মানবাধিকার ও ইসলাম →পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই

২য় পাতার পর ।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের জন্য কতগুলো অধিকার রয়েছে যা ইসলামী রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রের পক্ষে কোন সংস্থা কর্তৃক প্রণয়ন ও বলবৎ হয়ে থাকে। তবে এটা কুরআন-ছহীহ সুন্নাহর বাইরে নয়। এই আইন কেউ লংঘন করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। যেমন- মালিকানার অধিকার, মজুরী প্রাপ্তির অধিকার, মোহরানা প্রাপ্তির অধিকার, প্রতিশোধ ও প্রতিদানের অধিকার ইত্যাদি। তদ্রূপ কেউ কাউকে অন্যায়ভাবেহত্যা করলে পাল্টা ইসলামী আদালত দ্বারা কিছাছ বা মৃত্যুদন্ড পেতে হবে। অনুরূপ স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক, কেউ চুরি করলে তাকে শাস্তি পেতে হয়। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُواْ أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالاً مِّنَاللهِ وَاللهُ عَزِيْزٌ حَكِيْمٌ-
‘পুরুষ কিংবা নারী চুরি করলে তাদের হস্ত ছেদন কর, তা তাদের কৃতকর্মের ফল এবং আল্লাহর নির্ধারিত আদর্শ দন্ড, আল্লাহ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়’ (মায়েদাহ ৩৮)।

অনুরূপভাবে আমানতের মাল আমানতগ্রহণকারীর কোন প্রকার কাজের ফলে বিনষ্ট না হয়ে আপনা হ’তে বিনষ্ট হয়ে গেলে আমানত গ্রহণকারীকে কোনরূপ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না’। [10]

ইবনু ওমর (রাঃ) সূত্রে রাসূল (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,
এক মহিলা একটি বিড়ালের কারণেজাহান্নামে গিয়েছিল। সে তাকেবেঁধে রেখেছিল। সে তাকে খাবারও দেয়নি, ছেড়েও দেয়নি,যাতে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেতে পারত’। [11] পরে বিড়ালটি মারা গেল। এখানে কেবল ইসলামী আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জনগণের পারস্পরিক স্বার্থ সংরক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে তাই নয়, বরং তা পশু-পাখিসহ সকল ক্ষেত্রে অত্যন্ত দূরদর্শিতার সাথে রচিত হয়েছে।

মানবাধিকার ( Human Rights) : সমকালীন প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার যে অর্থ বহন করে, কয়েক দশক আগেও এর অর্থ এরূপ ছিল না। তাই সংজ্ঞা হিসাবে ‘মানবাধিকার’ শব্দটি কলা বিজ্ঞান ও আইন বিজ্ঞানে খুব সাম্প্রতিক সংযোজন। ‘মানবাধিকার’ শব্দের আক্ষরিক অর্থ হ’ল মানবের অধিকার। অর্থাৎ মানুষ হিসাবে প্রতিটি মানব সন্তানের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত অধিকার সমূহ হচ্ছে মানবাধিকার। প্রতিটি মানুষের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূহ এর অন্তর্ভুক্ত। আরো বিস্তৃত পেক্ষাপটে মানবাধিকার পৃথিবীর সমস্ত ধর্ম, বর্ণ, জাতীয়তা, গোষ্ঠী, লিঙ্গ, নির্বিশেষে মানুষের অবিচ্ছেদ্য অধিকারগুলো তার সত্ত্বার সাথে একীভূত হয়ে পড়ে। প্রতিটি মানব সন্তান মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই হাত পা ছুঁড়ে চিৎকার করে ক্রন্দন ধ্বনি উচ্চারণের মাধ্যমে তার অধিকারগুলো ব্যক্ত করে সারা বিশ্বের কাছেতার অধিকারের কথা জানিয়ে দেয়। [12]
এখানে কেবল মানুষের অধিকারের বিষয়টি এসেছে। আসলে মানুষের সাথে সম্পর্কিত সব ধরনের আচার-ব্যবহার, নীতি, আচরণ, ব্যবস্থা রীতি, আইন বিধি, কার্যক্রম ও কার্যব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রয়োজন ও চাহিদা, প্রয়োগ ও প্রযুক্তি, জ্ঞান ও বিজ্ঞান, কার্য, চিন্তা জীবন, জড়জগৎ, চিন্তাজগৎ, প্রাণী জগৎ তথা বিশ্ব প্রকৃতির সবকিছু মানবাধিকারের সাথে সম্পৃক্ত। [13] যেমন- আমার গৃহে নিরপদ্রপ জীবন-যাপন যেমন আমারঅধিকার, প্রাপ্ত বয়স্ক দু’জন অবিবাহিত যুবক-যুবতীর বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন ও সন্তান উৎপাদনও তাদের তেমন অধিকার। সেন্সরশীপ আরোপ করে মত প্রকাশ, প্রচার ও কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি যেমন মানবাধিকারলঙ্ঘন, ঠিক তেমনি আইন সম্মত কারণ ও পরোয়ানা ব্যতিরেকে গ্রেফতার, আটক, নির্যাতন, হয়রানি সবই মানবাধিকার লঙ্ঘন।

এখনও বাংলাদেশ সহ বিশ্বে লক্ষ-কোটি নিরপরাধ বনু আদম বিনা বিচারে যুগ যুগ ধরে কারাগারে নিক্ষিপ্ত রয়েছে। একটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য প্রফেসরদেরকেও মিথ্যা মামলায় বছরের পর বছর বিচারের কাঠগড়ায় অমানবিকভাবে হাজিরা দিতে হয়।এটা কি মানবাধিকারের লংঘন নয়? এক সময় কেউ কেউ বলেছেন, মানুষের অধিকার ও মানবাধিকার এক জিনিস নয়। কারণ মানবাধিকার যাকে এক সময় বলা হ’ত পুরুষের অধিকার (Rights of man)। যেখানে অধিকার বলতে পুরুষেরই ছিল, নারীর কোন অধিকার ছিল না।

এখানে তাই স্পষ্টত নারী-পুরুষের বৈষম্যের আভাস পাওয়া যায়। Thomas Paine সর্বপ্রথম ফ্রান্সে জাতীয় পরিষদ কর্তৃক ১৭৮৯ সালে গৃহীত ‘পুরুষের অধিকার’ ফরাসী ঘোষণার ইংরেজী (FrenchDeclaration of Rights of man and of the citizen) অনুবাদ মানবাধিকার পদ্ধতিটি ব্যবহার করেন। পুরুষের অধিকারবললে তাতে নারীর অধিকার অন্তর্ভুক্ত হয় না বলেই পরবর্তীকালে মিসেস এলিয়ন রুজভেল্টের প্রস্তাবানুযায়ীজাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ১৯৪৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর গৃহীত সর্বজনীন ঘোষণায় ‘মানবাধিকার’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। [14] তাই মানবাধিকার এখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ভাষা, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় দু’টো বৈশিষ্ট্য হ’ল একটি সহজাত অপরটি হস্তান্তর অযোগ্য। Paul Sheiegart মনে করেন এই বৈশিষ্ট্য দু’টির কারণেই মানবাধিকার অন্যান্য অধিকার থেকে আলাদা এবং অধিক মর্যাদাসম্পন্ন। [15]

আরো পড়ুন......→মানবাধিকার ও ইসলাম→পাতা ৪←

কোন মন্তব্য নেই :