দিনবদলের সাংসদ! সোহরাব হাসান | তারিখ: ০৫-০১-২০১২, ২
কোন মন্তব্য নেই
জানি না, বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, সংসদ উপনেতা এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কীভাবে নেবেন। তাঁরা তিনজনই নারী। নারী হয়ে তাঁরা কি নারীর প্রতি এই অপমান সহ্য করবেন? এ কাজটি বিরোধী দলের কোনো সাংসদ করলে আমরা নিশ্চিত সাহারা খাতুনের পুলিশ বাহিনী ওই দিন রাতেই তাঁকে চ্যাংদোলা করে থানায় নিয়ে যেত এবং সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়োজনে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো।
কিন্তু কামাল মজুমদার যে সরকারি দলের সাংসদ! তাঁর সাত খুন মাফ। এর আগেও কামাল মজুমদার অনেকবার মাস্তানি করেছেন। ২০১০ সালের ২৫ অক্টোবর প্রথম আলোয় মিরপুরে একটি হাসপাতালকে দেওয়া তিনি দখল করে নিয়েছেন এই মর্মেএকটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এর বিরুদ্ধে তিনি প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ২টি ও প্রতিবেদক অরূপ দত্তের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেন। একটি মানহানির (নারী নির্যাতকের আবার মানহানি!)। আরেকটি ক্ষতিপূরণ এবং শেষটি করেছেন সাংবাদিক অরূপ দত্তের বিরুদ্ধে ‘চাঁদাবাজির’। তিনটি মামলাই বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করব না। কেবল চাঁদাবাজির মামলাটির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব। কোনো সাংবাদিক চাঁদাবাজি করলেঅবশ্যই তাঁর শাস্তি হবে। প্রথম আলোর সাংবাদিক কোথায়, কখন, কীভাবে চাঁদাবাজি করেছেন, তা কামাল মজুমদারকেই প্রমাণকরতে হবে। কিন্তু প্রমাণ দিতে না পারলে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাংবাদিক হয়রানির জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারের সেই মুরোদ আছে কি?
আওয়ামী লীগ সরকারের তিন বছর পার হতে চলেছে। এই সময়ে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন না হলেও আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, সাংসদ, নেতা-কর্মী, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের ভাগ্য যে বদল হয়েছে তা নিশ্চিত করেবলা যায়। দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে দেখতে পাবে ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে এসব সাংসদ ও নেতা-কর্মীর কী সহায়সম্পদ ছিল, কী ব্যবসাবাণিজ্য ছিল এবং এখন কী আছে। এত অল্প সময়েবৈধ পথে এত বিপুল সম্পদেরমালিক হওয়া যায় কি না, তাও দুদক তদন্ত করে দেখতেপারে। অবৈধ অর্থ অবৈধ ক্ষমতার প্রসার ঘটায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভা-সমাবেশে প্রায়শ বিগত বিএনপি সরকারের দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।কিন্তু তাঁর দলের সবাই যেদুর্নীতিমুক্ত, সে ব্যাপারে তিনি এতটা নিশ্চিত হলেন কী করে?
কামাল মজুমদার একা নন, আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ওসাংসদই দেশটাকে তাঁদের জমিদারি ভাবেন।
কয়েক দিন আগে একটি সেমিনারে পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী যে ভাষায় অনুষ্ঠানের উপস্থাপক একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককেগালমন্দ করলেন তা কোনো ভদ্র লোকের মুখে শোভা পায়না। ওই সাংবাদিকের অপরাধ ছিল, তিনি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা বললেও তাঁর নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা শব্দটি বলেননি। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা কখনই নামও সার্টিফিকেটের জন্য কাঙালপনা দেখান না। কিন্তু লতিফ সিদ্দিকী দেখাচ্ছেন। এমন কী উপস্থাপক ভুল স্বীকার করার পরও তাঁকে কড়া কথা শুনিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরাহাওয়ায় ভেসে আসিনি।’ তাঁরা হাওয়ায় ভেসে আসেননি বলেই মন্ত্রী-সাংসদ হয়েছেন। আর আমজনতা হাওয়ায় ভেসে এসেছে বলেই তাদের ওপর জবরদস্তি করছেন।
আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, গত তিন বছরে সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ এবং আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতার মুখের ভাষা-ভঙ্গি বদলে গেছে। আগে যাঁরা নামছাপার জন্য পত্রিকা অফিসে অফিসে ধরনা দিতেন, টেলিফোনে সাংবাদিকদের অনুরোধ-উপরোধ করতেন, এখন কথায় কথায় সবক দেন, ধমক লাগান। কেউ কেউ তুই- তোকারি করতেও ছাড়েন না। এই হলো দিনবদলের নমুনা।
যখন কোনো সরকারের বা দলেরপায়ের তলা থেকে মাটি সরে যায়, তখনই নেতা-নেত্রী-সাংসদেরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এটি আমরা ২০০০-২০০১ সালে দেখেছি। ২০০৫-২০০৬ সালে দেখেছি। এবার মেয়াদের দুই বছর বাকি থাকতেই আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা-মন্ত্রী ও সাংসদেরামারমুখী হয়ে উঠেছেন। বাকি সময়টা তাঁরা কী করবেন আল্লাহই জানেন।
সোহরাব হাসান: কবি, সাংবাদিক।
sohrab03@dhaka.net

♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3

ভাল লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করুন । লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । ভাল থাকুন সব সময় ।

কোন মন্তব্য নেই :