বিনোদন মানুষকে কি ভুলিয়ে রাখে?→পাতা ৩←
২য় পাতার পর ।তারা যেন কোন বিপজ্জনক প্রশ্ন না করে – তারা যেন এতটুকু সচেতন কখনোই না হতে পারে, যতটুকু হলেরুখে দাঁড়াতে পারে। এখানে ছোট্ট একটা কথা বলে রাখি – কোনসমাজ বিজ্ঞানী যদি ইসলাম সম্বন্ধে জানতে চেয়ে কোন মুসলিমকে জিজ্ঞেস করেন যে, “মুহম্মদ (সা.)-এঁর মিশনে কি এমন ছিল যে, মক্কার সমাজপতিরা তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করতে চাইলো? অথচ, প্রচলিত ধারণা মতে তো ইসলাম শান্তির ধর্ম!” মাননীয় পাঠক, আপনার কাঙ্খিত ওসঙ্গত জবাব কি হবে? আমার জবাব হবে “মানুষের উপর মানুষের প্রভুত্বের অবসান বা মানুষের দাসত্ব থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়া ছিল তার মিশনের প্রধান ও ব্যাপক লক্ষ্য।”
৪। অস্তিত্বের বাস্তবতা : বিনোদন অস্তিত্বের বাস্তবতা ভুলিয়ে রাখে।
মাননীয় পাঠক! আপনি কখনো অন্ধকার রাতের পরিস্কার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখেছেন?অসংখ্য তারার বিশাল মহাকাশের দিকে তাকিয়ে আপনার কি অনুভূতি হয়? আমার তো মনে হয় বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে (পাশে কেউ থাকলেও) বেশীর ভাগ মানুষই একটা নিঃসঙ্গতা বোধ করবে – এই নিঃসঙ্গবোধের মূলে রয়েছে নিজের ক্ষুদ্রতা ও অনুল্লেখযোগ্যতার একটা অনুভূতি। মানুষ পৃথিবীতে একা আসে কিন্তু সেটা সে অতটা মনে রাখে না বা রাখতে পারে না। তবেযেতে হবে একদমই একা, এই বাস্তবতাটা তাকে এক ধরনের নিঃসঙ্গ ও বিষন্ন বোধ করতে বাধ্য করে এবং এটাই স্বাভাবিক। এই নিঃসঙ্গতা থেকেমানুষের মুক্তি লাভের উপায় কি? সাধারণ এই সত্যটা উপলব্ধিকরা যে, সে আসলে নিঃসঙ্গ নয়, বরং সে তার সৃষ্টিকর্তার সর্বময় জ্ঞানের আওতায় রয়েছে – রাসূল (সা.) যেমন হিজরতের সময় অন্ধকার গুহায় ভীত হযরত আবুবকর (রা.)-কে বলেছিলেন, “আমরা তো মাত্র দু’জন নই, আল্লাহ্ আমাদের সাথের তৃতীয় জন।” যারা বিশ্বাসী এবং তাকওয়া সম্পন্ন, তারা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত একথাটা অনুভব করেন। আর নিঃসঙ্গতা দূর করার যে উপায় আল্লাহ্ দেখিয়ে দিয়েছেন, সেই উপায় অবলম্বন করতঃ নিঃসঙ্গতা দূর করতে হবে।আল্লাহ্ যে সাথীকে ’হালাল’ করেছেন, সেই সাথীকে জীবনে গ্রহণ করে, ’আল্লাহ্-অনুমোদিত’উপায়ে নিঃসঙ্গতা দূর করতে হবে। এছাড়া ভালো মুসলিম হতে হলে সমাজবদ্ধতা বা জামাতবদ্ধতার যে প্রয়োজন, তাতেও আপনা আপনি নিঃসঙ্গতা দূর হবে। কিন্তু তা না করে ব্যক্তিগত “ফুর্তি” আহরণের পশ্চিমা দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে, কোন সমাজবদ্ধতা তো থাকবেই না বরং একটা দেশ বা জাতি কিছু স্বেচ্ছাচারী ’ব্যক্তির’ সমষ্টিতে রূপান্তরিত হবে – শত কোলাহলেরমধ্যেও সত্যিকার অর্থে ঘর সংসারের দায়িত্ব নিতে অনিচ্ছুক এই মানুষগুলো যেমন যৌবনে নিঃসঙ্গই থেকে যায়, বার্ধক্যে বিভিন্ন হোমে বা আশ্রমে স্থানান্তরিত হয়ে নিঃসঙ্গই নয় কেবল, বরং তার সাথে প্রত্যাখ্যাত হবার অনুভূতি নিয়ে মৃত্যুবরণ করে।
৫। আপনার মগজ ধোলাই প্রক্রিয়া : আপনার যে মগজ ধোলাই হচ্ছে, বিনোদন তা ভুলিয়ে রাখে।
বিনোদনের আড়ালে যখন আপনার মগজ ধোলাই করা হয়, তখন আপনি সেটা টেরই পান না – বিনোদন সামগ্রী গিলতে গিয়ে মানুষের চেতনা ও বিচারবুদ্ধি এমনভাবে লোপ পায় যে, বিনোদনের মাধ্যমেতার মস্তিষ্কে যে কোন নির্দিষ্ট ’গভীর মর্মবাণী’ প্রোথিত হয়ে যাচেছ, তা সে টেরই পায় না। একটা উদাহরণ দিই: ছোটরা তো বটেই, “আজে বাজে” জিনিস না দেখে, অনেক অভিভাবকরাই ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘Tom & Jerry’-র মত ’নিষ্পাপ’ কার্টুন দেখে তাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গদান করে কৃতার্থ করে থাকেন। সম্মানিত পাঠক! আপনি কখনো ভেবে দেখেছেন যে ‘Tom & Jerry’-র অন্তর্নিহিত বক্তব্য কি? Reversal of authority বা denial of authority বা reversal of order নিশ্চয়ই!প্রচলিত যে ব্যবস্থা, বিন্যাস বা বাস্তবতা তা হচেছ বিড়াল বড় বা শক্তিশালী – ইঁদুরের উপর তার কর্তৃত্ব থাকবে এবং ইঁদুর তাকে ভয় পাবে। ঠাট্টারছলে ব্যাপারটাকে উল্টে দিয়ে আসলে শিশু মস্তিষ্কে বাবার বিরুদ্ধে সন্তানকে অবাধ্য হবার এবং স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীকে অবাধ্য করে তোলার প্রথম বীজ বপন করা হয়। অর্থাৎ প্রচলিত বা traditional (এবং ইসলামীও বটে) মূল্যবোধের অবসানের প্রয়াস।
৬। জ্ঞানার্জন থেকে বিচ্যুতি : বিনোদনের নামে আপনাকে প্রকৃত জ্ঞানার্জনের প্রয়াস থেকে ভুলিয়ে দূরে সরিয়ে রাখা হয়।
আপনার অজান্তেই আপনাকে জ্ঞানার্জন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা বা জ্ঞান বিমুখ করা গেল। গবেষণার ফলাফল বলে যে, যারা সারাক্ষণ TV-র সামনে বসে থাকেন, তারা কোন কিছুতেই মনযোগী হতে পারেন না বিধায় তাদের দিয়ে কোন Serious পড়াশোনা সম্ভব নয়**। বস্তুবাদী অবিশ্বাসী সমাজপতিরা জানে, আপনার জ্ঞানার্জন তাদের জন্য কতটুকুবিপজ্জনক!! তাই, তারা চায় যে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করলে আপনিতাদের হয়ে কাজ করবেন, কেবল ততটুকু জ্ঞানই যেন আপনার থাকে– উন্নত বিশ্বের সাধারণ মানুষরা একদিকে যেমন অবিশ্বাসী সমাজপতিদের লাভবান করতে Junk Food খেয়ে পেট ভরে, অন্যদিকে তেমনি Junk পত্রিকা পড়ে তাদের চিত্ত-বিনোদন ঘটে। বৃটেনে যেমন Sun বা Mirror শ্রেণীর পত্রিকা পড়ে তাদের সাধারণ মানুষ, আমেরিকাতে তেমনি People শ্রেণীর সাময়িকী চলে । Economist-এর নাম প্রতি তিনজনে একজন জানলেও (!!) সেটা সৌভাগ্যের ব্যাপার হতো। আপনাকে সত্য থেকে সরিয়ে রাখাবা সত্য অনুসন্ধান থেকে দূরে সরিয়ে রাখা বা ভুলিয়ে রাখা হচ্ছে, বিনোদনের মিডিয়া টাইকুনদের আরেকটা মহান ব্রত। ’খবর’ নামক পণ্য সব সময়ই engineerd এবং fabricated – এখনকার বিশ্বের প্রধান সংবাদ উপস্থাপনকারী সংস্থাগুলো যেহেতু বস্তুবাদী অবিশ্বাসীদের নিয়ন্ত্রণে (বাআরও সঠিকভাবে বললে ইহুদীদের নিয়ন্ত্রণে), সেহেতু তারা আপনাকে যা বিশ্বাস করাতে চাইবে, তাই দেখাবে, এবং আপনিও তাই বিশ্বাস করবেন। দুর্ভাগ্যবশত আপনার মনে হবে যে, আপনার সময়, সঙ্গতি, সামর্থবা সাহস কোনটাই অতটুকু পর্যাপ্ত নয়, যতটুকু হলে আপনিএসবের বাইরে গিয়ে সত্য অনুসন্ধান করতে পারতেন।
**দেখুন: (http://www.sonarbangladesh.com/blog/mariner/)
Strangers in Our Homes: TV and Our Children’s Minds – Susan R. Johnson,M.D. with comments by Hamza Yusuf Hanson.
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন