পরকাল ভাবনা (পর্ব :১) →পাতা ৩←
এমন শাস্তি যা অভাবিত, মর্মন্তুত, যা কখনো রহিত হবার নয়, এবং যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার থাকবে না কোনো সুযোগ।বিশ্ব-প্রতিপালকের এ-ঘোষণা প্রায় সবার কর্ণকুহরেই অনুরিত হয়েছে। মানুষও কোন-না-কোন ভঙ্গিতে এ-বিষয়ে স্বীকারোক্তিও দিয়েছে। কিন্তু মানুষের অভ্যন্তর জগতেনজর দিলে, তাদের অবস্থা একটু মনোযোগসহ পর্যবেক্ষণ করে দেখলে বুঝা যাবে যে, বিষয়টি আদৌ কোনো গুরুত্ব পায়নি তাদের অন্তরে, বাহিরে। তারা বরং এর উল্টো ইহকালীন কল্যাণ লাভের উদ্দেশে এমনসব কাজ করে যাচ্ছে যা কখনো করা উচিত ছিলনা। জীবনের বিচিত্র স্রোতধারা নিষিদ্ধ অঞ্চলের দিকে কেবলই ধাবমান অত্যন্ত নির্বোধভাবে। অন্যকিছু নিয়ে ভেবে দেখার ফুরসত যেন কারো নেই। সামরিক বাহিনীর বিপদ সংকেতের অংশত শুনতে পেলেও দিশেহারা হয়ে ছুটতে থাকে সবাই অজানা গন্তব্যের দিকে, পক্ষান্তরে বিশ্ব-প্রতিপালক যে বিপদের ঘোষণা দিলেন সে ব্যাপারে কাউকে সামান্যতম উদ্বিগ্ন বলে মনে হয় না। ঐশী বিপদঘন্টা শুনে নিরাপদ-আশ্রয়ের খুঁজে ছুটে যাওয়ার আগ্রহ যেন কারুরই নেই।এর কারণ কী? সামান্য মনোযোগ দিলেই আমরা তা আঁচ করতে পারি। এর কারণ, সামরিক বাহিনীর হেড-কোয়ারটার থেকে ভেসে-আসা সতর্কসংকেত মানুষ আমলে আনছে, কেননা তা এই মাটির পৃথিবীর সাথে সম্পৃক্ত, যেখানকার ঘটনাসমূহের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে প্রকাশ পায়, দেখা যায়, স্পর্শ করা যায়। এর বিপরীতে প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যে সতর্কসংকেত এসেছে তা মৃত্যু-পরবর্তী-জগতের বিষয়। আমাদের ও সে বিপদের দৃষ্টিগ্রাহ্যতার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যুর দেয়াল। এ-দেয়ালে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে আমাদের দৃষ্টি, দেখা যাচ্ছে না ওপারেরবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের বহর,দেখা যাচ্ছে না বোমা, গ্রেনেড,আগুনের কুন্ডলী। এইজন্যে বিমান হামলার সতর্কসংকেত বেজেউঠলে সাথে সাথে মানুষ তা বুঝে নেয়, সতর্ক হয়, তা বিশ্বাস করে নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় পানেছুটে চলে অভাবিত চঞ্চলতায়। কিন্তু আল্লাহ যে বিপদের সংকেত দিয়েছেন, তা মানুষের মধ্যে দানা পরিমাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করছে না। আল্লাহ আমাদেরকে কেবল দু’টো চর্মচোখই দান করেন নি যা স্থাপিত আমাদের চেহারার অগ্র-ভাগে। বরং তিনি আমাদেরকে দিয়েছেন আরেকটি চক্ষু যার দৃষ্টিক্ষমতা আয়ত্বে নিয়ে আসতে পারে বহু দূরের বিষয়। এমনকি মোটা চাদরে ঢাকা পদার্থকেও এ-চোখ দেখে নিতে পারে। এ-চোখ হলো বুদ্ধির চোখ। এ-তৃতীয় চোখটির অব্যবহারই মানুষের বিশ্বাসহীনতার মূল কারণ। মানুষ তার চর্ম চোখে যা কিছু দেখে সেটাকেই বাস্তব মনেকরে। পক্ষান্তরে বুদ্ধির চোখকে কাজে লাগালে আমরা দেখতেপাবো, যা আমাদের চর্ম-চোখের সামনে নেই তা বহুমাত্রায় বেশি বিশ্বাসযোগ্য যা আমাদের চোখের সামনে রয়েছে তার তুলনায়। যদি প্রশ্ন করা হয়, এমন একটি বাস্তব বিষয়ের নাম বলুন যা সকলেই সমানভাবে বিশ্বাস করে, তাহলে সবাই এক কন্ঠে বলবে : মৃত্যু। মৃত্যু এমন একটি বাস্তবতা যা অস্বীকার করার ক্ষমতা এখনো কারো হয় নি; কখনো হবে বলে মনে হয় না। মানুষ সমানভাবে এ-ও বিশ্বাস করে যে, যে কোনো মূহুর্তে মৃত্যু কড়া নাড়তে পাড়ে তার অস্তিত্বের দরজায়।তবে অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যায়,মৃত্যু যখন আসে তখন মৃত্যুমুখী ব্যক্তি সাধারনত যা করে তাহলো ছেলে-সন্তানের ভাবিষ্যৎ নিয়ে উৎকন্ঠিত হওয়া। অর্থাৎ আমার মৃত্যুর পর ছেলে-মেয়েদের কী হবে? কীভাবে চলবে লেখাপড়া অথবা ঘরসংসার? ইত্যাদি। অতীত জীবনের যে কয়টি বছর মাড়িয়েএসেছে সেগুলোয় যদি মানুষ ব্যস্ত থেকে থাকে নিজেকে নিয়ে, তাহলে মৃত্যুর সময় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ছেলে সন্তানের ভবিষ্যৎনিরাপদ করতে তো সে সারাটা জীবনই করেছে উৎসর্গ। মৃত্যুর সময়ও তার হৃদয়ের প্রতিটি ভাঁজে বিরাজ করছে ছেলেসন্তানের পার্থিব ভবিষ্যতের ভাবনা। মত্যু-পরবর্তী সময়ে তার নিজের কী হবে না হবে সে বিষয়ে তাকে এখনো মনে হচ্ছে সমানভাবে উদাসীন। মনে হয় যেন মৃত্যুর পর কেবল তার ছেলে সন্তানেরই অস্তিত্ব অবশিষ্ট থাকবে; তার নিজের অস্তিত্বের চিহ্ন মাত্রথাকবে না কোথাও। অবস্থা দেখে মনে হয় – মৃত্যুর পর আরো-একটি জীবন রয়েছে এ বিষয়টি মানুষের অনুভূতির জগতে জাগ্রত নেই আদৌ।
আসলে মৃত্যুর পর মানুষ যখন সমাহিত হয় তখন মূলতঃ সে সমাহিত হয় না, চলে যায় আর-একজগতে, এ-সত্যটি অনুধাবন করলে ছেলেপুলের নৈসর্গিক ভবিষ্যৎ নয়, নিজের পরকালীন ভবিষ্যৎ নিয়েই উৎকন্ঠিত হতো সবচেয়ে বেশি, মৃত্যুর পর আমার কী হবে? এভাবনায় অস্থির হতো সবাই।
মৃত্যুর পর মানুষের অস্তিত্ব অবলুপ্ত হয়ে যায় না, এর সাথেসংযোজন ঘটে ভিন্নতর এক মাত্রার। মানুষের প্রবেশ ঘটে অন্যএক জীবনে যা বর্তমান জীবনের তুলনায় অনেক বেশি বাস্তব, অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ-সত্যটি, বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ-সে হোক ধার্মিক বা অধার্মিক-ভুলে গেছে বেমালুম।
মৃত্যু-পরবর্তী-জীবন সম্পর্কে দু’ভাবে সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এক. প্রতিটি মানুষই মৃত্যুর পর মাটির সাথেমিশে যায়, আর তাই বুঝে আসে না কীভাবে সে জীবনপ্রাপ্ত হবে দ্বিতীয়বার।
আরো পড়ুন......→পরকাল ভাবনা (পর্ব :১)→পাতা ৪←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন