অনিদ্রা? ২৫টি সমাধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ্‌ part 4

কোন মন্তব্য নেই
১৭. হাল্কা ম্যাসাজ করুন- দুজন মিলে করা যায় এই পদ্ধতি। বিবাহিত ব্যক্তির জন্য সুবিধাজনক। স্ত্রী বা স্বামী একে অপরকে হাল্কাভাবে শরীর ম্যাসাজকরে দিতে পারেন। ঘুমানোর পূর্বে যদি সম্ভব হয় সমস্ত বডি ম্যাসাজ করলে তা আরো ভালো। অন্য ক্ষেত্রে তোয়ালে দ্বারা শক্তভাবে পিঠটা মুছে নিন,মুখটা বা কপালটা একটু ঘসেনিন, হাল্কা লাগবে। ম্যাসাজ করার সময় মনে রাখবেন ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে হবে, যেন ঠেলে টেনশনগুলোকে মাংসপেশি থেকে বের করে দিচ্ছেন। এগুলো আপনার ঘুমকে আরো সতেজ করবে।
১৮. কুসুম গরম পানিতে গোসল করুন- শরীরকে রিলাক্স করার জন্য অত্যন্ত ভালো পদ্ধতি। সারা দিনের কাজের শেষে অল্প গরম পানিতে স্নান করে ফেলুন। শরীর রিলাক্স হবে, অতিরিক্ত করবেন না। তাহলে রিলাক্সের পরিবর্তে শরীর কাহিল হয়ে যাবে। অধিকক্ষণ গরম পানিতে স্নান করলে শরীরের শক্তি কমে যাবে। মনে রাখবেন বাথ সল্ট বা ইপসোম সল্ট এক চামচ করে পানির সাথে মিশিয়ে গোসল করলে ভালো ফল পাবেন। এগুলো শরীরকে রিলাক্স করতে সাহায্য করবে ও গা থেকে জীবাণুযুক্ত ঘাম ও দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করবে।
১৯. শক্ত বিছানায় ঘুমানো- নরম বিছানায় ঘুমানো শরীর সপাইন বা কশেরুকার জন্য খারাপ। হাড় হাড্ডিতে ব্যথা হয়ে যায়। অস্বস্তিকর অনুভূতিহয় ঘাড়ে সুতরাং শরীর ভালোথাকে শক্ত ম্যাট্রেসসমৃদ্ধ বিছানাতে। এই বিছানা শরীর রিলাক্স করতে সাহায্য করে।
২০. ঘুম না হলে- শুতে গেলেন সব কিছু ঠিকঠাক করেঅথচ ঘুম এলো না, কী সমস্যা! কতক্ষণ শুয়ে থাকবেন? ৩০ মিনিট। ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করুন নিদ্রার জন্য, না এলে উঠেপড়ুন। কিছু একটা করার চেষ্টা করুন, যা কিনা উত্তেজক নয়। যতক্ষণ ক্লান্তিবোধ না আসবে করতে থাকুন। ক্লান্তিবোধএলে উঠে এমনিতেই শুয়ে পড়ুন, ঘুম আসবে।
২১. পেটে হাল্কা ম্যাসাজ- এই ম্যাসাজ আমাদের পরিপাকতন্ত্রকে শিথিল করে, যা ঘুমের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি শরীরের ওজন কমানো এবং পরিপাকতন্ত্রের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে দেয়। চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ুন। আপনার ডান হাত নাভীর ওপরে রাখুন। ঘড়ির কাঁটা যেভাবে ঘোরে সেভাবে হাল্কা চাপ দিয়ে ডান হাতটি পেটের ওপর ঘুরান। ধীরে ধীরে বৃত্তটাকে বাড়ান। এভাবে হাত ঘুরাতে ঘুরাতে যখন হাতটি কোমর ও বুকের কাছে চলে আসবে তখন পুনরায় উল্টো দিকে অর্থাৎ ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে ঘুরিয়ে নাভীর কাছে নিয়ে আসুন। বাম হাত দিয়ে এ পদ্ধতি পুনরাবৃত্তি করুন বেশ কয়েকবার। এভাবে ডান হাত বাম হাত দিয়ে কাজটি করুন।
২২. পায়ের বুড়ো আঙুলের কাজ- চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। আপনার বুড়ো আঙুল দুটো ওপর নিচে করতে থাকুন। এভাবে ১২ বার করুন। এ পদ্ধতি শরীরের ভেতরে ও বাইরে শিথিল করতেসাহায্য করবে। আকুপাংচারবিশেষজ্ঞদের মতে, বুড়ো আঙুল শরীরে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সংবেদনশীলতা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই বুড়ো আঙুলের নড়াচড়া শরীর ও মনকে সংবেদনশীল প্রবাহের মাধ্যমে শিথিল করে।
২৩. গভীর শ্বাস- প্রশ্বাস নিন-আমরা সচরাচর আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি খুব একটা সচেতন নই। বেশির ভাগলোকই হাল্কাভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ এবং ত্যাগ করে থাকে। যাতে ফুসফুসের ওপরের অংশটুকুইশুধু কাজ করে কিন্তু গভীরশ্বাস নেয়া পুরো ফুসফুসকে সক্রিয় করে এবং প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেনশরীরে প্রবেশ করতে পারে। যা শরীরের প্রতিটি কোষকে আরো কার্যকর করে তোলে। ঘুম পাড়ার পূর্বে ৪-৫ মিনিট গভীরভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিন তবে সেটা এতগভীর অথবা খুব শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করে করবেন না। এতে ক্ষতি হবে, বরং একদম রিলাক্স শরীরে চিত হয়ে শুয়ে ধীরে ধীরে এটি অভ্যাস করুন। কিছুদিন অভ্যাসের পর রিলাক্স অবস্থায় এভাবেই শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে নিতে চোখ বন্ধ করে থাকুন। কোন সময় ঘুমাতে গিয়েছেন বুঝতে পারবেন না।
২৪. জীবনের আনন্দদায়ককোনো সময়ের কথা কল্পনা করুন- শোওয়ার পরচোখ বন্ধ রেখে চলে যান কোনো অতীতে আনন্দঘন মুহূর্তে। ঘটনাগুলো ধীরেধীরে মনে করার চেষ্টা করুন। সেই সঙ্গে নিজের সম্পূর্ণ সত্তাকে সেই পরিবেশে নিয়ে যান। যাতে আপনি অনুভব করতে পারেন প্রকৃতভাবেই সেসব সুখস্মৃতির দৃশ্য। কথাবার্তা, সঙ্গী-সাথী, হাসি-ঠাট্টা, তামাশা ইত্যাদি। নিজেকে রিলাক্সকরুন এবং ওই ঘটনাগুলোকে নতুনভাবে এনজয় করুন। এতে মনটাও আনন্দের মধ্যে থাকবে ধীরে ধীরে ঘুমও চলেআসবে।
২৫. কখন ডাক্তার দেখাবেন- অনিদ্রা রোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানসিক কারণ যেমন-টেনশন, মানসিক চাপ, বিষণ্নতা ইত্যাদি নানাবিধ কারণে হয়ে থাকে। আবার শারীরিক কষ্টের বা রোগের উপসর্গ হিসেবে অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। আপনি যত বেশি দুশ্চিন্তাযুক্ত হবেন অনিদ্রা রোগের মাত্রা তত বেশি হবে। যদি কোনো সময় আপনার ডাক্তার বলেন আপনার কোনো শারীরিক বা মানসিক সমস্যা নেই অথচ আপনার ঘুম হচ্ছে না সে ক্ষেত্রে আমার বর্ণিত কিছু পদ্ধতির কথা তিনি অবশ্যই আপনাকে বলবেন। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পূর্বে একটু চেষ্টা করে দেখুন না, এগুলো আপনার নিদ্রায় কতটুকু সাহায্যকারী হয়। কোনো ক্ষতি তো হবে না ওষুধ না হয় একেবারে শেষে খেলেন। চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই।

♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥
প্রকাশক : সৈয়দ রুবেল উদ্দিন
www.facebook.com/sayed.rubel3

কোন মন্তব্য নেই :