হাদিসের আলোকে সফরের আদব →পাতা ৩←

কোন মন্তব্য নেই
অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। তাঁরই সার্বোভৌম অধিকার, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই জন্য, আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাবর্তনকারী, তওবাকারী, ইবাদতগুযার, সাজদাহকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাঁর প্রতি্শ্রুতি সত্য প্রমানিত করেছেন, তাঁর বান্দাহকে মদদ করেছেন এবং একাই শত্রু বাহিনীকে পরাস্ত করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)২২
মুসলিমের অন্য বর্ননায় আছে, যখন তিনি বড় অথবা ছোট অভিযান অথবা হজ্জ বা উমরাহ থেকে ফিরতেন—।
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, এক ব্যক্তি নিবেদন করল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি ইচ্ছা করেছি সফরে যাব আমাকে উপদেশ দিন।’ তিনি বললেন, “তুমি আল্লাহ-ভীতি অবলম্বন করো এবং প্রত্যেক উঁচু স্থানে নিয়মিত ‘আল্লাহু আকবার’ পড়ো।” যখন লোকটা পিছন ফিরে যেতে লাগল, তখন তিনি (তার জন্য দুআ ক’রে) বললেন, “আল্লাহুম্মাত্ববি লাহুল বু’দা অহাওবিন আলাইহিস সাফার।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! তুমি ওর পথের দূরত্ব গুটিয়ে দিয়ো এবং ওর জন্য সফর আসান ক’রে দিয়ো। (তিরমিযী হাসান)২৩
আবূ মূসা আশআরী (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, নবী (সা:) এর সাথে সফরে ছিলাম। আমরা যখন কোন উঁচু উপত্যকা চড়তাম তখন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহুআকবার’ বলতাম। (একদা) আমাদের শব্দ উঁচু হয়ে গেল। নবী (সা:) তখন বললেন, “হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের প্রতি নম্রতা পদর্শন কর। কেননা, তোমরা কোন বধির ও অনুপস্থিতকে ডাকছ না। তিনি তোতোমাদের সঙ্গেই রয়েছেন। তিনি সর্বশ্রোতা ও নিকটবর্তী।” (বুখারী ও মুসলিম)২৪
*(মহান আল্লাহ আরশে আছেন। কিন্তু তাঁর ঞ্জান, দৃষ্টি প্রভৃতি সর্বত্র আছে। সুতরাং তাঁকে শোনাবার জন্য এত উচ্চস্বরে তকবীর ইত্যাদি পড়া নিষ্প্রয়োজন।)
সফরে দুআ করা মুস্তাহাব

আবূ আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ”তিনজনের দুআ সন্দেহাতীতভাবে গৃহীত হয়: ১) নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ, ২) মুসাফিরের দুআ এবং ৩) ছেলের জন্য মাতা-পিতার বদ্দুআ।” (আবূ দাউদ, তিরমিযী হাসান)২৫
আবূ দাউদের বর্ননায় “ছেলের জন্য” শব্দগুলি নেই। (অর্থাৎ, তাতে আছে, “পিতা-মাতার দুআ।”)
মানুষ বা অন্য কিছু থেকে ভয়পেলে কী দুআ পড়বে?
আবূ মূসা আশআরী (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) যখনকোন শত্রুদলকে ভয় করতেন তখন এই দুআ পড়তেন, “আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআ’লুকা ফী নুহূরিহিম অনাঊযু বিকা মিন শুরূরিহিম।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! আমরা তোমাকে ওদের মুখামুখি করছি এবং ওদের অনিষ্টকারিতা থেকে তোমার নিকট পানাহ চাচ্ছি। (আবূ দাউদ, নাসাঈ বিশুদ্ধ সূত্রে)২৬
কোন মঞ্জিলে (বিশ্রাম নিতে) অবতরন করলে সেখানে কীদুআ পড়বে?
খাওলা বিনতে হাকীম (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে বলতে শুনেছি যে, “যে ব্যক্তি (সফরের) কোন মঞ্জিলে নেমে এই দুআ পড়বে, ‘আঊযু বিকালিমাতিল্লা-হিত্ তা-ম্মাতি মিন শার্রি মা খালাক্ব।’ (অর্থাৎ, আল্লাহর পরিপূর্ন বানীসমূহের অসীলায় তাঁর সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আমিআশ্রয় চাচ্ছি।) তাহলে সে মঞ্জিল থেকে অন্যত্র রওনা হওয়া পর্যন্ত কোন জিনিস তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। (মুসলিম)২৭
প্রয়োজন পূরন হয়ে গেলে সফর থেকে অতি শীঘ্র বাড়ি ফিরা মুস্তাহাব
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেন, “সফর আযাবের অংশ বিশেষ। সফর তোমাদেরকে পানাহার ও নিদ্রা থেকে বিরত রাখে। সুতরাং যখন তোমাদের কারোর সফরের উদ্দেশ্য পূরণ হয়ে যাবে, তখন সে যেন বাড়ি ফিরবার জন্য তাড়াতাড়ি করে।” (বুখারী ও মুসলিম)২৯
সফর শেষে বাড়িতে দিনের বেলায় আসা উত্তম এবং অপ্রয়োজনে রাতের বেলায় ফিরা অনুত্তম
জাবের (রা:) হতে বর্নিত, রসূল (সা:) বলেন, “যখন তোমাদের কারের বিদেশের অবস্থান দীর্ঘ হবে, তখন সে যেন অবশ্যই রাত্রিকালে নিজ গৃহে না ফিরে।” (বুখারী ও মুসলিম)৩০
অন্য এক বর্ননায় আছে, আল্লাহর রসূল (সা:) নিষেধ করেছেন যে, (মুসাফির) পুরুষ যেন স্ত্রীর কাছে রাতের বেলায় প্রবেশ না করে।
(কেননা তাতে অনেক ধরনের ক্ষতি হতে পারে। যেমন, স্ত্রীকে অপ্রীতিকর বা অবাঞ্জনীয় অবস্থায় দেখে দাম্পত্যে অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে অথবাস্ত্রী তার জন্য সম্পূর্ন অপ্রস্তুত থাকতে পারে ইত্যাদি। তবে পূর্বেই যদি আগমন বার্তা জানিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে রাতের বেলায় বাড়ি গেলে কোন ক্ষতি নেই।)
আনাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) সফর শেষে রাত্রিকালে স্বীয় বাড়ি ফিরতেন না। তিনি সকালে কিম্বাবিকালে বাড়ি আগমন করতেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)৩১
সফর থেকে বাড়ি ফিরার সময় এবং নিজ গ্রাম বা শহর দেখারসময় দুআ
আনাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, একদা আমরা নবী (সা:) এর সঙ্গে সফর থেকে ফিরে এলাম। পরিশেষে যখন মদীনার উপকন্ঠে এসে উপকন্ঠে এসে উপনীত হলাম, তখন তিনি এই দুআ পড়লেন, ‘আ-ইবূনা, তা-ইবূনা, আ-বিদূনা, লিরাব্বিনা হা-মিদূন। (অর্থাৎ, আমরা সফর থেকে প্রত্যাগমনকারী, তওবাকারী, উপাসনাকারী, আমাদের প্রভুর প্রশংসাকারী।) মদীনায় আগমন নাকরা পর্যন্ত তিনি এ দুআ অনবরত পড়তে থাকলেন।(মুসলিম)৩২
সফর থেকে বাড়ি ফিরে প্রথমে বাড়ির নিকটবর্তী কোন মসজিদে দু’রাকআত নফল নামায পড়া মুস্তাহাব
কা’ব ইবনে মালেক (রা:) হতে বর্নিত, ‘রাসূলুল্লাহ (সা:) যখনসফর থেকে বাড়ি ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম মসজিদে গিয়ে দু’রাকআত নামায পড়তেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)৩৩
কোন মহিলার একাকিনী সফর করা হারাম
আবূ হুরাইরা (রা:) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে, তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়।” (বুখারী ও মুসলিম)৩৪
ইবনে আব্বাস (রা:) হতে বর্নিত, তিনি নবী (সা:)-কে বলতে শুনেছেন যে, “কোন পুরুষ যেন কোন বেগানা নারীর সঙ্গে তার সাথে এগানা পুরুষ ছাড়া অবশ্যইনির্জনতা অবলম্বন না করে। আর মাহরাম ব্যতিরেকে কোন নারী যেন সফর না করে।”

আরো পড়ুন......→হাদিসের আলোকে সফরের আদব←→পাতা ৪←

কোন মন্তব্য নেই :