এইডস সম্পর্কে জানুন এবং প্রতিরোধ করুন ডা. গৌতম কুমার দাস part 3

কোন মন্তব্য নেই
*. স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া,মানসিক চাপ এবং আরো বিভিন্ন ধরনের মস্তিষেকর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।
*. যক্ষ্মার আক্রমণ হতে পারে এমনকি ক্যান্সারওদেখা দিতে পারে।
এখানে মনে রাখতে হবে যে, উপরোক্ত লক্ষণগুলো থাকলেই যে সে ব্যক্তি এইচআইভিতে আক্রান্ত সেটানিশ্চিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। এই ধরনের লক্ষণগুলো আরো অনেক রোগের বেলায়ও দেখা যায়। শুধু রক্তে এইচআইভি জীবাণু পরীক্ষারমাধ্যমেই এই রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব। এইচআইভি জীবাণু মানুষের শরীরে বাসা বাঁধার প্রায় চার মাস পর রক্ত পরীক্ষায় তা ধরা পড়ে। তাই পশ্চিমা বিশ্বে ছয় মাস অন্তর এইচআইভির জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়।
দুটি প্রদান পরীক্ষা হলো
(১) এলিসা টেস্ট (এনজাইম লিংকড ইমিউনোসরবেন্ট অ্যাসে) : এ পরীক্ষায় ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা সময় লাগে।
(২) ওয়েস্টার্ন ব্লট টেস্ট : এই পরীক্ষা পজিটিভ এলিসা টেস্টকে সুনিশ্চিত করে।
এসব পরীক্ষা সঠিকভাবে করা হলে এইচআইভি অ্যান্টিবডি নির্ণয় নির্ভুল হয়ে থাকে। তবে এলিসা টেস্টে অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা পজিটিভ দেখা দিতে পারে অর্থাৎ কারো রক্তে অ্যান্টিবডি না থাকার পরেও পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসতে পারে।
তাই ফলাফলের ব্যাপারে সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য ওয়েস্টার্ন ব্লট পরীক্ষাকরা হয়ে থাকে। কারণ এই পদ্ধতিতে নির্ভুলভাবে ফলাফল পাওয়া সম্ভব।
কত দিন পর রক্তে এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া যায় এবং কত দিন পর লক্ষণ দেখা দেয়?
এইচআইভি ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে সঙ্গে সঙ্গে কোনো লক্ষণ দেখা দেয় না। দীর্ঘ সময় এই ভাইরাস কোনোক্ষতি না করে চুপচাপ বসে থাকতে পারে। ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করার দুই থেকে বারো সপ্তাহের মধ্যে সাধারণ ভাইরাসজনিতজ্বরের মতো কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। কয়েক দিনের মধ্যে সেটা ভালোও হয়ে যায়। এই জ্বরটা হয় মূলত ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরেযে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তার কারণে। অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পরই আক্রান্ত মানুষটির রক্ত পরীক্ষা করলে ভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। এর আগ পর্যন্ত শরীরে ভাইরাসটিরউপস্থিতি সত্ত্বেও রক্ত পরীক্ষায় কিছুই পাওয়া যায় না এবং অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার পর থেকেই আক্রান্ত মানুষটি অন্যেরদেহে এই ভাইরাসটি পাচার করে দিতে সক্ষম হয়। এই পর্যায়ে আক্রান্ত মানুষটিকে বলা হয় এইচআইভি বাহক বা ক্যারিয়ার। আক্রান্ত মানুষটির দেহে রোগের কোনো লক্ষণই থাকবে না, কিন্তু সে অন্যের শরীরে জীবাণুটি ছড়িয়ে বেড়াবে।
বাহক পর্যায়ে আক্রান্ত মানুষটি দীর্ঘদিন এমনকি দশ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে।
শরীরের ভেতর ঘাপটি মেরে বসে থাকা এইচআইভি ভাইরাসটি কখন যে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমকে আক্রমণ করবে তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে এক সময় আক্রমণ করবেই। প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আক্রান্ত হওয়ার পরই ধীরে ধীরে ফুটে উঠবে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ। আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত এগিয়ে যাবে নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে।
একটা কথা মনে রাখতে হবে রক্ত পরীক্ষার ফল নেগেটিভ হলেই সংশ্লিষ্ট মানুষটি যে এইচআইভিতে আক্রান্ত নয় তা কিন্তু নিশ্চিত করে বলা যাবে না।এমনও হতে পারে-রক্ত পরীক্ষাটি করা হয়েছে দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার আগে।
কারা ঝুঁকির মধ্যে ও কীভাবে সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে?
রোগ ছড়ানোর উপায়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় প্রতিটি মানুষই ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে কিছু আচরণ ও রীতি রয়েছে যেগুলো এইচআইভি ছড়ানো ও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এ ধরনের ঝুঁকি বাড়ে যৌনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সংখ্যা একাধিক হলে। যাদের একাধিক যৌন সাথী রয়েছে শুধু তাদের জন্যই নয় বরং যৌনক্রিয়ায় অংশীদার এমন সকলের জন্যই বিশেষ করে উচিত হবে যৌন আচরণে নিরাপদ উপায় ও ব্যবস্থাগুলো অবলম্বন করা। কেননা কারো শুধু চেহারা দেখেই বলা যাবে নাযে সে এইচআইভি আক্রান্ত কি না।
আমাদের দেশে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে
*. ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা গ্রহণকারী
*. যৌনকর্মী (ভাসমান ও পতিতালয়ভিত্তিক)
*. হিজড়া
*. সমকামী
*. দূরপাল্লার যানবাহন চালক, রিকশাচালক, ট্যাক্সিচালক
সহজ কথা, যে কেউ যে কোনো সময় সংক্রমণের সংসপর্শে আসতে পারে। বিশেষ করে-
*. যাদের অনেক যৌনসঙ্গী আছে এবং কনডম ছাড়া যৌনসঙ্গম করে।
*. যারা যৌনরোগ (সিফিলিস, গনোরিয়া, শ্যাংক্রয়েড ইত্যাদি) আক্রান্ত বা যাদের যৌনাঙ্গে ক্ষত আছে।
*. যাদের প্রায়ই রক্ত নিতে হয় (অপরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ করলে)।
*. জীবাণুমুক্ত নয় এমন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলে (সুচ, সিরিঞ্জ)।
*. শিরায় নেশা গ্রহণকারী (একই সুচ দিয়ে একাধিক ব্যক্তি ড্রাগ গ্রহণ করলে)।
*. আক্রান্ত মায়ের গর্ভে জন্মগ্রহণকারী শিশু।
পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এইচআইভি বা এইডসের বিস্তার
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও এইচআইভি বা এইডস বিস্তারের কিছু তথ্য-
*. ভারতের মুম্বাই শহরে যৌনকর্মীদের মধ্যে ৫২ শতাংশ এবং মহিশুরে ২৬ শতাংশের মধ্যে এইচআইভিপাওয়া গেছে। মিয়ানমারের ২৭ শতাংশ যৌনকর্মী এইচআইভি সংক্রমিত এবং মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে এই হার ১০ শতাংশ।
*. চীনে মোট এইচআইভি সংক্রমণের ২০ শতাংশ ঘটে যৌনকর্মীদের সাথে ঝুঁকিপূর্ণ যৌনমিলনের মাধ্যমে।

আরো
পড়তে থাকুন 4

কোন মন্তব্য নেই :