বিদাত থেকে বাঁচতে হলে যা জানা আবশ্যক / পাতা ২

কোন মন্তব্য নেই
বিদ‘আতে হাসানায় বিশ্বাসীরা যা কিছু বিদ‘আতে হাসানাহ হিসাবেদেখাতে চান সেগুলো হয়তশাব্দিক অর্থে বিদ‘আত, শরয়ী অর্থে নয় অথবা সেগুলো সুন্নাতে হাসানাহ। যে সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
من سن فى الإسلام سنة حسنة فله أجرها وأجر من عمل بها بعده من غير أن ينقص من أجورهم شيء، ومن سن في الإسلام سنة سيئة فله وزرها ووزر من عمل بها من بعده من غير أن ينقص من أوزارهم شيء . ( رواه مسلم عن جرير بن عبد الله رضي الله عنهما )
অর্থ: “যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল সে উহার সওয়াব পাবে এবং সেইপদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদেরসওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতিঅনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না”। (মুসলিম)
এখানে একটা প্রশ্ন হতে পারে যে , শবে বরাত উদযাপন, মীলাদ মাহফিল, মীলাদুন্নবী প্রভৃতি আচার-অনুষ্ঠানকে কি সুন্নাতে হাসানাহ হিসাবে গণ্য করা যায় না? মাইকে আজানদেয়া, মাদ্রাসার পদ্ধতি প্রচলন, আরবীব্যাকরণ শিক্ষা ইত্যাদি কাজগুলো যদি সুন্নাতে হাসানাহ হিসাবে ধরা হয় তাহলে শবে বরাত, মীলাদ ইত্যাদিকে কেন সুন্নতে হাসানাহ হিসাবে গ্রহণ করা যাবে না?
পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, বিদ ‘ আত হবে ধর্মীয় ক্ষেত্রে

যদি নতুন কাজটি ধর্মেরঅংশ মনে করে অথবা সওয়াব লাভের আশায় করা হয়, তাহলে তা বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্ন আসে।
আর যদি কাজটি ধর্মীয় হিসাবে নয় বরং একটা পদ্ধতি হিসাবে করা হয় তাহলে তা বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্ন আসে না। যেমন ধরুন মাইকে আজান দেয়া।কেহ মনে করেনা যে, মাইকেআজান দিলে সওয়াব বেশী হয় অথবা মাইক ছাড়া আজান দিলে সওয়াব হবে না। তাই সালাত ও আজানের ক্ষেত্রে মাইক ব্যবহারকে বিদ‘আত বলা যায় না।
তাই বলতে হয় বিদ ‘ আত ও সুন্নাতে হাসানার মধ্যে পার্থক্য এখানেই যে ,
কোন কোন নতুন কাজ ধর্মীয় ও সওয়াব লাভেরনিয়াত হিসাবে করা হয় আবার কোন কোন নতুন কাজ দ্বীনি কাজ ও সওয়াবের নিয়াতে করা হয় না বরং সংশ্লিষ্ট কাজটি সহজে সম্পাদন করার জন্য একটানতুন পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়।
যেমন আমরা যদি ইতিপূর্বে উল্লিখিত হাদীসটির প্রেক্ষাপটের দিকে তাকাই তাহলে দেখতেপাই যে, একবার মুদার গোত্রের কতিপয় অনাহারীও অভাবগ্রস্থ লোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলো। তিনি সালাত আদায়ের পর তাদের জন্য উপস্থিত লোকজনের কাছে সাহায্য চাইলেন। সকলে এতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিলেন। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়েকিরামের আগ্রহ ও খাদ্য সামগ্রী দান করার পদ্ধতি দেখে উল্লিখিত কথাগুলি বললেন। অর্থাৎ,
“যে ইসলামে কোন ভাল পদ্ধতি প্রচলন করল সে উহার সওয়াব পাবেএবং সেই পদ্ধতি অনুযায়ী যারা কাজ করবে তাদের সওয়াবও সে পাবে, তাতে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ পদ্ধতি প্রবর্তন করবে সে উহার পাপ বহন করবে, এবং যারা সেই পদ্ধতিঅনুসরণ করবে তাদের পাপও সে বহন করবে, তাতে তাদের পাপের কোন কমতি হবে না”। (মুসলিম)
অভাবগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য যে পদ্ধতি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে ওটাকে সুন্নাতে হাসানাহ বলা হয়েছে।
বলা যেতে পারে, সকল পদ্ধতি যদি হাসানাহ হয় তাহলে সুন্নাতে সাইয়্যেআহ বলতে কি বুঝাবে?
উত্তরে বলব, মনে করুন কোন দেশের শাসক বা জনগণ প্রচলন করে দিল যে এখন থেকে স্থানীয় ভাষায় আজান দেয়া হবে , আরবী ভাষায় দেয়াচলবে না। এ অনুযায়ী ‘আমল করা শুরু হল। এটাকেআপনি কি বলবেন? বিদ‘আত বলতে পারবেন না, কারণ যারা এ কাজটা করল তারা সকলে জানে অনারবী ভাষায় আজান দেয়া ধর্মের নির্দেশ নয় এবংএতে সওয়াবও নেই। তাই আপনি এ কাজটাকে সুন্নাতে সাইয়্যেআহ হিসাবে অভিহিত করবেন। এর প্রচলনকারী পাপের শাস্তি প্রাপ্ত হবে, আর যারা ‘আমল করবে তারাও।
আবার অনেক উলামায়ে কিরাম বিদ‘আতকে অন্যভাবে দু ভাগে ভাগ করে থাকেন। তারা বলেন বিদ‘আত দু প্রকার।
*. একটা হল বিদ‘আত ফিদ্দীন (البدعةفيالدين) বা ধর্মের ভিতর বিদ‘আত।
*. অন্যটা হল বিদ‘আত লিদ্দীন (البدعةللدين) অর্থাৎধর্মের জন্য বিদ‘আত।
প্রথমটি প্রত্যাখ্যাত আর অন্যটি গ্রহণযোগ্য।
আমার মতে এ ধরণের ভাগ নি ষ্প্র য়োজন , বরং বিভ্রান্তি সৃষ্টিতে সহায়ক।
কারণ প্রথমতঃ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সকল বিদ‘আত পথভ্রষ্টতা বা গোমরাহী।এতে উভয় প্রকার বিদ‘আত শামিল।
দ্বিতীয়তঃ অনেকে বিদ‘আত ফিদ্দীন করে বলবেন, আমি যা করেছি তা হল বিদ‘আত লিদ্দীন। যেমন কেহ মীলাদ পড়লেন।অতঃপর যারা এর প্রতিবাদকরলেন তাদের সাথে তর্কেলিপ্ত হয়ে অনেক দূর যেয়ে বললেন, মীলাদ পড়া হল বিদ‘আত লিদ্দীন – এর দ্বারা মানুষকে ইসলামের পথে ডাকা যায়।অথচ তা ছিল বিদ’আতে ফিদ্দীন (যা প্রত্যাখ্যাত) !
আসলে যা বিদ‘আত লিদ্দীন বা দ্বীনের স্বার্থে বিদ‘আত তা শরীয়তের পরিভাষায় বিদ‘আতের মধ্যে গণ্য করা যায় না। সেগুলোকে সুন্নাতে হাসানাহ হিসাবে গণ্য করাটাই হাদীসে রাসূল দ্বারা সমর্থিত।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! বিদ‘আত সম্পর্কে এ কথাগুলো এখানে এ জন্য আলোচনা করলাম যাতে আলোচ্য বিষয়ের উপর কোনপ্রশ্ন বা বিভ্রান্তির সৃষ্টি হলে তার সমাধান যেন পাঠকবৃন্দ সহজে অনুধাবন করতে পারেন।
বইঃ “ শবে বরাতঃ সঠিক দৃষ্টিকোণ ”
সংকলনঃ আব্দুল্লাহ শহীদ আবদুর রহমান

শেয়ার করে আপনিও হন ইসলামের প্রচারক ।
আমরা সবাই একাজটি করলে জানার পাশাপাশি সওয়াব হবে ।
যে ব্যাক্তি ইসলামের একটি কথা শিখবে তাকে আল্লাহ দশটি নেকী দেবেন ।
যে শিখাবে তাকেও দশটি নেকী দেওয়া হবে ।
তাই আসুন আমরা নিজেও জানি, অন্যদেরকেও জানাই ।

কোন মন্তব্য নেই :