অনিদ্রা? ২৫টি সমাধান অধ্যাপক ডা. এ এইচ মোহাম্মদ ফিরোজ্ part 1
ঘুমের সমস্যা খুব কমন বা পরিচিত একটি সমস্যা। হঠাৎ করে ২-৪ রাত ঘুম কম হওয়া বা ঘুমের অন্য কোনো সমস্যা হওয়াকে তেমন বড় করে দেখার দরকার নেই।তবেসমস্যাটি যদি অনেক দিন বাবেশ কয়েক দিন যাবৎ চলতে থাকে তাহলে মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের বা সাইকিয়াট্রিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত। দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের সমস্যা আপনা-আপনি হয় না, পেছনে অন্য কোনো মনোগত অসুখ জড়িয়ে থাকতে পারে। এসম্পর্কে পাঠককে জানাতে আমাদের এ প্রবন্ধ।
ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা কী?
ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা আসলে এক ধরনের ব্যক্তিগত প্রত্যক্ষণ বাপারসেপশন। অনেককেই বলতে শোনা যায় যে, তার ঘুমের সমস্যা রয়েছে। প্রকৃত সত্য এই যে, ঘুম বা নিদ্রা সম্পর্কে আমাদের অনেক রকম ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এক্ষেত্রে অন্যদের বক্তব্যে বা কথায় প্রভাবিত না হয়ে নিজে নিজের সমস্যাটিকে চিনে নিন। তাই আসুন বুঝতে চেষ্টা করি ঘুমের সমস্যা কীভাবে হয়-
*. অনেকক্ষণ শুয়ে থাকার পরে ঘুম আসা বা দেরিতে ঘুম আসা।
*. রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া।
*. রাতে একবার ঘুম ভেঙে গেলে পরে আর ঘুমাতে না পারা।
*. রাত অনেক বাকি থাকতে অর্থাৎ সকাল হওয়ার অনেক আগে ঘুম ভেঙে যাওয়া।
ঘুম থেকে জাগার পর শরীর-মনে সতেজ সতেজ বা ফ্রেশ অনুভূতি না আসা। একজন লোক প্রতিদিন কয় ঘণ্টা ঘুমায় সেটির ওপর ভিত্তি করে আমরা ঘুমের সমস্যাটিকে সংজ্ঞায়িত করতে পারব না। কেননা একেকজনের ঘুমের চাহিদা একেকরকম। আপনি কত সময় ঘুমিয়ে বা কেমন ঘুমিয়ে সন্তুষ্ট থাকবেন তা ঘুম সম্পর্কে আপনার মানসিকতার ওপরে নির্ভর করে। তবে এটি ঠিক যে, রাতে ভালো ঘুম না হলে পরের দিনের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। অনেকে এতে করে দিনের বেলা ক্লান্তি বা অবসন্নতায় ভোগে, কোনো কিছু করতেই যেন আগ্রহ বা শক্তি পাওয়াযায় না, মনোযোগ দেয়া যায় না, অনেকে অল্পতে বিরক্তিবোধ করে বা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। ঘুমের সমস্যা স্বল্পকালীন হতে পারে আবার মাঝে মাঝে হতে পারে তবে অনেকের বেলায় এটি দীর্ঘমেয়াদি রূপ লাভ করে। যদি ১-২ রাত বা সপ্তাহ পর্যন্ত ঘুমের সমস্যা হয় তবে তাকে স্বল্পকালীন ঘুমের সমস্যা বলতে পারি। সমস্যাটি যদি ঘুরে-ফিরে কিছুদিন পরপর বিরাজ করে তাকে ইন্টারমিটেন্ট ঘুমের সমস্যা বলে। আবার মাসখানেক বা তার চেয়ে বেশি সময় অবধি যদি এটি বিরাজ করে তবে তাকে ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের সমস্যা বলতে পারি।
ঘুমের সমস্যা কেন হয়
ঘুমের সমস্যা হওয়ার পেছনে সাধারণত কারণ থাকে তবে কারণ ছাড়া ঘুমের সমস্যা হওয়াও অস্বাভাবিককোনো ব্যাপার নয়। ফিজিক্যাল বা শারীরবৃত্তীয় কতক কারণ-
*. প্রবীণ বা বেশি বয়সের ব্যক্তি।
*. নারী।
*. বিষণ্নতার পূর্ব ইতিহাস।
*. অন্য যে কোনো মানসিক সমস্যা।
ওপরের অবস্থাগুলোতে ঘুমের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়-তবে সাথে ঘুমের সমস্যা হওয়ার মতো অন্য কারণ থাকলে ঘুমহীনতার ঝুঁকি আরো অনেক বেড়ে যায়। ঘুমের সমস্যা করতে পারে এরকম কতক কারণ নিচে দেয়া হলো-
*. স্ট্রেস বা মনোশারীরিকচাপ।
*. ড্রাগস বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
*. দাম্পত্য কলহ বা বিবাহবিচ্ছেদ।
*. সাম্প্রতিককালে চাকরি হারানো।
*. ঘুমের পরিবেশ না থাকা।
*. তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকা।
*. একেক দিন একেক সময়ে ঘুমানো।
দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ঘুমের সমস্যা আর একটু জটিল। এটির জন্য একই সাথেঅনেক কারণ দায়ী থাকতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি ঘুমেরসমস্যার কতক কারণ শারীরিক, কতক আবার মানসিক। মানসিক কারণগুলোর মাঝে সবচেয়ে কমন বা প্রচলিত হলো ডিপ্রেশন বা বড় মাত্রার বিষণ্নতা। অন্যান্য শারীরিক কারণগুলো হলো আর্থ্রাইটিস বা বাত, কিডনি বা বৃক্কের সমস্যা,হার্টের বৈকল্য বা হার্ট ফেইলিওর, অ্যাজমা বা হাঁপানি, ঘুমের সময়ে বা নিদ্রাকালীন শ্বাসকষ্ট, নারকোলেপসি বা যখন তখন ঘুমিয়ে পড়া (এতে ঘুম ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে থাকে না) অস্থিরতা, পারকিনসন্স ডিজিজ, হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড গ্রন্থির অতি কার্যকারিতা ইত্যাদি। আবার দীর্ঘমেয়াদি ঘুমের সমস্যা আচরণঘটিত কারণেও হতে পারে। কেউ ধরুন বেশি বেশি ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা অন্য কোনো আসক্তিকর ড্রাগস সেবন করল বা কারো হয়তো কাজের সময় বদলাতে হলো, এতে করে ঘুমের স্বাভাবিক চক্রটি বিঘ্নিত হতে পারে। নানা গবেষণা সমীক্ষায় ঘুমের সমস্যার আরো কতক কারণ বেরিয়ে এসেছে-
*. যিনি বারবার মনে করেন যে তার ঘুমের সমস্যা হবে বা ব্যাপারটি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকেন তার ঘুমের সমস্যা হতেই পারে।
*. প্রতিদিন অত্যধিক পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন।
*. ক্যাফেইন মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণেসেবন করা।
*. রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে সিগারেট বা ধূমপান করা।
*. দুপুরে বা বিকেলে অতিরিক্ত ঘুমানো। এটিকে আমরা ভাতঘুম বলে থাকি। বাঙালিরা এ স্বভাবে বেশ অভ্যস্ত।
*. ঘুমের চক্র বা ঘুমানোর সময়কে কয়দিন পর পর বদলানো।
উপরের আচরণ বা অভ্যাসগুলো অনেকের নিদ্রাহীনতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই অভ্যাসগুলো থাকলে তা আজই শপথ করে ছেড়ে দিন। আশা করি, ঘুমেরসমস্যার সমাধান হয়েও যেতে পারে।
আরো
পড়তে থাকুন part 2
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন
(
Atom
)
কোন মন্তব্য নেই :
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন