পুন্যের অসংখ্য পথ/পাতা ২
৪) উক্ত বর্ণনাকারী থেকেই বর্ণিত, কিছু সাহাবা বললেন, “হে আল্লাহর রসূল! ধনীরাই তো বেশী নেকীর অধিকারী হয়ে গেল। তারা নামায পড়ছে যেমন আমরা নামায পড়ছি, তারা রোযা রাখছে যেমন আমরা রাখছি এবং (আমাদের চেয়ে তারা অতিরিক্ত কাজ এই করছে যে,) নিজেদের প্রয়োজন-অতিরিক্ত মাল থেকে তারাসাহকাহ করছে।” তিনি বললেন, “আল্লাহ কি তোমাদের জন্য সাদকাহ করার মত জিনিস দান করেননি? নিঃসন্দেহে প্রত্যেক তাসবীহ সাদকাহ, প্রত্যেক তাকবীর সাদকাহ, প্রত্যেক তাহলীল সাদকাহ, ভাল কাজ নির্দেশ দেওয়া সাদকাহ ওমন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকাহ এবং তোমাদেরস্ত্রী-মিলন করাও সাদকাহ।”সাহাবাগন বললেন, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমাদের কেউ স্ত্রী-মিলন ক’রে নিজের যৌনক্ষুধা নিবারনকরে, তবে এতেও কি তার পুন্য হবে?’ তিনি বললেন,“কি রায় তোমাদের, যদি কেউ অবৈধভাবে যৌন-মিলন করে, তাহলে কি তার পাপ হবে? (নিশ্চয়ই হবে।) অনুরূপ সে যদি বৈধভাবে (স্ত্রী-মিলন করে) নিজের কামক্ষুধা নিবারনকরে, তাহলে তাতে তার পুন্য হবে।” (মুসলিম ১০০৬, আবূ দাউদ ১৫০৪,ইবনু মাজাহ ৯২৭)
৫) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিদিন যাতে সূর্য উদয় হয় (অর্থাৎ প্রত্যেক দিন) মানুষের প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষথেকে একটি করে সাদকাহ রয়েছে। ( আর সাদকাহ শুধুমাল খরচ করাকেই বলে না ; বরং) দু’জন মানুষের মধ্যে তোমার মীমাংসা করে দেওয়াটা সাদকাহ, কোন মানুষকে নিজ সওয়ারীর উপর বসানো অথবাতার উপর তার সামান উঠিয়ে নিয়ে সাহায্য করাও সাদকাহ, ভাল কথা বলা সাদকাহ, নামাযের জন্য কৃত প্রত্যেক পদক্ষেপ সাদকাহ এবং রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস দূরীভূত করাও সাদকাহ।”
৬) এটিকে ইমাম মুসলিম আয়েশা (রাঃ) থেকেও বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ আদম সন্তানের মধ্যে প্রত্যেক মানুষকে ৩৬০ গ্রন্থির উপর সৃষ্টি করা হয়েছে। (আর প্রত্যেক গ্রন্থির পক্ষথেকে প্রদেয় সাদকা রয়েছে।)
সুতরাং যে ব্যক্তি “আল্লাহু আকবার” বলল, ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলল, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলল, ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল,‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলল, মানুষ চলার রাস্তা থেকেপাথর, কাঁটা অথবা হাড় সরাল, কিম্বা ভাল কাজের আদেশ করল অথবা মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করল, (এবং সবমিলে ৩৬০ সংখ্যক পুণ্যকর্ম করল, সে ঐদিন এমন অবস্থায় সন্ধ্যা করল যে, সে নিজেকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূর করে নিল।” (সহীহুল বুখারী ২৯৮৯,২৭০৭ ও মুসলিম ৯০০৯)
৭) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল অথবা সন্ধায় মসজিদে যায়, তার জন্য আল্লাহ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করেন। যখনই সে সেখানে যায়, তখনই তার জন্য ঐ মেহমানের উপকরণ প্রস্তুত করা হয়।” (সহীহুল বুখারী ৬৬২ ও মুসলিম ৪৬৭,৬৬৯)
৮) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “হে মুসলিম নারীগন! কোন প্রতিবেশিনী যেন তার প্রতিবেশিনীর (উপঢৌকনকে) তুচ্ছ মনে না করে; যদিও তা ছাগলের পায়ের ক্ষুর হক না কেন। (সহীহুল বুখারী ২৫৬৬ ও মুসলিম ১০৩০)
৯) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “ঈমানের সওর অথবা ষাটের বেশী শাখা রয়েছে।তার মধ্যে সর্ব উওম (শাখা) ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সর্বনিম্ন (শাখা) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস (পাথর, কাঁটা ইত্যাদি) দূরীভূত করা। আর লজ্জা ইমানের একটি শাখা।” (সহীহুল বুখারী ৯ ও মুসলিম ৩৫)
১০) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “একদা এক ব্যক্তি পথ চলছিল। তার খুবই পিপাসা লাগল। অতঃপর সে একটি কূপ পেল। সুতরাং সে তাতে নেমে পানি পান করল। অতঃপর বের হয়ে দেখতে পেল যে , (ওখানেই) একটি কুকুর পিপাসার জ্বালায় জিভ বের করে হাঁপাছে ও কাদা চাটছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, ‘পিপাসাহর তাড়নায় আমি যে পর্যায় পৌছেছিলাম, কুকুরটিও সেই পর্যায় পৌছেছে।’ অতএব সে কূপে নামল তারপর তার চামড়ার মোজায় পানি ভর্তি করল। অতঃপর সে তা মুখে ধরে উপরে উঠল এবং কুকুরটিকেপানি পান করাল। আল্লাহ তাআলা তার এই আমল্কে কবুল করলেন এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।”
সাহাবাগন বললেন, “হে আল্লাহর রসূল ! চতুষ্পদ জন্তর প্রতি দয়া প্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব হবে?’’ তিনি বললেন, “প্রত্যেক জীবেরপ্রতি দয়া প্রদর্শনে নেকী রয়েছে।”
বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, “আল্লাহ তাআলা তার এই আমলকে কবুল করলেন। অতঃপর তাকে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।”
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, “ কোন এক সময় একটি কুকুর একটি কুপের চারিপাশে ঘোরা-ফিরা করছিল। পিপাসা তাকে মৃতপ্রায় করে তুলছিল। (এই অবস্থায়) হঠাৎ বনী ঈস্রাঈলের বেশ্যাদের মধ্যে এক বেশ্যা তাকে দেখতে পেল। অতঃপর সে তার চামড়ার মোজা খুলে তা হতে (কূপ হতে) পানি উঠিয়ে তাকে পান করাল। সুতরাং এই আমলের কারনে তাকে ক্ষমা করা হল।” (সহীহুল বুখারী ২৩৬৩,১৭৪,২৪৬৬ ও মুসলিম ২২৪৪)
১১) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “ আমি এক ব্যক্তিকে জান্নাতে ঘোরাফেরা করতে দেখলাম। যে (পৃথিবীতে) রাস্তার মধ্যে হতে একটি গাছ কেটে সরিয়ে দিয়েছিল, যেটি মুসলমানদেরকে কষ্টদিচ্ছিল।” (সহীহুল বুখারী ৬৫৪,৭২১,৬৫১ , মুসলিম ৪৩৭, ৪৩৯,১৯১৪ )
অন্য এক বর্ণনায় আছে, “এক ব্যক্তি রাস্তার উপর পড়ে থাকা একটি গাছের ডালের পাশ দিয়ে পার হল। সে বলল, “আল্লাহর কসম! আমি এটিকে মুসলিমের পথ থেকেঅবশ্যই সরিয়ে দেব; যাতে তাদেরকে কষ্ট না দেয়। সুতরাং তাকে (এর কারনে) জান্নাতে প্রবেশ করানো হল।।”
বুখারী-মুসলিমের আর এক বর্ণনায় আছে, “একদা এক ব্যক্তি রাস্তায় চলছিল।সে রাস্তার উপর একটি কাঁটাদার ডাল দেখতে পেল। অতঃপর সে তা সরিয়ে দিল। আল্লাহ তাআলা তার এই আমলকে কবুল করলেন। এবং তাকে ক্ষমা করে দিলেন।”
১২) উক্ত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে ওযু করল, অতঃপর জুম্মা পড়তে এল এবং মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনল, সে ব্যক্তির এই জুম্মা ও (আগামী)জুম্মার মধ্যেকার এবং অতিরিক্ত আরো তিন দিনের (ছোট)পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হল।আর যে ব্যক্তি (খুতবাহ চলাকালীন সময়ে)কাঁকর স্পর্শ করল,সে অনর্থক কর্ম করল।” ( অর্থাৎ,সে জুম্মার সওয়াব বরবাদ করে দিল)।(মুসলিম ৫৮৭, আবূ দাউদ ১০৫০,ইবনু মাজাহ ১০১০)
আরো পড়ুন পাতা 3
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন