মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১ →পাতা ২←
যারা কুফরী করে ও আমার নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে তারাই জাহান্নামী। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে’ (বাক্বারাহ ২/৩৮-৩৯)এই হল শয়তান যাকে আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ)-এর পূর্বে সৃষ্টি করা হয়েছিল। শয়তান জিন জাতির অন্তর্গত, যাদেরকে আল্লাহ আগুন দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তারা আদম সন্তানের মতপানাহার ও বংশ বিস্তার করে। তাদের কতক ঈমানদার ও কতক কাফের। [৪]
শয়তানের বংশধর সম্পর্কে আললাহ বলেন,
أَفَتَتَّخِذُوْنَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُوْنِيْ وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِئْسَ لِلظَّالِمِيْنَ بَدَلاً-
‘তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে এবং তার বংশধরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। এটা যালিমদের জন্য খুবই নিকৃষ্ট বদল’ (কাহফ ১৮/৫০)
জিনদের মধ্যে যারা কাফির, শয়তান তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আর তাদের প্রধান নেতা হ’ল মানবজাতির শত্রু ইবলীস। [৫]
শয়তান মানুষ, পশু-পাখি, এমনকিবন্য প্রাণীর আকৃতি ধারণ করতেপারে। যেমন কুরাইশদের নিকট বদর যুদ্ধের দিন সুরাকা বিন মালিকের আকৃতিতে এবং দারুন নদওয়ার বৈঠকে নাজদী শায়খের রূপ ধরে এসেছিল। শয়তান বাস্তবের ন্যায় স্বপ্নেও আসতে পারে এবং যে কোন রূপ ধারণ করতে পারে। তবে রাসূল (ছাঃ)-এর রূপ ধারণ করতেপারে না। [৬]
‘শয়তান’ শব্দের অর্থ- দুরাচারী, পাপাচারী ইত্যাদি। অধিকাংশ শয়তান পাপের স্থান, ময়লা-আবর্জনার জায়গা যেমন পায়খানা, গোসলখানায় অবস্থানকরে। এ কারণে রাসূল (ছাঃ) এসব স্থানে ছালাত পড়তে নিষেধ করেছেন ও পায়খানায় প্রবেশ করতে নির্দিষ্ট দো‘আ শিক্ষা দিয়েছেন। [৭] আর শয়তান শুধু জিনদের মধ্যে থেকে নয় বরং মানুষের মধ্যেও হয়ে থাকে। মানুষদের মধ্যে যারা অন্যায় কাজ করে, অন্যকে অন্যায়ের আদেশ দেয়, অন্যায় কাজে উৎসাহিত করে তারাই মানব শয়তান। এজন্যই কুরআনের সূরা নাসে জিন শয়তানের কাছ থেকে আশ্রয় গ্রহণের সাথে সাথে মানব শয়তান থেকেও আশ্রয়ের নির্দেশ এসেছে। হাসান বছরী (রহঃ) বলেন,‘শয়তান দু’প্রকার; জিন শয়তান সর্বদা মানুষের মনেধোঁকা দেয়। আর মানুষ শয়তান প্রকাশ্যে ধোঁকা দেয়’ । [৮]
ক্বাতাদাহ বলেন,
‘জিনের মধ্যেও শয়তান আছে, মানুষের মধ্যেও শয়তান আছে। তারা নিজ নিজ দলভুক্তদেরকে পাপকার্য শিক্ষা দেয়। তোমরা উভয় শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও’। ইকরিমা (রহঃ) বলেন, ‘মানবদের শয়তান হচ্ছে তারাই যারা মানুষকে পাপকার্যের পরামর্শ দেয়’ । [৯]
একদা আবু যার গিফারী (রাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে বলেন,
তুমি কি মানুষ শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছ? লোকটি বলল, মানুষের শয়তান আছে কি? তিনি বললেন, হ্যঁা আছে। অতঃপর তিনি নিচের আয়াতটি পাঠ করলেন,
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نِبِيٍّ عَدُوّاً شَيَاطِيْنَ الإِنْسِ وَالْجِنِّ يُوْحِيْ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ زُخْرُفَ الْقَوْلِ غُرُوْراً-
‘এমনিভাবে আমি প্রত্যেক নবীর জন্য শত্রু সৃষ্টি করেছি মানুষ শয়তান ও জিন শয়তানদের মধ্য থেকে। তারাধোঁকা দেওয়ার জন্য একে অপরকে কারুকার্য খচিত কথাবার্তা শিক্ষা দেয়’ (আন‘আম ৬/১১২)
.
মানুষের ন্যায় জিন জাতির উপরও আল্লাহর ইবাদত করা ফরয (যারিয়াত ৫৬)
.
তারাও ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে (আন‘আম ৬/১৩০)
মুহাম্মাদ (ছাঃ) মানুষের ন্যায় জিনদের জন্যও রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছিলেন। সূরাজিনের শুরুতে ও সূরা আর-রহমানে জিনদেরকে আল্লাহর রাসূলের দাওয়াতের কথা বর্ণিতহয়েছে।
আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি জীবকে জোড়া জোড়া সৃষ্টি করেছেন। তাই শয়তান তথা জিনদেরও বিবাহ-শাদী হয়, ঘর-সংসার আছে এবং তাদেরও বংশ বৃদ্ধি হয় (কাহফ ১৮/৫০)
তাদের খাদ্য হচ্ছে হাড়। তা খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বললেই তা পূর্ণাঙ্গ গোশতে পরিণত হয়। আর গোবর হচ্ছে তাদের পশুর খাদ্য। [১০] শয়তান মানুষের মধ্যে প্রবেশ করতে পারে, যেভাবে রক্তনালী প্রবাহিত হয়। [১১]
মানুষকে পাপের পথে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন শয়তান সব সময় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মানব শিশু জন্মের সাথে সাথেই শয়তান তাকে আঘাত করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
مَا مِنْ مَوْلُوْدٍ يُوْلَدُ إِلاَّ وَالشَّيْطَانُ يَمَسُّهُحِيْنَ يُوْلَدُ فَيَسْتَهِلُّ صَارِخًا مِنْ مَسِّ الشَّيْطَانِ إِيَّاهُ إِلاَّ مَرْيَمَ وَابْنَهَا-
‘প্রত্যেক শিশু সন্তান জন্মগ্রহণ করার সময় শয়তান তাকে স্পর্শ করে। শয়তানের স্পর্শমাত্রই সে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু মারিয়াম (আঃ) ও তাঁর পুত্রঈসা (আঃ)-কে পারেনি’ । [১২]
আর জন্মের সময়ে প্রত্যেকেই সত্য দ্বীনের উপর থাকে কিন্তুশয়তান তাকে সত্য দ্বীন থেকে বিচ্যুত করে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,
আল্লাহ বলেন, وَإِنِّيْ خَلَقْتُ عِبَادِيْ حُنَفَاءَ كُلَّهُمْ وَإِنَّهُمْ أَتَتْهُمْ الشَّيَاطِيْنُ فَاجْتَالَتْهُمْ عَنْ دِيْنِهِمْ- ‘আমি আমার বান্দাদের ‘হানীফ’ (অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ) রূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর শয়তান তার পিছে লেগে তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে দূরে নিয়ে যায়’ । [১৩]
এমনিভাবে শয়তান প্রত্যেক মানুষকে জন্মের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এমনকি মৃত্যুরসময়ও ধোঁকা দিয়ে থাকে। তাই আল্লাহ দুনিয়াতে মানুষকে প্রেরণ করে আল্লাহর অনুসরণের নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে শয়তানের পদাংক অনুসরণ থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,
وَلاَ تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ-
‘তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না, নিশ্চয়ই সেতোমাদের প্রকাশ্য শত্রু’ (বাক্বারাহ ২/১৬৮, ২০৮; আন‘আম ৬/১৪২)
দুনিয়ার জীবন শেষে পরকালেও আল্লাহ শয়তানের অনুসরণ না করার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। তাই মানুষকে লক্ষ্য করে আল্লাহর ওয়াদা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাঁর ইবাদত করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন,
أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يَا بَنِيْ آدَمَ أَن لاَّ تَعْبُدُوْا الشَّيْطَانَإِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ، وَأَنِ اعْبُدُوْنِيْ هَذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ، وَلَقَدْ أَضَلَّ مِنْكُمْ جِبِلاًّ كَثِيْراً أَفَلَمْ تَكُوْنُوْا تَعْقِلُوْنَ-
আরো পড়ুন......→মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১←→পাতা ৩←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন