এইডস সম্পর্কে জানুন এবং প্রতিরোধ করুন ডা. গৌতম কুমার দাস part 2

কোন মন্তব্য নেই
১. বীর্য ও যোনিরস দ্বারাঃ বর্তমান বিশ্বে যে পরিমাণ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ আছে তাদের বেশির ভাগই আক্রান্ত হয়েছে বীর্য ও যোনিরস দ্বারা অর্থাৎ অরক্ষিত যৌনমিলনের মাধ্যমে। কনডম ছাড়া যৌনমিলন হলে উভয়ের যৌনাঙ্গ, সঙ্গীর বীর্য বাযৌনরসের সংসপর্শে আসে। ফলে যে কোনো একজনের বীর্যবা যৌনরসে ভাইরাসটি থাকলে সহজেই সেটা অন্যের শরীরে ঢুকে পড়ে। তবে মিলনের সময় কনডম ব্যবহার করলে ব্যাপারটা ঘটতে পারে না। তাই যে সমস্ত যৌনকর্মে ক্ষত তৈরি হয় বাযাদের যৌনাঙ্গে ক্ষত আছে তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেশি।
এইডস এবং যৌনরোগের মধ্যে সম্পর্ক
যৌনরোগ মানে যৌনাঙ্গে ক্ষত। সেটা বাইরেরও হতে পারে বা যৌনাঙ্গের ভেতরেও হতে পারে। এ রকম ক্ষত নিয়ে যৌনমিলন করলে এইচআইভি আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়। কারণ যৌনসঙ্গীর যৌনরসে যদি এইচআইভি ভাইরাসটি থাকে তবে ওই যৌনরস থেকে ভাইরাসটি অতি সহজে ক্ষতের ভেতর দিয়ে রক্তে ঢুকে পড়ে। এমনকি ক্ষতগুলো যদি অত্যন্ত ক্ষুদ্র হয় তবু ভাইরাসটি ঢুকে পড়তে পারে। কারণ ভাইরাসের আকৃতি অতি ক্ষুদ্র। এত ছোট যে শক্তিশালী মাইক্রোস্কোপ ছাড়া তাদের দেখাও যায় না।
২. রক্ত দ্বারাঃ এইচআইভি সংক্রমিত কোনো মানুষের রক্ত যদি কোনো সুস্থ দেহে দেয়া হয় তবে সেই সুস্থ মানুষটি নিশ্চিতভাবে এইচআইভিতে আক্রান্ত হবে। এখানে সম্ভাবনার হার প্রায় শতকরা ১০০ ভাগ।
৩. সংক্রমিত যন্ত্রপাতি দ্বারাঃ এইডস আক্রান্ত মানুষের ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ, অপারেশনের যন্ত্রপাতি রক্তের সংসপর্শে আসে। রক্ত থেকে ভাইরাস এগুলোর গায়ে লেগে যায়। এই সুচ, সিরিঞ্জ, অপারেশনের যন্ত্রপাতিগুলো যদি সঠিকভাবে জীবাণুমুক্ত নাকরে কোনো সুস্থ মানুষের জন্য ব্যবহার করা হয় তখন সেই গায়ে লেগে থাকা জীবাণুগুলো সহজেই সুস্থ শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
৪. সংক্রমিত মা থেকে শিশুতেঃ সংক্রমিত মা থেকে তার অনাগত সন্তানের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটতে পারে। একজন গর্ভবতী মা যিনি এইচআইভি বাহক, তিনি গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় অথবা প্রসবের সময় শিশুকে সংক্রমিত করতে পারেন। সংক্রমিত মায়ের প্রতি ৩ জনের ১ জন সন্তানের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
কী কী কারণে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে না?
মনে রাখতে হবে রক্ত এবং বীর্য বা যৌনরসের আদান-প্রদান ছাড়া আর কোনোভাবেই এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে না। যেমন অন্যের কাপড়-চোপড়, থালা-বাসন ব্যবহার, খাবার গ্রহণ, চুম্বন ও আলিঙ্গন, করমর্দন, অন্যেরব্যবহৃত টয়লেট ব্যবহার, পোকামাকড়ের কামড় কিংবা একজন সংক্রমিত ব্যক্তিকেছোঁয়া বা তার সাথে বাস করলে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে না। এইচআইভি জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে, পানির মাধ্যমে, খাবারের মাধ্যমে ছড়ায় না। সুতরাং হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এবংএকই পাত্রে খাবার খেলে এইজীবাণু ছড়ায় না। এছাড়া একই পুকুরে গোসল করলে, মশার কামড়ে বা একই গোসলখানায় গোসল করলেও ছড়ায় না।
বিশ্বব্যাপী এইচআইভিবা এইডস পরিস্থিতি
*. শুধু ২০০৫ সালে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা মোট৪৯ লক্ষ, এদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের সংখ্যা ৪২ লাখ আর শিশু (১৫ বছরের কম) ৭ লাখ।
*. এইচআইভি বা এইডস আক্রান্তের বর্তমান সংখ্যা ২০০৫ সালে মোট ৪কোটি ৩ লাখ। প্রাপ্তবয়স্ক ৩ কোটি ৮০ লক্ষ, শিশু (১৫ বছরেরকম) ২৩ লাখ।
*. ২০০৫ সালে এইচআইভি বা এইডসে মৃত্যুর সংখ্যা মোট ৩১ লাখ, প্রাপ্তবয়স্ক ২৬ লাখ, শিশু (১৫ বছরের কম) ৫ লাখ ৭০ হাজার।
*. ২০০৫ সালের শেষ পর্যন্ত এইচআইভি বা এইডসে এ পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা মোট ২ কোটি ৫০ লক্ষ।
এইডসের লক্ষণ কী কী?
অনেক এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো রোগের লক্ষণ না দেখিয়ে ১০ বছর বা অধিক সময় থাকতে পারে। তবে অনেকের সংক্রমণের প্রথম দুই-এক মাসের মধ্যেই নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সত্যিকার অর্থে এইডসের সুনির্দিষ্ট কোনোলক্ষণ নেই। রোগ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে ওই সময়ে যে জীবাণু আক্রমণকরে তার লক্ষণই দেখা দেয়।তবে প্রতিরোধব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার সাধারণ কিছু লক্ষণ আছে। যেমন-
*. দ্রুত শরীরের ওজন কমতে থাকা
*. দীর্ঘমেয়াদি জ্বর
*. দীর্ঘদিনের কাশি, শ্বাসকষ্ট
*. লাগাতার ডায়রিয়া
*. মাসাধিককাল ধরে অবিরামবা থেকে থেকে জ্বর আসা এবং রাতে প্রচুর ঘাম হওয়া অথবা সাধারণ ফ্লুর মতো লক্ষণ দেখা দেয়া।
*. প্রচণ্ড অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়া।
*. গলার দুই পাশের, বগলতলার, কুঁচকির লসিকাগ্রন্থিগুলো ফুলে শক্তহয়ে পড়া।
*. মুখের ভেতর, জিহ্বায় বাগলার ভেতর সাদা ছত্রাকের আক্রমণ হয়।
*. নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে।
*. খাবারে অরুচি।
*. চামড়ার নিচে বা মুখের ভেতর, নাকে অথবা চোখের পাতায় লাল, খয়েরি, গোলাপি বা বেগুনি বর্ণের ছোপ দেখা যেতে পারে।
*. স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া,মানসিক চাপ এবং আরো বিভিন্ন ধরনের মস্তিষেকর জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

আরো
পড়তে থাকুন part3

কোন মন্তব্য নেই :