সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার : ইসলামই দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা →পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই
২য় পাতার পর ।

কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী বিধানটি শুধুমাত্র ছেলে-মেয়ে এবং ভাই-বোনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অথচ নারী বলতে শুধুমাত্র মেয়ে সন্তান বা বোনদেরকে বুঝায় না। এরা ছাড়াও অনেক নারী ওয়ারিস রয়েছে যাদের বিপরীতে পুরুষেরদ্বিগুণ পাওয়ার বিধান নেই। এজন্যই এ আয়াতের পরবর্তী আয়াতগুলোতে মা-স্ত্রীসহ অন্যান্য নারী ওয়ারিসদের নির্দিষ্ট অংশের বর্ণনা এসেছে। সেখানেতো পুরুষ নারীর দ্বিগুণ পায়নি। তাছাড়া পুরুষদের পরস্পরের মধ্যেও বিভিন্ন অবস্থায় বিশাল ব্যবধান হয়ে থাকে। বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় নারী পুরুষের সমান পাচ্ছে, আবার অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে বেশি পাচ্ছে। একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরলে ব্যাপারটি আরো পরিস্কার হয়ে যাবে আশা করি।
নারী পুরুষের অংশ প্রাপ্তির একটি তুলনামূলক চিত্র
মিসরের জাতীয় ফতোয়া বোর্ড কর্তৃক প্রচারিত এক ফতোয়ায় মিরাছের সম্পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী পুরুষের একটি তুলনামূলক পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে যে বিস্ময়কর তথ্য এসেছে তার মাধ্যমে অনেকের চোখ খুলে যেতেপারে, বিবেক পেতে পারে নতুন খোরাক। ঐ পরিসংখ্যানে নারী কখন পুরুষের অর্ধেক পায়, আর কখন সমান পায়, আর কখন বেশি পায় তার বর্ণনা এসেছে অত্যন্ত পরিস্কারভাবে। লক্ষ্য করুন:
• নারী কেবলমাত্র চার অবস্থায় পুরুষের অর্ধেক পায়:
১. মেয়ে ও নাতনী(ছেলের মেয়ে)ছেলে ও নাতী (ছেলের ছেলে) থাকাঅবস্থায়।
২. ছেলে সন্তান ও স্বামী বা স্ত্রী না থাকলে “মা” পিতার অর্ধেক পায় ।
৩. “সহোদরা বোন” সহোদর ভাইয়েরসাথে ওয়ারিস হলে।
৪. “বৈমাত্রেয় বোন” বৈমাত্রেয় ভাইয়ের সাথে ওয়ারিস হলে।
• ১০ অবস্থায় নারী পুরুষের সমান পায় :
১.পিতা-মাতা সমান অংশ পাবে ছেলের ছেলে থাকলে।
২. বৈপিত্রেয় ভাই-বোন সব সময়সমান অংশ পায়।
৩.বৈমাত্রেয় ভাই-বোন থাকলে সব ধরণের বোনেরা (সহোদরা, বৈপিত্রেয় ও বৈমাত্রেয়) বৈপিত্রেয় ভাইয়ের সমান পাবে।
৪.শুধুমাত্র ঔরসজাত মেয়ে ও মৃতের ভাই একসাথে থাকলে উভয়েসমান অংশ পাবে। (মেয়ে পাবে অর্ধেক আর বাকী অংশ পাবে চাচা)
৫. “নানী” বাবা ও ছেলের ছেলের সাথে সমান অংশ পায়।
৬. মা ও বৈপিত্রেয় দুই বোন স্বামী ও সহোদর ভাই এর সাথে সমান অংশ পায়।
৭. “সহোদর বোন” স্বামীর সাথে ওয়ারিস হলে সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পাবে। অর্থাৎ সহোদর বোনের পরিবর্তে সহোদর ভাই হলেযে অংশ পেত ঠিক সহোদরাও একই অংশ পাবে। অর্থাৎ মূল সম্পদেরঅর্ধেক পাবে।
৮. বৈমাত্রেয় বোন সহোদর ভাইয়ের সমান অংশ পায় যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী, মা, বৈপিত্রেয় এক বোন এবং একজন সহোদর ভাই থাকে। এ অবস্থায় স্বামী মূল সম্পদের অর্ধেক, মাএক ষষ্ঠাংশ, বৈপিত্রেয় ভাই একষষ্ঠাংশ এবং বাকী এক ষষ্ঠাংশ পাবে সহোদর ভাই।
৯. নির্দিষ্ট অংশধারী ওয়ারিস এবং আসাবা সূত্রে পাওয়ার মত কেউ না থাকলে নিকটতম রক্তসম্পর্কীয় আত্মীয়রা সমান অংশ পাবে। যেমন মেয়ের ছেলে, মেয়ের মেয়ে, মামা ও খালা ছাড়া অন্য কোন ওয়ারিস না থাকলে এদের সবাই সমান অংশ পাবে।
১০. তিন প্রকারের মহিলা এবং তিন প্রকারের পুরুষ কখনো সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয় না। এক্ষেত্রেও নারী পুরুষ সমান অধিকার ভোগ করছে।
• অনেক অবস্থায় নারী পুরুষেরচেয়ে বেশী পায়। যেমন,
১. স্বামী থাকা অবস্থায় একমাত্র কন্যা পাবে অর্ধেক আরস্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ ।
২. দুই কন্যা স্বামীর সাথে হলে। দুই মেয়ে পাবে দুই তৃতীয়াংশ আর স্বামী এক চতুর্থাংশ।
৩. কন্যা মৃতের একাধিক ভাইয়েরসাথে হলে বেশী পাবে।
৪. যদি মৃত ব্যক্তি স্বামী, বাবা, মা ও দুই কন্যা রেখে যায় তবে দুই মেয়ে দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ পাবে। কিন্তুঠিক একই অবস্থায় যদি মেয়ের পরিবর্তে দুই ছেলে থাকত তবে তারা নিশ্চিত ভাবে দুই মেয়েরতুলনায় কম পেত। কেননা ছেলের অংশ হলো এখানে অন্যান্য ওয়ারিসদেরকে তাদের নির্ধারিত অংশ দেওয়ার পর যা বাকী থাকে। সুতরাং স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ, বাবা ও মা উভয়ে পাবে এক ষষ্ঠাংশ করে এবং বাকী অংশ পাবে দুই ছেলে যাদুই তৃতীয়াংশ তো নয়ই বরং অর্ধেকের চেয়েও কম।
৫. ঠিক একই ধরণের আরেকটি অবস্থা দুই সহোদর বোনের ক্ষেত্রে। যদি ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী, দুই সহোদর বোন এবং মা থাকে তখন দুই বোন দুই তৃতীয়াংশ সম্পদ পায়। কিন্তুঠিক একই অবস্থায় যদি দুই বোনের জায়গায় দুই ভাই থাকত তখন ঐ দুই ভাই মিলে এক তৃতীয়াংশের বেশি পেত না।
৬. তেমনি ভাবে একই অবস্থায় বৈমাত্রেয় দুই বোন বৈমাত্রেয় দুই ভাইয়ের চেয়েবেশী পায়।
৭. অনুরূপভাবে যদি ওয়ারিসদের মধ্যে স্বামী, বাবা, মা ও মেয়ে থাকে তবে মেয়ে মূল সম্পদের অর্ধেক পাবে। কিন্তু ঠিক একই অবস্থায় ছেলে থাকলে পেত তার চেয়ে কম। যেহেতু তার প্রাপ্যাংশ হলো অংশীদারদেরকে দেওয়ার পর অবশিষ্টাংশ।
৮. ওয়ারিস যদি হয় স্বামী, মা ও এক সহোদর বোন তখন ঐ সহোদর বোন অর্ধেক সম্পদ পাবে যা তার স্থানে সহোদর ভাই হলে পেত না।
৯. ওয়ারিস যদি হয় স্ত্রী, মা,বৈপিত্রেয় দুই বোন এবং দুই সহোদর ভাই তখন দূরের আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও বৈপিত্রেয় দুই বোন দুই সহোদরের চেয়ে বেশী পাবে। যেহেতু বৈপিত্রেয়বোনদ্বয় পাবে এক তৃতীয়াংশ, আর দুই সহোদর পাবে অবশিষ্টাংশযা এক তৃতীয়াংশের চেয়েও কম।
১০. যদি স্বামী, বৈপিত্রেয় বোন ও দুই সহোদর ভাই থাকে সে ক্ষেত্রে বৈপিত্রেয় বোন এক তৃতীয়াংশ পাবে। অথচ এই দুই সহোদর অবশিষ্টাংশ থেকে যা পাবে তা ঐ বোনের এক চতুর্থাংশেরও কম।

আরো পড়ুন......→সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার : ইসলামই দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা→পাতা ৪←

কোন মন্তব্য নেই :