সম্পদে নারীর উত্তরাধিকার : ইসলামই দিয়েছে প্রাপ্তির নিশ্চয়তা →পাতা ৪←

কোন মন্তব্য নেই
৩য় পাতার পর ।

১১. ওয়ারিস যদি হয় বাবা, মা ওস্বামী এ ক্ষেত্রে ইবনে আব্বাস (রা) এর মত অনুসারে মা পাবে এক তৃতীয়াংশ, আর বাবা পাবে এক ষষ্ঠাংশ অর্থাৎ মায়ের অর্ধেক।
১২. স্বামী, মা, বৈপিত্রেয় বোনও দুই সহোদর ভাই ওয়ারিস হলে এক্ষেত্রে ঐ বোন দূর সম্পর্কীয় আত্মীয় হওয়া সত্ত্বেও সহোদর ভাইদ্বয়ের দ্বিগুণ পাবে।
• অনেক সময় নারী মিরাছ পায় কিন্তু তার সমমানের পুরুষ বঞ্চিত হয় । যেমন,
১. ওয়ারিস যদি হয় স্বামী, বাবা, মা, মেয়ে ও নাতনী (ছেলেরমেয়ে) এক্ষেত্রে নাতনী এক ষষ্ঠাংশ পাবে। অথচ একই অবস্থায় যদি নাতনীর পরিবর্তেনাতী (ছেলের ছেলে) থাকত তখন এইনাতী কিছুই পেত না। যেহেতু নির্ধারিত অংশীদারদেরকে দিয়ে অবশিষ্টাংশই তার প্রাপ্য ছিলো। অথচ এ অবস্থায়কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। তাই তার প্রাপ্তির খাতাও থাকে শূন্য ।
২. স্বামী, সহোদর বোন ও বৈমাত্রেয় বোন থাকা অবস্থায়বৈমাত্রেয় বোন এক ষষ্ঠাংশ পাবে। অথচ তার স্থানে যদি বৈমাত্রেয় ভাই থাকতো তবে সে কিছুই পেত না, যেহেতু তার জন্যনির্ধারিত অংশ নেই।
৩. অনেক সময় দাদী মিরাছ পায়, কিন্তু দাদা বঞ্চিত হয়।
৪. মৃত ব্যক্তির যদি শুধুমাত্রনানা ও নানীই ওয়ারিস হিসেবে থাকে তখন সব সম্পত্তি পাবে নানী। নানা কোন কিছুই পাবে না।
এরপরও কি বলা হবে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলাম নারীকে ঠকিয়েছে? এ তুলনামূলক আলোচনার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো এ বাস্তবতাকে সাব্যস্ত করা যে,
এক. নারী পুরুষের অর্ধেক পায় এই বিধান সব সময়ের জন্য নয়।
দুই. অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে নারী কোন অংশেই পুরুষের চেয়েকম নয়।
সুতরাং অংশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বিভাজন টানা নিতান্তই অজ্ঞতার পরিচায়ক। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে দেখুন সম্ভবতএসব তথ্য জেনেই জনৈক মনীষী বলেছিলেন: “ইসলাম যদি ইনসাফেরধর্ম না হতো তাহলে আমি বলতাম উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারীর বিপরীতে পুরুষকে ঠকানো হয়েছে।”


• ছেলে কেন মেয়ের অর্ধেক পায় ?

এখানে জোরালো একটি প্রশ্ন থেকে যায় আর তা হচ্ছে ছেলে থাকা অবস্থায় “মেয়ে”, ভাই থাকলে “বোন” কেন তার অর্ধেক পাবে? তার মানে কি মেয়ে-সন্তান ছেলে-সন্তানের অর্ধেক মর্যাদা রাখে? এ সংশয় নিরসনের পূর্বে স্মরণ করা প্রয়োজন যে ইসলামি উত্তরাধিকার বিধানে নারী-পুরুষের বিভাজনটি মৌলিক কোন লক্ষণীয় বিষয় নয়। বরং সামাজিক দায়ভার ও আর্থিক প্রয়োজনীয়তার কারণেই সাধারণত প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তফাৎ হয়ে থাকে। ছেলে সন্তান মেয়ের দ্বিগুণ পাওয়ার অনেক গুলো যৌক্তিক কারণের মধ্যে কয়েকটি হলো,
১. পারিবারিক দায়িত্ব:
পরিবারের কর্তা হিসেবে সব খরচপাতি বহন করতে হয় ছেলেকে।পিতা-মাতার খেদমত, সন্তান-সন্ততির লালনপালন এবং আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ খবর নেওয়ার দায়িত্বও মূলত পুরুষের উপরই অর্পন করেছে ইসলাম। বিপরীতে মেয়ে এসব দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। তারপরও ইসলাম তাকে বঞ্চিত করেনি।
২. স্ত্রীর যাবতীয় অধিকার:
দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের পথে পুরুষকে গুণতে হয় স্ত্রীর দেনমোহর বাবদ একটি মোটা অংকেরকড়ি। আর বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণ ও যাবতীয় খরচপাতিও এই পুরুষকেই বহন করতে হয়। পক্ষান্তরে মেয়ে বিয়ের আগে থাকে পিতার তত্বাবধানে। তার আদর সোহাগে বড় হয়। বিয়ের সময় স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহর পায়। তারপর তার ভরণপোষণের যাবতীয় দায়িত্ব স্বামীর। সাংসারিক খরচ বাবদ একটি পয়সাও তাকে ব্যয় করতে হয় না। সবই স্বামীর দায়িত্ব। তাই তার প্রাপ্ত সম্পদের মূলধন কখনো হ্রাস পায় না। এরপরও তো ইসলাম তাকে বঞ্চিত করেনি। বরং ইসলাম তার সম্পদকে রক্ষা করার ব্যবস্থা করেছে অত্যন্ত সুন্দরভাবে।
এসব যৌক্তিক কারণে ইনসাফ ও ন্যায় বিচারের দাবী হলো ছেলেকে মেয়ের চেয়ে বেশী দেওয়া। যেহেতু ইনসাফ হলো সুষম বন্টন, সমান বন্টন নয়।
পরিশেষে সত্য উচ্চারণ করে বলতে হয় – ইসলামের উত্তরাধিকার বিধান একটি মানবিক ও ন্যায়সঙ্গত বিধান। যেখানে প্রত্যেক শ্রেণীর ওয়ারিসের তার উচিত প্রাপ্যাংশ লাভের নিশ্চয়তা রয়েছে। সত্য উপলব্ধিকারী অমুসলিম চিন্তাবিদ Gostaf lobon ইসলামি উত্তরাধিকার বিধানকে মূল্যায়ন করেছেন এভাবে :কুরআনে বর্ণিত উত্তরাধিকার বিধান বড়ই ন্যায়সঙ্গত ও যৌক্তিক। এ বিধানকে ফরাসি ও ব্রিটিশ আইনের সাথে তুলনা করেআমার কাছে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে ইসলামি শরিয়া বা বিধান স্ত্রীদেরকে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে এমন সব অধিকার দিয়েছে যার কোন দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া যায় না আমাদের আইনসমূহে।
হ্যাঁ, আল্লাহর দেওয়া বিধানের তুলনা কোন মানব রচিত বিধানের সাথে চলেনা। আল্লাহর আইন সর্বকালের, সর্বস্থানের এবং সকলের জন্য। আর আল্লাহর আইন অনুসরণেই রয়েছে মানবাতারমুক্তি, শান্তি ও সাফল্যের নিশ্চয়তা।
সমাপ্ত

সৌজন্যঃ কুরআনের আলো ডট কম ।

শেয়ার করে আপনিও হন ইসলামের প্রচারক ।
আমরা সবাই একাজটি করলে জানার পাশাপাশি সওয়াব হবে ।
যে ব্যাক্তি ইসলামের একটি কথা শিখবে তাকে আল্লাহ দশটি নেকী দেবেন ।
যে শিখাবে তাকেও দশটি নেকী দেওয়া হবে ।
তাই আসুন আমরা নিজেও জানি, অন্যদেরকেও জানাই ।

কোন মন্তব্য নেই :