তুমি নারী না মানবী?
রহিমা আক্তার
part1
মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে তানিয়া। বয়স ৪-৫ বছর। ঘরেমা-বাবা আর তানিয়া। যেখানে নেই কোনো অভাব, নেই কোনো গণ্ডগোল, নেই কোনো ঝগড়াঝাঁটি। সবকিছুইচলছে তার সৃষ্টির নিয়মেই। আমরা বলি ‘বিধির লিখন কখনো খণ্ডানো যায় না।’ আসলে কি তাই। বিধি কি তানিয়ার ভাগ্যে তাই লিখেছিল সে একদিন হবে সমাজের বা স্বাধীন বাংলাদেশের এক দেহকর্মী।৪-৫ বছরের তানিয়া ছিল বাবা-মায়ের স্বপ্ন। ছোট সেই শিশু বয়স, যেন সব সময় ঘুরতে খেলতে আর আনন্দে থাকতে চায়। সে তো জানত নাতার বিধি কী লিখেছিল। যদিজানত তাহলে হয়তো গর্ভধারিণী মাকে বলত মা তুমি সন্তানের জননী হয়ো না। মা তুমি আমার জননী হয়ো না। কিন্তু অবুঝ তানিয়া পারেনি কাউকে কিছু বলতে। তবে মানুষ হয়েনা, একদিন নারী হয়ে তানিয়া বলেছে, ডাক্তার সাহেব আমার মা হওয়ার ক্ষমতা বন্ধ করে দিন। আমিমা হতে চাই না, আরেকটি দেহকর্মীর মা হতে চাই না।নিজের জীবনের কলুষিত দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে একবারও বুক কাঁপেনি বা চোখে লজ্জা আসেনি তানিয়ার। সব শেষে তানিয়া বলেছে জানেন মানুষ বলে আমরা দেহকর্মী। কই কোনো পুরুষকে তো বলা হয় না দেহকর্মী। তখন তানিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলেছি, না তুমি দেহকর্মী না তুমি হলে আমার দেখা এক রক্তকরবী। আজ আমি দাঁড়িয়ে তোমায় স্যালুট করি। তুমি আছ বলে তোমরা আছ বলে এই সমাজে আমরা ভদ্র নারীরূপে বেঁচে আছি। তোমরা আছ বলে সমাজেরকিছু হাতে গোনা নরপশুর হাত থেকে আমরা বেঁচে আছি।জানি আমাদের এই সমাজ তোমাদের পুরস্কৃত করবে না, তোমাদের আমরা স্যালুটকরি। তোমরা তো একেক বার একেকরূপে আমজনতার সামনে, তবে এইরূপ অন্যকে ধোঁকা দেয়ার জন্য নয়। অন্যের কামনা আর লালসা মেটানোর জন্য। এই বলতে বলতে তানিয়াকে বলি, তুমি কি আজআমায় বলবে তোমার সব কথা। যদি সবটুকু বলতে পার তাহলে বলবে, না হয় না। নিজের ভেতরের রাগ, জেদ, হিংসা, কলুষতাকে ধরে রেখেচুপ থাকতে পারেনি তানিয়া। অনর্গল বলতে শুরু করল। শুরুতে বলে আপাসবটুকু শুনতে পারবেন তো। নাকি ওদের মতো আপনি আমাকেমাঝনদীতে ভাসিয়ে দিয়ে চলে যাবেন। তখন তানিয়াকে বলি আজই প্রমাণ হবে আমরা কে আর ওরা কারা?
তানিয়ার কথা ঃ ৫ বছর বয়সেআমার মা মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর প্রায় ২ মাস পর বাবা বিয়ে করে. তখন কিছুই বুঝতাম না। আনন্দেই ছিলাম ঘরে নতুন মা এসেছে। বাবা আমায় ভালোবাসে, আমার জন্য নতুনমাকে ঘরে এনেছে। কিন্তু তখন ভাবনায় একবারও আসেনি আমার বাবা একজন পুরুষ, উনার একটা নারীর প্রয়োজন। বছর ঘুরতে ঘুরতে ২টা বাচ্চা আসে নতুন মায়ের কোলে।। বছর ঘুরতে ঘুরতে ২টা বাচ্চা আসে নতুন মায়ের কোলে। আমাদের পরিবারে খাবার-দাবারের কোনো অভাব ছিল না। তখন বুঝতে পারিনি সংসারে আমার মমতার অভাব হবে। ছোটভাইবোনদের দেখাশোনার জন্য আমার পড়ালেখা হয় না।এভাবে যেতে যেতে এখন আমারবয়স ১০ হলো। বাবা তার বৌ বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমি আছি বেঁচে আছি এরপর আর কিছু জানতে চায় না কখনো আমার জন্মদাতা পিতা। কিছু হলেই নতুন মা আমার গায়ে হাত উঠাত। বাবাকে বলতে গিয়েও বাধা পেয়ে বলার সাহস পাইনি। ২-১ বার বলে কোনো ফায়দা উদ্ধার করতে পারিনি। এবার শুনুন আমার নির্বাসিত সেই দিনটির কথা। সকালবেলায় রান্নাঘরে ঢুকে দেখি বিড়াল পাতিল থেকে দুধ খাচ্ছে। ভাবলাম বিড়াল দুধ খেয়েছে এখানে তো আমারকোনো দোষ নেই। আমি তো আর খাইনি। একটু পরে নতুন মা ছোট ভা বোনদের জন্য দুধ নিতে আসে, আমি বলি মা দুধ নেবেন না, ওটাতে বিড়াল মুখ দিয়েছে। নয় বছরের এক বাচ্চা আমি, ভেতরে ছিল নাকোনো খারাপ। ভাবলাম বেড়ালের মুখের দুধ ওরা খাবে কেন? নতুন মাকে বলারসাথে সাথে হঠাৎ শুরু হলো একটা কালবৈশাখী ঝড়। হাতের কাছে যা পেল তাই দিয়ে আমাকে মারতে লাগল। মার খেতে খেতে নিস্তেজ শরীরটা মাটিতে নুয়ে পড়ল। একটু পর মনে হলো আমার দোষটা কোথায়? হাজার বার নিজেকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পেলাম না। তখনই সিদ্ধান্ত নিই আমি বেঁচে থাকব না। বেঁচে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু জানেন এখন ভাবি আমার বেঁচে থাকার দরকার ছিল। সমাজের কিছু পুরুষের জন্য আমার বেঁচে থাকার দরকার ছিল।’ এই বলতে বলতে তানিয়ার চোখের কোণায় পানি জমে। হাতের রুমাল দিয়ে চোখ মুছে দিয়েবলি, না, তানিয়া তুমি কাঁদবে না। কাঁদলে হয় তুমি না হয় আমি যেকোনো একজন আজ হারিয়ে যাব। আমরাহারব না, হারতে আমরা আসিনি, আমরা এসেছি জিততে।কিছু ছবি তুলে ধরতে, আর আমরা এসেছি সমাজের বুকের কিছু কলঙ্কিত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটাতে। বল তানিয়া তুমি বলতে থাক।
আবার বলতে লাগল তানিয়া-নিস্তেজ শরীরটাকে উঠিয়ে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। ডান বাম কোনো দিকে না সামনের দিকে। অন্যদিকে তাকানোর খুব একটা প্রয়োজনও হয়নি, কেউ ডাকেনি আমায়। কেউ বলেনি কোথায় যাস, সামনে ফিরে আয়, সোনা মা ফিরে আয়,আর মারব না তোকে। হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মাঝে যাই। দূর থেকে দেখছি একটাট্রাক আসছে ওই ট্রাকটাকে লক্ষ করেই হেঁটে যাচ্ছি। তারপর কী হলো বলতে পারব না। চোখ খুলে দেখি আমি সরকারি একটা হাসপাতালে। হাতে পায়ে হালকা ব্যান্ডেজ করা।
চোখ খুলেবললাম কী হলো? লোকটি বলল তুমি আমার ট্রাকের নিচে পড়েছ অল্পের জন্য বেঁচে গেলে। আরেকটু হলে অনেক বিপদ হতে পারত। এবার বলো কোথায় যাবে? তখনি মনে পড়েবাড়ির অত্যাচারের কথা। নতুন মায়ের আর জন্মদাতার অবহেলার কথা। সেই ভেবেই বলি আমার বাড়ি কোথায় জানিনা। তারপর লোকটি ওই ট্রাকে করে আমায় নিয়ে যায়তার বাড়িতে। লোকটির নাম লিয়াকত। বাড়িতে তার বৌ বাচ্চারা আছে। আমাকে ওদের সাথে থাকতে বলে। মাঝেমধ্যে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে নিয়ে যেতেচাইত। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা আমি না বলাতে নিতেপারত না। এদিকে আমি ওদের পরিবারের একজন হয়ে যাই। ওই বাড়িতে আমি অনেক কাজ করতাম। একদিন আমাকে বলে আমার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। এই বলে আমায় নিয়েযায়। পথে লিয়াকত বেটা আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমার সাথে অন্য রকম ব্যবহার করে। এরপর কাউকে বলতে নিষেধ করে। তারপর থেকে মাঝে মাঝে লোকটি আমার সাথে বিভিন্ন কাজ করত। সবগুলো কাজ যে একদম বুঝতে পারিনি তা নয়। এটা বুঝলাম লোকটা আমার থেকে অনেক কিছু চায়। কিন্তু তখন আমার বয়স মাত্র ১০-১১বছর। প্রায়ই ঘরে বলতাম আমার শরীর ব্যথা করে, আমার শরীর খারাপ লাগে তখনলোকটা আমায় ওষুধ এনে দিত।তবে ভয় দেখিয়ে বলত বাসায় যেন কাউকে আমি না বলি।আরো
পড়তে থাকুন
part 2
তানিয়ার কথা ঃ ৫ বছর বয়সেআমার মা মারা যায়। মায়ের মৃত্যুর পর প্রায় ২ মাস পর বাবা বিয়ে করে. তখন কিছুই বুঝতাম না। আনন্দেই ছিলাম ঘরে নতুন মা এসেছে। বাবা আমায় ভালোবাসে, আমার জন্য নতুনমাকে ঘরে এনেছে। কিন্তু তখন ভাবনায় একবারও আসেনি আমার বাবা একজন পুরুষ, উনার একটা নারীর প্রয়োজন। বছর ঘুরতে ঘুরতে ২টা বাচ্চা আসে নতুন মায়ের কোলে।। বছর ঘুরতে ঘুরতে ২টা বাচ্চা আসে নতুন মায়ের কোলে। আমাদের পরিবারে খাবার-দাবারের কোনো অভাব ছিল না। তখন বুঝতে পারিনি সংসারে আমার মমতার অভাব হবে। ছোটভাইবোনদের দেখাশোনার জন্য আমার পড়ালেখা হয় না।এভাবে যেতে যেতে এখন আমারবয়স ১০ হলো। বাবা তার বৌ বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আমি আছি বেঁচে আছি এরপর আর কিছু জানতে চায় না কখনো আমার জন্মদাতা পিতা। কিছু হলেই নতুন মা আমার গায়ে হাত উঠাত। বাবাকে বলতে গিয়েও বাধা পেয়ে বলার সাহস পাইনি। ২-১ বার বলে কোনো ফায়দা উদ্ধার করতে পারিনি। এবার শুনুন আমার নির্বাসিত সেই দিনটির কথা। সকালবেলায় রান্নাঘরে ঢুকে দেখি বিড়াল পাতিল থেকে দুধ খাচ্ছে। ভাবলাম বিড়াল দুধ খেয়েছে এখানে তো আমারকোনো দোষ নেই। আমি তো আর খাইনি। একটু পরে নতুন মা ছোট ভা বোনদের জন্য দুধ নিতে আসে, আমি বলি মা দুধ নেবেন না, ওটাতে বিড়াল মুখ দিয়েছে। নয় বছরের এক বাচ্চা আমি, ভেতরে ছিল নাকোনো খারাপ। ভাবলাম বেড়ালের মুখের দুধ ওরা খাবে কেন? নতুন মাকে বলারসাথে সাথে হঠাৎ শুরু হলো একটা কালবৈশাখী ঝড়। হাতের কাছে যা পেল তাই দিয়ে আমাকে মারতে লাগল। মার খেতে খেতে নিস্তেজ শরীরটা মাটিতে নুয়ে পড়ল। একটু পর মনে হলো আমার দোষটা কোথায়? হাজার বার নিজেকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পেলাম না। তখনই সিদ্ধান্ত নিই আমি বেঁচে থাকব না। বেঁচে থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু জানেন এখন ভাবি আমার বেঁচে থাকার দরকার ছিল। সমাজের কিছু পুরুষের জন্য আমার বেঁচে থাকার দরকার ছিল।’ এই বলতে বলতে তানিয়ার চোখের কোণায় পানি জমে। হাতের রুমাল দিয়ে চোখ মুছে দিয়েবলি, না, তানিয়া তুমি কাঁদবে না। কাঁদলে হয় তুমি না হয় আমি যেকোনো একজন আজ হারিয়ে যাব। আমরাহারব না, হারতে আমরা আসিনি, আমরা এসেছি জিততে।কিছু ছবি তুলে ধরতে, আর আমরা এসেছি সমাজের বুকের কিছু কলঙ্কিত অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটাতে। বল তানিয়া তুমি বলতে থাক।
আবার বলতে লাগল তানিয়া-নিস্তেজ শরীরটাকে উঠিয়ে নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। ডান বাম কোনো দিকে না সামনের দিকে। অন্যদিকে তাকানোর খুব একটা প্রয়োজনও হয়নি, কেউ ডাকেনি আমায়। কেউ বলেনি কোথায় যাস, সামনে ফিরে আয়, সোনা মা ফিরে আয়,আর মারব না তোকে। হাঁটতে হাঁটতে বড় রাস্তার মাঝে যাই। দূর থেকে দেখছি একটাট্রাক আসছে ওই ট্রাকটাকে লক্ষ করেই হেঁটে যাচ্ছি। তারপর কী হলো বলতে পারব না। চোখ খুলে দেখি আমি সরকারি একটা হাসপাতালে। হাতে পায়ে হালকা ব্যান্ডেজ করা।
চোখ খুলেবললাম কী হলো? লোকটি বলল তুমি আমার ট্রাকের নিচে পড়েছ অল্পের জন্য বেঁচে গেলে। আরেকটু হলে অনেক বিপদ হতে পারত। এবার বলো কোথায় যাবে? তখনি মনে পড়েবাড়ির অত্যাচারের কথা। নতুন মায়ের আর জন্মদাতার অবহেলার কথা। সেই ভেবেই বলি আমার বাড়ি কোথায় জানিনা। তারপর লোকটি ওই ট্রাকে করে আমায় নিয়ে যায়তার বাড়িতে। লোকটির নাম লিয়াকত। বাড়িতে তার বৌ বাচ্চারা আছে। আমাকে ওদের সাথে থাকতে বলে। মাঝেমধ্যে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলে নিয়ে যেতেচাইত। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা আমি না বলাতে নিতেপারত না। এদিকে আমি ওদের পরিবারের একজন হয়ে যাই। ওই বাড়িতে আমি অনেক কাজ করতাম। একদিন আমাকে বলে আমার ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। এই বলে আমায় নিয়েযায়। পথে লিয়াকত বেটা আমার গায়ে হাত দেয় এবং আমার সাথে অন্য রকম ব্যবহার করে। এরপর কাউকে বলতে নিষেধ করে। তারপর থেকে মাঝে মাঝে লোকটি আমার সাথে বিভিন্ন কাজ করত। সবগুলো কাজ যে একদম বুঝতে পারিনি তা নয়। এটা বুঝলাম লোকটা আমার থেকে অনেক কিছু চায়। কিন্তু তখন আমার বয়স মাত্র ১০-১১বছর। প্রায়ই ঘরে বলতাম আমার শরীর ব্যথা করে, আমার শরীর খারাপ লাগে তখনলোকটা আমায় ওষুধ এনে দিত।তবে ভয় দেখিয়ে বলত বাসায় যেন কাউকে আমি না বলি।আরো
পড়তে থাকুন
part 2
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন