বিনোদন মানুষকে কি ভুলিয়ে রাখে?→পাতা ২←
প্রথম পাতার, হঠাৎ দেখতে পেলেন রাস্তাটা শেষ হয়ে গেছে মাত্রকয়েক গজ দূরে গিয়ে– কয়েকশ ফুট নীচে একটা পাহাড়ী নদী বয়ে চলেছে।খুব ভয়ঙ্কর দিবা-স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্ন তাইনা? আপনার কাছে তখন আপনার আত্মীয়-স্বজন-বন্ধু-বান্ধবের চিন্তা, তাদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করার কল্পনা বা পরিকল্পনা সব একেবারে অর্থহীনহয়ে দাঁড়াবে। কারণ আপনি জানেন উবধঃয Death comes as the end – মরণের যাত্রাটা একমুখী, কেউ কখনো জীবনের ঐ সীমারেখা পার হয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। মাননীয় পাঠক! ব্যাপারটাকে যতই দুঃস্বপ্ন বা দিবাস্বপ্ন মনে হোক না কেন, আমরা, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ, আসলে জীবনের বাহনে এরকম একেক জন যাত্রী, যাদের জীবনে যে কোন মুহূর্তে রাস্তাটা হঠাৎ করে অসীমের মাঝে শেষ হয়ে যাবে। সেই পথের প্রান্ত কার জন্য কত দূরে তা কেউ জানে না জানলে কি John Denver বা Kennedy Juniorকেউ তাদের নিজ নিজ উড়োজাহাজেঐ নির্দিষ্ট দিনে চড়তেন? চড়তেন না নিশ্চয়ই! সে যাহোক পথ কখন শেষ হয়ে যাবে, তা না হয় না জানতে পারি আমরা; কিন্তু ধরুন একটু আগে আপনাকে যে গাড়ীর চালক হিসেবে নিজেকেকল্পনা করতে বলেছিলাম, সেই গাড়ীতে আপনি যখন যাত্রা শুরুকরলেন তখনই যদি জানতেন যে, ঐ যাত্রার স্থায়ীত্ব কতটুকু তানা জানলেও ঐ যাত্রাই আপনার শেষ যাত্রা, তাহলে আপনার কেমন লাগতো? পৃথিবীর কোন প্রলোভন, লোভ বা মোহ কি আপনাকে Seduceকরতে পারতো? তেমনি মৃত্যুর অনিবার্যতা কেবল ভাসা ভাসা ভাবে মনে জন্মালেও, সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে, একটা পর্দার সামনে বসে, সময় এবং পয়সা ব্যয় করে Manufactured, devised ও engineered সব “মন-পসন্দ” বা ’মন যারে চায়’ মার্কা TV প্রোগ্রাম দেখে আপনি, আপনার জীবনের reality বাঅপ্রতিরোধ্য বাস্তবতা: মৃত্যুকে, ভুলে থাকতেন না। আপনার অহেতুক ফুর্তি লাগতো নাএবং আপনি বুঝতেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত প্রবল গতিতে সাঁই সাঁই করে আপনাকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচেছ Rudyard Kipling-এর From a Railway Carriage-এর দৃশ্যাবলীর মত। আপনি তখন বুঝতেন, জীবনকে সুসংহত করা দরকার, প্রস্তুত করা দরকার ঐ অনিবার্যতার জন্য। আপনি বুঝতেন জীবনে আসলে ফুর্তির যাআনন্দের বিশেষ কিছু নেই। বরং ভাববার রয়েছে অনেক কিছু – করার রয়েছে অনেক কিছু – অথচ পরীক্ষার হলে ’শ্লথ-হাতের-লেখা-সম্পন্ন’ ছাত্রের মত, আপনার জীবনে সময় অত্যন্ত সীমিত। আপনার মন বিষন্ন হয়ে যেতো – আপনি কেবলই ভাবতেন আপনার পথের প্রান্ত কতদূরে? কখন জানি পরীক্ষার খাতায় লেখা বন্ধ করার ঘন্টাটা বেজে ওঠে? আর তাই আপনাকে ঐ বাস্তবতা ভুলিয়ে রাখতে পৃথিবীতে যত খেলাধূলা, ছায়াছবি, নাটক, টিভি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্যাবারে, স্ট্রিপটিজ ইত্যাদিসব কিছুর আয়োজন।৩। মানব জনমের সার্থকতা : বিনোদনের মাধ্যমে মানব জনমের পূর্ণতা ও সার্থকতা কিসে তা ভুলিয়ে রাখা হয়। কতকটা আপনি চান বলেও হয়তোবা, কিন্তু মূলত আপনাকে যেন “cog in a machine” বানানো যায় সেজন্য বিনোদনের প্রয়োজন – আপনাকে একটা ঘোরের ভিতরে নিয়ে যাবার জন্য, যে অবস্থায়sleep walker-দের মত আপনি ঘুমিয়ে থেকেও অনেক কিছু করতেপারবেন, সচেতন না হয়েও। আপনি কোন প্রশ্ন না করে অবিশ্বাসী বস্তুবাদীদের ভোগ সুখের যোগানদিতে কেবল কিছু মাসোহারার বিনিময়ে নিজের জীবনকে উৎসর্গকরবেন। পশ্চিমা বিশাল শিল্পনগরীগুলোর কর্মজীবী মানুষদের জীবন কেমন হয়? কাজ, ফিরে এসে বিয়ার নিয়ে টিভির সামনে বসা, খাওয়া, ঘুমানো তারপর আবার কাজ। কোন চিন্তা ভাবনা বা মনে কোন প্রশ্ন জাগার অবকাশ বা সুযোগ নেই। এই অবস্থাকেই রাসেল ‘cog in a machine’ বলেছেন। মেশিনের একটা দাঁত যেমন, নির্দিষ্ট
সময় পরে পরে একটা বৃত্তাকারেঘুরতে ঘুরতে একই স্থান অতিক্রম করে, মানুষও তেমন একটাঘড়ির কাঁটায় বাঁধা জীবনযাপনকরছে আজকের “উন্নত বিশ্বে”। সুতরাং আপনাকে আপনার মানবিক ওমানবসুলভ অস্তিত্ব ভুলিয়ে রাখার জন্য বিনোদনের প্রয়োজন- যেন আপনার মনে সমাজপতিদের নিয়ে কোন প্রশ্ন না জাগে, systemনিয়ে কোন প্রশ্ন না জাগে, বরং আপনি যেন system-এ গা ভাসিয়ে দিয়ে বিশ্বের মুষ্টিমেয় লোভী রাক্ষসের ’ভোগ-সুখের’ যোগান দিতে পারেন।রবীন্দ্রনাথের ভাষায় “চিরতন হরতন ইস্কাবনের” অতি সনাতন ছন্দে যেন সব কিছু চলে। আপনি কি জানেন কোটি কোটি ডলারের মালিক Drug lord বা Drug king-দের ছেলেমেয়েরা ধূমপানপর্যন্ত করে না বরং Harvard Law School বা MIT-তে লেখাপড়া করে – আপনার আমার ছেলেমেয়েরা, আমাদের যন্ত্রসুলভ জীবন ধারার জন্য মাদকাসক্ত হয়ে তাদের লক্ষ-কোটি ডলারের তহবিলের যোগান দিয়ে থাকে। বিনোদনে আপনাকে এমনভাবে ডুবিয়ে রাখা হবে, যাতে আপনার স্বাভাবিক বোধশক্তিই না থাকে – Australia-তে যেমন কিছু অঞ্চলে aborigine-দের যেন অথর্ব করে রাখা যায় সারাজীবন,তারা যেন কখনো মাথা তুলতে না পারে, সে জন্য তাদের বসতিপূর্ণএলাকায় মদ্যপানকে সহজতর করে দেয়া হয় এবং এটা একটা Official Policy হিসেবে করা হয়। আমি খবরের কাগজে পড়েছি যে, একটা আদিবাসী অঞ্চলে মেয়েরা সংগ্রাম করছিল, যেন তাদের এলাকায় মদের সহজলভ্যতারোধ করে, তাদের পুরুষদের অথর্বহওয়া থেকে রক্ষা করা হয়। আমাদের দেশের চা বাগান গুলোর “কুলি”দের অবস্থা অনেকটা এ ধরনের ছিল বা প্রায় ক্ষেত্রেএখনো আছে। একদিকে অত্যন্ত নিম্নমজুরী বেঁধে দিয়ে তাদেরজীবনে অভাবকে স্থায়ী আসন দেয়া হয়, আবার একই সময় মদ্যপান ও নাচগানের মাধ্যমে হাল্কা বিনোদনের প্রশ্রয় দেয়া হয়। তাতে ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম যে, অভাবী ও দুঃখী বলে সব ভুলে থাকতে (?) মানুষগুলো মদ্যপান ও ফুর্তি করতে গিয়ে সামান্য রোজগারটুকুও হারায় এবং তাদেরদুঃখও কখনো ঘোচে না – দুঃখী বলে তারা মদ্যপান করে, আর মদ্যপানে সব হারিয়ে তারা চিরতরে দুঃখীই থেকে যায়। Exploitation-এর নিমিত্তে সৃষ্ট cause and effect বা কার্যকারণের কি অদ্ভুত এক ’পাপচক্র’ !! এভাবে পৃথিবীর অবিশ্বাসী সমাজপতিরা, যারা আমাদের বর্তমান পৃথিবীর পিরামিড বিন্যাসের চূড়ায় রয়েছে, তারা নিশ্চিত করতে চায় যে, তাদের “শ্রমিক পিঁপড়া” শ্রেণীর শোষণের রক্ষ্যবস্তুরা যেন চিরজীবন বিনোদনের নেশায় ডুবে থেকে বাস্তবতা ভুলে থাকে –আরো পড়ুন→বিনোদন মানুষকে কি ভুলিয়ে রাখে?←→পাতা ৩←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন