَّا يَبْلَى-
‘অতঃপর শয়তান তাকে প্ররোচনা দিল, বলল, হে আদম! আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্তকাল জীবিত থাকার বৃক্ষের কথা এবং অবিনশ্বর রাজত্বের কথা’ (ত্বোয়া-হা ২০/১২০)
৬. পাপ কাজকে সুশোভিত করা: শয়তান পাপ কাজকে সুশোভিত করেযাতে মানুষ সে দিকে আকৃষ্ট হয়। আল্লাহ বলেন,
وَلَـكِنْ قَسَتْ قُلُوْبُهُمْ وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُواْ يَعْمَلُوْنَ-
‘বস্ত্ততঃ তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেল এবং শয়তান তাদের কাছে সুশোভিত করে দেখাল, যে কাজ তারা করছিল’ (আন‘আম ৬/৪৩)
আরো পড়ুন......→মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১←→পাতা ৪←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন