তুমি নারী না মানবী?
রহিমা আক্তার
part2
লোকটা আমায় এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। টাকার বিনিময়ে ডাক্তার সব কাজ করে। ওই মুহূর্তে আমার মায়ের ছবি ভেসে আসে চোখে। আর বলি মাতুমি কেন এভাবে আমায় মেরেফেলনি। তখনই চিৎকার দিয়ে ডাক্তারকে বলি ‘ডাক্তার সাহেব আমার মা হওয়ার ক্ষমতা বন্ধ করে দিন, নষ্ট করে দিন। আমি এক পতিতার মা হতে চাই না।’ এই ঘটনার কিছুদিনের মাথায় ওই বাসায় আমাকে নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। আমাকেতাড়িয়ে দেয়ার কথা বলছে। ভাবতে থাকি এই পুরুষজাতি আমার মাঝে যে চাহিদার সৃষ্টি করেছে সেটা তো এখনআমায় কুরে কুরে খাচ্ছে। আমি কোথায় যাব। ঘর থেকে বের হয়ে পড়ি অজানার উদ্দেশে। অলিতে গলিতে ঘুরতে ঘুরতে বিধি যেন আমার পেছন ছাড়তে চায় না।
এক মহিলার সাথে পরিচয় হয়,তিনি তার বাড়িতে নিয়ে যাইআমাকে। সেখানে গিয়ে দেখি সেই বাড়িতে তেমন কোনো লোকনেই। আছে কয়েকজন মহিলা। বাড়ির পরিবেশটাও একটু আলাদা। একদিন পার হতেই বুঝতে পারি এটা একটা পতিতালয়। সকাল-বিকাল সন্ধ্যায় বাইর থেকে নানা বয়সী পুরুষ মানুষ এখানে আসে। যাকে যার পছন্দ হয় তাকে নিয়েই চলে যায় আনন্দসাগরে। আস্তে আস্তে আমিও ওদের একজন হয়ে যাই। শরীরের যৌবনের বিনিময়ে ভালো খাবার ভালো কাপড় সুগন্ধি সাবান শ্যাম্পু ছুটতে থাকে আমার দিকে। গায়ের সুগন্ধি আর যৌবনের সুধা পান করতে ছুটে আসে অনেক তরতাজা যুবক। এখানে কিছুদিন থাকার পর এখানকার লিডার আমাকে সরকার অনুমোদিত এক জায়গায় পাঠায়। এখানে আমি ৩-৪ বছর থাকি। ২ বছরের মাথায় এক লোকের নজরে পড়ি আমি। উনি এখানে প্রায়ই আসত। এসে আমায় ডাকত। বুঝতে পারি অন্যদের চেয়ে সে আমার কাছে আসতে বেশি পছন্দ করে। ওই লোকটার সাথে আমি দেড় বছর এখানে এভাবেই থাকি। এই লোকের জন্য অন্য কেউ আমার কাছে আসতে পারত না। যখন আমার বয়স ২৫ বছর সেই সময়ে এই লোক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সবদিক চিন্তা করে তাকে বলি আমি কখনো মা হতে পারব না। তারপরও সে আমাকে বিয়ে করেনিয়ে আসে। সন্তান না হওয়ার কথা শুনে বলল আমার সন্তানের প্রয়োজন নেই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫বছর আমি এই ঘরে আমার স্বামীর ঘরে আছি।
তানিয়া আরো বলতে লাগল জানেন অনেকে অনেক কথা বলেছে আমাকে। আমি কোনো কথার উত্তর দিইনি। আমি জানি বোবার কোনো শত্রু হয়না। এখন আমি বোবার মতো থাকি। আমার খবর জানাজানির পর এক মহিলা নেত্রী এসেছে আমার সাথে কথা বলতে। নেত্রী বলেন আচ্ছা কেন আপনার স্বামী আপনাকে বিয়ে করল, অন্য জায়গায় করলে ভালো হতো না?উত্তরে আমি বলেছি আমার মাঝে অনেক রূপ বা কৌশল আছে সেই রূপে মাতাল হয়ে আমার স্বামী। স্বামী সন্তান চায়নি, চেয়েছে নারী। আমিই তো তার জন্য ঠিক তাই না। এখন আমি বেঁচে আছি। এখন বুঝি বিধিকেন আমায় বাঁচিয়ে রাখলেন। আমাকে নিশ্চয়ই কারো প্রয়োজন ছিল। আর সেইকারণেই অনেক ঘাট পেরিয়ে এখনো বেঁচে আছি, ভালো আছি।
শেষ হয়ে গেল তানিয়ার কথা। সব কথা বলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে খোলা আকাশের দিকে। একবার নাম ধরে ডাকতে সাড়া দেয় না। ২য় ও ৩য়বার ডাক দেয়ার পর সাড়া দিয়ে বলে, আচ্ছা বলবেন কিকেন আমি এখানে এলাম? কেন আমি এমন হলাম? কেন? কেন?
আমি নারী বলে নাকি এই সমাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষ আছে বলে। আমি এজজন দেহকর্মী হয়েছি। সমাজে আমার একটাই পরিচয় আমি পতিতা। নারী বলে আমার মাতৃত্বটাকে নষ্ট করতে হয়েছে। কই কোনো পুরুষ তো দেখি না অন্যায়ভাবে সন্তানের জন্ম দিয়ে নিজের পিতৃত্বটাকে নষ্ট করেছে। সৃষ্টির কি অপরূপ খেলা, আমরা মা হব তার প্রমাণ নিয়ে ঘুরতে হবে দশমাস আর কোনো বাবার কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। সমাজে আমার যেমন প্রয়োজন ছিল একজন পুরুষের, তেমনি পুরুষের প্রয়োজন ছিল আমাকে। আমিই পরিচয় পেলাম পতিতার। কিন্তু তারা তো ভদ্রবেশের লোক। ওদের তো কোনো নাম হয় না।
তানিয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে চেয়েও খুঁজে পাইনি। বিদায় বেলায় বলেছি, আমরা গেলাম। যদি কখনো তোমার সাথে আবার আমাদের দেখা হয়সেদিনই আমরা তোমাকে স্যালুট করব। সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে বাস করছি আমরা। তবে কার মাথা কোথায় কতটুকু বিক্রি করে দাঁড়িয়ে আছি জানি না। একটা সন্তানের দায়ভার তার বাবা-মায়ের, একজন নারীর দায়ভার কে বহন করবে? সমাজ যদি বদলে যেতেপারে তাহলে নারীই পারবে তার দায়ভার বহন করতে। তবেআমরা আর ভাসব না জানি, আমরা আর নিজেদের ভাসিয়ে দিতে চাই না। চাই পরিচয়, সত্যিকারের পরিচয়। শুধু তানিয়া না আমাদের সমাজের অনেক তানিয়াই আছে যারা সামান্য সামাজিক বা পারিবারিক সমস্যার মোকাবিলা করতে না পেরে হারিয়ে যায় অজানা পরিচয়ে। আমরা তো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ হয়ে কেন মানুষের জন্য এমনপরিবেশ করব যে সে সঠিক স্থান থেকে সরে যেতে হবে।
একটা নারী না পুরুষ সেভাবে না নিজেকে ভাবতে হবে মানুষ হিসেবে। দিতে হবে মনুষত্বের প্রমাণ। একটা ঘর সংসার সব জায়গায় প্রয়োজন নারী-পুরুষের তবে তাকে তার প্রাপ্য সমমান কি আমরা দিই। সমাজ তুমি নারীকে নারীরূপে না মায়ের মাটির রূপে দেখ, দেখতে শেখ, নারী যেমন পাবে তার সমমান, আর সমাজ তুমি পাবে তোমার আত্মমর্যাদা।
♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3
বাস্তব ঘটনা পাবেন , পাবেন জানারমত অনেক কিছু । পড়ুন , জানুন ।পড়তে থাকুন
http://sayedrubel.blogspot.com
update today
এক মহিলার সাথে পরিচয় হয়,তিনি তার বাড়িতে নিয়ে যাইআমাকে। সেখানে গিয়ে দেখি সেই বাড়িতে তেমন কোনো লোকনেই। আছে কয়েকজন মহিলা। বাড়ির পরিবেশটাও একটু আলাদা। একদিন পার হতেই বুঝতে পারি এটা একটা পতিতালয়। সকাল-বিকাল সন্ধ্যায় বাইর থেকে নানা বয়সী পুরুষ মানুষ এখানে আসে। যাকে যার পছন্দ হয় তাকে নিয়েই চলে যায় আনন্দসাগরে। আস্তে আস্তে আমিও ওদের একজন হয়ে যাই। শরীরের যৌবনের বিনিময়ে ভালো খাবার ভালো কাপড় সুগন্ধি সাবান শ্যাম্পু ছুটতে থাকে আমার দিকে। গায়ের সুগন্ধি আর যৌবনের সুধা পান করতে ছুটে আসে অনেক তরতাজা যুবক। এখানে কিছুদিন থাকার পর এখানকার লিডার আমাকে সরকার অনুমোদিত এক জায়গায় পাঠায়। এখানে আমি ৩-৪ বছর থাকি। ২ বছরের মাথায় এক লোকের নজরে পড়ি আমি। উনি এখানে প্রায়ই আসত। এসে আমায় ডাকত। বুঝতে পারি অন্যদের চেয়ে সে আমার কাছে আসতে বেশি পছন্দ করে। ওই লোকটার সাথে আমি দেড় বছর এখানে এভাবেই থাকি। এই লোকের জন্য অন্য কেউ আমার কাছে আসতে পারত না। যখন আমার বয়স ২৫ বছর সেই সময়ে এই লোক আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। সবদিক চিন্তা করে তাকে বলি আমি কখনো মা হতে পারব না। তারপরও সে আমাকে বিয়ে করেনিয়ে আসে। সন্তান না হওয়ার কথা শুনে বলল আমার সন্তানের প্রয়োজন নেই। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫বছর আমি এই ঘরে আমার স্বামীর ঘরে আছি।
তানিয়া আরো বলতে লাগল জানেন অনেকে অনেক কথা বলেছে আমাকে। আমি কোনো কথার উত্তর দিইনি। আমি জানি বোবার কোনো শত্রু হয়না। এখন আমি বোবার মতো থাকি। আমার খবর জানাজানির পর এক মহিলা নেত্রী এসেছে আমার সাথে কথা বলতে। নেত্রী বলেন আচ্ছা কেন আপনার স্বামী আপনাকে বিয়ে করল, অন্য জায়গায় করলে ভালো হতো না?উত্তরে আমি বলেছি আমার মাঝে অনেক রূপ বা কৌশল আছে সেই রূপে মাতাল হয়ে আমার স্বামী। স্বামী সন্তান চায়নি, চেয়েছে নারী। আমিই তো তার জন্য ঠিক তাই না। এখন আমি বেঁচে আছি। এখন বুঝি বিধিকেন আমায় বাঁচিয়ে রাখলেন। আমাকে নিশ্চয়ই কারো প্রয়োজন ছিল। আর সেইকারণেই অনেক ঘাট পেরিয়ে এখনো বেঁচে আছি, ভালো আছি।
শেষ হয়ে গেল তানিয়ার কথা। সব কথা বলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে খোলা আকাশের দিকে। একবার নাম ধরে ডাকতে সাড়া দেয় না। ২য় ও ৩য়বার ডাক দেয়ার পর সাড়া দিয়ে বলে, আচ্ছা বলবেন কিকেন আমি এখানে এলাম? কেন আমি এমন হলাম? কেন? কেন?
আমি নারী বলে নাকি এই সমাজে নারীর পাশাপাশি পুরুষ আছে বলে। আমি এজজন দেহকর্মী হয়েছি। সমাজে আমার একটাই পরিচয় আমি পতিতা। নারী বলে আমার মাতৃত্বটাকে নষ্ট করতে হয়েছে। কই কোনো পুরুষ তো দেখি না অন্যায়ভাবে সন্তানের জন্ম দিয়ে নিজের পিতৃত্বটাকে নষ্ট করেছে। সৃষ্টির কি অপরূপ খেলা, আমরা মা হব তার প্রমাণ নিয়ে ঘুরতে হবে দশমাস আর কোনো বাবার কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় না। সমাজে আমার যেমন প্রয়োজন ছিল একজন পুরুষের, তেমনি পুরুষের প্রয়োজন ছিল আমাকে। আমিই পরিচয় পেলাম পতিতার। কিন্তু তারা তো ভদ্রবেশের লোক। ওদের তো কোনো নাম হয় না।
তানিয়ার প্রশ্নের জবাব দিতে চেয়েও খুঁজে পাইনি। বিদায় বেলায় বলেছি, আমরা গেলাম। যদি কখনো তোমার সাথে আবার আমাদের দেখা হয়সেদিনই আমরা তোমাকে স্যালুট করব। সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে বাস করছি আমরা। তবে কার মাথা কোথায় কতটুকু বিক্রি করে দাঁড়িয়ে আছি জানি না। একটা সন্তানের দায়ভার তার বাবা-মায়ের, একজন নারীর দায়ভার কে বহন করবে? সমাজ যদি বদলে যেতেপারে তাহলে নারীই পারবে তার দায়ভার বহন করতে। তবেআমরা আর ভাসব না জানি, আমরা আর নিজেদের ভাসিয়ে দিতে চাই না। চাই পরিচয়, সত্যিকারের পরিচয়। শুধু তানিয়া না আমাদের সমাজের অনেক তানিয়াই আছে যারা সামান্য সামাজিক বা পারিবারিক সমস্যার মোকাবিলা করতে না পেরে হারিয়ে যায় অজানা পরিচয়ে। আমরা তো মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ হয়ে কেন মানুষের জন্য এমনপরিবেশ করব যে সে সঠিক স্থান থেকে সরে যেতে হবে।
একটা নারী না পুরুষ সেভাবে না নিজেকে ভাবতে হবে মানুষ হিসেবে। দিতে হবে মনুষত্বের প্রমাণ। একটা ঘর সংসার সব জায়গায় প্রয়োজন নারী-পুরুষের তবে তাকে তার প্রাপ্য সমমান কি আমরা দিই। সমাজ তুমি নারীকে নারীরূপে না মায়ের মাটির রূপে দেখ, দেখতে শেখ, নারী যেমন পাবে তার সমমান, আর সমাজ তুমি পাবে তোমার আত্মমর্যাদা।
♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3
বাস্তব ঘটনা পাবেন , পাবেন জানারমত অনেক কিছু । পড়ুন , জানুন ।পড়তে থাকুন
http://sayedrubel.blogspot.com
update today
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন