ধরেছে পুলিশ, পিটিয়েছে ছাত্রলীগ।
নূরুজ্জামান: ধরেছে পুলিশ, পিটিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল অখণ্ড ঢাকার দাবিতে হরতাল চলাকালে পুলিশের হাতে আটককৃত পথচারী ও পিকেটাররা জানিয়েছেন এ তথ্য। তারা বলেছেন, পুলিশের পাশাপাশি সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছিল বেপরোয়া। পুলিশ গণহারে পিকেটার-পথচারীদের চুল ও শার্টের কলার ধরে পিকআপে তোলার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগসহ অচেনা লোকজন পুলিশের বেষ্টনীতেই বেধড়ক পিটিয়েছে তাদের। আগামসি লেনের শিক্ষক আকমলঅভিযোগ করেন, আমি পিকেটার নই। আগামসি এলাকায় টিউশনিকরে সংসার চালাই। গতকাল সকালে আদালতে ভগ্নিপতির সঙ্গে দেখা করতে এসেই পুলিশের হাতে আটক হয়েছি। তারা থানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পিকআপে তোলার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে লোকজন আমাকে ঘিরে ধরে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে আটক হওয়া ঢাকা মহানগর শ্রমিক দলের সেক্রেটারি নূরুল ইসলাম খান নাঈম শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, আমার ডান বাহুতে পুলিশের লাঠিপেটার দাগ। আর বাম বাহু, পা ও বুকে রড দিয়ে পিটিয়েছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। পিকআপে তুলে শুইয়ে দিয়ে তারা পেটাতে পেটাতে থানায় নিয়ে এসেছে।একই ভাবে পল্টন, রমনা, লালবাগ ও চকবাজারসহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পরে বিভিন্ন মামলার আসামি হিসেবে শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হবে। অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশকে মারধরের অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মোট ৩৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে নিরপরাধ কাউকে গ্রেপ্তার কিংবা আটক করা হয়নি। মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিটি সার্ভিস সেন্টারের এডিসি মো. মাসুদুর রহমান বলেন, পুলিশের হেফাজতে কোন মারধরের ঘটনা ঘটেনি। উল্টো গ্রেপ্তারকৃতরাই পুলিশ ও সাধারণ লোকজনের ওপর হামলা করেছে। এদিকে ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপিনেতা জাকির হোসেন বলেন, আমাকে ধরেছে পুলিশ আর পিটিয়েছে সূত্রাপুর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েরছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।তারা পেটানোর সময় হুমকি দিয়ে বলেছে, আমি নাকি পুরান ঢাকার সব গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগকারীদের মূল হোতা। ওই মামলার আসামি করা হবে আমাকে। তিনি আরও বলেন, আমি বিএনপি’র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও গাড়ি ভাঙচুর কিংবাঅগ্নিসংযোগের সঙ্গে জড়িত নই। ব্র্যাক ব্যাংকের একটি মামলার খোঁজ নিতে আমি আদালতপাড়ায় এসেছিলাম।পরে টিয়ারশেলের অন্ধকারে কিছু দেখতে না পেয়ে ছাত্রলীগের জমায়েতের কাছাকাছি যাওয়ার পরপরই ওরা আমাকে পিটিয়ে পুলিশেরহাতে তুলে দেয়। পরে পিকআপে তুলে দিয়ে পুলিশেরসামনেই দ্বিতীয় দফায় মেরেছে। পুলিশ ও ছাত্রলীগের পিটুনির শিকার পাপ্পুর অভিযোগ, কোর্টে একটি মামলার তারিখনিতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়েছি। পরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হৈ হৈ করে আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বৃষ্টির মতো কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে মারতে প্রিজনভ্যানে টেনে তোলে। একই অভিযোগ করেছেন কালীগঞ্জের ব্যবসায়ী প্রদীপ কুমার সাহা। তিনি বলেন, কালিগঞ্জের বাড়ি থেকে পুরান ঢাকার তাঁতী বাজারে স্ত্রীর বড় ভাইয়েরসঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার পথে আদালতের সামনের রাস্তা থেকে পুলিশ আমাকে পাকড়াও করে গাড়িতে তোলার সময় মিছিলকারী ছাত্রলীগের ১০-১২ যুবক পুলিশের হেফাজত থেকে ছিনিয়ে নেয়। রাস্তায় ফেলেলাঠি ও রড দিয়ে পেটায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হরতালের সমর্থনে ধোলাইখাল থেকে সাবেক মেয়রসাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বে একটি মিছিল আদালতে প্রবেশ করে। ওই মিছিলে আইনজীবীরা যোগ দেন। মিছিল নিয়ে আদালত থেকে রাস্তায় বের হওয়ার সময় পুলিশ তাতে বাধা দেয়। শুরু করে লাঠিচার্জ। এরপরই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে উত্তেজিত হয়ে হরতালকারীরা পুলিশের দু’টি মোটরসাইকেল ও একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় উভয় পক্ষের প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের লালবাগ জোনের সহকারী কমিশনার রাজিব আল মাসুদ ও লালবাগ থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. সেলিম হোসেনসহ ১০-১২ জন পুলিশ সদস্য পিকেটারদের ইটের আঘাতে রক্তাক্ত হন। এরপরেই পুলিশের সঙ্গে সূত্রাপুর, কোতোয়ালি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সরকার দলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে একযোগে হরতালকারীদের ওপর হামলা চালায়। যাকে সামনে পেয়েছে তাকেই আটক করে তারা নির্বিচারে পিটিয়েছে। এ প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসি মো. সালাউদ্দিন বলেন, পুলিশেরহেফাজতে সরকারদলীয় কোন নেতাকর্মী আটককৃত ব্যক্তিদের ওপর হামলা করেনি। তবে আটককৃতদের মধ্যে নিরপরাধ পথচারী পাওয়া গেলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন