সফর মাস ও আখেরী চাহার শোম্বা বিষয়ক বিদা’আত / পাতা ১

কোন মন্তব্য নেই
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না
লেখকঃ ডঃ আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর | সূত্রঃ বই- হাদীসের নামে জালিয়াতি
সফর মাসকে কেন্দ্র করে অনেক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা মুসলিম সমাজে প্রচলিত হয়েছে। এমনকি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও এই মাসের ‘ফজিলতের’ কথা লেখা হয়। এগুলিকে আমরা তিন ভাগে বিভক্ত করতে পারি। প্রথমত, সফর মাসের ‘অশুভত্ব’ ও ‘বালা মুসীবত’ বিষয়ক, দ্বিতীয়ত সফর মাসের প্রথম তারিখ বা অন্য সময়ে বিশেষ সালাত, তৃতীয়ত, আখেরী চাহার শোম্বা বা সফর মাসের শেষ বুধবার বিষয়ক।
সফর মাসের ‘অশুভত্ব’ ও ‘বালা মুসীবত’
কোন স্থান, সময়, বস্তু বা কর্মকে অশুভ, অযাত্রা, বা অমঙ্গলময় বলে মনে করা ইসলামী বিশ্বাসের ঘর পরিপন্থি একটি কুসংস্কার। আরবের মানুষরা জাহেলী যুগ থেকে ‘সফর’ মাসকে অশুভ ও বিপদআপদের মাস বলে বিশ্বাস করত। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাদের এই কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে বলেন,
“…কোন অশুভ অযাত্রানেই, কোন ভুত প্রেত বা অতৃপ্ত আত্মা নেইএবং সফর মাসের অশুভত্বের কোন অস্তিত্ব নেই।…” (বুখারী ৫/২১৫৯, ২১৬১, ২১৭১, ২১৭৭)
অথচ এর পরেও মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে পূর্ববর্তী যুগের এ সকলকুসংস্কার থেকে যায়। শুধু তাই নয়, এ সকল কুসংস্কারকে উস্কে দেওয়ার জন্য অনেক বানোয়াট কথা হাদিসের নামে বানিয়ে সমাজে প্রচার করেছে জালিয়াতগণ। তারা জালিয়াতি করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামে বলেছে, এই মাস বালামুসিবতের মাস। এই মাসে এত লক্ষ এত হাজার…বালা নাযিল হয়। …এই মাসেই আদম (আঃ) ফল খেয়েছিলেন। এমাসেই হাবীল নিহত হন। এ মাসেই নূহ (আঃ) এর কাওম ধ্বংস হয়। এ মাসেই ইব্রাহীম (আঃ) কে আগুনে ফেলা হয়।…এ মাসের আগমনে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ব্যথিত হতেন। এই মাস চলে গেলে খুশী হতেন…। তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তিআমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে, আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করার সুসংবাদ প্রদান করব।’…ইত্যাদি অনেক কথা তারা বানিয়েছে। আর অনেক সরলপ্রান বুজুর্গও তাদের এ সকল জালিয়াতি বিশ্বাস করে ফেলেছেন। মুহাদ্দিসগণ একমত যে, সফর মাসের অশুভত্ব ও বালা মুসীবত বিষয়ক সকলকথাই ভিত্তিহীন মিথ্যা ।
সফর মাসের ১ম রাতের সালাত
উপরোক্ত মিথ্যা কথাগুলোর ভিত্তিতেই একটি ভিত্তিহীন ‘সালাতের’ উদ্ভাবন করা হয়েছে। বলা হয়েছে, কেউ যদি সফর মাসের ১ম রাত্রিতে মাগরিবের পরে… বা ঈশার পরে… চার রাকআত সালাত আদায় করে, অমুক অমুক সূরা বা আয়াত এতবার পাঠ করে … তবে সে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে, এত পুরস্কার পাবে… ইত্যাদি। এগুলিসবই ভিত্তিহীন বানোয়াট কথা , যদিও অনেক সরলপ্রাণ আলেম ও বুজুর্গ এগুলি বিশ্বাস করেছেন বা তাদের বইয়ে ও ওয়াজে উল্লেখ করেছেন(যেমন খাজা নিজামুদ্দিনআউলিয়ার, রাহাতুল কুলুব- পৃষ্ঠা ১৩৮-১৩৯; মুফতি হাবীব ছামদানীর, বার চান্দের ফজীলত- পৃষ্ঠা ১৪)।
বিভিন্ন জাল হাদীসে বলাহয়েছে, বুধবার অশুভ এবং যেকোনো মাসের শেষ বুধবার সবচেয়ে অশুভ দিন। আর সফর মাস যেহেতু অশুভ, সেহেতু সফর মাসের শেষ বুধবার বছরের সবচেয়ে অশুভ দিন এবং এই দিনে সবচেয়ে বেশী বালা মুসীবত নাযিল হয়।এই সব ভিত্তিহীন কথাবার্তা অনেক সরলপ্রাণ বুজুর্গ বিশ্বাস করেছেন। একজন লিখেছেন, “সফর মাসে এক লাখ বিশ হাজার ‘বালা’ নাজিল্ হয় এবং সবদিনেরচেয়ে বেশী আখেরী চাহারশম্বা(সফর মাসের শেষ বুধবার) তে নাযিল হয় সবচেয়ে বেশী। সুতরাং ঐদিনে যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত নিয়মে চার রাকআত নামাজ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাঁকে ঐবালা হতে রক্ষা করবেন এবং পরবর্তী বছর পর্যন্ত তাঁকে হেফাজত রাখবেন…। (খাজা নিজামুদ্দিন আউলিয়ার, রাহাতিল কুলুব- পৃষ্ঠা ১৩৯)”
এগুলি সবই ভিত্তিহীন কথা । তবা আমাদের দেশে বর্তমানে ‘আখেরী চাহার শোম্বা’-র প্রসিদ্ধি এই কারণে নয়, অন্য কারণে। প্রসিদ্ধ আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সফর মাসের শেষ দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি সফর মাসের শেষ বুধবারে কিছুটা সুস্থ হন এবং গোসল করেন। এরপর তিনি পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এই অসুস্থতাতেই তিনি পরের মাসে ইন্তেকাল করেন। এজন্য মুসলমানেরা এই দিনে তাঁর সর্বশেষ সুস্থতা ও গোসলের স্মৃতি উদযাপন করেন।
এ বিষয়ে প্রচলিত কাহিনীর সারসংক্ষেপ প্রচলিত একটি পুস্তক থেকে উদ্ধৃত করা হল
“হজরত নবী করিম (সাঃ) দুনিয়া হইতে বিদায় নিবার পূর্ববর্তী সফর মাসের শেষ সপ্তাহে ভীষণভাবে রগে আক্রান্ত হইয়াছিলেন। অতঃপর তিনি এই মাসের শেষ বুধবার দিন সুস্থ হইয়া গোসল করতঃ কিছু খানা খাইয়া মসজিদে নববীতে হাজির হইয়া নামাজের ইমামতি করিয়াছিলেন। ইহাতেউপস্থিত সাহাবীগণ অত্যন্ত আনন্দিত হইয়াছিলেন। আর খুশীর কারণে অনেকে অনেক দান খয়রাত করিয়াছিলেন। বর্ণিত আছে হজরত আবুবকর (রাঃ) খুশীতে ৭ সহস্র দিনার এবং হজরত ওমর ইবনে খাত্তাব (রাঃ) ৫ সহস্র দিনার, হজরত ওসমান (রাঃ) ১০ সহস্র দিনার, হজরত আলী (রাঃ) ৩ সহস্র দিনার এবং

আরো পড়ুন......সফর মাস ও আখেরী চাহার শোম্বা বিষয়ক বিদা’আত পাতা ২

কোন মন্তব্য নেই :