মানবাধিকার ও ইসলাম →পাতা ১←

কোন মন্তব্য নেই

প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
ওয়েব সম্পাদনাঃ মোঃ মাহমুদ -ই- গাফফার

প্রারম্ভিকা :
অশান্ত পৃথিবীর বিক্ষুব্ধ জনতার আর্তচিৎকারের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে উন্মুক্ত গগনের মুক্ত পবন আজ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। বিশ্বে কোটি কোটি অভুক্ত বনু আদমের অমানবিক জীবন প্রবাহের নিদারুণ চিত্র সচেতন মানুষকে ব্যথিত করছে। পাশাপাশি তথাকথিত গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের ডামাডোলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মারণাস্ত্র ব্যবসায়ের প্রতিযোগিতা আজ বিবেকবান সকল মানুষকে ভাবিয়েতুলছে।
অথচ (প্রায় ১৪ বছর পূর্বের) এক রিপোর্টে দেখা যায় বিশ্বেপ্রতিদিন ১শ’ ১৫ কোটি শিশু অভুক্ত অবস্থায় রাত কাটায়। [1] কি চমৎকার বৈপরীত্য?

শক্তিধর দেশগুলোর কাছে দরিদ্রও ৩য় বিশ্বের জনগণ যেন বড় অসহায়। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের জনগণের অবস্থা আজ ত্রাহি ত্রাহি। বর্তমানে যারাই তথাকথিত মানবাধিকারের সবক দিতে আসে তাদের দ্বারাই তা পদলিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আবার তারাই ঐসব দরিদ্র দেশগুলোকে সাহায্যের লোভ দেখিয়ে এগিয়ে আসে। এ যেন সেই নীরিহ ছাগলের জন্য বাঘের সাহায্যের (?) হাত দেখানো। বিশ্বে শত শত বিলিয়ন ডলার মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার নামে ব্যয় হচ্ছে। অথচ ঐসব টাকা দিয়ে যদি গরীব মিসকীন অসহায়মানুষের খেটে খাওয়ার জন্য গরীব দেশগুলোতে মিল, কলকারখানা, হাসপাতাল প্রভৃতি কর্মমুখী ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হ’ত তাহ’লে লক্ষ কোটি মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের জীবন পরিচালনা করতে পারত। প্রশ্ন হ’ল, এগুলো করলে শক্তিধর মোড়লধনী দেশগুলো তথাকথিত ‘মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার যিকির’ তো আর করতে পারবে না। মানবাধিকার শব্দটি বর্তমান বিশ্বে ব্যাপক আলোচিত বিষয়। জাতিসংঘ মানবাধিকার সনদের বেশ কিছু কনভেনশন বা প্রস্তাবনা রয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৯১৮) পর ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় League of Nations বা ‘জাতিপুঞ্জ’।

এ সংস্থা উল্লেখযোগ্য কার্য বাস্তবায়ন করতে না পারায় ২য় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) গোটা বিশ্ব যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত, তখন কতিপয় রাষ্ট্রের উদ্যোগে ১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবরে বিশ্বসম্প্রদায় ‘জাতিসংঘ’ গঠন করে।এরপর ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ’ নামে একটি ঘোষণা দেয়া হয়। যা বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিকট গৃহীত হয়। এক্ষণে মানবাধিকারআইন বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সর্বজনীন মানবাধিকার আইনের বিশ্লেষণ করতে গেলে নানা দিক নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। সে সাথে ইসলামের আলোকে এর মূল্যায়নও জরুরী। নিম্নে মানবাধিকার বিষয়ে আলোচনা করাহ’ল।-
‘মানবতা’ শব্দটির তাৎপর্য মানবতা শব্দের বিশ্লেষণে নিহিত। এই শব্দটি চারটি বর্ণ সমন্বয়ে গঠিত। তা হচ্ছে মা+ন+ব+তা। এর মধ্যে চারটি বিষয় নিহিত আছে। যেমন মা=মানুষ ন=নীতি, ব=বাস্তবায়ন, তা=তাগাদা। অর্থাৎ মানুষের নীতি বাস্তবায়নের তাগাদাই হ’ল মানবতা। [2] বিশেষ্যবাচক এ মানবাধিকার পদটিকে বিশ্লেষণ করলে পৃথক দু’টি শব্দ বেরিয়ে আসে। তার একটি হ’ল ‘মানব’ (Human), অপরটি হ’ল ‘অধিকার’ (Right)।

অধিকার ( Right) :
‘অধিকার’ শব্দটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব ও প্রয়োগ বিশাল ও ব্যাপক। বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে একে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। যেমন- কারও মতে, বর্তমান কালে ‘অধিকার’ বলতে আইন দ্বারা সীমিত একজন ব্যক্তির কোন কিছু করার স্বাধীনতা, কোন কিছু নিজের অধীনে রাখা বা অন্যের কাছ থেকে কোন কিছু গ্রহণ করাকে বুঝায়। আইনের ভাষায় বলা যায়, অধিকার হল- একটি স্বার্থ, যা সংবিধান বা সাধারণআইন দ্বারা সৃষ্ট বা বলবৎযোগ্য হয়। [3] এখানে স্মর্তব্য যে, অধিকারের সাথে ‘কর্তব্য’ কথাটি সম্পৃক্ত। অন্যরা কর্তব্য পালন না করলে আমার পক্ষে অধিকার ভোগ করা সম্ভব নয়। যেমন- অন্যদের কর্তব্য হ’ল আমাকে পথ চলতে দেয়া। যদি তারা এ কর্তব্য পালন না করে, তাহ’লে আমার পথ চলার অধিকারের কোন অস্তিত্ব থাকে না। তেমনি আমার কর্তব্য হল, অন্যদের পথ চলতে দেয়া। আমি যখন অন্যদের পথ চলতে দেব, কেবল তখনই আমার নিজের পথ চলার অধিকার তাদের কাছ থেকে দাবী করতে পারব। তাই অধ্যাপক লাস্কি বলেন,
My rights are built always upon my functionto the well being of society; and the claim I make must, clearly enough, be claims that are necessary to the proper performance of my function. My demands upon society are demands which ought to receive recognition because a recognizable public interest is involved in their recognition. [4]

আধুনিক রাষ্ট্র উৎপত্তির পূর্বে মানুষের ‘অধিকার’ এর জন্ম হয়েছে, না পরে হয়েছে- এনিয়ে পন্ডিত মহলের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ মনে করেন, মানুষ পৃথিবীতে জন্ম গ্রহণের পর থেকেই তার অধিকারের বিষয়টি চলে এসেছে। যেমন John locke-এর মতে,
মানুষ স্বভাবতঃই কিছু অধিকার নিয়ে জন্ম লাভ করে, যাকে প্রাকৃতিক অধিকারও বলা হয় এবং যা প্রাক রাষ্ট্রীয় যুগেও বর্তমান ছিল।

পক্ষান্তরে Gettel-এর মতে,
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে মানুষের অধিকার ভোগ করা সম্ভবনয়। কেননা রাষ্ট্র অধিকার ভোগের নিশ্চয়তা না দিলে সে অধিকার অর্থহীন। অতএব রাষ্ট্রতথা রাষ্ট্রীয় আইনই অধিকার সৃষ্টি করে এবং তা ভোগ করার নিশ্চয়তা দেয়। [5] অর্থাৎ অধিকার হ’ল, সেই বিষয়বস্ত্ত যা মানুষের জন্ম থেকে শুরু হয়, যাকে আমরা প্রাকৃতিক অধিকার বলে থাকি, যা আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পূর্ব থেকে ছিল। অতঃপর সেই অধিকারগুলো মানুষ আধুনিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এনে আরও সুন্দর, সাবলীল, গ্রহণযোগ্য করে আইনী কাঠামোতেরূপান্তরিত করেছে।

আরো পড়ুন......→←মানবাধিকার ও ইসলাম→পাতা ২←

কোন মন্তব্য নেই :