মানবাধিকার ও ইসলাম →পাতা ৪←
৩য় পাতার পর ।
ক্লাসিক্যাল যুগ থেকে মধ্যযুগহয়ে রেনেসাঁর শেষ সময়কাল পর্যন্ত বিভিন্ন মনীষীর রচনায় মানবাধিকারের ধারণা ও পরিচয় মেলে। যেমন- ফ্রান্সেরবঁদীন ও জীন জ্যাক রুশো, ইটালীর হুগো প্রোটিয়াস, ইংল্যান্ডের জন লক, ভ্যাটেল ও ব্লাক স্টোন এবং জার্মানীর কার্ল মার্কস। এঁদের লেখনীতে প্রকাশ পেয়েছে যে, ‘মানুষ’ হিসাবে মানুষ কিছু প্রাকৃতিক অধিকার ভোগ করার অধিকারী। কিন্তু কোন শাসক যখন মানুষকে এসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেতখনই তারা সোচ্চার হয়েছে, প্রতিবাদী হয়েছে। সুতরাং এ অধিকার শাসকেরা অনায়াসে মানুষকে দেয়নি, দিয়েছে একেবারে নিরুপায় হয়ে। ফলশ্রুতিতে উভয় পক্ষের মধ্যেপ্রণীত হয়েছে বিভিন্ন দলীল যেগুলোতে আনুষ্ঠানিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে মানুষের অধিকার। যেমন- ইংল্যান্ডের ১২১৫ সালের Magna carta, ১৬২৮ সালের Petition of Rights, ১৬৮৯ সালের Bill of Rights ইত্যাদি। এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, মানবাধিকারের ধারণার বিকাশ ঘটেছে স্বেচ্ছাচারী শাসকদের স্বৈরতন্ত্রের ফল হিসাবে। কথাটি অকপটে স্বীকার করেছেন সাধারণ পরিষদের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আফগানিস্তানের Mr. Abdur Rahman Pazhwak। ১৯৬৬ সালে মানবাধিকার বিষয়ক দু’টো আন্তর্জাতিক চুক্তি গৃহীত হবার পর তিনি বলেছিলেন, ‘Universal respect for human Rights is inseparable from world peace. At the root of all strife and tyranny, in the present as in the past, lies a violation of human rights in one form or another. [16]
উপরের আলোচনা থেকে বুঝা যায় যে, সমস্ত অধিকার মানুষের প্রকৃতিতে সহজাত ও হস্তান্তর অযোগ্য, যেগুলো পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য জাতি, বর্ণ, গোত্র, নারী-পুরুষ, রাজনৈতিক বা অন্যান্য অভিমত ইত্যাদি নির্বিশেষে সমভাবে প্রযোজ্য ওউপভোগ্য (equally applicable to and enjoyable by), যেগুলো মানুষের ব্যক্তিত্ব ও মনুষ্যত্ব বিকাশের জন্য অপরিহার্য এবং যেগুলো ছাড়া মানুষ ‘মানুষ’ হিসাবে বেঁচে থাকতে পারে না সেগুলোই মানবাধিকার। আর আইনগতভাবে বলা যায় যে, অধিকারগুলো মানবাধিকার হিসাবে বিশ্বের রাষ্ট্র সমূহ ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মাধ্যমে যে চুক্তি বা সনদ প্রণয়ন করেছে সেগুলো হল মানবাধিকার। এর ব্যবহার ও প্রয়োগ সমানভাবে সকল রাষ্ট্রের উপর বর্তায়। যদিও এটা বর্তমানে বিতর্কিত। সনদগুলোর মধ্যে যেমন- Universal Declaration of Human Rights of 1948 (UDHR), International Covenant of civil and political Rights of 1966 (ICCPR), International Covenant on Economic, Social and Cultural Rightsof 1966 (ICESCR) ইত্যাদি। বিশ্ব ব্যবস্থায় বর্তমানে UDHR হ’ল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য মানবাধিকার সনদ। তবে এই সনদেরধারা ও প্রয়োগ বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। তাই একে সর্বজনীন আইনগত মানবাধিকার হিসাবে সর্বত্র প্রয়োগ সম্ভবনয়। কেননা এটা কোন রাষ্ট্র মানতেও পারে, আবার নাও পারে। কিন্তু অন্যত্র দৃষ্টি দিলে আমরা দেখব ভারত, যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স সহ যেকোন দেশের সংবিধানে স্বীকৃত ও চিহ্নিত মানবাধিকারগুলো হ’ল আইনগত মানবাধিকার। কারণ এসব মানবাধিকার ঐসব রাষ্ট্রের সংবিধানে গৃহীত ও স্বীকৃত। বাংলাদেশ সংবিধানের ২য় ভাগে উল্লেখিত মূলনীতি অধিকার এবং ৩য় ভাগে উল্লেখিত মৌলিক অধিকারগুলো হ’ল আইনগত মানবাধিকার। কেউ এটা লংঘন করলে তার উপযুক্ত প্রতিকারের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লংঘন করলে তার প্রতিকারের বিধান রয়েছে বটে, কিন্তু তার সঠিক প্রয়োগ হচ্ছে না। কারণ জাতিসংঘ তথা জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদ কয়েকটি পরাশক্তিধর দেশের হাতে বন্দী হয়ে পড়েছে। কায়েমী স্বার্থ ও হিংসার কবলে সেই মানবাধিকার ও মানবাধিকার সংস্থা যেন কারও কারও দাবার গুটি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর তা হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এই মানবাধিকার এর উৎপত্তি ও ব্যবস্থা কখনও স্থায়ী ও সর্বজনীন ছিল না। সর্বদা আইনের অনুমিত ধারণা বশতঃ হয়েসংযোজন-বিয়োজন চলছে। অথবা আইনের ফাঁক-ফোকরে বিশ্বে বিভিন্ন প্রান্তে তার যথেচ্ছ ব্যবহার করে যাচ্ছে। জাতিসংঘের পাঁচটি স্থায়ী সদস্য তাদের ভেটো পাওয়ার প্রয়োগ করছে। যেমন ফিলিস্তীনরাষ্ট্রের স্বীকৃতি না দেওয়ার ব্যাপারে এক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো পাওয়ারই যথেষ্ট। যদিও গোটা বিশ্ব সম্প্রদায় ফিলিস্তীনীদের স্বাধীনতার পক্ষে সমর্থন দেয়। একইভাবে মিথ্যা গোয়েন্দা তথ্য অথবা কাল্পনিক তথ্যের উপর নির্ভর করে জাতিসংঘকে ব্যবহার করে ইঙ্গ-মার্কিন কর্তৃক ইরাককে ধ্বংস করা হয়। যেখানে ১৯৯২ সালে হামলার পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ১০ লাখ নারী বিধবা এবং ৪০ লাখ শিশু ইয়াতীম হয়েছে। ২৫ লাখ মানুষ হতাহত হয়েছে এবং ৮ লাখ নিখোঁজ রয়েছে। [17]
এরই নাম আমেরিকার মানবাধিকার রক্ষা (?) অথচ আমরা বলি, বিশ্ব ব্যবস্থাপনা ও শান্তির গ্যারান্টি তথা মানবাধিকার রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত ব্যবস্থা রয়েছে শ্বাশত বিধানইসলামে। যা কোন মানুষ থেকে আসেনি। সরাসরি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রাসূল (ছাঃ)-এর মাধ্যমে এসেছে। সুতরাং এতে সামান্যতম কোন সন্দেহ বা কোনরূপ ভুলের আশঙ্কা নেই।কুরআনে বলা হয়েছে,
ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
‘এটা সেই গ্রন্থ, যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই। আল্লাহভীরুদের জন্য এ গ্রন্থ হিদায়াত বা মুক্তিপথের দিশারী’ (বাক্বারাহ ২)।
এটা অপব্যবহার করারও কোন সুযোগ নেই। তেমনি এটা সংশোধনেরও ঊর্ধ্বে।
আরো পড়ুন......→মানবাধিকার ও ইসলাম←→পাতা ৫←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন