মানবাধিকার ও ইসলাম →পাতা ২←
প্রথম পাতার পর ।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে, মানুষের অধিকার কিছু জন্মগত হ’লেও সবকিছু রাষ্ট্র দ্বারা সৃষ্ট ও রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত। প্রচলিত আইন বিজ্ঞানীদের যুক্তি হ’ল রাষ্ট্র যতক্ষণ না কোন অধিকারসম্পর্কিত আইন প্রণয়ন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ আইনত ও ব্যবহারগত কোন অধিকার আদায় করতে পারবে না। তাই এখানে রাষ্ট্র মানুষের অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হ’লে সব ব্যর্থ।বাস্তবে গণতন্ত্রকামী দেশগুলোতে এক্ষেত্রে ব্যর্থতার চিত্রই দেখা যাচ্ছে।
আধুনিক রাষ্ট্রে আইন প্রণেতাগণ জনগণের চাহিদানুযায়ী আইন প্রণয়ন করে অথবা একটাতে সমাধান না হ’লে দ্রুত ভিন্ন আর একটা আইন রচনার রাস্তা বের করতে হয়। বাংলাদেশে জনগণের জন্য এরকম অধিকার প্রতিষ্ঠা তথা জনগণের কল্যাণের (?) জন্য স্বাধীনতাত্তোর ৪০ বছরে অন্তত১৫বার সংবিধান সংশোধন করেছে। তবুও এদেশের মানুষের অধিকার আদায় ও বাস্তবায়ন করা সম্ভবহচ্ছে না। আমেরিকা, ফ্রান্স, ভারত সহ সব দেশে অসংখ্যবার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। তবু তারা তাদের অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যেন হালে পানি পাচ্ছে না। সবটাতে গোল-পাক খাচ্ছে। বিষয়টি অতীবকঠিন। কারণ, প্রকৃত অর্থে আইন বিজ্ঞানীগণ অধিকার সম্পর্কে যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা অস্পষ্ট এবং অপূর্ণাঙ্গ। প্রচলিত এ সংজ্ঞা ও আইনের কোন স্থিতি নেই; নেই কোন কমিটমেন্ট। ফলে তার কার্যকারিতাও নেই। তাই মানুষকে আসতে হয় ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে।
ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে অধিকার :
ইসলামে রয়েছে মানুষের অধিকারসম্পর্কে বিস্তারিত সুসংবদ্ধ নীতিমালা ও ব্যাখ্যা। মানুষেরনিজস্ব যুক্তি-বুদ্ধি সেখানে অচল। ইসলামের সে ব্যাখ্যার মধ্যে রয়েছে মানবতার রক্ষাকবচ। তাইতো মহান আল্লাহপাক কুরআন মজীদে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلاَ مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَمْراً أَنْ يَكُوْنَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَن يَعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْضَلَّ ضَلاَلاً مُّبِيْناً-‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ) কোন বিষয়ে ফায়ছালা করলে কোনমুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর নিজেদের কোন ব্যাপারে অন্য কোন সিদ্ধান্তের এখতিয়ার থাকবে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্যকরলে সে তো স্পষ্ট পথভ্রষ্ট হবে’ (আহযাব ৩৬)।
উক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায়, মানুষের কল্যাণকর্ম তথা অধিকারের ক্ষেত্রে কারও কোন কমবেশী করার সুযোগ নেই এবং কোনরূপ সংশোধন করারও সুযোগ নেই। ইসলামে অধিকার ও কর্তব্যপরস্পর সম্পর্কিত। শাসক-শাসিতের সম্পর্ক কেমন হবে তা উল্লেখ আছে। একইভাবে পিতা-মাতার উপর সন্তানের, সন্তানের উপর পিতা-মাতার অধিকার কেমন হবে তার ঘোষণা রয়েছে। অনুরূপভাবে স্ত্রীর উপর স্বামীর, স্বামীর উপর স্ত্রীর, নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব, সঙ্গী-সাথী, গরীব-মিসকীন, নিঃস্ব, ইয়াতীম, মুসাফির, হিন্দু, খৃষ্টান, রোগী, অসহায় ব্যক্তি, শ্রমিক সহ পৃথিবীর সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে পরস্পরের উপর অধিকার কেমন হবেতা ইসলামে নির্ধারিত রয়েছে। এমনকি জীব-জন্তু, পশু-পাখির সাথেও কেমন আচার-আচরণ করতে হয় তার স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে।কিন্তু অনেক আধুনিক পন্ডিত তাজানে না। যেমন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
‘আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের উপর ইহসান অত্যাবশ্যক করেছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে, দয়ার্দ্রতার সাথে হত্যা করবে। আর যখন যবেহ করবে, তখন দয়ার সঙ্গে যবেহ করবে। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধারালোকরে নেয় এবং তার যবেহকৃত জন্তুকে কষ্টে না ফেলে’। [6]
তিনি আরো বলেন,
‘যে ব্যক্তি একটি চড়ুই পাখি যবেহর সময়ও দয়া প্রদর্শন করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি দয়া করবেন’। [7]
অন্য এক হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,
‘যে জিনিসের মধ্যে প্রাণ আছে, তোমরা তাকে লক্ষ্যবস্ত্ত বানিও না’। [8]এ রকম বহু দৃষ্টান্ত দেয়া যাবে ইসলাম মানুষ ও সৃষ্টিকুলের জন্য কত উদারতা ওমহানুভবতা দেখিয়েছে। অথচ বহুবছর ধরে অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী ও আইন প্রণেতাগণ মানুষের অধিকারসম্পর্কে আধো আধো হ’লেও কিছু যুক্তি-দলীল পেশ করেছেন, কিন্তু পশু-পাখির উপর নিষ্ঠুরআচরণ করা যাবে না মর্মে কোন দেশের সংবিধানে কোন আইন লিখিতআছে বলে মনে হয় না। কিন্তু চিরন্তন অবিস্মরণীয় এক শাশ্বত বিধান ইসলামে শত শত বছর পূর্বে তা সংরক্ষিত রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে পৃথিবী যতদিন টিকে থাকবে। সুতরাং এ কথা আমরা দ্বিধাহীনচিত্তে ঘোষণা করতে পারি যে, অধিকার বিষয়ে মানুষ প্রদত্ত সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা নয়; কুরআন-ছহীহ সুন্নাহতেই তার চমৎকার সমাধান রয়েছে।
আইনগত অধিকার ( Legal Rights) :
আইনগত অধিকার হ’ল সে অধিকার যাকোন আইন দ্বারা স্বীকৃত ও সংরক্ষিত থাকে। এটা রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান বা আন্তর্জাতিককর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত ও বাস্তবায়িত হয়। এটা কেউ লংঘন বা অমান্য করলে তা দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে।যেমন- আমার পথ চলার অধিকার, ধর্মীয় কাজ সম্পন্ন করার অধিকার। এ কাজে কেউ বাধা দিলে তার প্রতিকার পাওয়া যাবে। কিন্তু কোন বিড়ালের সাথে নিষ্ঠুর আচারণ করা হ’লে [9] বাভিক্ষুকের সাথে যদি খারাপ আচরণ করা হয়, তবে তার কোন আইনগত প্রতিকার পাওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কাজেই বৃহত্তর অর্থে আইনগত অধিকার বলতে আমরা সেই অধিকারগুলোর কথা বলতে পারি যা কেবল রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইনের আওতায় রচিত।
ইসলামের দৃষ্টিতে আইনগত অধিকার :
আরো পড়ুন......→←মানবাধিকার ও ইসলাম→পাতা ৩←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন