মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১ →পাতা ১←
শয়তানের পরিচয় :আদম (আঃ)-কে সৃষ্টির আগে পৃথিবীতে যে জিন জাতি বাস করত ‘ইবলীস’ ছিল তাদের অন্যতম (ক্বাহাফ-৫০)
শাহর ইবনু হাওশাব (রহঃ) বলেন,
‘ইবলীস জিন দলভুক্ত ছিল। যখন তারা পৃথিবীতে হাঙ্গামা সৃষ্টি করে, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের নিকট ফেরেশতাদের প্রেরণ করেন। ফেরেশতাগণ তাদের কতককে হত্যা করেন, কতককে বিভিন্ন দ্বীপে নির্বাসন দেন এবং কতককে বন্দী করেন। ইবলীস ছিল বন্দীদের একজন। ফেরেশতাগণ তাকে ধরে সঙ্গে করে আকাশে নিয়ে যান এবং সেসেখানেই রয়ে যায়’ । [১]
.
সে ছিল আগুনের সৃষ্টি (আর-রহমান ১৫; হিজর ২৭)
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
خُلِقَتِ الْمَلَائِكَةُ مِنْ نُوْرٍ وَخُلِقَ الْجَانُّ مِنْ مَارِجٍ مِنْ نَارٍ
‘ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। আর জিনদেরকে আগুনের শিখা থেকেসৃষ্টি করা হয়েছে’ । [২]
মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক (রহঃ) ইবনু আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,
‘পাপে লিপ্ত হওয়ার পূর্বে ইবলীসের নাম ছিল ‘আযাযীল’। সে ছিল পৃথিবীর বাসিন্দা। অধ্যবসায় ও জ্ঞানের দিক থেকে ফেরেশতাদের মধ্যে সেইছিল সকলের সেরা’। [৩]
.
অতঃপর যখন আল্লাহ আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করে ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দিলেন তাকে সিজদা করার জন্য তখন সকল ফেরেশতা সিজদা করল কিন্তু ইবলীস সিজদা করল না। আল্লাহ বলেন,‘স্মরণ কর, যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বলেছিলেন, আমি মানুষ সৃষ্টি করছি কাদা মাটি থেকে। যখন আমি তাকে সুষম করব এবং তাতে আমার রূহ সঞ্চার করব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদাবনত হবে। তখন ফেরেশতারা সকলেই সিজদাবনত হ’ল কেবল ইবলীস ব্যতীত। সে অহংকার করল এবং কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হ’ল। তিনি বললেন, হে ইবলীস! আমি যাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করলাম, তারপ্রতি সিজদাবনত হ’তে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি কি ঔদ্ধত্য প্রকাশ করলে? না তুমি উচ্চ মর্যদাসম্পন্ন? সে বলল, আমি তাঁর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদা মাটি থেকে। তিনি (আল্লাহ) বললেন,তুমি এখান থেকে বের হয়ে যাও। নিশ্চয়ই তুমি বিতাড়িত এবং তোমার উপর আমার লা‘নত স্থায়ী হবে কর্মফল দিবস পর্যন্ত। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। তিনি বললেন, তুমি অবকাশ প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হ’লে অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত। সে বলল, আপনার সম্মানের শপথ! আমি তাদের সকলকেই পথভ্রষ্টকরব। তবে তাদের মধ্যে একনিষ্ঠ বান্দাদের নয়। তিনি বললেন, তবে এটাই সত্য আর আমি সত্যই বলি। তোমার দ্বারা ও তোমার অনুসারীদেরদ্বারা আমি জাহান্নাম পূর্ণ করবই’ (ছোয়াদ-৩৮/৭১-৮৫)
উক্ত ঘটনাটি বিভিন্ন ভাবে কুরআনের সূরা বাক্বারাহ, আ‘রাফ, হিজর, বনী ইসরাঈল, ত্বা-হা ও ছোয়াদে বর্ণিত হয়েছে।
আদমকে সিজদা না করার কারণে আল্লাহ ইবলীসকে জান্নাত থেকে বের করে দেন। আদম ও হাওয়াকে জান্নাতে থাকার আদেশ দেন এবং তাদেরকে জান্নাতের সকল নে‘মত ভোগ করার অনুমতি দেন কেবল একটি বৃক্ষ ছাড়া। শয়তান আদমও হাওয়াকে বিভিন্নভাবে আল্লাহর আদেশ অমান্য করার জন্য কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।
সে আদম (আঃ)-কে এই বলে কুমন্ত্রণা দিল যে, ‘হে আদম!আমি কি তোমাকে বলে দেব অনন্ত জীবনপ্রদ বৃক্ষের কথা এবং অক্ষয় রাজ্যের কথা?’ (ত্বা-হা ১২০)
সে আরো বলল,
আল্লাহ তোমাদেরকে এই গাছেরফল খেতে নিষেধ করেছেন, কারণযদি তোমরা ফল খাও তাহ’লে তোমার ফেরেশতা হয়ে যাবে, না হয় চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। সুতরাং জান্নাতে চিরস্থায়ী হ’তে হ’লে এ বৃক্ষের ফল খাও’ (আ‘রাফ ২০-২২)
শয়তানের চক্রান্তে পড়ে আদমও হাওয়া (আঃ) এক সময় নিষিদ্ধবৃক্ষের ফল খেয়ে ফেলেন। তখন আল্লাহ ডেকে বলেন,
وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَاأَلَمْ أَنْهَكُمَا عَنْ تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَا إِنَّ الشَّيْطَآنَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ، قَالاَ رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنْفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُوْنَنَّ مِنَ الْخَاسِرِيْنَ-
‘তখন তাদের প্রতিপালক তাদেরকে ডেকে বললেন, আমি কিতোমাদেরকে এ বৃক্ষের নিকটবর্তী হ’তে বারণ করিনি এবং আমি কি তোমাদেরকে বলিনি যে, শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? তারা বলল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করেছি, যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব’ (আ‘রাফ ৭/২২-২৩)
আল্লাহ পাক আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর অপরাধ ক্ষমা করে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় নামিয়ে দিলেন এবং শয়তানকে মানুষের জন্য শত্রু করে দিলেন। আর মানব জাতির জন্য নির্দেশ দিয়ে দিলেন,
قُلْنَا اهْبِطُواْ مِنْهَا جَمِيْعاً فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُم مِّنِّيْ هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُوْنَ، وَالَّذِيْنَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بِآيَاتِنَاأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ-‘আমি বললাম, তোমরা সকলেই এ স্থান থেকে নেমে যাও। পরে যখন আমার পক্ষ থেকে তোমাদের নিকট সৎপথের কোন নির্দেশ আসবে, তখন যারা আমার সৎপথের অনুসরণ করবে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারাদুঃখিতও হবে না।
আরো পড়ুন......→←মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান – পর্ব ১→পাতা ২←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন