দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা ওদারিদ্রতার মাহাত্ম্য →পাতা ৩ ←
তারা বললেন, ‘আল্লাহর কাসম! যদি এটা জীবিত থাকত তবুও সে ছোট কানের কারনে দোষযুক্ত ছিল। এখন সে মৃত (সেহেতু একে কেনেবে)?’ তিনি বললেন, “আল্লাহর কসম! তোমাদের নিকট এই মৃত ছাগলছানাটা যতটা নিকৃষ্ট, দুনিয়া আল্লাহর নিকট তার চেয়ে বেশি নিকৃষ্ট।” (মুসলিম ২৯৫৭, আবূ দাউদ ১৮৬, আহমাদ ১৪৫১৩)৯) আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (একবার) নবী (সাঃ) –এর সাথে মদীনার কালো পাথুরে যমীনে হাঁটছিলাম। উহুদ পাহাড় আমাদের সামনে পড়ল। তিনি বললেন, “হে আবূ যার! এতে আমি খুশী নই যে, আমার নিকট এই উহুদ পাহাড় সমান স্বর্ণ থাকবে, এ অবস্থায় তিনদিন অতিবাহিত হবে অথচ তার মধ্যে থেকে একটি দীনারও আমার কাছে অবশিষ্ট থাকবে। অবশ্য টা থাকবে যা আমি ঋণ আদায়ের জন্য বাকী রাখব অথবা আল্লাহর বান্দাদের মাঝে এইভাবেএইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করব।” তারপর (কিছু আগে) চলে তিনি বললেন, “প্রাচুর্যের অধিকারীরাই কিয়ামতের দিন নিঃস্ব হবে। অবশ্য সে নয় যে সম্পদকে (ফোয়ারার মত) এইভাবে এইভাবে এইভাবে ডানে, বামে ও পিছনে খরচ করে। কিন্ত এরকম লোকের সংখ্যা খুবই কম।”
তারপর তিনি আমাকে বললেন, “তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে (ফিরে) আসছি।” এরপর তিনি রাতের অন্ধকারে চলতেলাগলেন, এমনকি শেষ পর্যন্ত তিনিঅদৃশ্য হয়ে গেলেন। হঠাৎ, আমি একজোর শব্দ শুনলাম। আমি ভয় পেলাম যে কোন শত্রু হয়তো নবী (সাঃ)-এরসামনে পড়েছে। সুতরাং আমি তাঁর নিকট যাওয়ার ইছা করলাম, কিন্ত তাঁর কথা আমার স্মরণ হল, “তুমি এখানে বসে থাক, যতক্ষণ না আমি তোমাদের কাছে (ফিরে) আসছি।” সুতরাং আমি তাঁর ফিরে না আসা পর্যন্ত বসে থাকলাম। (তিনি ফিরে এলে) “আমি বললাম,আমি এক জোর শব্দ শুনলাম, যাতে আমি ভয় পেলাম”। সুতরাং যা শুনলাম আমি তা তাঁর কাছে উল্লেখ করলাম।
তিনি বললেন, “তুমি শব্দ শুনেছিলে?” আমি বললাম, “জী হ্যাঁ” , তিনি বললেন, “তিনি জিবরাঈল ছিলেন। তিনি আমার কাছেএসে বললেন, “আপনার উম্মাতের মধ্যে যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথেকাউকে শরীক না করে মরবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” আমি বললাম, “যদিও সে ব্যভিচার করে ওচুরি করে তবুও কি?” তিনি বললেন,“যদিও সে ব্যভিচার করে ও চুরি করে।” (সহীহুল বুখারী ৬২৬৮,১২৩৭,২৩৮৮,৩২২২, মুসলিম ৯৪)
১০) আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি আমার নিকট উহুদ পাহাড় সমান সোনা থাকত, তাহলে আমি এতে আনন্দিত হতাম যে, ঋণ পরিশোধের পরিমাণ মত বাকী রেখে অবশিষ্ট সবটাই তিন দিন অতিবাহিত না হতেই আল্লাহর পথে খরচ করে ফেলি।” (সহীহুল বুখারী ২৩৮৯,৬৪৪৫,৭২২৮, মুসলিম ৯৯১)
১১) উক্ত সাহাবী (সাঃ) থেকেই বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “(দুনিয়ার ধন-দৌলত ইত্যাদির দিক দিয়ে) তোমারা মধ্যে যে নীচেতোমরা তার দিকে তাকাও এবং যে তোমাদের উপরে তার দিকে তাকায়ো না। যেহেতু সেটাই হবে উৎকৃষ্ট পন্থা যে, তোমাদের প্রতি যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তুচ্ছমনে করবে না।” (সহীহুল বুখারী ৬৪৯০,মুসলিম ২৯৬৩)
১২) বুখারীর বর্ণনায় আছে, “তোমাদের কেউ যখন এমন ব্যক্তিরদিকে তাকায়, যাকে সম্পদে ও দৈহিক গঠনে তার থেকে বেশি শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন সেযেন এমন ব্যক্তির দিকে তাকায়, যে এ বিষয়ে তার চেয়ে নিম্নস্তরের।”
১৩) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “ধ্বংস হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম ও উওম পোশাকের গোলাম (দুনিয়াদার)! যদি তাকে দেওয়া হয়, তাহলে সে সন্তুষ্ট হয়। আর না দেওয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। (সহীহুল বুখারী ২৮৮৭, ৭৪৩৫, তিরমিযী ২৫৭৫)
১৪) উক্ত সাহাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘সওরজন (আহলেসুফফাকে) এই অবস্থায় দেখেছি, তাদের কারো কাছে (গা ঢাকার) জন্য চাদর ছিল না, কারো কাছে লুঙ্গী ছিল এবং কারো কাছে চাদর,(এক সঙ্গে দুটি বস্ত্রই কারো কাছে ছিল না) তারা তা গর্দানে বেঁধে নিতেন। তারপর সেই বস্ত্রকারো পায়ের অর্ধগোছা পর্যন্ত হত এবং কারো পায়ের গাঁট পর্যন্ত। সুতরাং তাঁরা তা হাত দিয়ে জমা করে ধরে রাখতেন, যেন লজ্জাস্থান দেখা না যায়!’ (সহীহুল বুখারী ৪৪২)
১৫) উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, তিনি বললেন, নবী (সাঃ) বলেছেন, “দুনিয়া মু’মিনের জন্য জেলখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত।” (মুসলিম ২৯৫৬, তিরমিযী ২৩২৪)
১৬) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ) (একদিন) আমার দুই কাঁধ ধরে বললেন, “তুমি এ দুনিয়াতে একজন মুসাফির অথবা পথচারীর মত থাক।” আর ইবনে উমার (রাঃ) বলতেন, ‘তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে আর ভোরের অপেক্ষা করো না এবং ভোরে উপনীত হলে সন্ধ্যার অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার অবস্থায় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য কিছু সঞ্চয় কর এবং জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।” (সহীহুল বুখারী ৬৪১৬, তিরমিযী ২৩৩৩)
*এই হাদিসটির ব্যাখ্যায় উলামাগন বলেন, দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ো না এবং তাকে নিজের আসল ঠিকানা বানিয়ে নিও না । মনেমনে এ ধরনা করো না যে, তুমি তাতেদীর্ঘজীবী হবে। তুমি তার প্রতিযত্নবান হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করো না। তার সাথে তোমরা সম্পর্ক হবে ততটুক, যতটুক একজন প্রবাসী তার প্রবাসের সাথে রেখে থাকে। তাতে সেই বিষয়-বস্ত নিয়ে বিভোল হয়ে যেও না, যে বিষয়-বস্ত নিয়ে সেই প্রবাসের ব্যক্তি হয় না, যেস্বদেশে নিজের পরিবারের নিকট ফিরে যেতে চায়। আর আল্লাহই তওফীক দাতা।
১৭) আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সাঃ) –এর কাছে এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি আমাকে এমন কর্ম বলে দিন, আমি তা করলে যেন আল্লাহ আমাকে ভালবাসেন এবং লোকেরাও আমাকে ভালবাসে।’ তিনি বললেন, “দুনিয়ার প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর লোকদের ধন-সম্পদের প্রতি বিতৃষ্ণা আনো, তাহলে লোকেরা তোমাকে ভালবাসবে।” (ইবনু মাজাহ ৪১০২)
১৮) নু’মান ইবনে বাশীর (রাঃ) বলেন, উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)(পূর্বেকার তুলনায় বর্তমানে) লোকেরা যে দুনিয়ার (ধন-সম্পদ) অধিক জমা করে ফেলেছে সে কথা উল্লেখ করে বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –কে দেখেছি, তিনি সারা দিন ক্ষুধায় থাকর ফলে পেটের উপর ঝুঁকে থাকতেন (যেন ক্ষুধার জ্বালা কম অনুভব হয়)। তিনি পেট ভরার জন্য নিকৃষ্ট মানের খুরমাও পেতেন না।’ (মুসলিম ২৯৭৭,২৯৭৮, তিরমিযী ২৩৭২) আরো পড়ুন......→পাতা ৩ ←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন