নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছি: তসলিমা নাসরিন
তসলিমা নাসরিনের মুখোমুখিকেমন আছেন বিতর্কিত
লেখিকা তসলিমা নাসরিন? প্রায় দেড়
যুগের মতো তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে।
বিদেশে বসেও থামেনি তার লেখালেখি।
পেয়েছেন কলকাতার আনন্দ পুরস্কারসহ
লেখিকা হিসেবে বিশ্বের অনেক
পুরস্কার। কিন্তু এবারের কিংবা তার
আগের বেশ ক'টি বই মেলায় নতুন কোন
সাড়া জাগানো বই নেই তার। আগের
মতো লিখতে পারছেন না বা লিখছেন না।
'উতল হাওয়া', 'আমার মেয়ে বেলা',
'ভ্রমর কইও যাইয়া', বা 'ক' -এর
মতো বই আর আসছে না। আগের
মতো কাব্যও নেই, কাবিতাও না।
একাধিক স্বামী ও একাধিক পুরুষের
সাথে তার দেহজ সম্পর্কের
কথা তো তিনি বেশ রসিয়ে লিখেছেন।
কিন্তু আজকাল বয়সের
কারণে নারী হিসেবে আর এই সম্পর্ক
অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এখন
তিনি হতাশ, চোখের নিচে কালি পড়েছে,
চামড়ায় বয়সের চাপ, শরীরের
মধ্যে নানারকম ব্যথা-
ব্যদনা তো আছেই। একাকিত্ব
তাকে আরও পঙ্গু করে দিচ্ছে।
এমনি অবস্থায় বিদেশের কোথাও থিতু
হতেও পারছেন না। দেশে ফেরাও তার
জন্য দিন দিন কঠিন হয়ে গেছে। যেই
মৌলবাদীদের ভয়ে তিনি দেশ ছেড়েছিলেন,
সেই ভয় এখনও তাকে তাড়িয়ে মারছে।
লন্ডন থেকে দিন কয়েকের জন্য
গিয়ে ছিলাম ভারতে। আর কাকতালীয়
ভাবেই দেখা গেল এই
বিতর্কিতা লেখিকা ডা.
তসলিমা নাসরিনের সাথে। তিন দিনের
নানা বিষয়ে তার সাথে কথা হলো। এ
বিষয়গুলো তুলে ধরতেই আজকের এই
প্রয়াস।
প্রশ্ন : আপনার কাছে একটা প্রশ্ন।
এই যে লেখালেখি করলেন, এর মূল
উদ্দেশ্য কি ছিল, দেহের
স্বাধীনতা না চিন্তার স্বাধীনতা?
তসলিমা : প্রশ্নাট আপেক্ষিক।
আসলে আমিতো পেশায় ছিলাম
চিকিৎসক। আমার বাবা চেয়েছিলেন তার
মতো মানে অধ্যাপক ডা. রজব আলীর
মতো আমিও একজন খ্যাতিমান
চিকিৎসক হই। শৈশবে, কৈশোর
এবং যৌবনে আমি অনুভব করি,
নারীরা আমাদের সমাজে ক্রীতদাসীর
মতো। পুরুষরা তাদের ভোগ্যপণ্যের
মতো ব্যবহার করে। এ কারণেই
বিষয়গুলো নিয়ে প্রথমে লেখালেখির
কথা ভাবি।
প্রশ্ন : আমার প্রশ্নের জবাব হলো না।
কি স্বাধীনতার দাবিতে আপনার এই
লড়াই?
তাসলিমা : আমি প্রথমত নারীর জরায়ুর
স্বাধীনতার দাবি তুলি। একজন পুরুষ
যখন চাইবে, তখনই তার
মনোস্কামনা পূর্ণ করতে ছুটে যেতে হবে।
এটা তো হতে পারে না। অথচ তখন
ছুটে না গেলে জীবনের সব পূণ্য
নাকি শেষ হয়ে যাবে। চিন্তার
স্বাধীনতা না থাকলে ভালো লেখক
হওয়া যায় না। দেহের স্বাধীনতার
বিষয়টা গৌণ।
তবে একেবারে ফেলনা নয়। পুরুষই
একচেটিয়া মজা লুটবে, নারী শুধু
ভোগবাদীদের কাছে পুতুলের
মতো হয়ে থাকবে,
এটা মেনে নিতে পারিনি।
প্রশ্ন :
আপনি পরিকল্পিতভাবে নিজেকে আলোচিত
ও অপরিহার্য করে তোলেন। আজ
বাংলা সাহিত্যে বা বাংলাদেশের সাহিত্য
জগতে আপনি তো চরমভাবে অবহেলিত।
তাসলিমা : আমি একটা আলোড়ন
সৃষ্টি করেছি। সত্য
কথা সাহিত্যে এলে তা অনেকের জন্য
কষ্টদায়ক হয়। আমি আমার বহু
স্বামী ও ভোগ্য পুরুষদের নামধাম
প্রকাশ করে দেয়ায় অনেক বন্ধু
আমাকে এড়িয়ে চলেন। বাংলা সাহিত্যের
অনেক দামি দামি পুরুষও চান
না যে আমি দেশে ফিরি। এক সময় আমার
বিপক্ষে ছিল কট্টর মৌলবাদীরা। এখন
প্রগতিশীল অনেক সাহিত্যিকও
বিপক্ষে। কারণ এদের নষ্ট মুখোশ
আমি খুলে দিয়েছি।
প্রশ্ন : আপনি চিকিৎসক থাকলেই
ভালো করতেন। মিডিয়াতে কেন এলেন?
সাহিত্যেই বা কেন ঢুকলেন?
তাসলিমা : আমি নারীর অধিকার
নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু এখন মনে হয়
আমি মানবিকভাবে আশ্রয়হীন। আর এ
কারণেই আমি অন্য স্রোতে সুখ খুঁজেছি।
পরিবার হারালাম, স্বামী সন্তান
হলো না, ঘর-সংসার হলো না। তখন
দৈনিক সম্পর্কে নেশাগ্রস্ত
না থেকে আর কোনো পথ খোলা ছিলো না।
প্রশ্ন : এখন আপনি কী চান?
তাসলিমা : অনেক কিছু। আমার
হারিয়ে যাওয়া জীবন, যৌবন, ভোগ-
উপভোগ, স্বামী-সন্তান, পরিবার-
পরিজন। কিন্তু দিতে পারবেন কি? আজ
আমি নিজ দেশের কাউকে দেখলে কুণ্ঠিত
ও লজ্জিত হই। খ্যাতি, অর্থ, পুরস্কার
সবই আছে, তবুও মনে হয় আমি ভীষণ
পরাজিত। দিনে হই চই করে কাটাই, রাত
হলে একাকিত্ব পেয়ে বসে। আগের
মতো পুরুষদের নিয়ে রাতকে উপভোগ
করার মতো শরীর মন কোনটাই নেই।
প্রশ্ন : পুরানো বন্ধুরা যোগাযোগ
রাখেনি? এখন কেমন পুরুষ বন্ধু আছে?
তাসলিমা : এক সময় অনেক
ব্যক্তিত্ববানদের পেছনে আমি ঘুরেছি।
ব্যক্তিত্বহীনরা আমার
পেছনে পেছনে ঘুরেছে। আজকাল আর
সুখের পায়রাদের দেখি না। মনে হয়
নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছি। পরিচিত
হয়েছি নষ্ট নারী, নষ্টা চরিত্রের
মেয়ে হিসেবে। লেখালেখি করে তাই এসব
পুরুষদের উপর আমার রাগ, ঘৃণা ও
অবহেলাকে প্রকাশ করেছি। যৌনতার
রানী হিসেবে প্রকাশিত হলাম, অথচ এই
রানীর কোনো রাজাও নেই প্রজাও নেই।
এই জন্য আজ হতাশায় নিমজ্জিত আমি।
প্রশ্ন : ধর্ম-কর্ম করেন?
তাসলিমা : মাঝেমধ্যে মনে হয় সব
ছেড়ে নামাজ-রোজা করি,
তাওবা করে আল্লাহর
কাছে আত্মসমর্পণ করি।
কম্যুনিস্টরাও তো একসময় বদলে যায়।
আমার জন্ম ১২ ই রবিউল আউয়াল,
মহানবীর জন্মদিনে। নানী বলেছিলেন,
আমার নাতনী হবে পরহেজগার। সেই
আমি হলাম বহু পুরুষভোগ্যা একজন
ধর্মকর্মহীন নারী। বলা তো যায় না,
মানুষ আর কত দিন বাঁচে। আমার
মা ছিলেন পীরের মুরীদ। আমিও হয়ত
একদিন বদলে যাবো।
প্রশ্ন : বিয়ে-টিয়ে করবার
ইচ্ছে আছে কি?
তাসলিমা : এখন বিয়ে করে কি করবো?
পুরুষটিই বা আমার মধ্যে কি পাবে? সবই
পড়ন্ত বেলায়। যে বিয়ে করবে,
সে যদি আমার মধ্যে যৌন সুখ না চায়,
সন্তান না চায়, এমন মানব পেলে হয়ত
একজন সঙ্গী করার কথা ভাবতেও
পারি।
প্রশ্ন :
আপনি কি একেবারে পুরিয়ে গেছেন?
তাসলিমা : না, তা ঠিক নয়।
তবে পুরুষতো শত বছরেও
নারীকে সন্তান দেয়।
মেয়েরা তো পারে না। আমার এখনও
রজস্রাব বন্ধ হয়নি। মেশিনারি ঠিক
আছে। তবে নতুন বা আনকোরাতো নয়,
লক্কর ঝক্কর মেশিনারির
মতো আরকি? পুরুষদেরও বয়স
বাড়লে খাই খাই বেড়ে যায়।
এতটা মেটানো তো আর এই বয়সে সম্ভব
হবে না।
প্রশ্ন : বয়স বাড়লে পুরুষেদের সেক্স
বাড়ে এটা কিভাবে বুঝলেন?
তাসলিমা : কত বুড়ো, মাঝ বয়েসী ও
প্রবীণ বন্ধুদের নিয়ে দেহজ খেলায়
মেতেছি, এটা আমার জীবনের
অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
প্রশ্ন : রাত যখন বিশ্বকে গ্রাস করে,
আপনার ঘুম আসছে না তখন আপনার
বেশি করে কি মনে পড়ে?
তাসলিমা : খুব বেশি মনে পড়ে আমার
প্রথম প্রেম, প্রথম স্বামী, প্রয়াত
কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহকে। অনেক
কাঁদি তার জন্য। পেয়েও হারালাম তাকে।
রাগ হয়েছিল বিয়ের রাতেই।
আমি তো ডাক্তার তার
পুরুষদণ্ডে ক্ষত দেখি।
বুঝতে পেরেছিলাম যাকে জীবন
দিয়ে ভালবাসি, সে বেশ্যাবাড়ি যায়।
সিপিলিস-গনোরিয়ায় আক্রান্ত সে। তবু
তাকে বলি, আজ বাসর
রাতে যৌনকেলি হবে না। তোমার
শরীরে রোগ। এখন আমার
শরীরে তুমি ঢুকলে আমিও এ
রোগে আক্রান্ত হবো। তোমাকে সুস্থ
করে তুলবো, তারপর হবে আমাদের
আনন্দ বাসর। কিন্তু পুরুষতো জোর
করতে চাইলো, ব্যর্থ
হয়ে চলে গেলো পতিতার বুকেই।
প্রশ্ন : অন্য স্বামীদের
কথা মনে পড়ে না?
তাসলিমা : তারা এমন উল্লেখযোগ্য
কেউ নন। তাদের মুরোদ আমি দেখেছি।
তার চেয়ে বহু বন্ধুর
মধ্যে আমি দেখেছি কেমন উন্মত্ত
তেজ। ওদের
স্মৃতি মনে পড়ে মাঝে মধ্যে।
প্রশ্ন : দেশে ফিরবেন না?
তাসলিমা : দেশই
আমাকে ফিরতে দেবে না। আর কোথায়
যাবো? বাবা-মা-ভাই-বোন
সবাইকে আমি লেখাতে জবাই
করে দিয়েছি। আসলে নেশাগ্রস্তই
ছিলাম, অনেক কিছু বুঝিনি। আজ
আত্মীয়-স্বজনও আমাকে ঘৃণা করে।
মরার পর লাশ নিয়ে চিন্তা থাকে, আমার
নেই। যে কোন
পরীক্ষাগারে দেহটা ঝুলবে। ছাত্রদের
কাজে লাগবে।
সূত্র: আজকের সূর্যোদয় এপ্রিল
২০১১
--ইংরেজি থেকে অনুবাদ
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন