অনিদ্রা? ২৫টি সমাধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ্ part 2
কারা অনিদ্রা সমস্যায় বেশি ভোগেন?নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কারো ঘুমের সমস্যা হতেপারে। তবে গবেষণা সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, এসমস্যাটি নারীদের তুলনামূলক বেশি হয়ে থাকে বিশেষত মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তির পরে। বয়স যত বাড়ে ঘুমের সমস্যাও ততবাড়ে। ৬০ বছরের ওপরে অনেকেই এ সমস্যায় ভুগে থাকে। এ সময় ঘুমের চাহিদাবাড়ে কিন্তু ঘুমানোর দক্ষতা অনেক কমে যায়।
কীভাবে রোগ নির্ণয় করবেন
রোগীর পুরো মেডিকেল ইতিহাস ও ঘুমের পুরো ইতিহাস জেনে নিতে হবে। রোগীকে তার ঘুম সম্পর্কে একটি ডায়রিতে লিখে রাখতে বলা উচিত অথবা রোগীর সঙ্গী বা সঙ্গিনীর কাছ থেকে রোগীর ঘুমের ধরন বা রোগী কতক্ষণ ঘুমায় তা জেনে নিতে হবে। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা মনোচিকিৎসক যদি মনে করেন যে, ঘুমসম্পর্কীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেনতবে রোগীর তাই করা উচিত। কেননা অনেক সময় ঘুমের সময়শ্বাসকষ্ট বা নারকোলেপসির কারণ এগুলোরসাহায্যে জানা যেতে পারে।
চিকিৎসা
যদি খুব কম সময়ের জন্য বাঅনেক দিন পরপর হঠাৎ করে ঘুমের সমস্যা হয় তবে তার জন্য আলাদা বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসার কোনো দরকার নেই। কেননা হঠাৎ করে ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটলেও সমস্যাটি হতে পারে। তবে যারা এতে পরের দিন ঘুম ঘুম ভাব বা অবসন্নতাবোধ করেন তাদের ক্ষেত্রে কম সময় কাজ করে এরকম ঘুমের ওষুধ কেবল কয়েক রাতের জন্য দেয়া যেতে পারে। তবে ঘুমের সমস্যা হলেই ফার্মেসি থেকে যেনতেন ওষুধ কিনে সেবন করা একেবারেই অনুচিত। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যারা দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের অসুখে বা সমস্যায় ভুগছেন তাদের চিকিৎসাব্যবস্থায় রোগ নির্ণয় বা ডায়াগনোসিস করে মানসিক, শারীরিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করতে হবে।
*. যে যে আচরণজনিত কারণে ঘুমের সমস্যা বাড়ে সেগুলোকে কমানোর চেষ্টা করুন বা পারলে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন।
*. মনে রাখতে হবে যে, ঘুমের ওষুধ ঘুমের আসল চিকিৎসা নয়। ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমালে এতে শারীরিক ও মানসিক আসক্তি জন্মাতে পারে। তবে ডাক্তার বা মনোচিকিৎসক যদি মনে করেন যে, আপনার ওষুধের প্রয়োজন রয়েছে কেবল তখনই ওষুধ সেবন করা উচিত, তাও আবার ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে।
কিছু পরামর্শ
রিলাক্সেশন থেরাপি (নিজেকে শিথিল করতে শিখুন) মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এ পদ্ধতি আপনি শিখে নিয়ে নিজের ওপর প্রয়োগ করুন। এতে আপনার দুশ্চিন্তা কমবে ও মাংসপেশি শিথিল হয়ে যাবে-আপনি বেশ আরামবোধ করবেন, ভালোভাবে নিজের ওপর রিলাক্সেশন থেরাপি প্রয়োগে কখন যে ঘুমিয়ে পড়বেন তা নিজেই বুঝতে পারবেন না। এ থেরাপি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে মনোজগত পরামর্শ কেন্দ্রে যোগাযোগ করতে পারেন। এগুলো অভিজ্ঞ মনোচিকিৎসকের কাছ থেকে শিখে নেয়া উচিত।
*. ঘুম না এলে অহেতুক দীর্ঘ সময় বিছানায় গড়াগড়ি করবেন না। গল্পের বই পড়ুন, টিভিতেআনন্দদায়ক বা হাসির মুভি দেখুন।
*. শোয়ার বিছানাটিকে কেবলঘুমের জন্য ব্যবহার করুন, অহেতুক বিছানায় এটা-ওটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখবেন না।
২৫টি সমাধান
‘তন্দ্রাহারা নয়ন আমার এইমাধবী রাতে’ গানের কলিটি আমরা সবাই জানি। আনন্দ, দুঃখ, বেদনার রাত জাগা, যাসমাজের অনেকেরই জীবনে ঘটে থাকে। কিন্তু এটা যদিপ্রলম্বিত হয়, তবে মন ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণহয়ে দাঁড়ায়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনি ভুলে যানযে আপনার নিদ্রার সমস্যা আছে। নিচে কিছু অনিদ্রার সমাধান দেয়া হলো-
১. বিছানাটা শুধু ঘুমের জন্য- এই বিশ্বাসটা স্থির রাখুন। আমরা বিছানায় খবরের কাগজ পড়া থেকে শুরু করে রাজ্যের কাজ সারি, আসলে তা ঠিক নয়। বিছানাটা শুধুঘুমের জন্য এই বিশ্বাসটা ধরে রাখতে হবে। বিছানার ওপরে শুয়ে বা বসে টেলিভিশন দেখা, পড়া, খাওয়া, কাজ করা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।
২. মাথা উত্তর দিকে- উত্তর দিকে মাথা ও দক্ষিণদিকে পা এভাবে শুয়ে দেখতেপারেন, এটি কাজে লাগবে। আপনার শরীরকে পৃথিবীর চৌম্বক শক্তির মধ্যে ফেলে অভ্যন্তরীণ মাত্রাগুলো সমন্বিত করা এ পদ্ধতির কাজ। হাসি পাচ্ছে, করেই দেখুন না।
৩. ভেড়া গণনা- অত্যন্ত পুরাতন ও কার্যকরী পদ্ধতি। একটি ভেড়ার ওপর দিয়ে ভেড়াগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে পার হচ্ছে কল্পনা করুন। অনেক সময় ভেড়াগুলো চঞ্চল হয়ে লাফিয়ে দ্রুত পার হয়। এক্ষেত্রে একটা বিরাট খালি মাঠের কথা চোখবন্ধ করে ভাবুন। দেখুন ভেড়াগুলো লাইন দিয়ে শুয়ে আছে। প্রতিটি লাইনে দশটি করে ভেড়া। আপনি এগুলো পারহতে থাকুন, হেঁটে বা লাফ দিয়ে নয় মনে করুন এগুলো আপনি উড়ে উড়ে পার হচ্ছেন এবং প্রতিটি ভেড়া পার হতেআপনার সময় লাগছে ৩-৫ সেকেন্ড, এ পদ্ধতি উপকারী।
৪. টেলিভিশন দেখা ও বইপড়া- অনেকে বলেন টেলিভিশন দেখলে বা বোরিং বই পড়লে ঘুম চলে আসে। আমাদের পর্যবেক্ষণে আমরাবলতে চাই যত খারাপ অনুষ্ঠানই হোক না কেন যত বাজে বই-ই পড়ুন না কেন মস্তিষেক তা উত্তেজিত তরঙ্গের সৃষ্টি করে। এর সাথে টেনশন মিলে অনিদ্রার সৃষ্টি করে। ঘুমাতে যাওয়ার আধা ঘণ্টা পূর্বে টেলিভিশন বন্ধ করুন, বই পড়া বন্ধু করুন।ঠাণ্ডা মনে শুয়ে পড়ুন, ঘুম চলে আসবে।
৫. ঘড়ি- ঘুমের রুম বা বেডরুমটা যতটা ডার্ক বা অন্ধকার রাখা যায় ভালো। টিক টিক করে এ রকম ঘড়ি বা ঢং ঢং করে এরকম ঘড়ি বেডরুম থেকে সরিয়ে দিন। অনেক সময় এগুলো বিরক্তির সৃষ্টি করে। যদি ঘড়িটাকে সরাতে না পারেন তবে আলো বা শব্দ যেন ডিস্টার্ব নাকরে এ ব্যাপারে লক্ষ করুন।
৬. দিনের ছোট ছোট ঘুম- রাতে ঠিকমতো ঘুম না হলে দিনের ঘুম যথেষ্ট ভালো লাগবে আপনার। যদি রাতে ঘুমের সমস্যা না থাকে এবংআপনি যদি বয়সে বৃদ্ধ না হন তাহলে দিনের ছোট ছোট ঘুম বাদ দিন। রাতে তাহলে আপনি সত্যি ক্লান্তিবোধ করবেন এবং ভালো ঘুম হবে।
part 3
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন