এইডস সম্পর্কে জানুন এবং প্রতিরোধ করুন ডা. গৌতম কুমার দাস part 1
বর্তমান বিশ্বে সমগ্র মানব জাতির জীবন ও সভ্যতার জন্য অত্যন্ত বড় হুমকি হিসেবে যা বিবেচিত হচ্ছে তার নাম হলো এইডস। এর কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই প্রতিরোধই হলো এর হাতথেকে বাঁচার একমাত্র উপায়।প্রতিরোধের জন্য প্রথমেইআমাদের এইডস সম্পর্কে জানতে হবে। এইডসের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো এর সম্পর্কে সাধারণ মানুষেরঅজ্ঞতা। যার সুযোগ নিয়ে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে একজন থেকে বহুজনের শরীরে। মহামারী রূপ নিচ্ছে বিশ্বজুড়ে।
নিজেকে বাঁচানোর জন্য, নিজের পরিবারকে বাঁচানোরজন্য সেই সঙ্গে পুরো জাতিএবং সমগ্র মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের এইডস সম্পর্কে জানতে হবে। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায়সাড়ে ১৩ হাজার মানুষ এইচআইভিতে আক্রান্ত হচ্ছে এবং এদের অর্ধেকের বয়স ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। আর প্রতিদিন সারা বিশ্বে এইডসে মারা যাচ্ছে প্রায় ৮৫০০ জন মানুষ।
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্যমতে বর্তমানে আনুমানিক ৭৫০০ জন ব্যক্তি এইচআইভি সংক্রমিত। ডিসেম্বর ২০০৫পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এদেশে ৬৫৮ জন ব্যক্তির এইচআইভি সংক্রমণ শনাক্ত করা গেছে,যাদের ১৩৪ জন এইডস লক্ষণ বহন করছে এবং এ পর্যন্ত ৭৪ জন এইডসের কারণে মৃত্যুবরণ করেছে।
পাশাপাশি ২০০৫ সালে প্রকাশিত UNAIDS -এর তথ্যের কথা বলা যায়। তাদের অনুমান অনুযায়ী বাংলাদেশে এইচআইভি/এইডস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা২৫০০ থেকে ১৫০০০-এর মধ্যে।
সর্বশেষ ২০০৪-২০০৫ সালে পরিচালিত বাংলাদেশ সরকারের ষষ্ঠ রাউন্ড সেরোলজিক্যাল সার্ভিল্যান্স অনুযায়ী, দেশের কেন্দ্রীয় অঞ্চলে ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশাকারীদের ৪.৯ শতাংশ এইচআইভি আক্রান্ত। বাংলাদেশে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, এইচআইভি সংক্রমণের হার এখনো কম রয়েছে। যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ ০.২ থেকে ১.৫ শতাংশের মধ্যে রয়েছে বলে বিভিন্ন জরিপে পাওয়া গেছে এবং তাদের মধ্যে অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের সংক্রমণ ১৯৯৯ সালে যেখানে ৩০ শতাংশ ছিল ২০০২ সালে তা ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তবু এদেশের যৌনকর্মীপ্রতি খদ্দেরসংখ্যা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চহওয়ার পাশাপাশি যৌনরোগেরসেবা প্রদানের সার্বিক মান বিবেচনা করে ও ঝুঁকিপূর্ণ যৌনমিলনে কনডম ব্যবহার অত্যন্ত কম বলে এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
এইচআইভি কী?
এইচআইভি একটি ভাইরাসের নাম। এই অতি ক্ষুদ্র জীবাণুটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে মানুষের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে, যার ফলে আক্রান্ত মানুষের দেহে এক বা একাধিক রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
HIV :
H= Human = মানুষ
I=Immuno-deficiency = প্রতিরোধ
V= Virus = ভাইরাস
এই ভাইরাসটি যেহেতু শুধু মানুষেরই ক্ষতি করতে পারে এবং মানুষের শরীরে প্রবেশের পর দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার অভাব ঘটায়, তাই তার এ রকম নামকরণ করা হয়েছে।
এইচআইভি কীভাবে কাজ করে?
বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিনিয়ত মানুষ নানা রকম জীবাণুর সংসপর্শে আসে। সাধারণ অবস্থায় প্রত্যেক মানুষের দেহে একটি রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা (Immune System) থাকে, যা এই জীবাণুগুলোকেধ্বংস করে দেয়।
এই প্রতিরোধব্যবস্থার হাতিয়ার হলো T লিম্ফোসাইট নামক এক ধরনের কোষ, যা রক্তের মাধ্যমে সারা শরীরে ঘুরে বেড়ায়। যখনই কোনো জীবাণু পায় সঙ্গে সঙ্গে ওটাকে আক্রমণ করে মেরে ফেলে। এইচআইভি শরীরে প্রবেশ করার পর তাদের আক্রমণের লক্ষ্য হয় এই T লিম্ফোসাইটগুলো। ধীরে ধীরে দেহের সমস্ত T লিম্ফোসাইট মেরে ফেলে এই ভাইরাস। ফলে একসময় শরীরের আর কোনো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বিদ্যমান থাকে না। এ অবস্থায় কিছু সুবিধাবাদীজীবাণু যারা সাধারণ অবস্থায় কোনো ক্ষতি করতে পারে না, তখন তারা সুযোগ গ্রহণ করে। এদের আক্রমণে তখন দেহে নানা রকম রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যাপারহলো রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে এই অবস্থায় কোনো রোগ হলে সেটা আর ভালো হয় না। কোনোওষুধও কাজ করে না। ধীরে ধীরে অবধারিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায় আক্রান্ত মানুষ। এইচআইভি আক্রান্তমানুষ সাধারণত যক্ষ্মা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া এই জাতীয় রোগে ভুগে শেষ পর্যন্ত মারা যায়।
এইডস কী?
এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের দেহে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ঘাটতির কারণে এক বা একাধিক রোগের যে সমস্ত লক্ষণ দেখা যায় তার সমষ্টিই হলো এইডস। মনে রাখতে হবে এইডস কোনো রোগের নাম নয়। এটা হলো বিভিন্ন রোগের লক্ষণের সমষ্টি, যার জন্য দায়ী এইচআইভি।
এইডসের ( AIDS ) পুরো অর্থ হলো-
A= Acquired= অর্জিত
I=Immune= রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
D=Deficiency= ঘাটতিজনিত
S=Syndrome= রোগের লক্ষণসমূহ
HIV ভাইরাস মানুষের শরীরের কোথায় বাস করে?
এইচআইভি ভাইরাসটি শরীরেরবিভিন্ন জলীয় অংশে বসবাস করে যেমন- রক্ত, পুরুষের বীর্য, মেয়েদের যোনিরস, বুকের দুধ, মুখের লালা, ঘাম, চোখের পানি ইত্যাদি।
তবে রক্ত, বীর্য বা যোনিরস এবং বুকের দুধ ছাড়া অন্যান্য জলীয় অংশে ভাইরাসটির সংখ্যা এত কম থাকে যে সেটা দিয়ে নতুন একটা দেহে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না।
রক্তে এবং বীর্য বা যোনিরসে ভাইরাসটি থাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে। কোনো সুস্থ মানুষের দেহে যদি আক্রান্ত মানুষের রক্ত অথবা বীর্য বা যোনিরস কোনোভাবে প্রবেশ করে তবে ভাইরাসটি সংক্রমিত হয়।
কীভাবে এইডস সংক্রমিত হয়?
*. এইচআইভি আক্রান্ত কারোসাথে অনিরাপদ যৌনমিলনের মাধ্যমে।
*. এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের রক্ত অন্যের দেহে পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে।
*. এইডস আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত এমন কোনো জিনিস যা ত্বক ফুঁড়ে যায় এবং তার রক্তের সংসপর্শে আসে (যেমন-সুচ, সিরিঞ্জ ইত্যাদি) সেগুলো যদি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করা হয়।
*. এইচআইভি আক্রান্ত মা থেকে তার সন্তানের মধ্যে (গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান প্রসবের সময়)। এবার আমরা একটু বিস্তারিতভাবে জানার চেষ্টা করব কীভাবে সুস্থ মানুষের দেহে রক্ত, বীর্য বা যোনিরসের মাধ্যমে এইচআইভি জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে।
আরো
পড়তে থাকুন part 2
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন