সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার : ইসলামই দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা →পাতা ২←

কোন মন্তব্য নেই
প্রথম পাতার পর ।

৩. আর্থিক প্রয়োজনীয়তা ও সামাজিক দায়ভার: অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি লক্ষণীয় দিক হলো অংশীদার ওয়ারিসের সামাজিক দায়ভার ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তা। যেমন একটি পরিবারের সার্বিক খরচ নির্বাহকরার দায়িত্ব পুরুষের। স্ত্রীর ভরণপোষণ, সন্তান-সন্ততিদের খরচ যোগান দান এবং পিতা-মাতার সার্বিক সেবা-শুশ্রূষা এসব তো পুরুষেরই দায়িত্ব। সামাজিক ওনৈতিক কর্তব্য। এসবদিক লক্ষ্যরেখে ইসলাম অংশ নির্ধারণে তারতম্য করেছে। যেমন মেয়ের তুলনায় ছেলের আর্থিক বাধ্য-বাধকতা ও সামাজিক কর্তব্য বেশি। তাই ইসলাম ছেলের জন্য মেয়ের দ্বিগুণ অংশ নির্ধারণ করেছে।
চতুর্থত:
দুর্বলদেরকেও অবহেলা করা হয়নি:
জাহেলি সমাজে নারী ও শিশুকে ওয়ারিস গণ্য করা হতো না, তারাযুদ্ধে যেতে পারে না শুধুমাত্র এই অজুহাতে। এক কথায় দুর্বলের উপর সবলের খবরদারি। কিন্তু ইসলাম সে অমানবিক বৈষম্য দূর করে তাদেরকেও তাদের প্রাপ্য যথাযথভাবে দান করেছে।
পঞ্চমত:
আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করাও উত্তরাধিকার বিধানের অন্যতম লক্ষ্য,
মিরাছের সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে ইসলাম রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়তার বন্ধন দৃঢ় করার উপর গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وأولوا الأرحام بعضهم أولى ببعض في كتاب الله
আর রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়রাএকে অপরের কাছে আল্লাহর কিতাবের ঘোষণা মতে অধিক হক্বদার।
নারীর উত্তরাধিকার:
পূর্বেই আলোচিত হয়েছে, ইসলামি উত্তরাধিকার আইন ন্যায়বিচার ও সুষম বন্টনের উপর প্রতিষ্ঠিত।
বিশেষত: নারীর উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম যুগান্তকারী ওন্যায়সঙ্গত বিধান দিয়েছে। যেখানে প্রাচীন রোমান সমাজে নারী একজন স্ত্রী হিসেবে কোন অংশ পেত না। ইহুদি বিধানে ছেলে থাকা অবস্থায় নারীর কোনধরনের অংশ নেই। আর ইসলামের আবির্ভাব পূর্ব জাহেলি সমাজেরদিকে একটু দৃষ্টি দিলে ভেসে উঠে মায়ের জাতি-নারীর করুণ চিত্র। সম্পদে তার উত্তরাধিকার তো দূরের কথা বরংবিভিন্ন ক্ষেত্রে এ নারীকেই মিরাছের সম্পদ হিসেবে পরিগণিতকরা হতো। কুরআনুল কারিমে নারীর নামে নামকরণকৃত সূরা আননিসার ১৯ নং আয়াত
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا يَحِلُّ لَكُمْ أَنْ تَرِثُوا النِّسَاءَ كَرْهًا
হে ঈমানদারগণ, তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে তোমরা জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারি হবে।
এ করুণ বাস্তবতা ইঙ্গিত বহন করে, অন্যান্য সাধারণ অবস্থায় নারীকে সমাজের বোঝা মনে করা হতো। যুদ্ধে যেতে পারে না, জাতীয় অগ্রগতিতে অবদান রাখতে পারে না, এ জাতীয়অজুহাত দেখিয়ে নারীকে সম্পূর্ণভাবে মিরাছের সম্পদ হতে বঞ্চিত করা হতো। এমন অবস্থায় ইসলাম সার্বজনীন ও কালজয়ী মানবিক বিধান দিয়ে নারীকে অবহেলা ও লাঞ্ছনার এই অতল গহ্বর থেকে উদ্ধার করে সম্মানের আসনে বসিয়েছে। দেখিয়েছে নতুন করে জীবন চলারআলোকিত পথ। কুরআনের শাশ্বত বাণীতে ঘোষিত হয়েছে উত্তরাধিকার সূত্রে নারীর প্রাপ্তির ঘোষণা।
প্রাপ্তির ঘোষণা:
বিশিষ্ট মুফাসসির সাঈদ ইবনে জুবাইর ও ক্বাতাদাহ (রা) বলেন,ইসলামের পূর্বে মুশরিকরা মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মাঝেই বন্টন করে দিত। নারী ও শিশুদেরকে কিছুই দিতো না। এরইপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয় সূরা আন নিসার ৭ নং আয়াত :
لِلرِّجَالِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ وَلِلنِّسَاءِ نَصِيبٌ مِمَّا تَرَكَ الْوَالِدَانِ وَالْأَقْرَبُونَ مِمَّا قَلَّ مِنْهُ أَوْ كَثُرَ نَصِيبًا مَفْرُوضًا ﴿7﴾
অর্থ : পিতা-মাতা ও নিকটাত্মীয়দের রেখে যাওয়া সম্পদে পুরুষদের জন্য নির্দিষ্ট অংশ রয়েছে এবং নারীদেরও রয়েছে সুনির্দিষ্ট অংশ। তা কম হোক কিংবা বেশি ।
পবিত্র কুরআনের এ ঘোষণার মাধ্যমে নারী উত্তরাধিকার সূত্রে সুনির্দিষ্ট অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকারই লাভ করলো। এ বিধান কোনো কথিত নারীবাদী আন্দোলনে বাধ্য হয়ে প্রণীত হয়নি। বরং মহান প্রজ্ঞাময় স্রষ্টা মহান আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি সম্বন্ধে সম্যক অবগত হয়েই তাদের সার্বিক কল্যাণেরজন্য এ বিধান দান করেছেন। এভাবেই নারী তার ব্যক্তি মালিকানার অধিকার পেলো। মা, মেয়ে, স্ত্রী, বোন, দাদী, নাতনী হিসেবে নারীর সুনির্দিষ্ট অংশ ঘোষিত হলো। এর বাইরেও বন্টনের পর অবশিষ্টাংশেও বিভিন্ন অবস্থায় রয়েছে নারীর প্রাপ্যাংশ।
• নির্দিষ্ট অংশ পাওয়া নারীরসংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশী : ইসলামি উত্তরাধিকার বিধানে নির্দিষ্ট অংশ পাওনাদার ১২ জনওয়ারিসের মধ্যে নারীর সংখ্যা৮ জন (মা, মেয়ে, স্ত্রী, ছেলের মেয়ে, সহোদরা বোন, বৈমাত্রেয়বোন, বৈপিত্রেয় বোন, দাদী, নানী) আর পুরুষ হলো ৪ জন, (বাবা, স্বামী, দাদা, মা সম্পর্কীয় ভাই)। যেখানে ঔরসজাত মেয়ে ও বোনের জন্য নির্দিষ্ট অংশ বন্টন করা করা হয়েছে এর বিপরীতে ঔরসজাত ছেলে ও ভাইদের জন্য নির্দিষ্টকোন অংশ নেই। বরং নির্দিষ্ট অংশধারী ওয়ারিসদের হিসসা বন্টনের পর আসবে তাদের প্রাপ্তির হিসাব।
প্রসঙ্গ:
পুরুষ পাবে নারীর দ্বিগুণ, কখন? এবং কেন?
পবিত্র কুরআনের সূরা আন নিসার১১ নং আয়াত لِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ ছেলে পাবে মেয়ের দ্বিগুণ, এ আয়াত নিয়েঅনেকের মধ্যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষত যারা প্রতিনিয়ত ইসলামের দুর্বলতা খুঁজে বের করার নোংরা ব্রতে লিপ্ত। তারা এ আয়াতের মাধ্যমে এ কথা সাব্যস্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে থাকে যে, ইসলাম নারীকে পুরুষের অর্ধেক মনে করে। একটি পূর্ণাঙ্গ সত্তা হিসেবে নারীকে স্বীকৃতিদেয় না। তাই মিরাছের অংশও তাদেরকে পুরুষের অর্ধেক দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এ আয়াত যে ইনসাফ ও সুষম বন্টনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ততা অনেকেই উপলব্ধি করতে পারে না।
• দ্বিগুণ পাওয়া সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়,

আরো পড়ুন......→সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার : ইসলামই দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা→পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই :