দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করা ওদারিদ্রতার মাহাত্ম্য → পাতা ২ ←

কোন মন্তব্য নেই
আরো অন্য জায়গায় তিনি বলেছেন,
"তোমার জেনে রাখো যে, পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারষ্পরিক অহংকার প্রকাশ, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ব্যতীত আর কিছুই নয়। এর উপমা বৃষ্টি; যার দ্বারা উৎপন্ন ফসল কৃষকদেরকে চমৎকৃত করে, তারপর তা শুকিয়ে যায়, ফলে তুমি তা পীতবর্ন দেখতে পাও, অবশেষে তা টুকরো-টুকরো (খড়-কুটায়) পরিণত হয় এবং পরকালে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর পার্থিব জীবনছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়।" (সূরা হাদীদ ২০ আয়াত)
অন্যএ আল্লাহ তাআলা বলেন,
"নারী, সন্তান-সন্ততি, জমাকৃত সোনা-রূপার ভাণ্ডার,পছন্দসই (চিহ্নত) ঘোরা, চতুষ্পদ জন্তু ও ক্ষেত-খামারের প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট লোভনীয় করা হয়েছে। এ সব ইহজীবনের ভোগ্য বস্ত। আর আল্লাহর নিকতেই উওম আশ্রয়স্থল রয়েছে"। (আলে ইমরান ১৪)
তিনি আরো বলেন,
" হে মানুষ! আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য; সুতরাং পার্থিব জীবন যেন কিছুতেই তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং কোন প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে"। (সূরা ফাত্বির ৫ আয়াত)
আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেন,
"প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতাতোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা (মরে) কবরে উপস্থিত হও। কখনওনয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। আবার বলি, কখনও নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। সত্যিই, তোমরা নিশ্চিত জ্ঞান থাকলে অবশ্যই তোমরা জানতে (ঐ প্রতিযোগিতার পরিণাম)" (সূরা তাকাসুর ১-৫ আয়াত)
তিনি আরও বলেন,
"এ পার্থিব জীবন তো খেল-তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর পরলৌকিক জীবনই তো প্রকৃত জীবন; যদি ওরা জানত"। (সূরা আনকাবূত ৬৪ আয়াত)
এ মর্মে প্রচুর আয়াত ও হাদীস রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি হাদীসবর্ণনা করা হল-
১) আমর ইবনে আউফ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)একবার আবূ উবাইদাহ ইবনে জারাহকে জিযিয়া (ট্যাক্স) আদায় করার জন্য বাহরাইন পাঠালেন। তারপর তিনি বাহরাইন থেকে (প্রচুর) মাল নিয়ে এলেন। আনসারগন তাঁর আগমনের সংবাদ শুনে ফজরের নামাযে রাসূলুল্লাহ(সাঃ)-এর সঙ্গে শরীক হলেন। যখন তিনি নামায পড়ে (নিজ বাড়ি) ফিরেযেতে লাগলেন, তখন তারা তাঁর সামনে এলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)তাদেরকে দেখে হেসে বললেন, “আমারমনে হয়, তোমরা আবূ উবাইদাহ বাহরাইন থেকে কিছু (মাল) নিয়ে এসেছে, তা শুনেছ।” তারা বলল, ‘জী হ্যাঁ’ । তিনি বললেন
“সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং তোমরা সেই আশা রাখ, যা তোমাদেরকে আনন্দিত করবে। তবে আল্লাহর কসম! তোমাদের উপর দারিদ্র্য আসবে আমি এ আশংকা করছি না.বরং আশংকা করছি যে, তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতের ন্যায় তোমাদেরও পার্থিব জীবনে প্রশস্তুতা আসবে। আর তাতে তোমরা প্রতিদন্ধিতা করবে, যেমন তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছিল।।” (সহীহুল বুখারী ৩১৫৮,৪০১৫, মুসলিম ২৯৬১)
২) আবূ সাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মিম্বরে বসলেন এবং আমরা তাঁর আশেপাশে বসলাম। তারপর তিনি বললেন, “আমি তোমদের উপর যার আশঙ্কা করছি তা হল এই যে, তোমাদের উপর শোভা ও সৌন্দর্য (এর দরজা) খুলে দেওয়া হবে।” (সহীহুল বুখারী ১৪৬৫,৯২২,মুসলিম ১০৫২)
৩) উক্ত রাবী (রাঃ) থেকেই বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। তারপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও ও নারীজাতির ব্যাপারে।” (মুসলিম ২৭৪২, তিরমিযী ২১৯১)
৪) আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “হে আল্লাহ! আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।” (সহীহুল বুখারী ২৮৩৪,২৮৩৫ মুসলিম ১৮০৫)
৫) উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “তিনটি জিনিস মৃতব্যক্তির অনুসরণ করে (সঙ্গে যায়)। দাফনের পর দুটি ফিরে আসে, আর একটি তার সাথেই থেকে যায়। সেতিনটি হল, (এক) তার পরিবারবর্গ, (দুই) তার মাল, (তিন) তার আমল। দাফনের পর তার পরিবারবর্গ ও মাল ফিরে আসে। আর তার আমল তার সাথেই থেকে যায়।” (সহীহুল বুখারী ৬৫১৪, মুসলিম ২৯৬০)
৬) উক্ত রাবী থেকেই বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্যে হতে এমন এক ব্যক্তি নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ায় সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। তারপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাএ) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু!’ আরজান্নাতীদের মধ্যে হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ায় সবচেয়ে দুখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাএ একবার)চুবানোর পর বলা হবে, ‘হে আদম সন্তান! তুমি কি দুনিয়ায়তে কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে?’ সে বলবে, ‘না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখেনি।” (মুসলিম ২৮০৭, আহমাদ ১২৬৯৯,১৩২৪৮)
৭) মুস্তাওরিদ ইবনে শাদ্দাদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আখিরাতের মুকাবেলায় দুনিয়ার দৃষ্টান্ত ঐরূপ, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রে আঙ্গুল ডুবায় এবং (তা বের করে) দেখে যে, আঙ্গুলটি সমুদ্রে কতটুকু পানিনিয়ে ফিরেছে।” (মুসলিম ২৮৫৮, আহমাদ ১৭৫৪৭,১৭৫৪৮)
৮) জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত,একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাজারের পাশ দিয়ে গেলেন। এমন অবস্থায় যে, তাঁর দুই পাশে লোকজন ছিল। তারপর তিনি ছোট কানবিশিষ্ট একটি মৃত ছাগল ছানার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি তার কান ধরে বললেন,“তোমাদের কেউ কি এক দিরহামের পরিবর্তে এটাকে নেওয়া পছন্দ করবে?” তারা বললেন, ‘আমরা কোন জিনিসের বিনিময়ে এটা নেওয়া পছন্দ করব না এবং আমারা এটা নিয়ে করবই বা কি?’ তিনি বললেন, “তোমরা কি পছন্দ কর যে, (বিনামুল্যে) এটা তোমাদের হোক?” তারা বললেন, ‘আল্লাহর কাসম! যদি এটা জীবিত থাকত তবুও সে ছোট কানের কারনে দোষযুক্ত ছিল। এখন সে মৃত (সেহেতু একে কেনেবে)?’
আরো পড়ুন......→পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই :