তসলিমা নাসরিন : বিদ্ধস্ত ভ্রমরের পুনুরুথ্থান - ২
লিখেছেনঃ দেশে-বিদেশেএর আগে তাসলিমা নাসরীন
বিষয়ে আহমদ ছফার
একটি লেখা প্রকাশ করেছিলাম .. সেই
লেখার দ্বিতিয় অংশ এখানে উল্লেখ
করা হলো। যেহেতু তাসলিমা নাসরীন
নিয়ে আমুর মামুরা সরগরম তাই এর
প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়নি বলেই
আমার ধারনা । কেউ কেউ
তসলিমা নাসরিনকে ইবনে সিনার
সাথে তুলনা করার মতো অসুস্হ
প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে ।
পাঠকদের আবার নিজস্ব চেতনায়
নাড়া দেবার অনুরোধ রইল :
গত সংখ্যায় আনন্দবাজার
এবং তসলিমার লেখার সম্বন্ধে আহমদ
ছফার বিশ্লেষন উল্লেখ ছিল ।
উতসাহি সত্যান্বেষি পাঠকগন
দেখে নিতে পারেন। এবার দ্বিতীয় অংশ
নীচে দেয়া হল:
লেখক: আহমদ ছফা
তাসলিমা নাসরীন ও লজ্জা
এখন আমি তাসলিমা নাসরীনের
লজ্জা উপন্যাসটি নিয়ে গোটা ভারতবর্ষ
জুড়ে যে তুল কালাম কান্ড
চলছে এবং গোটা উপমহাদেশে তসলিমাকে
আলোচনার বিষয় বস্তুতে পরিণত
করেছে সে বিষয়ে কিছু বলতে চাই ।
তসলিমা বাংলাদেশের সমাজের সবটাই
কালো করে দেখেছে ।
এখানে যে আলো আছে সে কথাটি
তসলিমার একবারো খেয়াল হয়নি । তার
এ বইটি যদি হিন্দু মৌলবাদিদের
হাতে পড়ে, নতুন
করে সাম্প্রদায়িকতা বিষবাষ্প
ছাড়াবার অস্ত্র হিসেবে বইটি ব্যবহার
করা অসম্ভব হবে না ।
প্রসংগক্রমে আমি আর একটা বই এর
উল্লেখ করব । মিস মেয়ো নামে এক
ইংরেজ ভদ্র মহিলা একসময় ভারতিয়
হিন্দু সমাজের কুতসা করে 'মাদার
ইন্ডিয়া' নামে একটি লোমহর্ষক গ্রন্হ
লিখেছিলেন । মহাত্না গান্ধি বইটি পাঠ
করার পর বলেছিলেন
এটি একটি নর্দমা পরিদর্শনকারীর
রিপোর্ট । নর্দমা দেখে বেড়ানোর যার
কাজ সে কখনো ফুলের বাগান দেখে না ।
তসলিমাও বাংলাদেশের
যেখানে যেখানে নর্দমা আছে নাকটি
বাড়িয়ে দুর্গন্ধের স্বাদ নিচ্ছেন
এবং সকলকে অংশ দিচ্ছেন ।
বাবরী মসজিদ ধ্বংশ এবং সংঘটিত
গনহত্যার পর পৃথিবীর
দেশে দেশে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের
মুসলিম দেশসমুহে যেখানে ভারতের
ব্যবসা বানিজ্যের স্বার্থ অনেক
বেশী , সেক্যুলার ভারত রাষ্ট্রের
ইমেজটি ভয়ংকর ভাবে মার খেয়ে যায় ।
সকলে একবাক্যে ভারতকে সন্ত্রাসী
রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করতে থাকে ।
তসলিমার বইটি যখন তাদের
হাতে এলো তারা পৃথিবীকে বুঝানোর
চেষ্টা করলেন আমরা সন্ত্রাসী নই।
আসলে সন্ত্রাস চলছে বাংলাদেশে ।
এইযে দেখুন তাদেরই একজন লেখক বই
লিখে সব কথা জানিয়েছেন । ভারতীয়
শাসক এবং বিজেপি চেলারা নিজেদের
সন্ত্রাসী মুর্তি আড়াল করার জন্য
তসলিমার বইটি ঢাল হিসেবে ব্যবহার
করেছে । নয়ত তাদের নিজেদের
দেশে সংঘটিত অত্যাচার নির্যাতন
পাইকারী গনহত্যা এগুলো চেপে রেখে
তসলিমার বইটি প্রচার
করতে এতখানি আদাজল
খেয়ে উঠে পড়ে নামলেন কেনো ?
কংগ্রেসের
গোহাটি সম্মেলনে যে প্রতিবেদন
লেখা হয়েছে তাতে তসলিমার বই এর
বিবরন পুরা তিন পৃষ্ঠা জুড়ে স্হান
পেয়েছে । বিজেপি দিল্লির লালালাজ পথ
নগরে তসলিমার ছবি টাংগিয়েছে । এসব
ভারতবর্ষ কেনো করছে ? বাংলাদেশ
যত বদমাশ দেশই হোক
তাকে শায়েস্হা করার জন্য ভারতের
এতখানি উদ্যম উদ্যোগ ব্যয় করার
কোনো প্রয়োজনই নেই । নিজের
সন্ত্রাসী চেহারার উপর একটি ভদ্র
আবরন
হিসেবে তারা তসলিমাকে শিখন্ডি রূপে
ব্যবহার করে যাচ্ছেন ।
বিশ্ব বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড:
অমর্ত্য সেনের স্ত্রী নবনীতাদেব
স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন
তসলিমাকে আমরাই সৃষ্টি করেছি ।
পবিত্র সরকার তার একটি রচনায়
বলেছেন - তসলিমার কারণে দুইবাংলার
সম্পর্ক অনেকখানি জটিল হয়ে পড়ল ।
আমরা আনন্দবাজারের
মনস্তত্বটি বুঝতে পারি । অন্তত:
৫০ লক্ষ কপি লজ্জা বিক্রি হয়েছে ।
এসব টাকা এসেছে আনন্দ বাজারের
হাতে । আনন্দবাজার এপর্যন্ত বার
থেকে তেরশ লেখক লেখিকার বই
ছেপেছেন । সবগুলো লেখকের বই
থেকে যে পরিমান টাকা আনন্দ বাজার
আয় করেছে তসলিমার এই
বইটি থেকে অন্তত তার চেয়ে দশগুন
বেশী আয় করেছেন ।
সুতরাং তসলিমা এপর্যায়ে আনন্দ
বাজারের জন্য বিরাট এক কামধনু
হয়ে দাড়িয়েছেন ।
এই ধরনের একজন
পর্ণোগ্রাফী লেখিকাকে বিশ্বমানের
লেখিকা হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।
বাবরী মসজিদ ভাংগার পরে বিশ্ব
সমাজে ভারত বর্ষের
যে সন্ত্রাসী চরিত্র
ফুটে উঠেছে সেটা ধামাচাপা দেয়ার
জন্যই ভারতের এই উন্মত্ত প্রচার
অভিযান।
আমার প্রশ্ন :
১) যে ভারত তসলিমাকে আশ্রয়
দিয়েছিল প্রগতি বাদিতার ধুয়ো তুলে ,
তারা কেনো এখন তাকে আশ্রয়
দিচ্ছে না ? আর আমুর
সমর্থকরা কেনো একথাটা একবারো বলে
না ?
২) যে বিদেশি প্রভুদের মনোরন্জন
করার জন্য বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক
দেশ হিসেবে পরিচিত
করিয়ে তসলিমা বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট
করেছিল ,
তাকে কি আমরা দেশোদ্রোহী বলতে পারি
কিনা ? এমন দেশোদ্রোহীকে কি আনার
জন্য যারা চেষ্টা করছে তারাও
দেশোদ্রোহী হিসেবে বিবেচিত হবেন
কিনা ?
৩) যারা তসলিমাকে "নবী"
হিসেবে মানে তারা তার
লেখা কখনো উল্লেখ করে না কেনো ?
শুধুমাত্র কবিতা উল্লেখ করে... কারন
কি ? তারাও কি স্বিকার
করে যে তসলিমার প্রবন্ধে সারবস্তু
কিছু নেই উল্লেখ করার মতো । শুধুই
গারবেজ ?
৪) একসময় যে ইন্ডিয়া তসলিমার
প্রতি আশেক ছিল
এবং আজকে প্রয়োজন ফুরানো পর
ছুড়ে ফেলে দিয়েছে ... ঠিক একই
কারণে তাদেরই এজেন্ট
কি চাচ্ছে তসলিমা বাংলাদেশে এসে
আবার পরিস্হিতি অশান্ত করুক ?
উপরের প্রশ্ন গুলোর উত্তর
জানা নেই .. কেউ জানালে পুলকিত হবো।
দেশে-বিদেশে-এর ব্লগ
শেয়ার করে আপনার বন্ধুদের কে জানার সুযোগ দিন ।আপনি জেনেছেন হয়তো সে জানেনা ।আমার ব্লগ বাড়ীতে বেড়াতে আসার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ।সাথে থাকুন সব সময় ।আল্লাহ্ হাফেজ ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন