পরকাল ভাবনা (পর্ব :২) →পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই
দু’প্রকার ফলাফল রয়েছে। এখানে এমন কর্মফলও রয়েছে যা কর্ম সম্পাদনের পর তৎক্ষণাৎ দেখা যায়। আবার এমন কর্মফলও রয়েছে যা দৃষ্টির নাগালের বাইরে থাকা সত্ত্বেও অস্তিত্ববান। এ-মহাবিশ্বে এ ধরনের অদৃশ্য ফলাফলের উপস্থিতির বিষয়টি আজ দুর্বোধ্য কোনো বিষয় নয়। উদাহরণত আওয়াজের কথা ধরুন: আওয়াজ, সবাই জানে, কিছু তরঙ্গমালা যা চর্মচোখে দেখা যায় না। আমরা যখন কথা বলার জন্য জিহ্বা নাড়াই তখন আবহাওয়ায় একপ্রকার তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। আমাদের জিহ্বা নাড়ানোর ফলে এ তরঙ্গমালা আবহাওয়ার গায়ে এঁটে যায়। যখনই কেউ কথা বলে ডেউয়ের আকৃতিতে তা বাতাসে অঙ্কিত হয়ে যায় এবং তা বিরাজমান থাকে ক্ষয়রহিতভাবে।| এমনকী বি জ্ঞান ীরা ধারনা করছেন আজ থেকে হাজার বছর পূর্বের কথা-শব্দ-বক্তব্য সবই বাতাসে ঢেউ-এর আকৃতিতে বিদ্যমান রয়েছে। যদি আমাদের কাছে এসব আওয়াজ ধরার কোন যন্ত্র থাকে তাহলে যেকোনো সময় অতীতের কথাসমূহ শোনার সূযোগ পাবো। আমাদের চারপাশে বাতাসের একটি আবরণ রয়েছে যাতে আমাদের প্রতিটি আওয়াজ মুখ থেকে বের হয়ার সাথে সাথে অঙ্কিত হয়ে যাচ্ছে- যদিও আমরা আওয়াজ, অথবা আওয়াজটির বাতাসে অঙ্কিতহয়ে যাওয়া, কোনোটাই দেখতে পাই না ঠিক একইরূপে পরজগতও আমাদেরকে চারপাশ থেকে ঢেকে রেখেছে এবং আমাদের নিয়ত ও ইচ্ছাসমূ হক ে প্রতিনিয়ত রেকর্ড করে যাচ্ছে। পরজগতের পর্দায় আমাদের কৃত্যের নকশা অঙ্কিত হচ্ছে যা মৃত ্যুর পর দৃষ্টিগ্রাহ্য হবে।
গ্রামোফোন যদি চালু থাকে এবং ডিস্ক তার উপর ঘুরতে থাকে তাহলে সুঁইয়ের স্পর্শ পাওয়ামাত্রই নিশ্চুপ বস্তুটি বাজতেশুরু করে। মনে হয় যেন সে এ-অপেক্ষাতেই ছিলো যে, কেউ যখনতার উপর সুঁই রেখে দেবে অবলীলায় সে বাজতে শুরু করবে।ঠিক একইরূপে আমাদের সমস্ত কর্মের রেকর্ড রাখা হচ্ছে, যখনসময় হবে তখন বিশ্বপ্রতিপালক তা চালু করে দিবেন, নিশ্চুপ রেকর্ড চলতে শুরু করবে। অবস্থা দেখে মানুষ বলতে থাকবে-
ما لهذا الكتاب لا يغادر صغيرة ولا كبيرة إلا أحصاها. سورة الكهف : 49
এ কেমন রেকর্ড, আমার ছোট বড়ো কোনো কিছুই তো এর হিসেব থেকে বাদ পড়েনি। (সূরা কাহ্‌ফ : ৪৯)
শেষ কথা উপরে আমি যা বললাম তা আরো একবার ভেবে দেখুন। আপনার জীবন এক অন্তহীন জীবন, মৃত ্যু এ জবীনের শেষ প্রান্ত নয় বরং দ্বিতীয় পর্বের প্রারম্ভ বিন্দু। মৃত্যু আমাদের দুই পর্বের মধ্যবর্তী সীমানা। বিষয়টিকে এভাবে বুঝুন যে কৃষক জমিনে ফসল বুনে, নিয়ম মাফিক চেষ্টা সাধনায় নিজেকে ব্যস্ত রাখে, এক পর্যায়ে ফসল প্রস্তুত হয়। কৃষক তা কাটে, গোলায় তুলে, সারাবছরের খাদ্যের ব্যবস্থা করে। ফসল কাটার অর্থ ফসলের এক পর্ব শেষ হয়ে অন্য পর্বের শুরু হয়া। ইতোপূর্বে তার কাজ ছিলো ফসল বোন া ও যত্ন নেয়া এখন তার কাজহবে ফসল গোলায় তুলা ও নিজের প্রয়োজন মিটানো। ফসল কাটার পূর্বে ছিলো চেষ্টাসাধনা ও পয়সা ব্যয়ের পালা আর ফসল কাটার পর শুরু হয় মেহনতের ফলভোগ ও তা থেকে উপকৃত হয়ার পালা। মানুষের জীবনের অবস্থাওঠিক একই রকম। মানুষ এ-পৃথিবীতে পরজগতের ফসল বুনছে, যত্ন নিচ্ছে। আমাদের প্রত্যেকেরই পরজগতে একটি খামার রয়েছে যা হয়তো সে চাষ করছে, অথবা ফেলে রাখছে পতিত বিনা কর্ষণে। যারা কর্ষণ করছেতারা হয়তো এতে উত্তম অথবা অনুত্তম বীজ ফেলছে। বীজ ফেলে হয়তো রেখে দিচ্ছে অবহেলায় অথবা পরিচর্যা করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেখানে হয়তো তিক্ত ফলের গাছ লাগাচ্ছে অথবারূপন করছে মজাদার ফলের বৃক্ষ।জমিনকে উর্বর করতে ব্যয় করছেসমগ্রশক্তি অথবা অপ্রাসঙ্গিক ব্যস্ততায় কাটাচ্ছে সময় । এ-ফসল তৈরির সময়সী মা মৃত্যুরপূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত। মৃত্যু পরকাল ের ফসল কাটার দিন। যখন এ-পৃথিবীতে আমাদের চোখ বন্ধ হয় তখন দ্বিতীয় জগতে গিয়ে তা খোলে। সেখানে যার যার খামার দৃষ্টিতে আসে। জীবনভর কর্ষিত অথবা ফেলে রাখাজমিন নজরে আসে আমাদের সবার। শুরু হয় ফসল কাটা, গোলায় তুলা ও তাত্থেকে উপকৃত হয়ার পালা। এ-সময় কেবল সে ব্যক্তিই ফসল কাটে যে ইতোপূর্বে ফসল বুনেছে এবং সে ফসলই কাটে যা সে বুনেছে। প্রত্যেক কৃষকই জানে যে তার গোলায় ঠিক ততটুকু ফসলই আসবে যতটুকু সে মেহনতমজদুরি করেছে।তদ্রূপভাবে পরকালেও মানুষ ঠিকততটুকুই পাবে যতটুকু সে চেষ্টা সাধনা করেছে। মৃত্যু, চেষ্টা সাধনার সময় শেষ হয়ারসর্বশেষ ঘোষণা , আর পরকাল নিজের চেষ্টাসমূহের ফলাফল লাভের শেষ জায়গা। মৃত্যুর পরদ্বিতীয়বার চেষ্টা-সাধনার না কোনো সুযোগ রয়েছে, না রয়েছে পরকালীন জীবন শেষ হয়ার কোনো সম্ভাবনা। কতইনা কঠিন এ-বাস্তবতা। যদি মানুষ মৃত্যুর পূর্বে এব্যাপারে সজাগ হতো! কারণ , মৃত্যুর পরে এব্যাপারটি বুঝে আসলে তখন আর কিছুই করার থাকবে না। মৃত্যুরপর সতর্ক হয়ার অর্থ তো শুধু এই যে, মানুষ কেবল এই বলে আফসোস করে করে সময় কাটাবে যে,সে অতীতে কত বড় ভুলই-না করেছে। এমন এক ভুল যা শুধরানোর সামন্যতম সুযোগ তার সামনে নেই। মানুষ তার পরিণাম সম্পর্কে গাফেল। পক্ষান্তরে কালস্রোত তাকে অতি দ্রুত ওই সময়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে যখনফসল কাটার লগ্ন চলে আসবে। মানুষ এ-পৃথিবীর তুচ্ছ ফায়দাসমূহ অর্জনের জন্য ব্যস্ত রয়েছে এবং মনে করছে, সে কাজ করছে প্রচুর। পক্ষান্তরে সে কেবল তার মূল্যবান সময়ই নষ্ট করে যাচ্ছে। মানুষের সামনে বিরাট সুযোগ রয়েছে যা ব্যবহার করে সে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়তে পারে। কিন্তু মানুষ কাঁদামাটিনিয়ে খেলছে। তার প্রভু তাকে বেহেশতের দিকে ডাকছেন যা কল্পনাতীত নেয়ামত সামগ্রীতে ভরপুর , কিন্তু মানুষ কয়দিনেরমিথ্যা আয়েশে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছে। মানুষ মনে করছে যে সে লাভ করছে, কিন্তু মূলত সে কেবলই হারাচ্ছে। দুনিয়াতে বাড়ি বানিয়ে সে মনে করছে সে জীবন গড়ছে কিন্তু আসলে সে বালির দেয়াল দাঁড় করাচ্ছে যা কেবল কিছুক্ষণ পর ধ্বসে পড়ার জন্যই দাঁড়াচ্ছে। হে মানুষ ! তুমি নিজেকে জানো, নিজেকে আবিষ্কার করো। গভীর মনোনিবেশের সাথে খুঁটিয়ে দেখতুমি কি করছ, তোমার কী করা উচিত। মানুষকে সফলকাম হয়ার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে কিন্তু মানুষ অসতর্ক হয়ে নিজের ব্যর্থতা নিজেই ডেকে আনছে।

সৌজন্যঃ কুরআনের আলো ডট কম ।

কোন মন্তব্য নেই :