পরকাল ভাবনা (পর্ব :২) →পাতা ২←
প্রথম দিকটিকে ঘটনাগত এবং দ্বিতীয়টিকে চরিত্রগত দিক বলা যেতে পারে। একটি উদাহরণেরমাধ্যমে বিষয়টি আরো উজ্জ্বল হতে পারে। ধরে নিন কোন গাছের ডালে একটি পাথর আটকা পড়ে ছিল। আর ওই গাছটির নীচ দিয়ে যাওয়ার সময় বাতাসের ঝাপটায়পাথরটি আপনার মাথায় পড়ে যায়। এমতাবস্থায় আপনি অবশ্যই গাছটির বিরুদ্ধে ক্রদ্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ না করে মাথায় হাত রেখে বাড়ি চলে যান । অন্যদিকে কোনো ব্যক্তি যদি একটি পাথর নিয়ে সজ্ঞানে আপনার মাথায় আঘাত করে তার বিরুদ্ধে আপনি উৎক্ষিপ্ত না হয়ে পারেন না, এমনকী উত্তেজিত হয়ে দ্বিখন্ডিত করে দিতে পারেন ওইব্যক্তির মাথা। বৃক্ষ ও মানুষ এ-দুয়ের আচরণের এ-পার্থক্য কেন? আপনি কেন গাছের বিরুদ্ধে প্রতিশোধপরায়ণ হন না, মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষেপে যান প্রচন্ডভাবে। এর কারণ শুধু একটিই : বৃক্ষ অনুভূতিশূন্য আর মানুষ তার বিপরীত। বৃক্ষেরকাজটি নিছক ঘটনাজাত, পক্ষান্তরে মানুষেরটা ঘটনাজাত হয়ার সাথে সাথে একটিচারিত্রিক বৈশিষ্ট্যবহ।এর মানে, মানবকৃত্যের দুটি দিকরয়েছে। এক. এর দ্বারা একটি ঘটনা সংঘটিত হয়। দুই. কাজটি বৈধ না অবৈধ, পবিত্র মানসিকতা নিয়ে করা হচ্ছে না অপবিত্র মানসিকতা নিয়ে ইত্যাদির বিবেচনা। মানবকৃত্যের প্রথম দিকটির ফলাফল এ-পৃথিবীতেই প্রকাশ পায়, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দিকটির ফলাফল এ-পৃথিবীতে প্রকাশ পায় না। যদি কখনো পায় তাহলে অসম্পূর্ণরূপে। যে ব্যক্তি আপনাকে পাথর মেরেছে তার কর্মের ফলাফল তো সাথে সাথেই প্রকাশ পেয়েছে : আপনার মাথায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু তার কর্মের দ্বিতীয় দিকটির- অথাৎ ভুল জায়গায় শক্তি প্রয়োগের ফলাফল এ-পৃথিবীতে প্রকাশ পাওয়া জরুরি নয়। সে ব্যক্তির ইচ্ছাছিলো আপনার মাথায় আঘাত করতে অতঃপর আপনি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর পাশাপাশি সে ইচ্ছা করেছিলো একটি অবৈধ কাজ করবে, কিন্তু তার এই ইচ্ছাটার ফলাফল এ-পৃথিবীতে আসেনি। মানুষের ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশকেই ফলাফল বলে , আর আমরা দেখি যে, মানুষের ইচ্ছার ঘটনাগত ফলাফল হরহামেশাই সামনেআসছে। তাহলে মানুষের ইচ্ছার দ্বিতীয় দিকটির ফলাফলের প্রকাশ, অর্থাৎ চারিত্রিক ফলাফলও অবশ্যই প্রকাশ পাওয়া উচিত।
পরকাল মানবকৃত্যের এই দ্বিতীয় দিকটির পরিপূর্ণরূপে প্রকাশের জায়গা। মানবকৃত্যের একটি দিকযেমন কিছু ঘটনাপুঞ্জের সৃষ্টিকরে, তদ্রূপভাবে মানবকৃত্যের অন্যদিকটিও নিশ্চয়ই কিছু ফলাফল সৃষ্টি করে; পার্থক্য শুধু এতটুকু যে প্রথম প্রকার ফলাফল এ-পৃথিবীতেই প্রকাশ পায়, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় প্রকার ঘটনার ফলাফল আমরা দেখতে পাবো পরজগতে।
এ-পৃথিবীতে বসবাসরত প্রতিটি মানুষই তার কর্মের মাধ্যমে কোনো না কোনো ফলাফল সৃষ্টিতে ব্যস্ত রয়েছে। হোক সে কর্মব্যস্ত অথবা বেকার, সর্বাবস্থায় তার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সৃষ্টি হচ্ছে একটি জগৎ। ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা, অভ্যস-প্রকৃতি আচার-ব্যবহার ইত্যাদির নিরিখে মানুষেরা মন্তব্য করে থাকে তার পক্ষে বা বিপক্ষে। শক্তির যথার্থ অথবা অযথার্থ প্রয়োগের ফলে তার কার্যাদি হয়তো সুচারুভাবে সম্পাদিত হয় অথবাবিগড়ে যায়। যে ধরনের বিষয়কে লক্ষ্য করে তার চেষ্টা সাধনা পরিচালিত হয় সেধরনের বিষয়েই প্রতিষ্ঠিত হয়তার অধিকার । অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিই তারচারপাশে গড়ে যাচ্ছে একটি নিজস্ব জগৎ যা তার কৃতকর্মেরইসরাসরি ফলাফল। মানুষ ের সৃষ্ট এ জগৎটির একাংশ পৃথিবীর আলোতেদৃশ্যমান করছে নিজেকে। পক্ষান্তরে অপর অংশটি, অর্থাৎ বৈধ-অবৈধ হয়ার দিকটিও একটা ফলাফল অবশ্যই সৃষ্টি করছে যা আড়াল করে রেখেছে নিজেকে পরজগতে প্রকাশের অপেক্ষায়। আমাদের কর্মের দ্বিতীয় অংশটিমূলত কর্মের চারিত্রিক দিক যাভিন্ন রকমের একটা ফলাফল সৃষ্টি করে যাচ্ছে, ধর্ম ীয় পরিভাষায় যাকে বেহেশত ও দোযখবলা হয়। আমাদের মধ্যে প্রত্যেকেই প্রতি মুহূর্তে এ বেহেশত অথবা দোজখ নির্মাণ করেযাচ্ছে। আর যেহেতু মানুষকে এ-পৃথিবীতে পরীক্ষার উদ্দেশে রাখা হয়েছে , তাই এ-বেহেশত ও দোযখ মানুষের চোখ ের অন্তরালে রাখা হয়েছে। পরীক্ষার জন্য বেঁধে দেয়া সময় যখন শেষ হয়েযাবে, এবং পূনরুত্থান দিবস চলেআসবে প্রত্যেককেই, তখন, তার নির্মিত জগতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এখানে একটি প্রশ্ন জাগে :আমাদের কর্মের যখন একটি চারিত্রিক দিক আছে, তবে তা দৃষ্টিগ্রাহ্য না হয়ে দৃষ্টির অন্তরালে থাকছে কেন। ধরা যাক আমাদের পাশেই একটি বিল্ডিং এর নির্মাণ কাজ চলছে, এ কাজের একটি ফলাফল তো এই যে নির্মিত হয়ে বিল্ডিংটি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে যা আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু এ-কাজটির অন্য আর-একটি দিক অর্থাৎ বিল্ডিংটি কি বৈধভাবে নির্মিত হচ্ছে না অবৈধভাবে. এ-দিকটির যদি কোনো ফলাফল বা পরিণতি সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে তা কোথায়? এমন কি-ইবা পরিণতিথাকতে পারে যা ধরাছোঁয়ার বাইরে, দৃষ্টির অন্তরালে।এ-প্রশ্নের উত্তর মানবকৃত্যের উল্লেখিত দুটি দিকের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে। কোনো কর্মের ঘটনাগত দিকপ্রতিটি মানুষই দেখতে পায়। এমনকী ক্যামেরার চোখও তা ধরতেপারে। কিন্তু সে কর্মের চাত্রিক দিক দৃষ্টির আওতায় আসার মতো জিনিশ নয়, বরং এ-দিকটি কেবলই আঁচ করার, অনুভবকরার। কর্মের এ-দুটি দিকের মধ্যখানে যে পার্থক্য তা অত্যন্ত স্পষ্ট করে ইঙ্গিত দিচ্ছে, উভয় প্রকার ফলাফল কীভাবে প্রকাশ পাওয়া উচিত। অর্থাৎ মানবকৃত্যের প্রথম দিকটির ফলাফল এ-পৃথিবীতেই দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়া উচিত যা আমরা স্পর্শ করে দেখতে পাবো, পক্ষান্তরে দ্বিতীয় দিকটির ফলাফল ওই জগতে প্রকাশ পাওয়া উচিত যা এখনো দৃষ্টির অন্তরালে। ঘটনা অনেকটা এ-রকম যে যেটা যেভাবে হয়া উচিত সেটা ঠিক সেভাবেই হচ্ছে । এখানে কেবল বিচার বুদ্ধির নিরেখে সম্ভাবনাময় একটি ঘটনার কথাই বলা হচ্ছে না, বরং এ-মহাবিশ্ব সম্পর্কে চিন্তাভাবনা মানুষকে এ-সিদ্ধান্তে উপনীত করছে যে এখানে প্রতিটি কর্মেরই দু’প্রকার ফলাফল রয়েছে।
আরো পরিষ্কার হবে। এ-পৃথিবীতেমানুষের প্রতিটি কৃত্যের দুটিদিক রয়েছে।
আজকের পৃথিবীতে যে ব্যক্তি আল্লাহর অনুগত হবে, সৎকাজ করবেসে বেহেশতের আনন্দঘন পরিবেশে জায়গা পাবে।
আরো পড়ুন......→পরকাল ভাবনা (পর্ব :২)→পাতা ৩←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন