পরকাল ভাবনা (পর্ব :২) →পাতা ১←
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন নালেখক : মুহাম্ মদ শামসুল হক সিদ্দিক
পরকাল ভাবনা
গড়পড়তায় দশ বছর সময় ে সম্পূর্ণ শরীরেই পরিবর্তন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপনার যে শরীর দশ বছর আগে ছিল তা আজ আর আপনার সাথে নেই, আপনার বর্তমান শরীর সম্পূর্ণ এক নতুন শরীর। বিগত দশ বছরে আপনার শরীরের যে অংশগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে সেগুলো যদি পুরোপুরিভাবে একত্রিত করাহয় তাহলে হুবহু আপনার আকৃতিরআরেকটা মানুষ দাঁড় করানো সম্ভব হবে। এমনকি আপনার বয়স যদি একশ বছর হয়ে থাকে তাহলে আপনার মতো দশজন মানুষের কাঠামো দাঁড় করানো সম্ভব হবে। এ-মানুষগুলো প্রকাশ্যে আপনার মতো হবে, তবে তাতে কোনো প্রাণ থাকবে না। যার সবকিছুই থাকবে তবে আপনিই থাকবেন অনুপস্থিত। কেননা আপনি পেছনেরসকল শরীর ত্যাগ করে নতুন এক শরীরকে বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এভাবে আপনার শরীর ভাঙ্গা-গড়ার এক দীর্ঘ পথ মাড়িয়ে এগোতে থাকে, পরিবর্তিত হতে থাকে প্রতিনিয়ত। শুধু আপনিই থাকেনপুরাতন, অপরিবর্তিত। যে জিনিসটাকে আপনি ‘আমি’ বলছেন তাকিন্তু থেকে যাচ্ছে আগেরটাই। আপনি যদি দশ বছর আগে কোন চুক্তি করে থাকেন তাহলে দশ বছর পরও আপনি স্বীকার করেন যে এ-চুক্তি আপনিই করেছেন। অথচ আপনার অতীতের শারীরিক অস্তিত্বের কিছুই আজ অবশিষ্ট নেই। ওই হাত এখন আর আপনার সাথেনেই যা দিয়ে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। সে জিহ্বাও নেই যা ব্যবহার করে চুক্তি সম্পর্কে আলাপ করেছিলেন। তবে আপনি এখনো ‘আপনি’ই থেকে গেছেন, এবং নির্দ্বিধায় স্বীকার করে যাচ্ছেন যে দশ বছর পূর্বে যে চুক্তি আপনি করেছেন তা আপনিই করেছেন, এবং আপনি তা পূর্ণ করতে একশতভাগ প্রস্তুত। মানুষকোনো বিশেষ শরীরের নাম নয় যা ধ্বংস হলে মানুষও ধ্বংস হয়। মানুষ এমন একটি অভ্যন্তর অস্তিত্ব বা আত্ মা , যা শরীরী অস্তিত্বের বাইরেও থাকে সজীব, প্রাণবন্ত। শরীরের পরিবর্তনশীলতা এবং আত্মার অজরঅবস্থা মানুষের অবিনাশী প্রকৃতির দিকেই ইঙ্গিত করছে যা কখনো ক্ষয় অথবা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় না। কিছু নির্বোধ লোকের বক্তব্য হলো, নির্দিষ্ট কিছু জড়-পদার্থের একীভূত হওয়ার নামই জীবন এবং সেগুলো বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়াই মৃত ্যু। এ-বক্তব্য কোনো অর্থেই বিজ্ঞানসম্মত নয়। জীবন যদি কেবল কিছু পর্দাথের বিশেষ বিন্যাসে একত্রিত হওয়ার নাম হয় তাহলেওই সময় পর্যন্ত জীবনস্পন্দন অবশিষ্ট থাকার কথা যতক্ষণ পদার্থের এ-বিন্যাস বজায় থাকে। সাথে সাথে এটাও সম্ভব হওয়া উচিত যে, কোন দক্ষ বিজ্ঞানী পদার্থের বিশেষ কিছুঅংশকে একত্রিত করে জীবন সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। আমাদের জানা মতে এদু’টোর মধ্যেএকটিও সম্ভব নয় আমাদের অজানা নয় মৃত ্যুবরণকারী কেবল সেই নয় যার শরীরের বিভিন্ন অংশ কোনো দুর্ঘটনার কারণে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছড়িয়ে যায়। বরং বিচিত্রভাবে ও সকল বয়সের মানুষ েরই মৃত্যু হয়ে থাকে। এমনও হয় যে একজন সুস্থ সবল মানুষ হঠাৎ হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা গেলো। কেন এমনটি হলো? কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারও এর কারণ খুঁজে পায় না। মৃত ব্যক্তির শরীর তার পূর্বের বিন্যাসেই রয়ে গেছে, তাহলে হলোটা কী যার জন্য আমরা তাকে মৃত বলছি? অন্য কথায় বলতে গেলে, বিভিন্ন পদার্থের সুবিন্যস্ত কাঠামো পূর্বের ন্যায় এখনো আছে, নেই শুধু হৃদস্পন্দন। সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আগের বিন্যাসেই বিরাজমান কিন্তু তাতে যা নেই তাহলো জীবন ীশক্তি। এ-বিষয়টি প্রমাণ করছে যে, কিছু জড়পদার্থের বিশেষ বিন্যাসে একত্রিত হয়ার নাম জীবন নয়, জীবন হলো তার বাইরের একটি জিনিস যার রয়েছে স্বতন্ত্র অস্তিত্ব । কোনো ল্যাবরেটরিতেপ্রাণবিশিষ্ট মানুষ তৈরি করা সম্ভব নয়। যদিও যান্ত্রিকভাবে শরীরের অবকাঠামো তৈরি করা সম্ভব। একটি প্রাণসম্পন্ন মানুষের মধ্যে সর্বশেষ বিশ্লেষণে যে রাসায়নিক পরমাণুর ভিত রয়েছেতার মধ্যে কার্বনের ধরন ঠিক তাই যা রয়েছে কয়লার মধ্যে। হাইড্রোজেন এবং অক্রিজেন একই ধরনের যা রয়েছে পানির উৎসে।
হাইড্রোজেন এবং অক্রিজেন একই ধরনের যা রয়েছে পানির উৎসে। বায়ুমন্ডলের অধিকাংশ যে নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত তা রয়েছে মানুষের মধ্যেও। তদ্রূপভাবে অন্যান্য জিনিসও। কিন্তু একটি প্রাণসম্পন্ন মানুষ কী শুধুই কিছু পরমাণুর সমন্বয় যা অজানা এক পদ্ধতিতেএক জায়গায় একসাথে জমায়েত হয়েছে? নাকি জীবন এর বাইরের অন্য কিছু? বি জ্ঞান ীরা বলেন : ‘মানুষের শরীর কি কি পদার্থ দিয়ে গঠিত এ বিষয়টি যদিও আমাদের জানা, কিন্তু ঐসব পদার্থ একত্রিত করে জীবন সৃষ্টি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অন্য কথায় বলতে গেলে একজন সপ্রাণ মানুষের শরীর কেবল নির্জীব কিছু পরমাণুর সমষ্টির নাম নয়, বরং তা হলো প্রাণ ও পরমাণু উভয়টার সমন্বয়। মৃত্যুর পর পরমাণুর অংশটা তো আমাদের সামনেই পড়ে থাকে, কিন্তু প্রাণ তাকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় দূরে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে।জীবন অক্ষয় অবিনশ্বর, এ আলোচনা থেকে এ কথাটাই উঠে আসছে স্পষ্টাকারে। মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের ধারণার গুরুত্ব এ আলোচনা থেকে বুঝা যাচ্ছে। এ-বিষয়টি আমাদের চোখ ে আঙ্গুল রেখে বলছে যে মৃত্যুপূর্ব জীবনই কেবল জীবন নয়, বরং মৃত্যুর পরও আমাদের বেঁচে থাকতে হবে অনন্তকালের গভীরে। এ-পৃথিবী ধ্বংসশীল, তা আমাদের মেধা ও বুদ্ধি খুব সহজভাবেই মেনে নেয়। কিন্তু মানুষ এমনই এক অস্তিত্ব যার কোন ধ্বংস নেই। আমরা যখন মৃত্যুবরণ করি তখন মূলতঃ আমাদের জীবনাবসান ঘটেনা, এক ভিন্নমাত্রার জীবন-স্রোতে আবারও যাত্রা শুরু করতে অন্য কোথাও চলে যাই যেখানে নেই কোনো ক্ষয়, মৃত্যু, নাশ। মূলতঃ আমাদের এই পৃথিবীর জীবনআমাদের মূল ও অনন্তজীবনের তুলনায় অতি তুচ্ছ, নগণ্য, এমনকি হিসেবে আসার মতোই নয়।
দ্বিতীয় জগৎ
এবার আসুন ভেবে দেখা যাক দ্বিতীয়-জীবনটা কেমন হবে। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন- সেখানে বেহেশত ও দোযখ রয়েছে, মৃত্যুর পর, বিচার ফয়সালা সম্পন্ন হলে মানুষমাত্রই এ-দুটির মধ্যে যেকোনো একটিতে ঢুকে যাবে।
আর যে ব্যক্তি অসৎ, খোদাদ্রোহী হবে সে নরকরে মমন্তুদ যন্ত্রণায় নিক্ষিপ্ত হবে।
একটু ব্যাখ্যা করলে বিষয়টি এক. অন্যসব ঘটনার মতোই এ-এক ঘটনা।
দুই. উক্ত ঘটনার পিছনে একটা ইচ্ছা কার্যকর থাকে।
আরো পড়ুন......→পরকাল ভাবনা (পর্ব :২)→পাতা ৩,৪←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন