হাদিসের আলোকে সফরের আদব →পাতা ১←

কোন মন্তব্য নেই
১। কা’ব ইবনে মালেক (রা: ) হতে বর্নিত, নবী (সা:) তাবুক অভিযানে বৃহস্পতিবার বের হলেন।আর তিনি বৃহস্পতিবার (সফরে) বেরহওয়া পছন্দ করতেন। (বুখারী, মুসলিম)১
বুখারী-মুসলিমের অন্য এক বর্ননায় আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বৃহস্পতিবার ছাড়া অন্যদিনে কমই সফরে হতেন।
(প্রকাশ থাকে যে, বৃহস্পতিবার সফরে বের হওয়ার কথা মুসলিম শরীফে নেই।)
২। স্বাখ্র ইবনে অদাআহ গামেদী (রা:) হতে বর্নিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে আল্লাহ! তমি আমার উম্মতের জন্য তাদের সকালে বরকত দাও।” আর তিনি যখন সেনার ছোট বাহিনী অথবা বড় বাহিনী পাঠাতেন, তখন তাদেরকে সকালে রওয়ানা করতেন। স্বাখ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। সুতরাং তিনি তাঁর ব্যবসার পণ্য সকালেই প্রেরন করতেন। ফলে তিনি (এর বর্কতে)ধনী হয়ে গিয়েছিলেন এবং তাঁর মাল প্রচুর হয়েছিল। (আবু দাউদ, তিরমিযী হাসান)২
সফরের জন্য সাথী খোঁজ করা এবং কোন একজনকে আমীর (দলপতি)নিযুক্ত করে তার আনুগত্য করা শ্রেয়
৩। ইবনে উমার (রা:) থেকে বর্নিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যদি লোকেরা জানত যে, একাকী সফরে কী ক্ষতি রয়েছে; যা আমি জানি, তাহলে কোন সওয়ারী একাকী সফর করত না।” (বুখারী)৩
৪। আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনে আমর) হতে বর্ননা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “একজন (সফরকারী) আরোহী একটি শয়তান এবং দু’জন আরোহী দু’টি শয়তান। আর তিনজন আরোহী একটি কাফেলা।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ বিশুদ্ধসূত্র)৪
৫। আবূ সাঈদ ও আবূ হুরাইরা (রায্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যখন তিন ব্যক্তি সফরে বের হবে, তখন তারা যেন তাদের একজনকে আমীর বানিয়ে নেয়।” (আবূ দাউদ হাসান সূত্রে)৫
৬। ইবনে আব্বাস (রা:) কর্তৃক বর্নিত, নবী (সা:) বলেছেন, “সর্বোত্তম সঙ্গী হল চারজন, সর্বোত্তম ছোট সেনাবাহিনী হল চারশ’ জন, সর্বোত্তম বড় সেনাবহিনী হল চার হাজার জন। আর বারো হাজার সৈন্য স্বল্পতার কারনে কখনো পরাজিত হবে না।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী, হাসান)৬
সফরে চলা, বিশ্রাম নিতে অবতরণ করা, রাত কাটানো এবং সফরে ঘুমানোর আদব-কায়দা
৭। আবূ হুরাইরা (রাJ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “যখন তোমরা সবুজ-শ্যামল ঘাসে ভরা যমীনে সফর করবে, তখন উটকে তার যমীনের অংশ দাও (অর্থাৎ, কিছুক্ষন চরতে দাও)। আর যখন তোমরা ঘাস-পানিবিহীন যমীনে সফর করবে, তখন তার উপর চড়ে দ্রুত চলো এবং তার শক্তি শেষ হওয়ার পূর্বেই গন্তব্যস্থলে পৌঁছে যাও। আর যখন তোমরা রাতে বিশ্রামের জন্য কোন স্থানে অবতরন করবে, তখন আম রাস্তা থেকে দূরে থাকো। কারন, তা রাতে(হিংস্র) জন্তুদের রাস্তা এবং (বিষাক্ত) পোকামাকড়ের আশ্রয় স্থল।” (মুসলিম)৭
৮। আবূ ক্বাতদাহ (রা:) বলেন, ’রাসূলুল্লাহ (সা:) যখন সফরে থাকতেন এবং রাতে বিশ্রামের জন্য কোথাও অবতরন করতনে, তখন তিনি ডান পার্শ্বে শয়ন করতেন।আর তিনি ফজরের কিছুক্ষন পূর্বে বিশ্রাম নিলে তার হাতটা খাড়া করে হাতের চেটোর উপর মাথা রেখে আরাম করতেন।’ (মুসলিম)৮
উলামাগন বলেন, ‘তিনি হাত খাড়া রেখে আরাম করতেন, যাতে গভীর নিদ্রা এসে ফজরের নামাযের ওয়াক্ত অথবা প্রথম ওয়াক্ত ছুটে না যায়।’
৯। আনাস (রা:) বলেন রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তোমরা রাতে সফর কর। কেননা, রাতে যমীনকে গুটিয়ে দেওয়া হয়।” (অর্থাৎ, রাস্তা কম মনে হয়।) (আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে)৯
১০। আবূ সা’লাব খুশানী (রা:) বলেন, লোকেরা যখন কোন স্থানে অবতরন করতেন, তখন তাঁর গিরিপথ ও উপত্যকায় ছড়িয়ে যেতেন। রাসূলুল্লাহ (সা:) বললেন, “তোমাদের এ সকল গিরিপথে ও উপত্যকায় বিক্ষিপ্ত হওয়া শয়তানের কাজ।” এরপর তাঁরা যখনই কোন মঞ্জিলে অবতরন করতেন,তখন একে অপরের সাথে মিলিত হয়ে থাকতেন। (আবূ দাউদ)১০
১১। সাহল ইবনে আমর (রা:) মতান্তরে সাহল ইবনে রাবী ইবনেআমর (রা:) আনসারী – যিনি ইবনুলহানযালিয়্যাহ নামে প্রসিদ্ধ এবং ইনি বায়আতে রিযওয়ানে অংশ গ্রহনকারীদের মধ্যে একজন—তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) একটা উটের পাশ দিয়ে গেলেন, যার পিঠটা (দুর্বলতার কারনে) পেটের সাথে লেগে গিয়েছিল। (তা দেখে) তিনি বললেন, “তোমরা এ সব অবোলা জন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। সুতরাং তোমরা তাদের সুস্থথাকা অবস্থায় আরোহন কর এবং তাদের সুস্থ থাকা অবস্থায় মাংস খাও।” (আবূ দাউদ, বিশুদ্ধসূত্র)১১
১২। আবূ জা’ফর আব্দুল্লাহ ইবনেজা’ফর (রা:) বলেন, ‘একদা রাসূলুল্লাহ (সা:) আমাকে সওয়ারীর উপর তাঁর পিছনে বসালেন এবং আমাকে তিনি একটি গোপন কথা বললেন, যা আমি কাউকে বলব না। আর রাসূলুল্লাহ (সা:) উঁচু জায়গা (দেওয়াল, ঢিবি ইত্যাদি) অথবা খেজুরের বাগানের আড়ালে মল-মূত্র ত্যাগকরা সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন।’(ইমাম মুসলিম এটিকে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ননা করেছেন)
বারক্বানী এতে মুসলিমের সূত্রে বর্ধিত আকারে ‘খেজুরের বাগান’ শব্দের পর বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা:) এক আনসারীর বাগানে প্রবেশ ক’রে সেখানে একটা উট দেখতে পেলেন। উটটা রাসূলুল্লাহ (সা:) কে দেখে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল এবং তার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল। নবী (সা:) তাঁর কাছে এসে তার কুঁজে এবং কানের পিছনের অংশে হাত ফিরালেন, ফলে সে শান্ত হল।এরপর তিনি বললেন, ”এ উটের মালিক কে? এই উটটা কার?” অত:পরআনসারদের এক যুবক এসে বলল, ‘এটা আমার হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, “তুমি কি এই পশুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন? কারন, সে আমার নিকট অভিযোগ করছে যে, তুমি তাকে ক্ষুধায় রাখ এবং (বেশি কাজ নিয়ে) ক্লান্ত ক’রে ফেলো।”(আবূ দাউদ)১২
১৩।আনাস (রা:) বলেন, ‘আমরা যখন (সফরে) কোন মঞ্জিলে অবতরন করতাম, তখন সওয়ারীর পালান নামাবার পূর্বে নফল নামায পড়তাম না।’ (আবূ দাউদ, মুসলিমের শর্তে)১৩অর্থাৎ, আমরা নামাযের প্রতি আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও সওয়ারীরপিঠ থেকে পালান নামিয়ে তাকে আরাম না দেওয়ার আগে নামায পড়তে শুরু করতাম না।
সফরের সঙ্গীকে সাহায্য করা
আপরকে সাহায্য করার বিষয়ে অনেক হাদীস পূর্বে বর্নিত হয়েছে। যেমন ‘আল্লাহ বান্দাকে সাহায্য করেন; যতক্ষন বান্দা তার ভাইকে সাহায্য করে।’ ‘প্রত্যেক ভাল কাজ সাদকাহ স্বরূপ।’ ইত্যাদি।

আরো পড়ুন......→হাদিসের আলোকে সফরের আদব←→পাতা ২,৩,৪←

কোন মন্তব্য নেই :