হাদিসের আলোকে সফরের আদব →পাতা ২←
১৪। আবূ সাঈদ খুদরী (রা:) বলেন,একদা আমরা সফরে ছিলাম। ইত্যবসরে এক ব্যক্তি তার সওয়ারীর উপর চড়ে এল। অত:পর তারদৃষ্টি ডানে ও বামে ফেরাতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, “যার বাড়তি সওয়ারী আছে,সে যেন তা তাকে দেয় যার সওয়ারীনেই এবং যার অতিরিক্ত সফরের সম্বল রয়েছে, সে যেন সম্বলহীন ব্যক্তিকে দেয়।” অত:পর তিনি আরো কয়েক প্রকার মালের কথা বললেন। এমনকি শেষ পর্যন্ত আমরা ধারনা করলাম যে, বাড়তি মালে আমাদের কারোর কোন অধিকার নেই। (মুসলিম)১৪১৫। জাবের (রা:) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করলেন। অত:পর তিনি বললেন, “হে মুহাজির ও আনসারের দল! তোমাদের ভাইদের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে, যাদের কোন মাল নেই, স্বগোত্রীয়লোকও নেই। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন দুই অথবা তিনজনকে সঙ্গে করে নেয়। কারন, আমাদের কারও এমন কোন সওয়ারী নেই, যা তাদের সাথে পালাক্রমে ছাড়া তাকে বহন করতে পারে।” জাবের (রা:) বলেন, সুতরাং আমি দু’জন অথবা তিনজনকে সাথে নিলাম। অন্যান্যদের মত আমার উটেও তাদের সাথে পালাক্রমে চড়তাম। (আবূ দাউদ)১৫
১৬। উক্ত রাবী (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) সফরে (সকলের) পিছনে চলতেন। তিনি দুর্বলকে চলতে সাহায্য করতেন এবং তাকে পিছনে বসিয়ে নিতেন ও তার জন্য দুআ করতেন। (আবূ দাঊদ হাসান সূত্রে)১৬
কোন সওয়ারী বা যানবাহনে চড়ার সময় দুআ
আল্লাহ তাআলা বলেন,
যিনি সবকিছুর যুগলসমূহ সৃষ্টি করেছেন এবং নৌকা ও চতুষ্পদ জন্তুকে তোমাদের যানবাহনে পরিনত করেছেন। যাতে তোমরা ওদের পিঠে স্থিরভাবে বসে তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্মরন করতে পার, পবিত্র মহান তিনিই যিনি একে আমাদের বশীভূত ক’রে দিয়েছেন; যদিও আমরা একে বশীভূত করতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তনকারী। (সুরা যুখরুফ ১২-১৪ আয়াত)
১৭। ইবনে উমার (রা:) হতে বর্নিত, রসূল (সা:) যখন সফরে বেরিয়ে উটের পিঠে স্থির হয়ে বসতেন, তখন তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ে এই দু’আ পড়তেন,
‘সুবহানাল্লাযী সাখ্ খারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। অইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবুন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা সাফারানা হা-যাল বির্রা অত্তাক্বওয়া, অমিনাল আমালি মা তারয্বা। আল্লাহুম্মা হাওবিন আলাইনা সাফারানা হা-যা অত্ববিআন্না বু’দাহ। আল্রাহুম্মা আন্তাস সাহিবু ফিস সাফারি অলখালীফাতু ফিল আহল। আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযু বিকা মিন অ’সাইস সাফার আকাআবাতিল মানযার, অসূইল মুনক্বালাবি ফিল মা-লি অল আহলি অল অলাদ।’
অর্থাৎ, পবিত্র ও মহান যিনি একে আমাদের বশীভূত ক’রে দিয়েছেন যদিও আমরা একে বশীভুতকরতে সমর্থ ছিলাম না। অবশ্যই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকটপ্রত্যাবর্তনকারী। ওগো আল্লাহ! নিশ্চয় আমরা তোমার কাছে প্রার্থনা করছি আমাদের এই যাত্রায় পুন্যকর্ম, সংযমশীলতা এবং তোমার সন্তোষজনক কার্যকলাপ। হে আল্লাহ! আমাদের এ যাত্রাকে আমাদের জন্য সহজ ক’রে দাও। আমাদের থেকে ওর দূরত্ব গুটিয়েনাও। হে আল্লাহ! তুমিই সফরের সঙ্গী। আর পরিবার পরিজনের জন্য (আমাদের) প্রতিনিধি। হে আল্লাহ! সফরের কষ্ট ও ক্লান্তি থেকে, ভয়ংকর দৃশ্য থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আর বাড়ি ফিরার সময় উক্ত দুআর সাথে এগুলিও পড়তেন, ‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন।’ (মুসলিম)১৭
১৮। আব্দুল্লাহ ইবনে সার্জিস (রা:) হতে বর্নিত , তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সফর করতেন, তখন তিনি সফরের কষ্ট থেকে, দুশ্চিন্তাজনক পরিস্থিতি থেকে বা অপ্রীতিকর প্রত্যাবর্তন, পূর্ণতার পর হ্রাস থেকে, অত্যাচারিতের বদ্ দুআ থেকে, মাল-ধন ও পরিবারের ক্ষেত্রে অপ্রীতিকর দৃশ্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। (মুসলিম)১৮
১৯। আলী ইবনে রাবীআহ (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি আলী ইবনে আবু ত্বালেব (রা:) এর নিকট হাজির ছিলাম। যখন তাঁর নিকট আরোহন করার উদ্দেশ্যে বাহন আনা হল এবং যখন তিনি বাহনের পাদানে স্বীয় পা রাখলেন তখন ‘বিসমিল্লাহ’ বললেন। অত:পর যখন তার পিঠে স্থির হয়ে সোজভাবে বসলেন তখন বললেন, ‘আমহামদু লিল্লাহিল্লাযী সাখখারা লানা হা-যা অমা কুন্না লাহু মুক্বরিনীন। আইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনক্বালিবূন।’ অত:পর তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ’পড়লেন। অত:পর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ পড়লেন। অত:পর পড়লেন, ‘সুবহানাকা ইন্নী যালামতু নাফসী ফাগফিরলী, ইন্নাহু লা য়্যাগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আন্ত।’ অত:পর তিনি হাসলেন। তাঁকে জিঞ্জাসা করা হল, ‘হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘আমি নবী (সা:) কে দেখলাম, তিনি তাই করলেন, যা আমি করলাম। অত:পর তিনি হাসলেন। আমি প্রশ্ন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি হাসলেন কেন?’ তিনি বললেন, “তোমার মহান প্রতিপালক তাঁর সেই বান্দার প্রতি আশ্চর্যান্বিত হন, যখন সে বলে,’ইগফিরলী যুনূবী’ (অর্থাৎ, আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও।) সে জানে যে, আমি (আল্লাহ)ছাড়া পাপরাশি আর কেউ মাফ করতে পারে না।” (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান, কোন কোন কপিতে আছে, ’হাসান সহীহ’। আর এ শব্দমালা আবূ দাউদের।) ১৯
উঁচু জায়াগায় চড়ার সময় মুসাফির ‘আল্লাহু আকবার’ বলবে এবং নীচু জায়গায় নামবার সময় ‘সুবহানাল্লাহ’ বলবে। ‘তকবীর’ ইত্যাদি বলার সময় অত্যন্ত উচ্চ:স্বরে বলা নিষেধ
২০। জাবের (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমরা (সফরে) যখন উঁচু জায়গায় চড়তাম তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতাম এবং নীচু জায়গায় নামতাম, তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতাম। (বুখারী)২০
২১। ইবনে উমার (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) ও তাঁর সেনা বাহিনী যখন উঁচু জায়গায় চড়তেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন। আর যখন নিচু জায়গায় নামতেন তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ বলতেন। (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধ সানাদে)২১উক্ত রাবী (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) যখন হজ্জ কিম্বা উমরাহ সেরে ফিরে আসতেন,যখনই কোন পাহাড়ী উঁচু জায়গায় অথবা ঢিবিতে চড়তেন তখনই তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলতেন।অত:পর তিনি বলতেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অহদাহু লা শারীকালাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদুঅহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। আ-ইয়বূনা তা-ইবূনা সা-জিদূনা লিরাব্বিনা হা-মিদূন। সাদাক্বাল্লাহু ওয়া’দাহ, অনাসারা আব্দাহ্, অহাযামাল আহযাবা অহদাহ।’
আরো পড়ুন......→হাদিসের আলোকে সফরের আদব←→পাতা ৩←
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন