কিডনি সংযোজন ফিরিয়ে দিতে পারেস্বাভাবিক জীবন ডা. মো. রুহুল আমিন
কোন মন্তব্য নেই
মানবদেহে কিডনি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। সাধারণত প্রতিটি মানবদেহে দুটি কিডনি থাকে। কিডনি শরীর থেকে দূষিত বর্জ্য বের করে এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসকে সংরক্ষণ করে। শরীরের পানি, লবণ ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্ত তৈরিতে কিডনি বিশেষ ভূমিকা রাখে। দুটি কিডনি যখন স্থায়ীভাবে শতকরা নব্বই ভাগের বেশি কার্যক্ষমতা হারায় তখন তাকে অ্যান্ড সেটজ রেনাল ডিজিজবা সংক্ষেপে ইএসআরডি বলা হয়। ইএসআরডিতে আক্রান্ত একজন রোগীকে বেঁচে থাকার জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজনের মতো অপারেশন করাতে হয়। নিয়মিত ডায়ালাইসিসের চেয়ে কিডনি সংযোজনে বেশ কিছু বাড়তি সুবিধা রয়েছে। যেমন কিডনি সংযোজনের রোগী সুস্থ স্বাভাবিকমানুষের মতো হয়ে যায়, নিয়মিত হাসপাতালে আসতে হয় না, রক্ত বৃদ্ধির জন্য ওষুধ বা রক্তের প্রয়োজন হয় না, খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হয়। জীবন হয় দীর্ঘমেয়াদি। গত দুদশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশে কিডনি সংযোজন হচ্ছে।তবে গত তিন-চার বছরে কিডনি সংযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এবং সফলতার হার যেকোনো উন্নত বিশ্বের কাছাকাছি। কিডনিসংযোজনের প্রধান অন্তরায় কিডনিদাতা এবং সাধারণ মানুষের অসচেতনতা। ১৯৯৯ সালের এপ্রিল মাসে জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইন অনুযায়ী একজন কিডনি ফেইলর রোগীকে তার বাবা-মা, ভাই-বোন, ছেলেমেয়ে, স্বামী-স্ত্রী, চাচা-মামা ও খালা-ফুপু স্বেচ্ছায় একটি কিডনি দান করতেপারবে। তবে কিডনিদাতার বয়স হতেহবে ১৮ থেকে ৬১ বছরের মধ্যে, তার দুটি কিডনিই শতভাগ সুস্থ থাকতে হবে! কিডনিদাতার শরীরে অপারেশনের আগে কোনো ভাইরাস যেমন- হেপাটাইটিস বিসিসি এমভি ভাইরাস এইচআইভি ইত্যাদির অনুপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। তেমনিভাবে কিডনিগ্রহীতার শরীরেও অপারেশনের আগে কোনো রকমইনফেকশন যেমন-যক্ষ্মা, শ্বাসনালিতে প্রদাহ, নিউমোনিয়া, ইউরিনে ইনফেকশন, হাতে-পায়ে ইনফেকশন ইত্যাদির অনুপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের আইন অনুযায়ী দুর্ঘটনায় আহত বা সেট্রাকের রোগী স্থায়ীভাবে জ্ঞান হারালে একজন ব্রেইন ডেথ রোগী তার দুটি কিডনি দুজন কিডনি ফেইলর রোগীকেজীবন ফিরিয়ে দিতে পারে। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি কিডনিদাতা হিসেবে সমপূর্ণ অনুপযোগী। কারণ এ ধরনের রোগ ভবিষ্যতে কিডনি আক্রান্ত করতে পারে। দুটি কিডনি শতভাগ সুস্থ থাকলে যেকোনো প্রাপ্তবয়স্ক মহিলা বা পুরুষ স্বেচ্ছায় নির্ভয়ে নিঃসন্দেহে একটি কিডনিদান করে একজন কিডনি অকেজো রোগীকে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন। এতে কিডনিদাতা সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেন। একটি কিডনিদানের ফলে কিডনিদাতার বাকি জীবনে সাধারণতকোনো সমস্যা হয় না। কিডনি অপারেশনে গড়ে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় প্রয়োজন হয়। অপারেশনের পর কিডনিদাতাকে সাত দিন এবং কিডনিগ্রহীতাকে ১৪ দিনহাসপাতালে অবস্থান করতে হয়। কিডনিদাতা এক মাস এবং কিডনিগ্রহীতা দুই-তিন মাস পর তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে ফিরে যেতে পারেন। কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল থেকে অপারেশন করে কিডনিগ্রহীতারা বাংলাদেশ, লন্ডন, অসেট্রলিয়া, দুবাই, সৌদি আরব ও কুয়েতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সুনামের সাথে নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে কাজ করছেন। দুর্ঘটনায় আহত বা সেট্রাকের কারণে আইসিইউতে অবস্থানরত ব্রেইন ডেথ রোগীদের কিডনি নিয়েযাতে কিডনি ফেইলর রোগীদের কিডনি সংযোজন করা যায়-এই ব্যাপারে কিডনি ফাউন্ডেশন সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শিগগিরই বাংলাদেশে ব্রেইন ডেথ রোগীর কিডনি দিয়ে কিডনি সংযোজনসম্ভব হবে। আশা করা যায়, আমরা সচেতন হয়ে কিডনি অকেজো হওয়া রোগীকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করব। লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক ট্রানসপ্লান্ট সার্জন, কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল বাড়ি নং-৬, রোড নং-৮, ধানমন্ডি, ঢাকা। মোবাইলঃ ০১৮১৯২২৬৯৯২। ♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥ প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন www.facebook.com/sayed.rubel3 ভাল লাগলে ফেসবুকে শেয়ার করুন । লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ । ভাল থাকুন সব সময় ।

কোন মন্তব্য নেই :