বিদাত থেকে বাঁচতে হলে যা জানা আবশ্যক / পাতা ১

কোন মন্তব্য নেই
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
[image]
বিদ‘ আত কাকে বলে এ বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। অনেকের ধারণা যা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে ছিলনা তা-ই বিদ‘আত। আবারঅনেকে মনে করেন বর্তমাননিয়মতান্ত্রিক মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতিএকটি বিদ‘আত, মসজিদে কাতার করে নামায পড়া বিদাত, বিমানে হজ্জে যাওয়া বিদ‘আত, মাইকে আজান দেয়া বিদ‘আত ইত্যাদি। এ সকল দিক বিবেচনা করে তারা বিদ‘আতকে নিজেদের খেয়াল খুশি মত দুই ভাগ করে কোনটাকে হাসানাহ (ভাল বিদ‘আত) আবার কোনটাকে সাইয়্যেআহ (মন্দ বিদ‘আত) বলে চালিয়ে দেন। আসলে বিদ‘আত সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে এ বিভ্রান্তি।
বিদ ‘ আতের আভিধানিক অর্থ হল:
الشيء المخترع على غير مثال سابق ومنه قوله تعالى ( قل ما كنت بدعا من الرسل ) وجاء على هذا المعنى قول عمر رضي الله عنه ( نعمت البدعة )
অর্থ: পূর্বের দৃষ্টান্ত ব্যতীত নতুন সৃষ্ট কোন বিষয় বা বস্তু। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “বলুন,আমি তো কোন নতুন রাসূল নই”।আসলে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাসূল হিসাবে নতুনই। কিন্তু এ আয়াতে বিদ‘আত শব্দের অর্থ হল এমন নতুন যার দৃষ্টান্ত ইতোপূর্বে গত হয়নি। আর উমার (রাঃ) তারাবীহর জামাত কায়েম করে বলেছিলেন “ এটা উত্তম বিদ ‘ আত। ” এখানেও বিদ‘আতের আভিধানিক অর্থ প্রযোজ্য।
ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় বিদ ‘ আতের সংজ্ঞা

‎ما أحدث في دين الله وليس له أصل عام ولا خاص يدل عليه .
‘যা কিছু আল্লাহর দ্বীনে নতুন সৃষ্টি করা হয় অথচ এর সমর্থনে কোন ব্যাপক বা বিশেষ দলীল প্রমাণ নেই।’
অর্থাৎ নব সৃষ্ট বিষয়টি অবশ্যই ধর্মীয় ব্যাপারে হতে হবে।
যদি ধর্মীয় ব্যাপার ব্যতীত অন্য কোন বিষয়ে নব-আবিস্কৃত কিছু দেখা যায় তা শরীয়তের পরিভাষায়বিদ ‘ আত বলে গণ্য হবে না ,যদিও শাব্দিক অর্থে তা বিদ ‘ আত।
এ প্রসঙ্গে আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) তার ‘র্শিক ও বিদ‘আত’ কিতাবে বিদ ‘ আতের পরিচ্ছন্ন সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন। তা হল: যে বিশ্বাস বা কাজ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করেননি কিংবা পালন করার নির্দেশ দেননি সেই ধরনের বিশ্বাস বা কাজকেদ্বীনের অন্তর্ভুক্ত করা,এর অঙ্গ বলে সাব্যস্ত করা, সওয়াব বা আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপায় মনে করে এই ধরনের কাজ করার নাম বিদ‘আত।
যে সকল বিশ্বাস ও কাজকে দ্বীনের অংশ মনে করে অথবা সওয়াব হবে ধারণা করে ‘আমল করা হয় তা বিদ‘আত। কারণ হাদীসে এসেছে : আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনিবলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“যে আমাদের এ ধর্মে এমন কোন নতুন বিষয় উদ্ভাবন করবে যা ধর্মে অন্তর্ভুক্ত ছিল না তা প্রত্যাখ্যাত হবে”।(বুখারী ও মুসলিম)
এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট হল যে,নতুন আবিস্কৃত বিষয়টি যদি ধর্মের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরে নেয়া হয় তাহলেতা বিদ ‘ আত ও প্রত্যাখ্যাত।
*. হাদীসে আরো এসেছে:
“যে ব্যক্তি এমন কাজকরল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই তা প্রত্যাখ্যাত”।(মুসলিম)
এ হাদীসে “যার প্রতি আমাদের নির্দেশ নেই” বাক্যটি দ্বারা এ কথা বুঝানো হয়েছে যে, বিষয়টি ধর্মীয় হতে হবে।
ধর্মীয় বিষয় হিসাবে কোন নতুন ‘ আমল করলেই বিদ ‘ আত হবে।
যারা মাইকে আজান দেন তারা জানেন যে,
*. মাইকে আজান দেয়ার আলাদা কোন মর্যাদা নেই বা আজানে মাইক ব্যবহার করা সওয়াবেরকাজ বলে তারা মনে করেননা। এমনিভাবে বিমানে হজ্জে যাওয়া,
*. প্রাতিষ্ঠানিক মাদ্রাসার প্রচলন,
*. নাহু সরফের শিক্ষা গ্রহণ প্রভৃতি বিষয় ধর্মীয় বিষয় বলে মনে করা হয় না,
তাই তা বিদ‘আত হওয়ার প্রশ্ন আসে না। এ ধরনের বিষয়গুলি বিদ ‘ আত নয় বরং সুন্নাতে হাসানাহ বলা যেতে পারে।

অনেকে এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বিদ ‘ আতকে দু ’ ভাগে ভাগ করার চেষ্টা করেন।
বিদ‘আতে হাসানাহ ও বিদ‘আতে সাইয়্যেআহ। সত্যি কথা হল বিদ‘আতকে এভাবে ভাগ করাটা হল আরেকটি বিদ‘আত এবং তা হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিপন্থী।
কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন
“সকল নব-আবিস্কৃত (দীনের মধ্যে) বিষয়হতে সাবধান! কেননা প্রত্যেকটি নব-আবিস্কৃত বিষয় বিদ‘আত,আর প্রত্যেকটি বিদ‘আত হল পথভ্রষ্টতা”। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ও বাইহাকী)
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন সকল প্রকার বিদ‘আত ভ্রষ্টতা। এখন যদি বলা হয় কোন কোন বিদ ‘ আত আছে যা হাসানাহ বা উত্তম , তাহলে ব্যাপারটি সম্পূর্ণহাদীসবিরোধী হয়ে যায়। তাই তো ইমাম মালিক (রঃ) বলেছেন :”যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন বিদ ‘ আতের প্রচলনকরে আর ইহাকে হাসানাহ বা ভাল বলে মনে করে , সে যেন প্রকারান্তরে এ বিশ্বাসপোষণ করে যে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর পয়গাম পৌছাতে খিয়ানাতকরেছেন। কারণ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই বলেন: ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পূর্ণ করে দিলাম।’ সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামেরযুগে যা ধর্ম রূপে গণ্য ছিল না আজও তা ধর্ম বলে গণ্য হতে পারে না।
তাই বিদ ‘ আতে হাসানাহবলে কোন কিছু নেই।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা বলেছেনআমরা তাই বলব; সকল প্রকার বিদ‘আত গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা।

আরো পড়ুন...... বিদাত থেকে বাঁচতে হলে যা জানা আবশ্যক / পাতা ২

কোন মন্তব্য নেই :