মানবাধিকার ও ইসলাম →পাতা ৫←

কোন মন্তব্য নেই

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইসলামে যুগ-জিজ্ঞাসার জবাব তথা সমাধান বের করার ক্ষেত্রে গবেষণার মাধ্যমে কুরআন-ছহীহ সুন্নাহর আলোকে ইজতিহাদের দুয়ার খোলা রাখা হয়েছে। এটাক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল যুগের সকল যোগ্য আলেমের জন্য খোলা থাকবে।

মানবাধিকারের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ :
যতদূত জানা যায়, সর্বপ্রাচীন লিপিবদ্ধ আইন হচ্ছে রাজা হামুরাবি কর্তৃক প্রণীত বেবিলনীয় কোড (প্রায় ২১৩০-২০৮৮ খ্রীঃপূঃ) বা হামুরাবি কোড। লিখিত আইনের সূচনা হিসাবে এই ‘কোড’ খুব মূল্য বহন করে এবং পরবর্তীতে মানুষের অধিকার সংরক্ষণে রীতি-নীতি ও প্রথার চেয়ে লিপিবদ্ধ আইন অধিকতর ফলপ্রসূ হিসাবে বিবেচিত। [18]

এরপর সর্বপ্রথম যে আইনে মানুষের অধিকার যৎকিঞ্চিত হ’লেও ব্যক্ত করা হয়, তা হ’ল সিংহরাজের রাজত্বকালে সাইবেরীয়ান ব-দ্বীপে প্রণীত আইন। তবে এই আইনে জনগণের মৌলিক অধিকারের কথা উল্লেখ নাথাকলেও তার সামনে দেশে সামন্তপ্রভু ও অভিজাত ব্যক্তিদের একটি সভা ডাকা হ’ত, যা বর্তমান কালের সাথে কিছুটা তুলনাযোগ্য। ১১৮৮ খৃষ্টাব্দে রাজা নবম আলফানসের নিকট থেকে এই সভা অভিজাত শ্রেণীর জন্য বেশ কিছু অধিকার আদায় করে নেয়। এসব অধিকারের একটি তালিকা প্রণয়ন করা হয়। সেগুলোর মধ্যে ছিল ব্যক্তি স্বাধীনতা, জীবনের নিরাপত্তা, জীবনের মর্যাদা, বাসস্থান ও সম্পদের অলংঘনীয়তা। অর্থাৎ আইন ব্যতিরেকে তাদেরকে শারীরিকভাবে আটক, নির্যাতন, অসম্মান বা আইনানুগ বিচার ছাড়া কাউকে শাস্তি প্রদান বাকারও প্রাণ হরণ করা চলবে না; আইনসঙ্গত উপায় ব্যতিরেকে নিজবসতবাটিতে তাদের বসবাসে অসুবিধা সৃষ্টি করা চলবে না বা উচ্ছেদ করা যাবে না ইত্যাদি। [19] পরবর্তীতে হাঙ্গেরীর রাজা ২য়এন্ড্রু ১২২২ সালে স্বর্ণা আদেশ দ্বারা রাজকীয়ভাবে ‘সিংহসাম্রাজ্যের’ মত ঘোষণা দেন যে, কোন রাজা বা আমীরকে প্রথমে কোন আইনে অভিযুক্ত করাছাড়া আটক বা হত্যা করা চলবে না। এখানে আদালত কর্তৃক নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আমীরকে বিচার কার্যের কথা স্বীকার করা হয়েছে। রুডলফ ভনঝেরিং (১৮৫২-১৮৭৮) প্রায় সোয়াশ’ বছর আগে উল্লেখ করেছেনযে, প্রাচীন রিপাবলিকান রোমে রাষ্ট্র কর্তৃক রোমান নাগরিকদের (বিদেশী বা দাসদের জন্য এ আইন নয়) সরকারের অংশগ্রহণে, সরকার নির্বাচনে, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করার, সরকারী কর্মকর্তা নির্বাচন করার এমনকি পুলিশ প্রশাসনে অংশগ্রহণ করার অধিকার দেয়া হয়েছিল।

প্রখ্যাত আমেরিকান মনীষী ইয়ানটেমান (১৯৫৮) দেখিয়েছেনযে, রোমান আইন ব্যবস্থা রোমান পন্ডিত ও আইনজ্ঞদের দ্বারা প্রণীত। এ আইন ব্যবস্থায় মানুষের অধিকার প্রয়োগ ও সংরক্ষণের যৌক্তিক উপায় রাখাহয়েছিল, যাতে করে সর্বসাধারণ তাদের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হ’তে পারে। সর্বপ্রথম রোমান সমাজেইব্যাপকভাবে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছিল। ইয়ানটেমানের এই অভিমত বর্তমানে ইউরোপ এবং যেসব দেশে কমন ‘ল’ চালু আছে সেসব দেশে গুরুত্ব সহকারে প্রযোজ্য। রোমান সমাজে যেগুলোমানুষের অধিকার বলে স্বীকৃত ছিল, তার প্রকাশ ও প্রতিফলন ইংলিশ ম্যাগনাকার্টাতে দেখা যায়। ইংল্যান্ডের রাজা জন রানীমেড নামক স্থানে ১২১৫ সালে এই ঐতিহাসিক দলীল গ্রহণ করতে বাধ্য হন। [20] তবে একথা অবশ্যই স্বীকার করতেহবে যে, মানুষের অধিকার সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ৬ষ্ঠ ও ৭মশতকে ইসলাম ধর্ম অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে বিশ্বমানবতার মুক্তি ও কল্যাণের জন্য মানব অধিকার বিষয়ক শব্দটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ গ্রহণ করে। তবে সমকালীন প্রেক্ষাপটে ‘মানবাধিকার’ যে অর্থ বহন করে, কয়েকশতক আগেও এর অর্থ এরূপ ছিল না। তাই সংজ্ঞা হিসাবে মানবাধিকার শব্দটি কলাবিদ্যায় ও আইন বিজ্ঞানে খুব সাম্প্রতিক সংযোজন। সেজন্য বিংশ শতাব্দীরতৃতীয় শতকে ‘মানবাধিকার’, ‘মানুষের অধিকার’, ‘মৌলিক অধিকার’ কথাগুলো দ্বারা আসলে ঐসমস্ত অধিকারকেই বোঝানো হয়, যেগুলো ১৮ শতকের শেষ ভাগ থেকে ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের মাধ্যমে সৃষ্ট এবং ফরাসী (১৭৮৯) ও আমেরিকান (১৭৭৬) বিপ্লবের মাধ্যমে সুপ্রতিষ্ঠিত। [21]
প্রকৃতপক্ষে ঐ বিপ্লব দু’টির মাধ্যমেই ‘মানবাধিকার’ শব্দের আধুনিক অর্থের আনুষ্ঠানিক গোড়াপত্তন হয়। যা নিয়ে আজ বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সরগরম।
শামসুল আলম
সহকারী শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী,
নওদাপাড়া, রাজশাহী।

[1] . দৈনিক ইত্তেফাক, ১৪ই আশ্বিন, সোমবার, ১৪০৪ বাংলা।
[2] . ডঃ আনসার আলী খান, আন্তর্জাতিক আইন (ঢাকা: কামরুল বুক হাউস), পৃ. ৪২২।
[3] . Dr. A.B.M. Mofijul Islam Patwari and Md. Akhtaruzzaman, Elements of Human Rights and legal Aids, (Dhaka), P. 1.
[4] . ড. রেবা মন্ডল ও ড. শাহজাহান মন্ডল, মানবাধিকার আইন সংবিধান ইসলাম এনজিও (ঢাকা : শামস পাবলিকেশন্স), পৃঃ ১-২।
[5] . প্রাগুক্ত।
[6] . মুসলিম হা/৪৯৪৯, অধ্যায়-৩৫, অনুচ্ছেদ-১১; মিশকাত, হা/৪০৭৩ ‘শিকার ও যবেহ’ অধ্যায়।
[7]. সিলসিলা ছহীহা, হা/২৭।
[8] . মুসলিম, মিশকাত হা/৪০৭৬ ‘শিকার ও যবেহ’ অধ্যায়।
[9] . মানবাধিকার আইন সংবিধান ইসলাম এনজিও, পৃঃ ৩।
[10] . বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন, সংকলনে : গবেষণা পরিষদ (ঢাকা : ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ),পৃঃ ৪২১।
[11] . বুখারী হা/৩০১৮।[12] . মোঃ মাহবুব-উল হক জোয়ার্দ্দার, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে মানবাধিকার ( ঢাকা : বাংলা একাডেমী), পৃঃ ১।
[13] . তদেব।
[14] . মানবাধিকার আইন সংবিধানইসলাম এনজিও, পৃঃ ৩-৪।
[15] . তদেব, পৃঃ ৪।
[16] . তদেব, পৃঃ ৪-৫।
[17] . মাসিক আত-তাহরীক, ১৪তম বর্ষ, ১১তম সংখ্যা, আগষ্ট ২০১১,পৃঃ ৪৪।
[18] . আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে মানবাধিকার, পৃঃ ৮।
[19] . তদেব, পৃঃ ৯।
[20] . মানবাধিকার আইন সংবিধানইসলাম এনজিও, পৃঃ ৭।
[21] . আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিতে মানবাধিকার, পৃঃ ৬-৭।

সৌজন্যঃ কুরআনের আলো ডট কম ।

শেয়ার করে আপনিও হন ইসলামের প্রচারক ।
আমরা সবাই একাজটি করলে জানার পাশাপাশি সওয়াব হবে ।
যে ব্যাক্তি ইসলামের একটি কথা শিখবে তাকে আল্লাহ দশটি নেকী দেবেন ।
যে শিখাবে তাকেও দশটি নেকী দেওয়া হবে ।
তাই আসুন আমরা নিজেও জানি, অন্যদেরকেও জানাই ।

কোন মন্তব্য নেই :