দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা ওদারিদ্রতার মাহাত্ম্য →পাতা ৪ ←

কোন মন্তব্য নেই
১৯) আয়েশা (রাঃ) বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই অবস্থায় ইন্তেকাল করলেন যে, তখন একটা প্রানীর খেয়ে বাঁচার মত কিছু খাদ্য আমার ছিল না। তবে আমার তাকের মধ্যে যৎসামান্য যব ছিল।এ থেকে বেশ কিছুদিন আমি খেলাম। কিন্ত যখন একদিন মেপে নিলাম, সেদিনই তা শেষ হয়ে গেল।” (সহীহুল বুখারী ৩০৯৭, তিরমিযী ২৪৬৭)
২০) উম্মুল মু’মিনীন জুয়াইরিয়্যাহ বিন্তে হারেসের ভাই আমর ইবনে হারেস (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মূত্যুর সময় কোন দীনার, দিরহাম,ক্রেতদাসী এবং কোন জিনিসই ছেড়েযাননি। তবে তিনি ঐ সাদা খচ্চরটি ছেড়ে গেছেন, যার উপর তিনি সওয়ার হতেন এবং তাঁর হাতিয়ার ও কিছু জমি; যা তিনি মুসাফিরদের জন্য সাদকাহ করে গেছেন।’ (সহীহুল বুখারী ৪৪৬১,২৭৩৯,২৮৭৩)
২১) খাব্বার ইবনে আরাও (রাঃ) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর চেহেরা (সন্তোষটি) লাভের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সঙ্গে (মদীনা) হিজরত করলাম। যার সওয়াবআল্লাহর নিকট আমাদের প্রাপ্য। এরপর আমাদের কেউ এ সওয়াব দুনিয়াতে ভোগ করার পূর্বেই বিদায় নিলেন। এর মধ্যে মুসআব ইবনে উমাইর (রাঃ) তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদ হলেন এবং শুধুমাএ একখানা পশমের রঙিন চাদর রেখে গেলেন। আমরা (কাফনের জন্য) তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢাকলে তাঁর পা বেরিয়ে গেল। আর পা ঢাকলে তাঁর মাথা বেরিয়ে গেল। তাই রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে নির্দেশ দিলেন যে, “তা দিয়ে তাঁর মাথা ঢেকে দাও এবং পায়ের
আর আমাদের মধ্যে এমনও লোক রয়েছেন,যাঁদের ফল পেকে গেছে। আর তাঁরা তা সংগ্রহ করছেন।(সহীহুল বুখারী ১২৭৬, ৩৮৯৭,৩৯১৪,৪০৪৭)
২২) সাহল ইবনে সা’দ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদিআল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমানদুনিয়া (মূল্য বা ওজন) থাকত, তাহলে তিনি কোন কাফেরকে তাঁর (দুনিয়ার) এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।” (তিরমিযী ২৩২০, ইবনে মাজাহ ৪১১০)
২৩) আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) –কে বলতে শুনেছি, “শোনো ! নিঃসন্দেহে দুনিয়া অভিশপ্ত। অভিশপ্ত তাঁর মধ্যে যা কিছু আছে (সবই)। তবে আল্লাহর যিকর এবং তাঁর সাথে সম্পৃক্ত জিনিস, আলেম ও তালেবে-ইলম নয়।” (তিরমিযী ২৩২২, ইবনে মাজাহ ৪১১২)
২৪) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা জমি-জায়গা, বারি-বাগান ও শিল্প-ব্যবসায়ে বিভোর হয়ে পড়ো না। কেননা, (তাহলে) তোমরা দুনিয়ার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়বে।” (তিরমিযী ২৩২৮, আহমাদ ৩৫৬৯,৪০৩৮,৪২২২)
২৫) আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিন আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। এমন অবস্থায় যে,আমরা আমাদের একটি কুঁড়েঘর সংস্কার করছিলাম। তিনি বললেন, “এটা কী?” আমরা বললাম, ‘কুঁড়ে ঘরটি দুর্বল হয়ে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল, তাই আমরা তা মেরামত করছি।’ তিনি বললেন, “আমিব্যাপারটিকে (মৃত্যুকে) এর চাইতেও নিকটবর্তী ভাবছি।” (তিরমিযী ২৩৩৫, আহমাদ ৬৪৬৬)
২৬) কা’ব ইবনে ইয়ায (রাঃ) বলেন, আমি আল্লাহর রসূল (সাঃ)-কে বলতেশুনেছি; “প্রত্যেক উম্মাতের জন্য ফিতনা রয়েছে এবং আমরা উম্মাতের ফিতনা হচ্ছে মাল।” (তিরমিযী ২৩৩৬, আহমাদ ১৭০৭)
২৭) আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রাঃ) বলেন, আমি নবী (সাঃ) –এর নিকট এলাম, এমন অবস্থায় যে, তিনি ‘আলহাকুমুত তাকাসুর’ অর্থাৎ, প্রাচুর্য্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। (সূরা তাকাসুর) পড়ছিলেন।
তিনি বললেন, “আদম সন্তান বলে, ‘আমার মাল, আমার মাল।’ অথচ হে আদম সন্তান! তোমার কি এ ছাড়া কোন মাল আছে, যা তুম খেয়ে শেষ করে দিয়েছ অথচ যা তুমি পরিধান করে পুরাতন করে দিয়েছ অথবা সাদকাহ করে (পরকালের জন্য) জমা রেখেছ।” (মুসলিম ২৯৫৮)
২৮) আব্দুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন একটি লোক নবী (সাঃ) –কে বলল, ‘হেআল্লাহর রসূল! আল্লাহর কসম! আমিনিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ তিনি বললেন, “তুমি যা বলছ, তা চিন্তা করে বল।” সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি নিঃসন্দেহে আপনাকে ভালবাসি।’ এরূপ সে
তিনবার বলল। তিনি বললেন, “যদি তুমি আমাকে ভালবাসো, তাহলে দারিদ্রের জন্য বর্ম প্রস্তুত রাখো। কেননা, যে আমাকে ভালবাসবেস্রোত তার শেষ প্রান্তের দিকে যাওয়ার চাইতেও বেশি দ্রতগতিতে দারিদ্র তার নিকট আগমন করবে।” (তিরমিযী ২৩৫০)
২৯) কা’ব ইবনে মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “ছাগলের পালে দুটি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছেড়ে দিলে ছাগলের যতটা ক্ষতি করে, তার চেয়ে মানুষের সম্পদ ও সম্মানের প্রতি লভ-লালসা তার দ্বীনের বেশী ক্ষতিকারক।” (তিরমিযী ২৩৭৬, আহমাদ ১৫৩৫৭, ১৫৩৬৭)
৩০) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিন চাটাই –এর উপর শুলেন। তারপর তিনি এই অবস্থায় উঠলেন যে, তাঁর পার্শ্বদেশে দাগ পড়ে গিয়েছিল। আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! যদি (আপনার অনুমতি হয়, তাহলে) আমরা আপনার জন্য নরম গদি বানিয়ে দিই।’ তিনিবললেন, “দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক? আমি তো এ জগতে ঐ সওয়ারের মত যে ক্লান্ত হয়ে একটু বিশ্রামের জন্য গাছের ছায়ায় থামল। পুনরায় সে চলতে আরম্ভ করল এবং ঐ গাছটি ছেড়ে দিল।” (তিরমিযী ২৩৭৭, ইবনু মাজাহ ৪১১৬৯)
৩১) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “গরীব মুমিনরা ধনীদের পাঁচশত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (তিরমিযী ২৩৫৩,২৩৫৪, ইবনু মাজাহ ৪১২২)
৩২) ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও ইমরান ইবনে হুসাইন(রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “আমি বেহেশ্তের মধ্যে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশই গরীব লোক।আর দোযখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তার অধিকাংশ অধিবাসীরাই মহিলা।” (সহীহুল বুখারী ৩২৪১,৫১৯৮,৬৪৪৯,৬৫৪৬, মুসলিম ২৭৩৮)
ইমাম বুখারী উক্ত হাদিসকে ইমরান ইবনে হুসাইন (রাঃ) থেকেও বর্ণনা করেছেন।
৩৩) উসামাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেন, “আমি জান্নাতের দুয়ারে দাঁড়িয়েদেখতে পেলাম, সেখানে অধিকাংশ নিঃস্ব লোক রয়েছে। আর ধনবানরা তখনো (হিসাবের জন্য) অবরুদ্ধ রয়েছে। অথচ দোযখীদেরকে দোযখের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশদেওয়া হয়ে গেছে।” (সহীহুল বুখারী ৫১৯৬, ৬৫৪৭, মুসলিম ২৭৩৬)
৩৪) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “সবচেয়ে সত্য কথা কোন কবি বলেছেন, তা হল লাবীদ (কবীর) কথা,(তিনি বলেছেন,) ‘শোনো, আল্লাহ ছাড়া সব কিছুই বাতিল।” (সহীহুল বুখারী ৩৮৪১, ৬১৪৭,৬৪৮৯ মুসলিম২২৫৬)

কোন মন্তব্য নেই :